শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


পদার্থবিজ্ঞানী ফণীন্দ্রনাথ ঘোষ।

স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ছিলেন একাধারে বিপ্লবী, অন্যধারে ক্ষুরধার শিক্ষাবিদ। তাঁরই প্রচেষ্টায় তৈরি হয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। ভারতীয় কত মণিমুক্ত যে তিনি আবিষ্কার করেছেন তার ইয়ত্তা নেই। এমনই এক হীরকখণ্ড হল ফণীন্দ্রনাথ ঘোষ। একজন সেরা পদার্থবিদ, শিক্ষক, দেশপ্রেমিক ও সর্বোপরি একজন ভালোমানুষ হিসাবে তাঁর নাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল।
১৮৮৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ২৪ পরগনার মজিলপুর গ্রামে তাঁর জন্ম। অল্পবয়সে তিনি তাঁর পিতাকে হারান। গ্রামের বিদ্যালয় থেকে সুনামের সঙ্গে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় পাশ করেন। গ্রাম ছেড়ে কলকাতায় আসেন উচ্চশিক্ষার জন্য, ভর্তি হন বঙ্গবাসী কলেজে। ১৯০৫ সালে পদার্থবিদ্যায় অনার্স নিয়ে পাস করেন প্রথম শ্রেণিতে। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এমএ পাশ করেন প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে, পান স্বর্ণপদক। ফলিত পদার্থবিদ্যা তাঁর ছিল গভীর আগ্রহ। চাকরি পান রেলের ওয়াগন তৈরির কারখানায়। জেসপ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিতে। সেখানে মনের আনন্দে বিভিন্ন যন্ত্রের কার্যকারিতা শিখতে লাগলেন।
আরও পড়ুন:

স্বামী বিবেকানন্দ জীবন বদলে দিয়েছিলেন বিজ্ঞানী বন্ধু চুনিলাল বসু-র

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৬৯: মহাভারতে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য আখ্যান-উপাখ্যান, তেমনই একটি সম্বরণ ও তপতীর কাহিনি

পরে, ১৯১০ সালে নিজের কলেজ বঙ্গবাসী কলেজের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন। কিছুদিন পর স্যার আশুতোষ মুখার্জির আহবানে সাড়া দিয়ে যোগ দেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। চাকুরির পাশাপাশি নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী সিভি রমনের কাছে গবেষণা করতে থাকেন এবং তাঁর কাছ থেকেই পান ডক্টরেট ডিগ্রি। ১৯২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত পদ ‘রাসবিহারী ঘোষ অধ্যাপক’ পদে যোগদান করেন।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৫৩: মহীয়সী গৃহস্তনারী মা সারদা

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৪: জোড়াসাঁকোয় পাগল-যাচাই

১৯২৫ সালে তাঁর নেতৃত্বে রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে ফলিত পদার্থবিদ্যার একটি শাখা তৈরি হয়। দীর্ঘ গবেষণা শেষে ১৯৪৬ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত সফল শিক্ষক ও গবেষক। তাঁর অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী দেশের বড় বড় স্হানে ও বিভিন্ন উচ্চপদে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন। ১৯৪৩-১৯৪৫ সালে ভারতীয় ফিজিক্যাল সোসাইটির সভাপতি ছিলেন তিনি। সংস্কৃত, বাংলা, ইংরাজি ও জার্মান ভাষায় তাঁর অসাধারণ ব্যুৎপত্তি ছিল। এদেশে ট্রান্সফর্মার তৈরি তাঁর হাত ধরেই। কেবল শিক্ষাগ্রহণ ও পুঁথিগত বিদ্যাি নয়, তার প্রয়োগেও তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১: টলস্টয় ও সোফিয়া—প্রেম ও বিবাহ/১

ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-৩৫: কী যে করি করি ভেবে মরি মরি

পদার্থবিদ্যার জ্ঞানকে তিনি উন্মুক্ত করেছিলেন পুস্তক ও গবেষণাগার থেকে। ১৯৩৩ সালে সায়েন্স কলেজে খুব উন্নতমানের ভালো স্পেকট্রোস্কপি ল্যাব তৈরি করেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন কারখানার সমস্যা তিনি তাঁর বুদ্ধি আর বাস্তব অভিজ্ঞতা দিয়ে সারিয়ে দিতে পারতেন। আজ তিনি থাকলে দেশে নতুন শিল্প বিপ্লবের জন্ম দিতে পারতেন, এই আশা করা যেতেই পারে। আমরা ভারতীয়রা যেন এই মহান বিজ্ঞানীকে ভুলে না যাই।
* ড. উৎপল অধিকারী, সহ-শিক্ষক, আঝাপুর হাই স্কুল, আঝাপুর, জামালপুর, পূর্ব বর্ধমান।

Skip to content