শুক্রবার ৮ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী।

এ বার একটা বানরের গল্প জাতকমালা থেকে। সেবার বোধিসত্ত্ব রাজার অমাত্য হয়ে জন্মেছেন এবং প্রভুকে ধর্ম ও অর্থবিষয়ে পরামর্শ দিয়ে তাঁর সর্বার্থসিদ্ধি করেন। একবার প্রান্তদেশীয় জনগণ বিদ্রোহী হল, সেই সংবাদ রাজার কাছে পৌঁছল।

তখন ঘোর বর্ষাকাল। বর্ষাকালে পথঘাট জলের স্রোতে অবলুপ্ত, আকাশে ঘোর ঘনসমাগম, তপনহীনঘন তমসায় আচ্ছন্ন সেই কাল যুদ্ধযাত্রার একান্ত অনুপযুক্ত, এই সময় প্রবাসীরা ঘরে ফেরে। ঘরের মানুষ কোণে বিশ্রান্তিযাপন-ই তখন এই কালের ধর্ম।
তবুও রাজা যুদ্ধে চললেন। রাজপুরীর বাইরে এসে স্কন্ধাবার স্থাপন করলেন। সেই উদ্যানে বহু বানর থাকতো। রাজা তাঁর সেই অমাত্যকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, অশ্বপাল অশ্বকে কলাই সিদ্ধপূর্ণ পাত্র দিয়েছে খাওয়ার জন্য। এমন সময় একটি মর্কট গাছ থেকে নেমে এসে কলাই মুখে পুরে দিল, দুই হাতে যত পারল কলাই নিয়ে গাছে উঠে গেল।
আরও পড়ুন:

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৪৩: প্রফুল্লময়ী— একটি বইয়ের লেখক এবং একটি জীবন ভরা ডিপ্রেশন

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৮: মংপুর কমলালেবু পেয়ে অসুস্থ কবি খুব আনন্দ পেয়েছিলেন

গাছে বসে কলাই খেতে খেতে তার হাত থেকে একটা কলাই ভূমিতে এসে পড়ল, এমন সময় হাতের সকল কলাই ফেলে দিয়ে সেই বানর বৃক্ষ থেকে নেমে ভূমিতে পতিত কলাইটির সন্ধান করে বেড়াতে লাগল, কিন্তু তার আর কোনও সন্ধান না পেয়ে আবার গাছে চড়ে এমন বিষণ্ণবদনে ম্লানমুখে বসে থাকল, যেন তার সহস্রমুদ্রা ক্ষতি হয়েছে।
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৬৪ : অকারণে কেউ অন্যের ভালো করতে যায় না

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৭০: ভানুপিসি ও শ্রীমার ভক্ত

রাজা মর্কটের এমন কাণ্ড দেখে অত্যাশ্চর্য হয়ে বয়স্য অমাত্যকে এমন আচরণের কারণ জানতে চাইলে অমাত্য জানালেন যে, কাণ্ডাকাণ্ড জ্ঞানহীন নির্বোধের পক্ষে এমন স্বাভাবিক। শাস্ত্র বলেন, ভূমাতেই সুখ, বিপদে ক্ষুদ্রকে ত্যাগ করে অধিকের প্রতি যত্নশীল হতে হয়। তবে এই বানর বিপন্ন নয়, দিব্যি কাম্য সুখের প্রতি আসক্ত, তবুও “বহুকে” ত্যাগ করে এমন অসম্ভব “স্বল্পের” প্রতি তার এই অভিনিবেশ মূর্খতাই।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১০: ভার্জিনিয়া ও লিওনার্ড উলফ—উন্মাদনা ও সৃষ্টি /২

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫১: সেই ‘পৃথিবী আমারে চায়’

এই দৃষ্টান্ত রাজার জ্ঞানচক্ষুকে উন্মীলিত করল। তিনি সেখান থেকেই রাজধানীতে ফিরে এলেন। বিদ্রোহী দস্যুরা রাজার আগমনবার্তা শুনে প্রত্যন্তদেশ ছেড়ে ততক্ষণে পালিয়ে গিয়েছিল। ফলত মঙ্গলময় পরিসমাপ্তি ঘটল কাহিনির।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৭৩: সুন্দরবনের পাখি—কোঁচ বক

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৮৭: যুগধর্মের সমর্থনহীন ধর্মচিন্তার স্থান কোথায়?

বাঁদরের হাতে খন্তা কিংবা গলায় মুক্তোর মালা এলে কী হতে পারে তা জানা আছে। জাগতিক ইতোবৃত্ত থেকেই জীব তার অভিজ্ঞতা অর্জন করে, পূর্ণ হয়। তবে “আধার” বা গ্রহণসামর্থ্যের উপরেই তার সাফল্য নির্ভর করে। এ গল্প মানুষকেই লক্ষ্য করে; এই কাহিনি অজ্ঞ ও প্রাজ্ঞের সেই পূর্ণ হয়ে ওঠার যাত্রাপথে আলো ফেলে।
* ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।

Skip to content