
গত ৩ মে শনিবার ২০২৫, ডানকুনি বিনোদিনী নাট্যমন্দিরে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আয়োজক ‘তানসেন মিউজিক রিসার্চ আকাদেমি’ নামক একটি সাংস্কৃতিক সংস্থা। ‘কথায় ছন্দে সুরে স্নাত এক বৈশাখী সন্ধ্যা’ নামাঙ্কিত এই অনুষ্ঠানটি পরিপূর্ণ ছিল বিভিন্ন স্বাদের পরিবেশনায়। দুটি সমবেত সংগীতের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হওয়ার পর ছিল গুণিজন সংবর্ধনা। এ অঞ্চলের বেশ কিছু বর্ষীয়ান মানুষ, যাঁরা সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে একটা সময় সদর্প পদচারণা করেছেন, তাঁদেরকে সম্মানিত করার এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসাযোগ্য।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক, গবেষক ড. পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, কবি অনির্বাণ ঘোষ, কবি চন্দন নাথ এবং হুগলি জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ ও কবি ড. সুবীর মুখোপাধ্যায়। ছয় ঘণ্টাব্যাপী এই দীর্ঘ অনুষ্ঠানটিতে আকাদেমির ছাত্র-ছাত্রীরা ছাড়াও আমন্ত্রিত বাচিকশিল্পী হিসেবে ছিলেন তমালী ঘোষ, সুনন্দা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরিন্দম মুখোপাধ্যায় ও সুতপা মুখোপাধ্যায়। ছিল কিছু আমন্ত্রিত নৃত্যসংস্থাও। নজরুল নৃত্য ও লোকনৃত্যের মধ্য দিয়ে যারা আনন্দে ভরিয়ে তুলেছিল দর্শকপূর্ণ অডিটোরিয়ামকে।

বলাকা নৃত্যায়তনের পরিবেশনায় কবিতা ও গানের কোলাজ ‘আমি সেই মেয়ে’ বিশেষভাবে প্রশংসার দাবি রাখে। আকাদেমির সংগীত-শিক্ষিকা শর্মিষ্ঠা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবেশনায় দুটি আধুনিক সংগীত সকল শ্রোতার মন ছুঁয়ে যায়। বিশেষভাবে বলতে হয় আকাদেমির আবৃত্তি-বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের কথা। তারা তাদের পরিবেশনার গুণে সকলের প্রশংসা আদায় করে নিতে পেরেছে। এমনকি তিন-চার-পাঁচ বছরের শিক্ষার্থীরাও এককথায় অনবদ্য।
আরও পড়ুন:

হ্যালো বাবু! পর্ব-৮০: অনুসরণ/১

বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-৪৮: রান্নার জ্বালানি নারী স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ?
‘ইচ্ছে’, ‘ছুটির মজা’, ‘স্বপ্নরেল’, ’পরিবেশ বাঁচাবই’ বা ‘দাও ফিরে সে ছেলেবেলা’র মতো আবৃত্তি আলেখ্যগুলি পরিবেশনার গুণে একটা আলাদা মাত্রা পেয়েছে। এর নেপথ্যে যে আবৃত্তি শিক্ষিকা ও বাচিকশিল্পী শম্পা দত্তের নিরলস প্রচেষ্টা ও নিখুঁত শিক্ষাদানের একটা বড় ভূমিকা আছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

সবশেষ পরিবেশনা ছিল রবীন্দ্র-নৃত্যনাট্য ‘চিত্রাঙ্গদা’। নৃত্য পরিবেশনায় ‘ঘুঙরুর সমাগম’ নামক নৃত্য সংস্থার ছাত্রীরা। পরিচালনায় নৃত্য শিক্ষিকা ছবি পাল। সংগীতে অংশ নিয়েছিল আকাদেমির সদস্য-সদস্যাগণ এবং আদিত্য বাগচী, শ্রাবন্তী সেনাপতি, রাসমণি চট্টোপাধ্যায় ও সৌম্যদীপ ঘোষ—এই চার আমন্ত্রিত সংগীতশিল্পী। বর্তমানে যেখানে রেকর্ডেড গানের সঙ্গেএই ধরনের নৃত্যানুষ্ঠানের প্রবণতা, সেখানে এই লাইভ পরিবেশনাটি নিশ্চয়ই স্বাতন্ত্র্যের দাবিদার। সমগ্র অনুষ্ঠানটির ভাবনা ও আয়োজনে অসিত দত্ত ও শম্পা দত্ত।