রবিবার ৬ অক্টোবর, ২০২৪


ওপারের একুশে ফেব্রুয়ারির মতো মাতৃভাষা আন্দোলনের ক্ষেত্রে এপারেও অমর হয়ে আছে ১৯ মে। ১৯৬১ সালের এই দিনটিতেই মাতৃভাষার জন্য শিলচরে শহিদ হয়েছিল এগারো জন। কীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল উনিশে তা নিয়ে অনেক চর্চা হয়েছে। আগামী দিনেও নিশ্চিত এই চর্চা অব্যাহত থাকবে। এই ভাষা আন্দোলনকে কেউ কেউ গণঅভ্যুত্থান হিসেবে অভিহিত করেছেন। দীর্ঘ মেয়াদি এই আন্দোলনে দেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে অনেক কিছু। প্রত্যক্ষ করেছে মাতৃভাষার সুরক্ষার জন্য সকলের ঐক্যবদ্ধ হবার চিত্রটি। এই ভাষা আন্দোলনে সেদিন শিলচরের মানুষ সাক্ষী হয়েছিলেন নকল আদালতের মাধ্যমে এক অভিনব পিকেটিং’রও।
অসমের মুখ্যমন্ত্রী তখন বিমলা প্রসাদ চালিহা। ১৯৬০ সালের অক্টোবরে অসম বিধানসভায় পাশ হয়ে গেল রাজ্যভাষা বিল। এই বিলে সারা আসামের একমাত্র সরকারি ভাষা হল অসমীয়া। স্বাভাবিক ভাবেই এই ভাষা বিলের বিরুদ্ধে গর্জে উঠল বঙ্গভাষাভাষি সেদিনের অবিভক্ত কাছাড়। প্রতিবাদ মুখর হল অসমের অন্যান্য সংখ্যালঘু ভাষাগোষ্ঠীর মানুষও। অবশ্য সলতে পাকাবার কাজটি শুরু হয়েছিল আরও আগেই। অসম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি সে বছরের ২২ এপ্রিল অসমীয়া ভাষাকে রাজ্যের একক সরকারি ভাষা করার প্রস্তাব নিয়েছিল। যদিও কাছাড়ের বাংলা ভাষাভাষি সদস্যরা এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু ৫০-১০ ভোটে তা অগ্রাহ্য হয়ে যায়। তারপর কাছাড়ের মানুষ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। শুরু হয় সভা-সমিতি-সম্মেলন। ব্রক্ষ্মপুত্র উপত্যকার বাংলা ভাষাভাষিরাও এই আন্দোলনে সামিল হতে শিলচর আসেন। শিলচরে অনুষ্ঠিত নিখিল অসম বাঙ্গালা ভাষা সম্মেলন এবং অনসমীয়া ভাষা সম্মেলনে ভাষা নিয়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার প্রস্তাব গৃহীত হয়। কিন্তু এতসবে কিছুই হল না।

২৪ অক্টোবর কাছাড়ের সদস্যদের অনুপস্থিতি এবং গারো ও খাসি জয়ন্তিয়া পাহাড়ের সদস্যদের বিরোধিতার মধ্যে অসম বিধানসভায় পাশ হয়ে গেল ভাষা বিল। তারপর সমগ্র কাছাড় তথা আজকের বরাক উপত্যকা জুড়ে শুরু হয়ে যায় তীব্র আন্দোলন। অসমীয়া ভাষার সমান মর্যাদা দাবি করা হয় বাংলা ভাষার। কিন্তু বরাক উপত্যকার তীব্র বিরোধিতা ও আন্দোলন সত্ত্বেও ডিসেম্বর মাসে ভাষা বিল আসামের রাজ্যপালের অনুমোদন লাভ করে। স্বাভাবিকভাবেই বরাকের ভাষা আন্দোলন এরপর আরও তীব্রতা পায়।
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব-১১: কলকাতায় ত্রিপুরার রাজনীতি

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৪৯: ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা—ওড়া, কেওড়া, চাক কেওড়া ও কৃপাল

১৯৬১ সালের ফেব্রুয়ারিতে করিমগঞ্জ শহরে অনুষ্ঠিত হয় কাছাড় জেলা জন-সম্মেলন। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে কাছাড়ের সর্বত্র। মার্চ মাসে মুখ্যমন্ত্রী চালিহার করিমগঞ্জ ও শিলচর সফরের দিনে পালিত হয় সর্বাত্মক হরতাল। এপ্রিল মাসে সঙ্কল্প দিবস উদযাপন সহ শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। গ্রাম বরাকে চলতে থাকে পদযাত্রা। চারদিকে শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি, মাতৃভাষা জিন্দাবাদ শ্লোগান। চারদিকে এক রব-জান দেব, জবান দেব না।

১৯ মে থেকে বরাক জুড়ে ব্যাপক ভাবে সত্যাগ্রহ তথা আইন আমান্য আন্দোলনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। মে মাসে সভা সমাবেশে উত্তাল হয়ে উঠে বরাক। ১৯ মে ডাক দেওয়া হয় সর্বাত্মক হরতালের। সেদিন শিলচর শহরের পথে পথে জনস্রোত। মা বোনেরাও বেরিয়ে এসেছে ঘর থেকে। রেল স্টেশনেও ছিল সত্যাগ্রহীদের ভিড়। এক সময় শুরু হলো লাঠিচার্জ, তারপর কাঁদানে গ্যাস। কিন্তু রেল লাইন থেকে সরানো গেল না সত্যাগ্রহীদের। শহরের সব সরকারি অফিস এদিন বন্ধ হয়ে পড়েছিল সত্যাগ্রহের জন্য। অচল হয়ে পড়েছিল জেলা প্রশাসন। বেলা ১১টার মধ্যে শিলচরে দুই হাজার সত্যাগ্রহীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে সেদিন আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল শিলচর রেল স্টেশন।
বেলা আড়াইটা নাগাদ হঠাৎই পিকেটারদের উপর শুরু হয় গুলিবর্ষণ। একে একে রক্তাপ্লুত দেহগুলো লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। কিন্তু তারপরও সত্যাগ্রহ চলতে থাকে। শিলচর সংগ্রাম পরিষদের মাইকে ঘোষিত হতে থাকে বিকেল চারটার আগে কেউ যেন রেলস্টেশনে নিজেদের জায়গা না ছাড়েন। এ যেন এক অভূতপূর্ব আন্দোলন। নির্বিচারে গুলি বর্ষণের মুখেও অবিচল। এদিকে আহত ও নিহতদের নিয়ে হাজার হাজার মানুষ ছুটলেন হাসপাতাল। বিকেলে প্রায় বিশ হাজার মানুষের সমাবেশ ঘটে গেল হাসপাতাল চত্ত্বরে। উত্তেজনায় কাঁপছে শিলচর। দাবানলের মতো সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে গুলির খবর। বিকেল পাঁচটা থেকে শহরে জারি হয় কার্ফু। পর দিন কার্ফু অগ্রাহ্য করে শবদেহগুলো নিয়ে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের মিছিল বের হয়।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮৮: ছবি আঁকতে আঁকতে অবনীন্দ্রনাথ টান দিতেন গড়গড়ায়, চিবোতেন পান

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৬৩: মহাভারতে উল্লিখিত মিথ্যাশ্রয়ের প্রাসঙ্গিকতা কী আজও আছে?

এদিকে সেদিন গুয়াহাটিতে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে কাছাড়ের কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ দেখা করে শিলচরে গুলিবর্ষণের কথা জানান। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কাছে সরকারি স্তরে এমন খবর ছিল যে, আন্দোলনকারীরা স্টেশনে অগ্নিসংযোগ-সহ সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করছিল। তাই গুলি চালানো হয়েছিল। কিন্তু প্রতিনিধিদল এর প্রতিবাদ করে বলেন, এই খবর মোটেই ঠিক নয়। সেখানে অহিংস সত্যাগ্রহ আন্দোলন চলছিল। যাইহোক, বিনা প্ররোচনায় এই গুলিবর্ষণের ঘটনা নিয়ে বিস্তর আলোচনা পর্যালোচনা হয়েছে। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠিত হয়েছে। তদানীন্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী শিলচর সফর করেছেন। তার আগেই ভাষা সমস্যা সমাধানে এক সূত্র তিনি শিলং থেকে ঘোষণা করেন।

১৯ মে গুলিবর্ষণে শহিদ হলেন-সত্যেন্দ্র দেব,চন্ডীচরণ সূত্রধর,বীরেন্দ্র সূত্রধর, সুনীল সরকার, হীতেশ বিশ্বাস, সুকোমল পুরকায়স্থ, কমলা ভট্টাচার্য, শচীন্দ্র পাল, তরণী দেবনাথ, কানাইলাল নিয়োগী ও কুমুদ দাস। অবশ্য এগারো জন শহিদ হবার পরও আন্দোলন থামেনি। আর নানা ঘটনা ঘিরে বাড়তে থাকে অশান্তিও। ভাষা আন্দোলন বানচালের উদ্দেশ্যে সাম্প্রদায়িক সুড়সুড়ি-সহ নানা উশৃঙ্খল আচরণও চলতে থাকে কাছাড়ের নানা অংশে। হাইলাকান্দিতে গোলাগুলি হয়। মৃত্যু ঘটে দশ জনের। উল্লেখ করা যায় যে, এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী পৃথিবীতে প্রথম মহিলা ভাষা শহিদ হলেন শিলচরের কমলা ভট্টাচার্য।
যাইহোক, মাতৃভাষা সুরক্ষার লক্ষ্যে একটি আন্দোলন ঘিরে এগারোজন শহিদ হবার পরেও কী ভাবে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলে সত্যাগ্রহ তা ভাবলে আজ বিস্মিত হতে হয়। আর আন্দোলনের মাধ্যমও ছিল অভিনব। শোকসভা, ঘরে ঘরে অরন্ধন, ঘরে ঘরে কালো পতাকা, শহিদদের চিতাভষ্ম নিয়ে শোক মিছিল, ঘরে ঘরে শহিদদের উদ্দেশ্যে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন—সব মিলিয়ে সর্বস্তরের মানুষকে যুক্ত করা হয়েছিল এই আন্দোলনের সঙ্গে। তবে সম্ভবত সবচেয়ে অভিনব পিকেটিং ছিল নকল আদালত। পিকেটাররা আদালতের দখল নিয়ে কেউ হয়েছিলেন জজ, কেউ উকিল, কেউবা পেশকার। বিচার হয়েছিল ‘অভিযুক্ত’ মুখ্যমন্ত্রী চালিহার। ‘অপরাধী’দের ‘দণ্ডদান’-সহ বাংলাকে অসমের অন্যতম সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণার ‘রায়’ও দেয়া হয়েছিল। সেদিন এই ঘটনা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্ব পেয়েছিল। কলকাতার কাগজ গুলোতে বেরিয়েছিল জজ কোর্ট দখলের সচিত্র সংবাদ।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৪৬: শ্রীমায়ের দুই ভ্রাতৃবধূর কথা

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-২৩: তরু দত্ত— এক আনন্দ বিষাদের তরুলতা

সেদিনটা ছিল ৭ জুন। জজ সেজেছিলেন তরুণী গোপা দত্ত। পরবর্তী সময়ে তিনি তাঁর সেদিনের অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করেছেন এই ভাবে—”…আমরা বন্দেমাতরম বলে কোর্টের দিকে রওনা দিলাম।…আমিও সটান গিয়ে উঠে দাঁড়ালাম আমার আসনের কাছে।…মনে মনে বন্দেমাতরম স্মরণ করে আসন গ্রহণ করলাম। অন্য সবাই স্ব স্ব আসনে বসলো। শুরু হল আমাদের কৃত্রিম আদালত কার্য।…আমার পেশকারের কাজ করছিলেন মনীন্দ্র রায়। উকিলের দলে ছিলেন নিয়তি চক্রবর্তী, বাসন্তী চক্রবর্তী, সমর দেব, শরদিন্দু, রঞ্জিত ভট্টাচার্য, মিহির কান্তি চৌধুরী। জুরির ভূমিকায় ছিলেন হীরেন দেব, পরেশ পাল, নির্ম্মল চক্রবর্তী। অসমীর কাঠগড়ায় শ্রী চালিয়া সেজে হাত জোড় করে দাঁড়ালেন আমাদের সত্যাগ্রহী ভাই সত্য ঘোষ।…”
সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে জানা যায় নির্দিষ্ট নিয়মেই চলছিল নকল আদালতের বিচার পর্ব। খবর ছড়িয়ে পড়তেই আদালত চত্ত্বর লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। ছুটে যান সাংবাদিকরাও। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট-সহ পুলিশ কর্তারাও ছুটে আসেন। সশস্ত্র পুলিশ ঘিরে ফেলে আদালত ভবন। আদালতের এজলাস ছেড়ে চলে যাবার জন্য বারংবার সরকারি কর্তৃপক্ষের অনুরোধ প্রত্যাহৃত হয়। এদিকে বিচারের রায়ও ঘোষিত হয়ে যায়। মুখ্যমন্ত্রী-মন্ত্রীদের কাউকে ‘মৃত্যুদণ্ড’, কাউকে ‘কারাবাস’। বিচারের রায় ঘোষণার পর পিকেটারদের সবাইকে গ্রেপ্তার করে জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। বিচারে সংশ্লিষ্ট সবার সাতদিনের কারাবাস ও আর্থিক জরিমানা হয়। শিলচরে ভাষা আন্দোলনের শীর্ষ নেতা পরিতোষ পাল চৌধুরী তাঁর ‘রক্তাঞ্জলি-বাংলা ভাষা সংগ্রামের ইতিহাস’ গ্রন্হে বলেছেন—”…শেষপর্যন্ত গৌহাটি হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির অনুমতি নিয়ে গোপা দত্তকে শিলচর পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পেরেছিল।”

মাতৃভাষা সুরক্ষার আন্দোলনের ক্ষেত্রে যেমন উজ্জ্বল হয়ে আছে উনিশে মে, তেমনই ইতিহাস হয়ে আছে কাছাড়ের ভাষা সংগ্রামে এক অভিনব পিকেটিং নকল আদালতের কথাও! শুধু বাংলা কেন, পৃথিবীর যে কোনও অঞ্চলে মাতৃভাষা সুরক্ষার আন্দোলনের ক্ষেত্রে উনিশে মে যেন এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। নির্বিচার গুলির মুখেও সত্যাগ্রহীদের দৃঢ়তা, সভা-সমাবেশ, ঘরে ঘরে অরন্ধন, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ইত্যাদির মাধ্যমে এক গণজাগরণ সৃষ্টি-সব মিলিয়ে ১৯ মে আরও অনেক অনেক কাল জাগরূক থাকবে সব দেশের সব ভাষা প্রেমিকদের হৃদয়ে হৃদয়ে।
ত্রিপুরা তথা উত্তর পূর্বাঞ্চলের বাংলা ভাষার পাঠকদের কাছে পান্নালাল রায় এক সুপরিচিত নাম। ১৯৫৪ সালে ত্রিপুরার কৈলাসহরে জন্ম। প্রায় চার দশক যাবত তিনি নিয়মিত লেখালেখি করছেন। আগরতলা ও কলকাতার বিভিন্ন প্রকাশনা থেকে ইতিমধ্যে তার ৪০টিরও বেশি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ত্রিপুরা-সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের ইতিহাস ভিত্তিক তার বিভিন্ন গ্রন্থ মননশীল পাঠকদের সপ্রশংস দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়ও সে-সব উচ্চ প্রশংসিত হয়েছে। রাজন্য ত্রিপুরার ইতিহাস, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ত্রিপুরার রাজ পরিবারের সম্পর্ক, লোকসংস্কৃতি বিষয়ক রচনা, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সঞ্জাত ব্যতিক্রমী রচনা আবার কখনও স্থানীয় রাজনৈতিক ইতিহাস ইত্যাদি তাঁর গ্রন্থ সমূহের বিষয়বস্তু। সহজ সরল গদ্যে জটিল বিষয়ের উপস্থাপনই তাঁর কলমের বৈশিষ্ট্য।

Skip to content