শুক্রবার ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫


বাবার অনুমান মতো বসুন্ধরা ভিলা এবং বিকেডি-র সাংঘাতিক সামাজিক প্রভাব প্রণয়কে অরুণাভ অপহরণকাণ্ড থেকে বাঁচিয়ে দিল। লালবাজারের তৎপরতায় কুলগাছিয়া রেলস্টেশনের কাছে প্রায় প্রত্যেকটি বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে একটি পরিত্যক্ত বাড়ির দোতলা থেকে ঘুমের ওষুধে অচৈতন্য অরুণাভকে উদ্ধার করা হল। ঘটনাস্থল থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে কলকাতার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হল অরুণাভকে। কলকাতা পুলিশ প্রেস কনফারেন্সে জানালেন, সারা বাংলা জুড়ে এই ঘটনার জোরদার তদন্ত চলছিল, পুলিশ সূত্রে খবর পেয়ে হাওড়া জেলার একটি জায়গা থেকে আজ প্রসিদ্ধ টেলিভিশন তারকা অরুণাভ বসুকে প্রায় অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। অভিনেতাকে কড়া রোজের ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছিল। তিনি এখন চিকিৎসাধীন। হাসপাতালে সূত্রে জানানো হয়েছে, তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল। কিন্তু দুর্বলতাজনিত কারণে তাঁর বিশ্রাম নেবার প্রয়োজন আছে। অভিনেতা সুস্থ হয়ে উঠলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তের পরবর্তী পর্যায় স্থির করা হবে।
একেবারে গতে বাঁধা প্রেস বিবৃতি। অরুণাভ ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠল। মাকে নিয়ে বাবা তাঁকে একদিন হাসপাতালে দেখে এলেন। সেই সঙ্গে জানিয়ে এলেন অরুণাভ’র আচমকা অন্তর্ধানের খবরে বাবলি এবং বসুন্ধরা ভিলার অনেকেই দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। একটা জরুরি দরকারে দিল্লিতে বাবলির বাড়িতে বাবলি ও প্রণয়কান্তি যাওয়াটা ঠিক ছিল। অরুণাভ উদ্ধারের খবরটা পেয়েই ওরা দিল্লি গিয়েছে। বাবলিরা ফিরে এলে, অরুণাভ অতি অবশ্যই যেন একবার বসুন্ধরা ভিলাতে আসে। বাবা নিজেই প্রসঙ্গটা তুলতে চাইছিলেন না, কিন্তু অরুনাভ বলল—
—দেখুন আপনার কাছে একটা সাজেশন চাই। কলকাতায় বছর পাঁচেক হয়ে গেলেও বাবলি ছাড়া আমার ঠিক সেরকম পরিচিত শুভানুধ্যায়ী কেউ নেই। আপনারা বাবলির গুরুজন, তাই আপনাদের কাছেই জানতে চাইছি।
—বলো না, এত কুণ্ঠিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। তোমার পেশাগত ব্যাপার হলে আমার স্ত্রী তোমাকে সাহায্য করতে পারেন। চেনো
নিশ্চয়ই। সুরঙ্গমা এক সময়ের…।
—কি বলছেন, ওনাকে তো সারা ভারত চেনে! না ঠিক পেশাগত নয় এই ঘটনা সংক্রান্ত একটা বিষয়।
—বলো।
আরও পড়ুন:

বসুন্ধরা এবং…, ৩য় খণ্ড, পর্ব-৪৫: প্রভাবশালী প্রণয়

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১০১: খামখেয়ালির গিরীন্দ্রনাথ

—মানে পুলিশ আমাকে একটু জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায়। ঘটনার দিন ঠিক কী কী হয়েছিল এই সব নিয়ে তদন্ত শুরু করতে চায়! আসলে আমার যেটা খেয়াল আছে সেটা টালিগঞ্জ থেকে শুটিংয়ের পরে আমি বেরিয়েছিলাম। একটা অ্যাসাইনমেন্ট ছিল। ওরা গাড়ি নিয়ে এসেছিল। ড্রাইভার আর সঙ্গে একটা লোক। সেই গাড়িতে বসতেই যেমন কথা ছিল সেই অনুযায়ী আগেই আমার অ্যাসাইনমেন্ট-এর পুরো টাকাটা ওরা দিয়ে দেয়। যেতে যেতে খিদে পেয়েছিল। মাঝে একটা ধাবায় খেয়েছিলাম। কোল্ড ড্রিঙ্কস খেয়েছিলাম। শুটিংয়ের ক্লান্তি ছিল। পিছনের সিটে আমি একা ছিলাম ঘুমিয়ে পড়ি। তারপর আর আমার কিছু মনে নেই। যখন ঘুম ভাঙল বা জ্ঞান ফিরল, তখন দেখলাম একটা অচেনা জায়গায় আমি বিছানায় শুয়ে আছি। আমার হাত-পা খাটে বাঁধা। মাথা ঘুরছিল। অসুস্থ লাগছিল। তার মধ্যেই কিছু লোক আমাকে খাবার খাওয়ায়। আবার ঘুমিয়ে পড়ি এ ভাবেই মাঝখানে ক’টা দিন কেটেছে সেটাও আমি ভালো করে জানিও না। এরপর আবার যখন জ্ঞান ফিরল তখন আমি নার্সিংহোমের বেডে শুয়ে আছি। আমি শুনলাম পুলিশ আমাকে রেস্কিউ করেছে। হসপিটাল থেকে আমাকে বলা হয়েছে, আমার সঙ্গে একটা খামের মধ্যে অনেক টাকা ছিল সেটা তারা রেখে দিয়েছেন আর ডিসচার্জের সময় দিয়ে দেবেন। আমার টাকাটাও নেয়নি। অথচ আমাকে নিয়ে গেল খাওয়ালো দাওয়ালো। নিশ্চয়ই বারবার ঘুমের ওষুধ দিয়েছিল। আমি ঠিক জানি না। আমি ওদের মোটিভটাও বুঝতে পারছি না। তাই পুলিশকে ঠিক কি বলব সে ব্যাপারেও আমি কনফিউজড।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১২: ক্যাথরিন ম্যান্সফিল্ড ও মিডলটন মারে, এক ভালোবাসাহীন বিবাহ

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৪৫: ঠাকুরবাড়ির মেয়েরা এবং চলচ্চিত্র

বাবা এরকম কিছু একটা আন্দাজ করেছিলেন। বাবা একবার মায়ের দিকে তাকালেন। হয়ত নিঃশব্দে বলতে চাইলেন, প্রণয়ের জন্য আর কত পাপ করতে হবে। মা-ও তাঁর দৃষ্টিতে হয়ত বুঝিয়ে দিলেন, প্রণয় নয় বাবলির জন্য করতে হবে। বাবা চুপ করে চোখ বুজিয়ে ভাবলেন। আসলে এটা যেন সেই বিশেষ মুহূর্ত যখন সাহিত্যিক অমলকান্তি দত্ত তাঁর নিজস্ব ঈশ্বরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেন।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৭৬: সুন্দরবনের পাখি—কুরচি বক

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩৩: হৃদয়পুরের লক্ষ্যপূরণ ‘কঙ্কাবতীর ঘাট’

—দেখো অরুণাভ এই সিদ্ধান্তটা বেশ কঠিন। এখানে মতামত দেওয়াটা বড় শক্ত। তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার একটা পদ্ধতি আছে। তার জন্য স্থিরভাবে তোমার মনকে জিজ্ঞেস করতে হবে তুমি কী করতে চাও? সাদা চোখে দেখলে হয়তো তুমি তোমার শত্রুদের চিহ্নিত করতে পারবে না! কিন্তু তুমি একজন পাবলিক ফিগার তো, তাই বহু মানুষ যেমন তোমার গুণমুগ্ধ, তেমন নিজের অনিচ্ছাসত্ত্বেও তুমি হয়তো অনেকের বিরাগভাজন। এ বার একজন শিল্পী হিসেবে তোমার কী করা উচিত? এই সব কিছুর থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে আবার তোমার নিজের কাজে মনোনিবেশ করা উচিত!
আরও পড়ুন:

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-১৪: আমি তাইতে কি ভয় মানি!

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৪৬: আলাস্কার আকাশে অহরহ ব্যক্তিগত বিমান ওঠানামা করে

তুমি যদি একজন সাধারণ লোক হতে তাহলে পুলিশের এইসব তদন্ত জিজ্ঞাসাবাদ এসবে সময় দিতে পারতে। আরে জিজ্ঞাসাবাদেই তো ব্যাপারটার ইতি ঘটবে না। পুলিশ কিছু লোককে তদন্তের সূত্র ধরে গ্রেপ্তার করবে। যারা গ্রেপ্তার হবে তারা তাদের উকিল লাগাবে। আদালতে কেস চলবে। বাদী ও বিবাদী পক্ষ দু’জনকেই আদালতে উপস্থিত হতে হবে। কয়েক মাস নয়, কয়েক বছর ধরে কেস চলতে পারে। যেহেতু তোমার পেশায় তোমার মূলধন হল মানসিক শান্তি, তোমার শরীর স্বাস্থ্য এবং সময়ের পূর্ণ ব্যবহার সেহেতু এই লম্বা সময়টা তুমি দিতে পারবে না। আর দিতে পারলেও-বা তুমি পাবে কী? যারা ধরা পড়বে, যদি সেই দোষটা আদালতে প্রমাণ হয় তাহলে তাদের সর্বাধিক সাত বছরের সাজা হবে! আর যারা ধরা পড়বে সেই এক-দুই-তিন বা চার, যে ক’জন অপরাধী সাব্যস্ত হবে সাত বছর পর তোমার সে ক’জন নতুন শত্রু তৈরি হবে। —চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content