ঘোমটা
বউদি বিউটি বলেছিল ভুল হয়ে গিয়েছে। তার পরদিন অফিসফেরতা টেস্টের ডিবে নিয়ে এসেছিলেন। শ্রেয়া আর দত্ত গিয়ে বিউটির হাওড়ার কলেজ থেকে একটা ইনভেস্টিগেশন সেরে এসেছেন। বিউটি তখন শাশুড়ির শ্রাদ্ধের ব্যাপারে ছুটি নিয়েছিল। কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের হেড, ল্যাব টেকনিশিয়ান ইনচার্জ সকলকেই জানানো হয়েছে যে এটা রুটিন ইনভেস্টিগেশন। বিউটি করের শাশুড়ি সুষমা কর মারা গিয়েছেন এবং পুলিশ সন্দেহ করছে তাঁকে বিষ দিয়ে মারা হয়েছে। রিপোর্ট তৈরি করার আগে সব জায়গায় সকলের সঙ্গে কথা বলাটা প্রয়োজন।
শ্রেয়া জানিয়েছেন, যা বোঝা গেল তাতে সব কেমিক্যালের কাছেই বিউটির যাতায়াত ছিল। কেমিক্যাল যা ব্যবহার হয় সেটা খাতায় তুলে রাখার নিয়ম। খাতাকলমে নিয়ম মানা হয়, কিন্তু প্রমাণ না থাকলেও সত্যি সত্যি নিয়ম যে মানা হয় না সেটা স্পষ্ট। তাই কোন বিশেষ কেমিক্যাল কতটা কত সপ্তাহে ছিল কতটা এ সপ্তাহে আছে এন্ট্রি খাতা দেখে সেসব বোঝার কোন উপায় নেই।
আর এখানে যে কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়েছে সেটা যে কোন স্কুলের ল্যবোরেটরি থেকেও পাওয়া যেতে পারে।পল্লব বা বিউটির সবথেকে বড় রক্ষাকবচ খুনের খবর পেয়ে তারা সকালবেলা হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে ট্যাক্সিতে লেকটাউন থেকে এসেছিল। এরমধ্যে কয়েকটা স্ট্রিপে গোখরো সাপের বিষ মিশিয়ে তদন্তকে ভুল পথে চালাবার একটা চেষ্টা করা হয়েছে।
ইদানিং ফিকশন্যাল নিউজ আইটেমের খুব কাটতি। নাটকীয় পরিবেশনা সাসপেন্স মিউজিক গ্রাফিক্স সব মিলিয়ে একটা ঝাঁ চকচকে ব্যাপার। একটা আধ ঘণ্টার প্রোগ্রামের জন্য সারা দিনে অন্তত বিশবার তার প্রোমো দেখানো হয়। আগে অপরাধ জগতের মধ্যে পুলিশের গুপ্তচর মিশে থাকতো। এখন প্রিন্ট বা নিউজ মিডিয়াতেও পুলিশের লোকজন রাখতে হয়।
চক্রবর্তী সাহেব বললেন—
—প্রাথমিকভাবে পুলিশ যাকে গ্রেফতার করেছিল সে এখন জামিনে আছে। আমরা তদন্ত করতে গিয়ে কী বুঝতে পেরেছি সেটা বড় কথা নয়। মানুষের পার্সপেক্টিভটা বুঝতে হবে। পুলিশ খুনিকে এখনও ধরতে পারল না যাকে ধরেছিল তাকেও ছেড়ে দিয়েছে। এটা নিয়ে দীপক চট্টোপাধ্যায় রতনলালেরা যদি সন্ধেবেলায় চায়ের কাপ হাতে টিভিতে বসে পড়েন, হোম ডিপার্টমেন্ট থেকে ১০ মিনিট ছাড়া ছাড়া ফোন আসবে। সুতরাং আমাদের ডেড লাইন জানাও।
রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, পর্ব-৮: সুষমার ব্লাড স্যাম্পেলে সায়ানাইড!
রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-১৪: অন্ধকারের উৎস হতে—শীতকালের প্রতিরাত
—স্যার, আমার সিসিটিভির ফুটেজ চাই। মার্ডারের রাতের, রাত ন’টা থেকে পরের দিন সকাল সাতটা।
—উল্টোডাঙ্গা মেন রোড মানে এখন বিধাননগর রোডের?
—হ্যাঁ, তবে একেবারে ভিআইপি মানে কাজি নজরুল সরণি লেকটাউন ক্লক টাওয়ার থেকে মুচিবাজার, উল্টোদিকে গ্রে স্ট্রিট থেকে গৌরীবাড়ি হয়ে মুচিবাজার, আরিফ রোড।আর হ্যাঁ, সিআইটি রোড থেকে রেলব্রীজের তলা দিয়ে মুরারিপুকুর রোড দিয়েও কিন্তু ঘুরপথে মুচিবাজার আসা যায়, ওই রাস্তায় ক্যামেরা সার্ভিলেন্স কম।
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-২: রাসসুন্দরী দেবী—বাংলার প্রথম আত্মজীবনী রচয়িতা
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২৭: হিন্দু-মুসলিম মিশ্র দেবতা সত্যনারায়ণ ও সত্যপীর
—চ্যাম্প তোমার সন্দেহটা লেকটাউন কেন্দ্রিক বুঝতে পারছি। কিন্তু তাদের ট্র্যাক করবো কিসে? রাত্রিবেলায় কোন গাড়িতে তারা আছে সেটা ট্রাফিক কন্ট্রোলরুম বুঝবে কী করে?
বাবু চারখানা গাড়ির নম্বর দিয়ে বলল—
—এই চারটে গাড়ি।
গাড়ির নম্বরগুলো দেখে শ্রেয়া বলল—
—এটা তো পল্লবের ভাড়ার গাড়ি।
—হ্যাঁ। আমি একটা চান্স নিচ্ছি। মাঝরাতে এখানে এসে আবার রাত ফুরোবার আগে ফিরে যাওয়াটা ভাড়ার ট্যাক্সিতে আনলাইকলি।
শ্রেয়া একটু ভেবে বললেন—
—বেশ। কিন্তু ওদের দুজনের মোবাইল ট্র্যাক করেই দেখা গেছে গোটা রাত্রির মোবাইল লেকটাউনে ওই শ্বশুরবাড়ির ওখানেই ছিল পরের দিন ভোরে ওরা যখন আসে তখন মোবাইল পজিশন চেঞ্জ হয়ে আরিফ রোডে আসছে।
ভৈরব চক্রবর্তী হেসে শ্রেয়াকে বললেন—
—সত্যজিৎ ভক্ত ধৃতিমানের উত্তরটা দেবার লোভ আমি সামলাতে পারছি না শ্রেয়া। ও চুপচাপ আছে বটে কিন্তু ভেতরে ভেতরে বলছে, “ফিশি ভেরি ফিশি!” মোবাইল দুটো ওরা ইচ্ছে করে লেকটাউনের বাড়িতে রেখে এসেছিল।
ধৃতিমান বেশ নিরুত্তাপ ভাবে প্রসঙ্গান্তরে চলে গেল। এটা তার একটা বিশেষ গুণ। একটা আলোচনার মধ্যে থেকে কাউকেও না থামিয়ে কারও মনক্ষুন্ন না করে, ধৃতিমান খুব সহজভাবে নিজের প্রয়োজনীয় বিষয়ে আলোচনাটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
—আর দেরি করা যাবে না স্যার এমনিতেই উই আর রানিং লেট। পল্লব আর বিউটিকে দিয়ে এবার ক্রাইম কনফেস করাতে হবে।
—আর পাশের বাড়ির কাকু ভবানী পাল? ওকে কি তুমি বেনিফিট অফ ডাউট দিচ্ছো চ্যাম্প।
—একটা খটকা বেনিফিটটা দিতে দিচ্ছে না।
—খটকা? কিরকম?
—ওই সাপের বিষের সোর্সটা।
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-২৬: স্বপ্নে আমার মনে হল
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৫০: কুষ্টি বিচার, না কি রক্ত বিচার! জরুরি কোনটা?
ঘড়ির ব্যান্ডের কালারটা পোশাকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মাঝেমধ্যে বদলে যায়। গলায় হার বা কানে দুল পরে না লিপস্টিক লাগায় না। নো মেকআপ লুকে একটা হালকা কাজল মাঝেমধ্যে থাকে। আর সুন্দর পারফিউম ব্যবহার করে শ্রেয়া। সাজগোজ বলতে ওইটুকুই। ভালো দেখতে শুনতে। পার্ট বলতে পারলে স্বচ্ছন্দে টিভি সিরিয়ালে সুযোগ বাঁধা ছিল শ্রেয়ার। চেহারায় মানালে গুণী মেন্টররা শিখিয়ে পড়িয়ে নিতেন। ক্রমশ মোটা মাস মাইনে। সময়সুযোগ পেলে মাচায় গিয়ে সংলাপ আর গান। যথেষ্ট রোজগার হতো। সেসব না করে শ্রেয়া অপরাধী পেটায়। নির্দয়ভাবে পেটায় কিন্তু আইন বাঁচিয়ে। খুনে বদমাইশদের অন্নপ্রাশনের ভাত হজম হয়ে যায় শরীরে কোথাও কোন দাগ পড়ে না। পল্লবকে এ সবই বলছিল শ্রেয়া।
—দেখুন খোকাবাবু, সিসিটিভিতে রেকর্ড আছে। আপনাকে এবং আপনার স্ত্রীকে আপনার নিজের ব্যবসার গাড়িতে লেকটাউন থেকে এসে সোজা উল্টোডাঙ্গার রাস্তায় না ঢুকে সিআইটি রোড দিয়ে উত্তরাপণের সামনে দিয়ে রেল লাইনের সাবওয়ে দিয়ে মুরারিপুকুর রোড হয়ে ঘুরপথে আবার বিধান নগর মেন রোডে এসে পৌঁছেছেন। আপনারা ওই রাস্তাটা নিয়েছিলেন এইটা ভেবে যে ওখানে কোন সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। কিন্তু খুব সম্প্রতি ওখানে ক্যামেরা ইনস্টল হয়েছে। আপনাদের পাড়ার কিছু লোক ওই মাঝরাত্তিরে আপনাদের দুজনকে হেঁটে বাড়ির দিকে যেতে দেখেছে আপনি হুডি পরেছিলেন আপনার স্ত্রী শাড়ির আঁচলটা দিয়ে মুখঢাকা দিয়েছিলেন। দোতলার জানলা থেকে আপনার স্ত্রীকে চিনে ফেলেছিল ইস্ত্রিওলা শ্যামলাল।—চলবে।