বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


মারিও পুজোর গডফাদার উপন্যাসের বিখ্যাত ডন ভিটো করলেওনের প্রধান মন্ত্রণাদাতা ছিলেন টম হেগেন। ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলার বিখ্যাত গডফাদার চলচ্চিত্রে মার্লন ব্র্যান্ডো, অ্যাল প্যাচিনো, জেমস কানের মতো অভিনেতার সঙ্গে ‘টম হেগেনের’ এই বিশিষ্ট চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন রবার্ট ডুভল। বসুন্ধরা ভিলার বিকেডি বিনয়কান্তি দত্ত, ভিটো করলেওনে না হলেও টম হেগেন হলেন তারক নিয়োগী।

এই পরিবারের কালপুরুষ অরিয়ন। সমস্ত বিপদে-আপদে সর্বক্ষণ সঠিক মন্ত্রণা দিয়েছেন এ পরিবারের প্রধান পুরুষকে।
সে বাবুদাদাকে নকশাল আন্দোলনের ঝামেলায় লালবাজার থেকে টিউশন ক্লাসের বন্ধুবান্ধব সমেত ছাড়িয়ে আনা, বাবুদাদাকে কলকাতা থেকে দেওঘরে পড়তে পাঠানো, বেনারসে বাচ্চামহারাজের তত্ত্বাবধানে বাবুদাদার কলেজে পড়া সবেতেই তারকবাবু সক্রিয় ছিলেন। বসুন্ধরা ভিলার প্রাণপুরুষ বিনয়কান্তি দত্তের ইচ্ছা অনুসারে এ পরিবারের কেউ কখনও তারক নিয়োগীকে কর্মচারী হিসেবে গণ্য করেননি। স্বয়ং বসুন্ধরা দত্ত তারকবাবুকে সন্তান স্নেহে গণ্য করতেন। স্বর্ণময়ী বাবুকে ভাইফোঁটা দিতেন। বসুন্ধরা নিজে পুজোর সময় সকলের সঙ্গে তারকবাবুর জন্য ধুতি-পাঞ্জাবি কিনতেন। তারকবাবু প্রতি বছর পুজোর পঞ্চমীর দিন বসুন্ধরার পায়ের কাছে একটা গরদের থান রেখে বলতেন—
—মা আপনি পুজোতে পরবেন।
আরও পড়ুন:

দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং..., পর্ব-৩১: ঝাঁকের কৈ

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৬৩: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা— কেরালি ও নোনা হাতিশুঁড়

প্রতিবার মহাষ্টমীর দিন সকালে বসুন্ধরা তারকবাবুর দেওয়া গরদের থান পরে ঠাকুর দালানে যেতেন। ব্যবসায় সাফল্যের পর থেকে বিনয়কান্তি পুজোতে মাকে আর স্বর্ণকে বেনারস থেকে অর্ডার দিয়ে আনানো বেনারসি শাড়ি উপহার দিতেন। কিন্তু সে শাড়ি বসুন্ধরা বিজয়া দশমীতে পরতেন। স্বর্ণময়ীর জন্য ভ্রাতৃদ্বিতীয়ায় শাড়ি আনতেন তারকবাবু। তবে স্বাভাবিকভাবেই বসুন্ধরা ভিলার দুজন তারক বাবুর এই পারিবারিক সম্পর্ককে ভালোভাবে দেখত না। আমার ন’কাকীমা সুজাতা আর তাঁর ছেলে প্রণয়কান্তি।
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫৫: পতন আসন্ন হলেই সবার বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়

দশভুজা, পর্ব-৩৬: মৃণালিনী— রবি ঠাকুরের স্ত্রী-র লেখকসত্তা

তারকবাবুকে অসম্মান না করলেও বাবুদাদাও কিছুতেই তাঁকে সহ্য করতে পারতো না, বাবুদাদার ক্রমাগত মনে হতো তারক নিয়োগী দাদু বড়ঠাকুমা এবং বসুন্ধরা ভিলার মর্যাদা রাখতে গিয়ে তাকে আপোষের জীবনে টেনে নিয়ে এসেছে। আসলে ছোটভাই গৌরবের মতো সফল জীবনের স্বাদ পায়নি সৌরভ দত্ত। বসুন্ধরা ভিলার আশ্রয়ে থাকতে থাকতে নিজের আত্মবিশ্বাস হয়তো খানিকটা আলগা হয়ে গিয়েছিল। বাবুদাদার হারিয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাস কিছুটা হলেও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন প্রাইভেট টিউশনের শিক্ষক অমিতাভ সেন এবং তার স্ত্রী মনীষা সেন। নকশাল আন্দোলনের প্রথম সারির নেতা হিসেবে অমিতাভ ও মনীষার গ্রেফতার হওয়া, বাবুদাদার কাছে একটা ভয়ঙ্কর ধাক্কা।

অমিতাভদা বা মনীষাদিকে বাবুদাদা যতটা ভরসা করত বসুন্ধরা ভিলার আর কাউকে হয়তো বা তেমনটা নয়। অমিতাভদা বা মনীষার গ্রেপ্তার হওয়ার পিছনে বসুন্ধরা ভিলার কারও বা তারক নিয়োগীর কোনও হাত না থাকলেও বাবুদাদার অবচেতন মনে কোথাও একটা এরকম বিশ্বাস তৈরি হয়েছিল। বাবুদাদার কোন কোন সহপাঠী তৎকালীন বাম রাজনীতির নেতৃস্থানীয় হয়ে উঠেছিলেন, তাদের সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগের ফলে বাবুদাদা বাম-রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ল। দীর্ঘদিনের কংগ্রেস ও যুক্তফ্রন্ট শাসনের পর পশ্চিমবঙ্গ তখন লালে লাল। তারকবাবু সকলের আগে খবর পেলেন। কিন্তু দাদুকে কিছু জানাবার আগে তারকবাবু বাবার সঙ্গে কথা বললেন।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৭: কী করে গল্প লিখতে হয়, ছোটদের শিখিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৬০: শ্রীমার রামেশ্বরম যাত্রা

অন্যদিকে দিল্লির প্রবাসীবন্ধু অরুণাভর সঙ্গে বাবলির যোগাযোগ প্রণয়কে আবার নতুন দুর্বলতার দিকে ঠেলে দিলো। কোন প্রণয় কখনোই বাবলিকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু প্রণয়ের অসম্মান, তার দূর্ব্যবহার সবকিছুকে মেনে নিয়ে বাবলি আপসের পথ নিয়েছিল। শুধুমাত্র ক্লাবে জুয়া খেলতে বসে বাবলিকে বাজি রাখা, জুয়াতে বাজি জিতে বাবলির প্রতি নারীত্বের অপমানে প্রণয়ের সঙ্গী আগরওয়ালের চরম দুঃসাহস বাবলিকে সাংঘাতিক প্রতিবাদী করে তুলেছিল। এ সব পুরনো ইতিহাস। বসুন্ধরা ভিলা ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছিল বাবলি। কিন্তু যেতে পারেনি ন’কাকা পঙ্গু চিত্রকর তরুণকান্তির কথা ভেবে। এরপর বন্ধু অরুণাভের সঙ্গে যোগাযোগ হওয়াটা নেহাতই কাকতালীয়।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৮: জোসেফ কনরাড ও জেসি কনরাড—আমি রূপে তোমায় ভোলাব না…/৩

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৯: হারিয়ে যাওয়ার ‘জীবন তৃষ্ণা’

কিন্তু কিভাবে যেন দিল্লিতে কলেজজীবনে অরুণাভের সঙ্গে হিন্দি রক্তকরবীতে একসঙ্গে অভিনয় করার ভিডিয়ো ক্যাসেট-এর খবর ন’কাকিমার সুজাতা পেয়ে গেলেন। সেখান থেকে জানল প্রণয়। যে পাঠকেরা প্রণয়কে প্রথম দিন থেকে চেনেন তাঁরা তাঁদের ব্যক্তিগত পরিসরেই এমন বহু প্রণয়কান্তির মিল পাবেন। আত্মবিশ্বাসের অভাব থেকে মানুষ হিংসুটে তৈরি হয়। সেই দূর্বলতা প্রণয়ের মধ্যেও ছিল। তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে বাবলির গুরুত্ব প্রায় ছিল না, কিন্তু যে মূহুর্তে একজন দ্বিতীয় পুরুষের আগমন হল সঙ্গে সঙ্গে পুরনো সমীকরণ বদলে গেল।—চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।
 

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়মসা

‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content