রবিবার ১০ নভেম্বর, ২০২৪


অলঙ্করণ: সৌমি দাসমণ্ডল।

আর্য ‘কুল’ রিপ্লাই দিয়েছিল, “বেশক। আর বাকিদের অমন করে বলার দরকার নেই উন্মেষা। ওরা আমাকে নিয়ে খিল্লি করে যদি একটু আনন্দ পায় তো পাক না। ওরা তো সবাই আমার বন্ধু। ওদের একটুখানি আনন্দ দিতে পারি এটাও তো আমার কাছে খুব আনন্দের। তাই না?”

উন্মেষা বাকিদের উদ্দেশে বলেছিল, “দেখ! দ্যাটস দ্য স্পিরিটস! ওর মতো যদি আমরা সবাই হতে পারতাম, তাহলে দুনিয়াটাই বদলে যেত।”

এখানে আসা ইস্তক আর্য খুব খাতির যত্ন করছে উন্মেষা আর অঞ্জনকে। অঞ্জনও আর্যর প্রতি একটু বেশিই দরদ দেখাচ্ছে। চোখে পড়েছে বাকিদের। আড়ালে তা নিয়ে একচোট ‘বাতচিত’ হয়ে গিয়েছে বাকিদের। অনিল কেমন করে যেন জেনেছে, আর্যর আগামী কবিতার বই-প্রকাশ অনুষ্ঠান যাতে জমকালো করে হয়, অঞ্জন তার ব্যবস্থা করবে বলে কথা দিয়েছে। বেশ কয়েকজন নামি লেখক-শিল্পীরা সেই অনুষ্ঠানে না কি উপস্থিত থাকবেন। অরণ্য রাগে ফুঁসে উঠে বলেছে, “হিপোক্রিট। মুখে এমন ভান করবে যে, দুদু খায়! ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানে না। অথচ তলে তলে ঠিক জায়গায় ওয়েলিং করে নিজের ধান্দা সাকসেসফুল করে নিয়েছে। হারামি!”

অনিল বলেছে, “এখনও করেনি, করতে পারে!”

“ওই একই হল ব্রো। মোদ্দা কথা হচ্ছে, আর্য একটা ধান্দাবাজ কুত্তা!” বলে গ্লাসের রঙিন তরলটা গলায় ঢেলে দিয়ে মুখ বিকৃত করে সে।
আর্য এখন অঞ্জনকে খাবারদাবারের ক্রেট নামাতে নামাতে কিছু বলছিল, ওরা দেখল। অঞ্জন তা শুনে মাথা নেড়ে কিছু বলছিল, যেন সে রাজি নয়। আর্যও তার জবাবে আরও গলা নামিয়ে কিছু বলল। যদিও তারা এতটাই আস্তে কথা বলছিল যে, বাকিরা কেউই ওদের কথোপকথন ভালোভাবে বুঝতে পারছিল না। উন্মেষা কিছু দূরে ঝর্ণার দিকে মুখ করে একটা বড় পাথরের উপর বসে আছে। দুপুরের রোদ মাথার উপর ক্রমে এগিয়ে যাচ্ছে নিঃশব্দে পরিণতির দিকে। আলো মরে আসার আগেই ওরা খেয়ে নেবে। খাবারদাবার সব প্যাক করেই আনা হয়েছে। কেবল বার-বি-কিউর ব্যাপারটাই এখানে করা হয়েছে। হোটেলে ফিরে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে সারারাত ধরে আজ ধমাকেদার পার্টি হবে। কালকেই সন্ধেবেলা ফেরা। বলতে গেলে আজকের রাতটাই শেষ এখানে। অতএব নো ঘুম, জাস্ট চিল অ্যান্ড এনজয়!

অঞ্জন হঠাৎ উন্মেষাকে ডাকল, “উন্মেষা, প্লিজ কাম হিয়ার। উই নিড টু টক টু ইউ।”

আর্যও ডাক দিল, “অ্যাই উন্মেষা, প্লিজ একটু অদিকে আয়। একটা দরকার আছে।”

উন্মেষা ঘাড় ঘোরাল। নিঃশব্দে কিছু যেন বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করল। তারপর উঠে এগিয়ে এল তাদের দিকে।

উন্মেষা কাছে আসতে অঞ্জন তাকে কিছু বলল, সে একটু ইতস্তত করল। আর্যকে কিছু বলল, আর্য প্রত্যুত্তরে তাকে কিছু বোঝাতে লাগল হাত নেড়ে।

অনিলরা তাদেরকেই দেখছিল আর বোঝবার চেষ্টা করছিল, নাটকটা কী হচ্ছে ওখানে। কোনও ট্রায়াঙ্গেল কেস? না কি, অন্য কিছু?
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৩: কালাদেওর বলি

দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং, ২য় খণ্ড, পর্ব-৬: ফুলঠাকুরপো-কীরা দুজনেই ভালো মানুষ, কিন্তু একে অপরের পরিপূরক নন

হেলদি ডায়েট: সর্দি-কাশিতে ভুগছেন? জেনে নিন কোন ঘরোয়া টোটকায় মিলবে আরাম

অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-৯: জলে হরি, স্থলে হরি, হরিময় এ জগৎ

কথা শেষ। অঞ্জন আর্যর হাতে কী একটা দিল। তারপর বাকিদের উদ্দেশে বলল, “গাইজ। আর্য ওয়ান্ট টু গো সাম ভিলেজ ফর হান্টিং সাচ আ স্পেশাল ফিচার। সো হি লিভ নাও। বাট মিট এগেইন উইথ আস টুমরো মর্নিং! তাহলে এসো আমরা সবাই ওকে ওর সিওর সাকসেসের জন্য ‘বাই বাই’ করি।”

অনিল বলল, “কিন্তু ও লাঞ্চ করবে না?”

“রাস্তায় খেয়ে নেবে”, উন্মেষা বলল, “অনেকটা দূর যেতে হবে। ও সন্ধের আগেই সেখানে পৌঁছতে চায়।”

অঞ্জন বলল, “আমি ওর খাবার প্যাক করে দিচ্ছি। খেয়ে নেবে সময় করে। তাছাড়া রাতে কিছু জুটবে কি না তাও তো ওর জানা নেই !”

বাকিরা শ্র্যাগ করল শুনে। কেবল অরণ্য বলল, “কিন্তু ও যাবে কী করে? এখান থেকে বাসস্ট্যান্ড যেতে গেলে তো অনিলকে পৌঁছে দিতে হবে। নাহলে তো যেতে পারবে না !”

ওরা এখানে এসে এই গাড়িটা ভাড়া করেছে এই শর্তে যে গাড়ি চালাবে অনিল। তার জন্য বেশি ভাড়াও কবুল। যাই হোক রিসর্টের মালিকই ব্যবস্থা করে দিয়েছে।

অঞ্জন বলল, “নাহ! কাউকে পৌঁছে দিতে হবে না। তবে আমাকে আর উন্মেষাকে ফেরার সময় অনিলকে একটু তুলে নিতে হবে গাড়িতে, এই আর কী!”

“মানে ?”

“আর্য আমার বাইকটা নিয়ে যাচ্ছে। তাতে স্পটে তাড়াতাড়ি পৌঁছতে পারবে।”

“ও গাঁইয়া ভূত অমন লেটেস্ট মডেলের বাইক চালিয়েছে না কি কোনওদিন ? অ্যাকসিডেন্ট করে বসবে তো?” অনিল বলল।
আরও পড়ুন:

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-৯: মন্দির হয়ে বৌদ্ধবিহার

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫৩: রবীন্দ্রনাথের পোশাকআশাক

প্রসঙ্গ স্বাস্থ্য বিজ্ঞান: বাড়তি রক্তচাপ চিন্তা বাড়াচ্ছে? উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কী করবেন, কী করবেন না

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৪৪: সুন্দরবনের সুন্দর কাঁকড়া

আর্য এগিয়ে এসে বল, “ঠিক পারবো। আমি তো বাইক রেসে নাম দিতে যাচ্ছি না। তাছাড়া এই মডেলটা আমাদের পাড়াতেই একজনের আছে। তার কাছ থেকে শিখে নিয়ে দু’-একদিন চালিয়েছি। ফিচারস সব জানা আছে। প্রবলেম হবে না।”

তৃধা অরণ্যকে চাপা গলায় ফিসফিস করে বলল, “ভালোই ফিশিং করেছে। মাছকে একেবারে ল্যাজে খেলাচ্ছে।”

অরণ্য বলল, “হুম! কাল বাইকটা নিয়ে কেমন ভাও দেখাচ্ছিল, যেন আর কেউ হাত দিলেই ওটা গ্যারাজে পাঠাতে হবে। আর আজ ওই কুত্তাটাকে দিয়ে দিচ্ছে, কোথায় কী মারাতে যাবে বলে! ওহ মাই গড!”

“প্রভুভক্ত কুকুর, বিনিময়ে কিছু তো দিতেই হবে, তাই না? প্রভুভক্তির পুরস্কার।”

অঞ্জন বলল, “তোমরা আমাদের ফেরার টাইম লিফট দেবে কি না বল?” অঞ্জন ভালোই বাংলা বলে, বোঝাই যায় না সে অবাঙালি।

অনিল বলল, “আরে হোয়াই নট সাকসেনা জি! হাম ভি বড়ে দিলওয়ালে। দরকার হলে উন্মেষাকে কোলে বসিয়ে নেবেন। আমি ঠিক চালিয়ে নিয়ে যাবো।”

অঞ্জন বলল, “ইয়া, আই উইল। আই হ্যাভন’ট এনি প্রবলেম ইয়ার!”

উন্মেষা তার দিকে কপট রাগে বলে উঠল, “আবার অসভ্যতা?”

সকলে হেসে উঠল। যদিও ঠিক প্রাণখোলা হাসি নয়। অঞ্জন ব্যস্ত হয়ে পড়ল, আর্যর লাঞ্চ প্যাকেট গোছাতে। একবার বলল, “তোমার ঢুকু ঢুকু পাবে না। কাল এসে একটা বটল মেরে নিও না হয়!”

আর্য আশ্বস্ত করল, “ঠিক আছে। ওটা নিয়ে ভাবছি না। এখন ওই স্টোরি করাটা নিয়েই ভাবছি। দারুণ ইন্টারেস্টিং একটা কেস। যদি ঠিক হয়…, তাহলে হইচই পড়ে যাবে।”

উন্মেষা বলল, “তুই তাহলে আগে থেকেই জানতিস স্টোরিটা করতে হবে। সেই কারণেই এসেছিস আমাদের সঙ্গে! তাই না?”
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২৫: আঁধার ভূবনে আবার কে তুমি জ্বেলেছ ‘সাঁঝের প্রদীপ’ খানি

হাত বাড়ালেই বনৌষধি, হাঁপানির সমস্যা থেকে ক্যানসার সব রোগের দাওয়াই হলুদ

বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-৯: অষ্টবক্র শরীর— পুরুষের সমাজে পুরুষ শরীর

“রথ দেখা আর কলা বেচা দুইই আমার উদ্দেশ্য। তবে একটা ফোনের অপেক্ষায় ছিলাম। সেই ফোনটা এল আজ রাস্তায় যখন আমরা আসছি। তখন থেকেই ভাবছিলাম যদি অঞ্জনদার হেল্প পাই, তাহলে বাইকটা নিয়ে চলে যাবো। আর আমি জানতাম, অঞ্জনদার মতো বিগ হার্টেড মানুষ কখনও না করবেন না।”

অঞ্জন তাগাদা দিল, “হয়েছে, হয়েছে। তুমি এবার লাঞ্চ প্যাক বুঝে নিয়ে, তোমার বাকি এসেনসিয়াল টুলস ইত্যাদি নিয়ে স্টার্ট দাও। আর পৌঁছে ফোন করে দিও। না হলে চিন্তায় থাকব!”

আর্য বলল, “একদম অঞ্জনদা। বাই। বাই উন্মেষা। বাই এভরিবডি।”

সে বাইকে স্টার্ট দিল। ঠিক তখন পাশের নিবিড় জঙ্গলের আবছা অন্ধকারে একজন দাঁড়িয়ে ছিল। তার প্রখর চোখ নজর রাখছিল তাদের উপর। সে অপেক্ষা করছিল একটা ভয়াবহ কিছুর জন্য। শিকার নিজের থেকেই শিকারীর জালে ধরা দিলে, শিকারীকে তখন আর শিকার খোঁজার পরিশ্রম করতে হয় না। সে পরম উল্লাসে জিভ দিয়ে ঠোঁট চেটে নিল।

কিন্তু তাকে ছাড়া আরও একজন গাছের উপর অরণ্যের ডালপালার মধ্যে নিজেকে লুকিয়ে ঠায় বসে ছিল সে এই শিকারীকে অনুসরণ করেই এসেছে। সে জানে, ভবিতব্যকে হয়তো সে এবারেও খণ্ডাতে পারবে না। কিন্তু তার বিশ্বাস একদিন না একদিন সে ঠিক পারবে, ঠিক! পারতেই হবে।

শুকনো পাতার উপর মৃদু আওয়াজ হল। শিকারী অন্য পথ ধরবে এবার। উপরে অপেক্ষমান সেও জানত এটা। তার চোয়াল কঠিন হয়ে উঠল। চোখটা জ্বলে উঠল এবার। শিকারীর পিছু নিল আর এক আনাড়ি কিন্তু স্থিরলক্ষ্য কেউ। —চলবে
* ধারাবাহিক উপন্যাস (novel) – পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক (Pishach paharer atanka) : কিশলয় জানা (Kisalaya Jana) বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক, বারাসত গভর্নমেন্ট কলেজ।
 

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন৷ বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন৷ ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না৷ গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে৷ ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content