বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী।

সেপ্টেম্বরের আট তারিখ আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস। জাতিপুঞ্জের মূল লক্ষ্যগুলির অন্যতম বিশ্বজুড়ে লিটারেসি বৃদ্ধি করা, আত্মমর্যাদার উপলব্ধি ও মানবাধিকার রক্ষায় সার্বিকভাবে সচেতন হয়ে ওঠা মানুষের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে মানুষ বলে চিনতে যাতে ভুল না হয় তার জন্য এ সবের আয়োজন।

বলা হয়, শিক্ষা থেকে চেতনার জাগরণ ঘটে। যারা রাজা-গজা, তাদেরও ‘বিনয়ী’ হয়ে উঠতে হয়। কৌটিল্য এমনটা মনে করতেন বলেই অর্থশাস্ত্রের গোড়াতেই রাজার শিক্ষা বা বিনয় নিয়ে বলেছেন। যে দেশকে ‘নিয়ে’ যাবে, নেতা হবে, তাকে চালনা করবে, নিয়ে যাবে কে? তার জন্যই বিনয় শেখানো, বিনীত করা। তবে তা ‘মানুষ’ করে তুলতে পারে কীনা তা বলা যায় না, কারণ শিক্ষার সে দায় নেই। যাকে ‘স্কিল’ বলে, সে যে কাজই হোক না কেন, শিক্ষা তাকেই গ্রহণযোগ্য করে তোলে।
এ শুধু আজকের কথা নয়। সেদিনও তাই ছিল বলে মনে হয়। রাজা ঠিক কী কী করলে নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাজ্যকে অটুট রাখতে পারবে তার শিক্ষাই রাজাকে করতে হতো। তার সঙ্গে বৃহত্তর ও ব্যক্তিজীবন, নীতি, এথিকস কিংবা সামগ্রিক কল্যাণবোধের যোগাযোগ স্থাপন করা যেতেই পারে, তবে তা খাতায়-কলমে আটকে থেকে যেতে পারে। কারণ, তাকে সঙ্গে নিয়ে চলার দায় কর্মে পারঙ্গম হয়ে ওঠার শিক্ষার নেই। কিন্তু সমাজের কাজে না লাগলে শিক্ষার দাম নেই এমনটাও তো বলা হয়। তাও যথার্থ ও তেমনটাই হওয়া উচিত বটে।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৬২: শ্রীমার দক্ষিণ ভারত থেকে প্রত্যাবর্তন

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৬৪: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা—গিরা শাক ও যদু পালং

শাস্ত্রে, দর্শনে, উপদেশে বিদ্যা, জ্ঞান ইত্যাদি নিয়ে বহু আলোচনা, বিসম্বাদ ও তথ্য আছে। শিক্ষা মূলতঃ বেদাঙ্গের অংশ। এখন, শিক্ষা, বিদ্যা ইত্যাদি প্রায় সমতুল করে তুলে, সমপর্যায়ভুক্ত ভেবে বিপদ বেড়েছে বৈ কমেনি। আমরা ভেবেছি, এসবের ফল হল ‘জ্ঞান’… যা কীনা অজ্ঞানের বিপরীত। তো, শিক্ষিত, বিদ্বানমাত্রেই জ্ঞানী এবং আজকের দুনিয়ায় সকলেই জ্ঞানী। এর সঙ্গে যুক্ত আছে অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ। অথচ এদের অনেকেই আবার সাক্ষর নয়। অথবা, স্বাক্ষর করতে পারেন।
আরও পড়ুন:

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৩৯: ভারতের বিপ্লবী মেয়েরা এবং অন্তরে রবীন্দ্রনাথ

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৫২: পুলক রাখিতে নারি (কেল)

তাহলে সাক্ষর হলেই কি তাতে বিদ্বান হয়, বিদ্বান হলেই কি অভিজ্ঞ হয়, অভিজ্ঞ হলেই কি জ্ঞানী হয়, জ্ঞানী হলেই কি শিক্ষিত হয়, অথবা শিক্ষিত হলেই কি লিখতে পারে, সই করতে পারে? নাকি করাটা বাধ্যতামূলক? চৌর্যবিদ্যাও তো বিদ্যার শ্রেণিভুক্ত, তার প্রকৌশল, বিচক্ষণতার বিদ্যাও তো অভ্যাসে অর্জন করতে হয়, তাও জ্ঞানের পর্যায়ভুক্ত। তবে সেই জ্ঞান কি উপনিষদবেত্তা জ্ঞানীর?
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৮: জোসেফ কনরাড ও জেসি কনরাড—আমি রূপে তোমায় ভোলাব না…/৩

রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, পর্ব-৪৬: দুবেজিকে নিয়ে ধৃতিমানের অনুমান সত্যি

যে শেয়ালটা আঙুরফল টক বলে চলে গিয়েছিল, সে আসলে ঐ ফল লাভ করার মতো সামর্থ্য অর্জন করতে পারেনি। শিক্ষা, বিদ্যা চেতনার আলো জ্বালিয়ে তোলার আয়োজন রাখতে পারে, উপলব্ধি বা বোধ, যেটার প্রকাশকেই জ্ঞান বা শিক্ষা-বিনয় ভেবে ভ্রম হয়, তা কোনও বিদ্যানিকেতনের আনুপূর্বিক উপদেশদানে জেগে ওঠে কি? নাকি নিজের ভিতরঘর থেকেই উদ্গত হয়?

শিক্ষা স্কিলড, সমর্থ করেছে, করবে। বিদ্যা, জ্ঞান যে যা অর্জন করেছে, করবে তা কতটা প্রায়োগিক কতটা তাত্ত্বিক, কতটা জীবনের, কতটা নিজের জন্য তা দেশ, কাল, পরিস্থিতি ও সময় নির্ধারণ করে দেবে। যারা সাক্ষর হচ্ছেন বা হবেন, তাঁরা ক্রমে ক্রমে পারঙ্গম হবেন। হয়তো বা। যিনি যা করছেন বা করবেন, যে বৃত্তি গ্রহণ করে জীবন ধারণ করছেন, করবেন তাকে আরও সমুজ্জ্বল করে তুলবে তাঁর শিক্ষা, অর্জিত জ্ঞান, বিদ্যা, অভিজ্ঞতা। এমনটা হয়ে এসেছে, হবেও।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬১: ‘বন্ধু’ তোমার পথের সাথী

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-১০: মর্ত্যে আনিল ধ্রুবতারকারে ধ’রে

এই শিক্ষা, বিদ্যা, অভিজ্ঞতা কি চেতনা এনে দেবে? যা নিজেকে বুঝতে, চিনতে, জানতে, মানতে, রক্ষা করতে ভাবাবে? এই শিক্ষা, বিদ্যা, অভিজ্ঞতা কি চেতনা এনে দিয়েছে? যা নিজেকে বুঝতে, চিনতে, জানতে, মানতে, রক্ষা করতে ভাবিয়েছে? যদি তাই হয় তবে কলমের আঁচড়টুকু রেখা, বর্ণ, শব্দে মধুর হয়ে উঠবে, কী বোর্ডের ঠকঠকের কোরাস হবে ঝঙ্কার। নচেত্, ট্রেনে বাসে আশে পাশে যারা পায়ের ওপর পা তুলে দিচ্ছে, বসার জন্য জীবনপণ করছে, সঙ্কোচ আর লজ্জার ব্যবধান ভুলেছে, তাদের পকেটেও কলম উঁকি দেয়, তাদের চোখেও স্কিলের ঝিলিক, কিন্তু…
* হুঁকোমুখোর চিত্রকলা : লেখক: ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।

Skip to content