বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী।

জবাবে সুরঙ্গমা জানাল—
—কীরা ভালো আছে বাবা। এ বার আরও তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবে
—পায়ের চোট বৌমা! বয়স হয়েছে এখন তো আর বাচ্চাদের মতো চট করে হাড়ে জোড়া লাগবে না। নাতনিরাও তো দু’ জনে দু-দেশে।
—হ্যাঁ বাবা সেই সব নিয়ে আমরাও খুব দুশ্চিন্তা করছিলাম। আপনাকে বলা হয়নি, আমি তো ঠিক করেছিলাম আপনার সেজছেলেকে নিয়েই আমি যাব কীরার কাছে।
—কিন্তু সেটা তো খুব একটা সমস্যার সমাধান করত না মা।
—আপনি ঠিকই বলেছেন বাবা। কিন্তু আজ সকালের একটা ফোন এসে সব সমস্যার সমাধান করে দিয়েছে। খবরটা পেয়ে আমি ঠাকুরঘরে ছুটেছিলাম। ঠাকুরের কাছে প্রণাম সেরে আপনার ঘরে এসেছি।
বৃদ্ধ বিনয়কান্তি আগের আত্মবিশ্বাস হয়তো হারিয়ে ফেলেছেন। স্বর্ণময়ীকে হারিয়ে ফেলার পর মন এখন প্রায়ই অস্থির হয়ে থাকে? কিছু করার নেই, কিছু করার ইচ্ছেও করে না। এই বসুন্ধরা ভিলা, এই বসুন্ধরা গ্রুপ অফ কোম্পানিজের সাম্রাজ্য মাঝেমাঝে সবই অর্থহীন মনে হয়। মনে হয় যখন কিছুই ছিল না তখন কিছু করার যে উদ্যোগ, যে জেদ প্রতিটি নতুন সকালকে নতুনভাবে পাওয়ার যে আকাঙ্ক্ষা থাকতো তা এখন আর নেই। সাফল্য যখন অভ্যেস হয়ে যায় তখন বোধহয় একঘেয়েমি আসে।
আরও পড়ুন:

বসুন্ধরা এবং…, ৩য় খণ্ড, পর্ব-৩৬: টেলিপ্যাথি

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৬৭: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা— রামবাণ ও পানি তাঙ্কি

কিছু একটা পাওয়ার তাগিদ থেকে কাঙ্খিত দু’ একটা সাফল্য পাওয়ার পর যে আনন্দ। অনেককিছু পাওয়ার পর সেই আনন্দ আর আসে না। কিন্তু এখনও মানুষের মন পড়তে পারার দুর্লভ ক্ষমতা বিনয়কান্তিকে ছেড়ে যায়নি। সেই ক্ষমতাই তাকে যেন মনের ভেতর থেকে চুপিচুপি সমাধানের উত্তর বলে দিল। বিনয়কান্তি বিড়বিড় করে বললেন—
—বিমল?
সুরঙ্গমা আর অবাক হল না। বিনয়কান্তির এই বিরল ক্ষমতার পরিচয় সুরঙ্গমা আগেও পেয়েছে। তাই যেদিন বিনয়কান্তির কাছে শ্যাননের বিয়ে উপলক্ষে ঋতুকে সঙ্গে নিয়ে যাবার অনুমতি চাইতে এসেছিল সেদিন সুরঙ্গমার কেন যেন বারবার মনে হয়েছিল সে তার দেবতুল্য শ্বশুরমশাই বিনয়কান্তিকে মিথ্যে বলে ঠকাচ্ছে। বিনয়কান্তিকে দেখে সেদিন স্পষ্ট মনে হয়েছিল তিনি সবকিছু বুঝতে পারছেন।
—হ্যাঁ বাবা। আপনি ঠিক আন্দাজ করেছেন। ফুলঠাকুরপো এক্ষুনি ফোন করে জানিয়েছে, সে যাচ্ছে কীরার কাছে। বড়মা বলতেন, কার্যকারণ ছাড়া কোন কিছুই ঈশ্বর ঘটান না!
বসুন্ধরাকে সুরঙ্গমা বড়মা বলেন।
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫৯: শাসক বেকায়দায় পড়লেই প্রতিপক্ষকে সন্ধির প্রতিশ্রুতি দেয়, যদিও রাজনীতিতে সে সব মানা হয় না

পর্দার আড়ালে, পর্ব-৬২: সত্যজিৎ রায় রুপটান শিল্পীকে বলেছিলেন, উত্তমকুমারের কোনও মেকআপ করার

কথাটা শুনে বিনয়কান্তি ঘরের দেওয়ালের দিকে তাকালেন সেখানে বাবা শ্যামসুন্দর আর মা বসুন্ধরার ছবির মাঝে এখন স্বর্ণ’র ছবি।
—হ্যাঁ মা এ কথা বলতো বটে। কিন্তু কীরা বিমল আলাদা হয়ে যাবার পর- স্বর্ণ বারবার বলতো “মা যে বলে কার্যকারণ ছাড়া কোনও কিছুই ঈশ্বর ঘটান না, তাহলে এই ঘটনা ঘটলো কেন? যদি ঈশ্বর জানতেন যে ওদের মধ্যে মিলমিশ হবে না তাহলে ওদের দেখা হলো কেন? স্বর্ণকে দেবার মতো কোন উত্তর আমার কাছে থাকতো না। তাই তাকে প্রবোধ দেবার জন্যই বলতাম— “সময়! সময়ই ঈশ্বর স্বর্ণ। ভবিষ্যতের আগত সময় ঠিক বলে দেবে কখন কি কেন ঘটেছিল”। কিন্তু বিমলের এই ফিরে আসা সাময়িক নয় তো?
—জানি না বাবা আমার মন বলছে ‘না’। তবে আপনি যেমন বলছেন, সেরকম ভবিষ্যৎ নিশ্চয়ই বলে দেবে দুশ্চিন্তা না-আকাঙ্ক্ষা কোনটা সত্যি হবে?
লেখা থামিয়ে সুবর্ণ ভাবতে বসে সেও তো মনেপ্রাণে চেয়েছে যে কোনও একটা মিরাকল ঘটুক ফুলকাকা কীরা কাকিমা আবার একে অপরের কাছে ফিরে আসুন। কিন্তু তার জন্য কীরা কাকিমাকে যে অসুস্থ হতে হবে সেটা সেভাবেওনি চায়ওনি।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৮: জোসেফ কনরাড ও জেসি কনরাড—আমি রূপে তোমায় ভোলাব না…/৩

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৮৪: ঝোপে-ঝাড়ে হায়েনা

কিছু সম্পর্কের দূরত্বেও প্রাণ থাকে কিছু সম্পর্ক বিষিয়ে যায়। মানুষের মন মানুষের জীবন অনিশ্চয়তায় ঘেরা। ঠিক কী ঘটতে যাচ্ছে আর মানুষ সেটাকে ঠিক কীভাবে সামাল দেবে এ দুটোই অজানা থেকে যায়। উন্নতি করতে গেলে ঝুঁকি নিতে হয়। কেউ সেই ঝুঁকিটা অন্যায়ভাবে নেয়, আবার কেউ পরিশ্রমের পথে কারো ক্ষতি না করে নিজের উন্নতিসাধন করতে চায়। যাকে পরিশ্রমের পথে কারও ক্ষতি না করে জীবনসংগ্রাম পেরিয়ে এসে সাফল্য পেতে হয় তাকে বহুদিন ধরে তার আত্মবিশ্বাসকে ধরে রাখতে হয়। অন্যায়ের পথে যারা এগোয় তাদের সাফল্য চটজলদি যে অবিশ্বাস্য গতিতে আর্থিকউন্নতি ঘটে যায়ঠিক একই গতিতে মানসিক অবনতি ঘটে। একটা সময় তারা বিশ্বাসই করতে চায় না। যে জীবন তাদের কোনদিনও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দেবে। আর এটাও দেখা গিয়েছে সঠিক পথে সফল মানুষ মোটামুটি একা। কিন্তু অন্যায়ের পথে থাকা লোকজন দঙ্গল করে বাঁচে।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৮১: তথাকথিত পরিচয়হীন প্রতিভার মূল্যায়ন কী শুধুই সাফল্যের নিরিখে সম্ভব?

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৭: কী করে গল্প লিখতে হয়, ছোটদের শিখিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ

অর্কপ্রভর সঙ্গে সানন্দার সম্পর্কটা বিষিয়ে গিয়েছে। প্রণয় আর বাবলির সম্পর্কটা থমকে আছে। বাবলির সঙ্গে কথা বলে আমার বারবার মনে হয়েছে। প্রণয়কান্তির এত দুর্ব্যবহার সত্ত্বেও বাবলি যেন অবচেতন মনে তাকে ক্ষমা করে দিচ্ছে। বারবার। প্রণয়ও কিন্তু নানা অন্যায় করলেও এখনও অন্যকোনও স্থায়ী সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েনি। অথচ বাবলিকেও কাছে টেনে নিতে পারেনি, ওদের জন্য সূবর্ণ মনেপ্রাণে চায় আবার একটা মিরাকল ঘটুক। —চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।
 

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content