বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী।

বিস্মৃতপ্রায় অতীতের কুরুক্ষেত্রের সেই রণাঙ্গন। বিরাট পুরুষ হয়ে ধরা দিলেন এক যুগন্ধর নেতা। নেতা তিনিই, যিনি নিয়ে যান। তোমার বোধ, বুদ্ধি, চেতনাকে এক কূল থেকে অন্য কূলে উত্তীর্ণ করবেন তিনি। তুমি জেগে উঠবে প্রভাতের পাখির মতো, আত্মদীপ হয়ে। মহাজ্ঞানী মহাজন বলে গিয়েছেন, ওঠো জাগো অভীষ্টকে না পাওয়া পর্যন্ত থেমো না। অথচ ক্লান্তির অঙ্গরাগ তোমাকে অবসন্ন করবে, তোমার নিজের চারিদিকে জমে থাকা কুয়াশার ভার তোমাকে পিছু ডাকবে বারবার। নেতা তোমার গ্লানি মুছে ভয় থেকে অভয়ে, দীনতা থেকে অক্ষয়ধনে, সংশয় থেকে সত্যসদনে, জড়তা থেকে নবীন জীবনে নূতন জন্ম দেবেন।
যাক না পায়ের তলার মাটি, তুমি তখন ধরবে আঁটি। তুলে নিয়ে দুলাবে ওই বাহুদোলার দোলে? সুখেই তো থাকতে চেয়েছিল উভয়পক্ষ-ই। শেষে সূচ্যগ্র মেদিনীর অধিকারের জন্য সংগ্রাম। তুমি লড়ছো না কাপড়া মকান কী রোটির জন্য? কিংবা আরও, আরও, আরও কিছুর জন্য? লড়ে পাচ্ছো? নাকি একটা লড়াই থামলে আরেকটা? জীবনের সেই যুদ্ধ যখন এসে থামবে সেই মোহানার ধারে, তখন সেখানে সাদা-কালো, আঁধার-আলোর সংগ্রাম, সেখানেই আরব্ধ আগমনী।
আরও পড়ুন:

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-২: অসীম রোদন জগৎ প্লাবিয়া দুলিছে যেন?

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৩: টলস্টয় ও সোফিয়া—সে কি কেবলই যাতনাময়…/৩

ভাবছো কি যে অন্যায় করছো? সামনের ওই ওদের কাছ থেকেই ছিনিয়ে নিতে হবে সব কিছু যা এতদিন চেয়েছো? পারবে না তো? মনে পড়ে, কংসের কথা? কারাগারে ছিনিয়ে নিতো একের পর এক শিশু, কিন্তু আটকাতে পেরেছিল সেই বিরাট্ শিশুর আগমন? ধর্মের প্রতিষ্ঠা আর অধর্মের বিনাশের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে হে ভারত! তবুও, তোমার মনে হচ্ছে, এ অন্যায়! এ অসম্ভব!
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৫৫: সঙ্গীত অনুরাগিণী মা সারদা

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৫৮: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা— বাবুর ও বন জুঁই

শৈশবে প্রথমদিন যখন ধনুর্বাণ গ্রহণ করেছিলে, তখন বুঝি জানতে তুমি অগ্রগণ্য ধনুর্ধরদের অন্যতম হবে? তোমার দিগ্বিজয়ের সামনে নতজানু হবে তামাম বিশ্ব? এই অজ্ঞান-ই তোমাকে বাধা দিচ্ছে। তুমি জানো না তুমি কী করতে পারো, তোমার মধ্যে সুপ্ত সেই শক্তি আবেগ আর মোহের মেঘে আচ্ছন্ন হয়েছে বারবার, আজ এই সকাল সেকারণেই মনে হচ্ছে রাতের থেকেও বুঝি গাঢ়তর তমিস্রায় ঢাকা পড়েছে।

উপনিষদের বাণী স্মরণ করো, “ওঠো, জাগো, যা তোমার অভীষ্টতম তাকে বরণ করে নিতে হবে, তার আগে থেমো না। এখনই যদি পাখা গুটিয়ে নাও, তাহলে তুমি অন্ধ, ঐ ধৃতরাষ্ট্রের মতো।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৬: স্রোতস্বিনী পদ্মায় লাফিয়ে কবির কটকি চটি-উদ্ধার

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৯: হারিয়ে যাওয়ার ‘জীবন তৃষ্ণা’

কীসের অন্যায়? কীসের ন্যায়? ন্যায় অন্যায় কি আপেক্ষিকতায় দুষ্ট নয়? সমাজ গঠনের আগে যা ন্যায় ও স্বাভাবিক ছিল, সমাজ গঠনের পরে তা-ই তো অন্যায়! প্রজার পক্ষে যা অহিতকর, রাজার পক্ষে সেটাই তো রাজধর্ম! ব্রাহ্মণ যে নিষ্কর ভূমি দানরূপে গ্রহণ করছেন, তা হরণ করলে ধর্মভয়, তাকে উপেক্ষা করলে ধর্মাধিকরণ আর দণ্ডের রক্তচক্ষু। আর এদিকে, রাজা বিজীগিষু না হলে তিনি যোগ্য-ই নন। বিজীগিষু রাজা পররাজ্যের ভূমি গ্রহণ করবেন, সম্মুখ সমরে অথবা ছলে বলে কৌশলে। দ্যূতসভায় কী হয়েছিল তা বুঝি বিস্মৃত হয়েছো? তারপরেও বলবে এ যুদ্ধ অন্যায়, অনাকাঙ্ক্ষিত, অধর্মের আর্তনাদ?
আরও পড়ুন:

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-২: অসীম রোদন জগৎ প্লাবিয়া দুলিছে যেন?

বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-৯: ফেরেন্তস পুসকাস: দুটি দেশের হয়েই বিশ্বকাপ খেলেছেন

নাহে! এই যুদ্ধ ধর্মযুদ্ধ। তুমি বৃক্ষশাখায় বসে একান্তমনে কর্মের ফলের আস্বাদ সুখে গ্রহণ করে চলেছো যে, এই ভ্রান্তি তার-ই প্রতিফল। একবার তোমার ওই অন্তঃকরণকে বলো, “যাক না গো সুখ জ্বলে….হার মেনেছি, মিটেছে ভয়—তোমার জয় তো আমারি জয়/ধরা দেব, তোমায় আমি ধরব যে তাই হলে।”—চলবে।
* গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে (A Special Write Up on Shrimad Bhagwat Gita): লেখক: ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।

Skip to content