রবিবার ১০ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী।

ভয় পাচ্ছো? অধর্মের? নাকি ভরসা হারিয়ে ফেলছো, জীবন, সত্য, ধর্ম, ন্যায় এই শব্দগুলো অভিধানের দিকেই আবার ক্রমশ ফিরে যাচ্ছে দেখে? নাকি এটাই ভাবছো যে, যাদের সঙ্গে তোমার আজন্মের বন্ধন, তারাই আজ শত্রু। আর সেই বন্ধনকে পার হয়ে ভীষণ শত্রুতার ভয়াল ভ্রূকুটি তোমাকে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে বনের পথে পথে, নিজের সত্তাকে বিস্মৃত হয়ে অজ্ঞাত আরেক সত্তার আবরণ তোমাকে আরও আগ্রাসী করেছে। ভূমিভাগ, রাজ্য চাই। ন্যায্য অধিকার চাই, ক্ষমতা চাই। বীরভোগ্যা বসুন্ধরা তোমার হাতে কিছু তুলে দেয় না। তাকে অর্জন করে নিতে হয়। এটাই জীবন। এটাই জগৎ। এটাই রাজনীতি। এটাই রণনীতি।
জীবনটা যজ্ঞ। জীবনটা যুদ্ধ-ও। কার সঙ্গে যুদ্ধ করছো? একান্ত আপনার যে সেই আজ প্রতিদ্বন্দ্বী, সে বাধ্য না অবাধ্য, জেয় না অজেয়, বধ্য না অবধ্য এই দুর্ভাবনা তোমাকে হীনবল করছে তো? তুমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ভাবছো, কী করণীয় আর কী করলে নেমে আসবে পাপের মহাভার, কী করবে বলে সহস্র বিনিদ্র রজনী যাপন করেও আজ পশ্চাদপসরণই শ্রেয় বলে মনে করছো, এক অনিঃশেষ আশঙ্কা আর বিপুল হতাশার অতল অন্ধকূপে তুমি নিমজ্জিত হচ্ছো, তোমার সেই অনন্ত অবসাদ আর অনিয়ন্ত্রিত আবেগের বিস্ফার তোমাকে দিনে দিনে রোজ রোজ ডুবিয়ে মারছে, নতুন করে হারছো রোজ, প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে মরছো নিজের কাছে, নিয়তি আর মৃত্যুর মহাসত্যকে ধ্রুব জেনে জীবন্মৃত হয়ে জীবনের সেই মহাগান, মহাকর্মের উদাত্ত আহ্বান থেকে মুখ ফিরিয়ে উদাসীন হয়ে আছো কেবল। নিজেকে গৌরবদান করতে অন্তরাত্মার ওই নিত্য অপমান দেখো না? চরৈবেতির মহাপ্রেরণা, যতো ধর্মস্ততঃ জয়ের নির্ভয় মহাধ্বনিকে বিস্মৃত হয়ে এমন প্রমত্ততা কেন আসে, জানতে চেয়েছো নিজের কাছে?
আরও পড়ুন:

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-৪: যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না?

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-৪: যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না?

নিজেকে জানো।

আত্মার আত্মীয় যে, তার প্রকৃত স্বরূপ জেনেছো? জেনেছো কখনও নিজের প্রকৃত স্বরূপ? রণাঙ্গণে একদিকে শত্রুর উন্মত্ত আক্রমণ, নির্দয় শোষণ, ভয়াল তাড়ন অন্যদিকে সেই শত্রুই ভ্রাতা, মিত্র, সুহৃদ, অগ্রজ, অনুজের মর্ত্যবন্ধনে তোমাকে দুর্বল করছে। চরৈবেতির মহাপ্রেরণা, যতো ধর্মস্ততঃ জয়ের নির্ভয় মহাধ্বনিকে বিস্মৃত হয়ে এমন প্রমত্ততা কেন আসে, জানতে চেয়েছো নিজের কাছে?
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৭৪: রাজা দশরথ, রাম, লক্ষ্মণ, সীতা সকলেই কি এক একটি জীবনবোধের প্রতীক?

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫২: হিতকারী মূর্খ বন্ধুর থেকে একজন পণ্ডিত শত্রু থাকা ভালো

নিজেকে জানো।

ভীষণ প্রতিজ্ঞা, বীরধর্ম, সত্যধর্ম, ঋত ও তপস্যায় যুগসঞ্চিত শক্তিকে মুহূর্তে নস্যাত্ করে চরৈবেতির মহাপ্রেরণা, যতো ধর্মস্ততঃ জয়ের নির্ভয় মহাধ্বনিকে বিস্মৃত হয়ে এমন প্রমত্ততা কেন আসে, জানতে চেয়েছো নিজের কাছে?
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৭৭: কথা কিছু কিছু

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৪৭: ও বন্ধু তুমি শুনতে কি পাও?

নিজেকে জানো।

জানো তোমার দুটি চোখের ভ্রান্তি, কর্ণের প্রমাদ, নাসা জিহ্বা আর ত্বকের আবিষ্ট আসক্তিকে, জানো অন্তরিন্দ্রিয় মনের অশান্ত উদ্ভ্রান্ত অচেতনাকে, জানো ইন্দ্রিয়মত্ততার পরিণাম, নিমেষেই পরম বান্ধবের বিপরীতগমন আর জীবধর্মের সত্যকে। জানো ইন্দ্রিয়ের অন্তরালে থাকা রহস্যঘন-কে। সেই পথেই প্রকাশ পাবে ঋত, সত্য, ন্যায় আর ধর্ম, অভিধানের পাতা থেকে মহাসমরের মহাসঙ্গমে তারা নেমে আসবে, জীবন-মরণের সীমা অতিক্রম অপেক্ষমান ভিড় থেকে বন্ধুকে চিনে নিতে পারবে তখনই। —চলবে।
* গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে (A Special Write Up on Shrimad Bhagwat Gita): লেখক: ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।

Skip to content