ঘোমটা (ক্রমশ)
অনেক সময় বাপের বাড়ির আনন্দ অনুষ্ঠান বিয়ে বাড়ি এসব সেরে ছেলে-বউ দেরিতে বাড়ি ফেরে তখন বিউটির ব্যাগের চাবিটা ব্যবহার হয়। তবে সে দিনে বিউটি তার চাবিটা ফ্রিজের মাথায় রেখে গিয়েছিল। সেদিনই হঠাৎ চাবিটা রেখে গেল কেন? সহজ উত্তর কোন সমস্যা হলে যাতে বাড়ি থেকে ওরা বেরোতে পারে তাই।
যদি সুষমা কর খুন হয়ে থাকেন যেটা ফরেনসিক পরীক্ষা এবং পোস্টমর্টেমের পরেই জানা যাবে, তাহলে মলিনাকে এরেস্ট করা হবে নিঃসন্দেহে। খুন হয়েছেন এটা এখনই বলা যাচ্ছে না, তবে যদি খুন হন তাহলে মলিনাই-বা একজন মানুষকে খুন করে তারপরে ভোঁসভোঁস করে ঘুমোবে কী করে? জেরায় মলিনা বলেছে, মায়ের ঘরের মেঝেতে না শুয়ে বৌদি দালানের সোফাটাই শুতে বলেছিলেন। খাবার জায়গার ফ্যানটাও চালিয়ে দিতে বলেছিলেন। মলিনার বস্তির ঘরে খুব গরম একটা টেবিল ফ্যানের হাওয়া সকলের গায়ে পৌঁছয় না। এখানে সোফার ওপরে শুয়ে ফ্যান চালিয়ে দিয়ে দিব্যি ঘুমিয়েছে রাতে। উঠতে একটু দেরিই হয়েছিল। ভেবেছিল মা বোধহয় উঠে পড়েছেন। চা না পেয়ে রেগে গেছেন। ডাকতে গিয়ে দেখল সুষমা আর নেই।
হ্যালো বাবু, পর্ব-৫: আজ ভোর বেলায় কি আপনি সুষমা দেবীকে জানলায় দেখে ছিলেন?
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-২৩: চল্ রে চল্ সবে…
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৩: ‘সুরের পরশে’ তুমি-ই যে শুকতারা
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২৪: সুন্দরবনের রাজমাতা দেবী নারায়ণী
শ্রেয়া বসুর ফোন মানে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ খবর। না হলে সাদামাটা মেসেজ আসতো। সুষমা কর খুন হয়েছেন। পয়জনিং। পয়জন টাইপ আইডেন্টিফাই করতে একটু সময় লাগবে। আর হ্যাঁ, আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মলিনাকে বিউটি যে চারটে সন্দেশ দিয়ে গিয়েছিল রাতে খাবার জন্য সেটার দুটো খেয়েছিল মলিনা। আর দুটো খেতে পারেনি। সেটা ফ্রিজে রাখা ছিল। তাতে স্ট্রং ঘুমের ওষুধ পাওয়া গিয়েছে। কাজের মাসি মলিনাকে যে গ্রেফতার করা হবেই সেটা বাবু বুঝতে পেরেছিল। আর আসল অপরাধী ধরা না পড়লে মলিনা ওপর থেকে অভিযুক্তের দাগ মিটবে না। ওই স্ট্রং ঘুমের ওষুধ দেওয়া মিষ্টিটা একটা খুব ইম্পরট্যান্ট এভিডেন্স। যেটা মলিনাকে খাওয়ানো হয়েছিল। মলিনা বলেছে সেটা বৌদিমনি মানে বিউটি কর দিয়েছিলেন।
জেরার মুখে বৌমা বিউটি সেটা অস্বীকার করেননি। অস্বীকার না করার যুক্তিযুক্ত কারণ দুটো। এক নম্বর ফ্রিজের মধ্যে যে দুটো সন্দেশ রয়ে গিয়েছে এটা বিউটি জানতেন না। আর নম্বর দুই হল ফরেনসিক যখন ঘর থেকে নমুনা সংগ্রহ করছিল তখন বাড়ির কেউ সেখানে ছিল না। তারা যে ঘরের ফ্রিজটা থেকেও খাবার নমুনা নিয়েছেন এটা বাড়ির কেউ-ই জানতেন না। কিন্তু বিষটা কী ? আর বিষটা এল কোথা থেকে? এই দুটোকে কানেক্ট করতে না পারলে আসল অপরাধী ধরা পড়বে না আর অকারণে মলিনার উপর হেনস্থা বাড়বে।
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৮: সকালবেলাই হাঁটতে হবে?
কলকাতার পথ-হেঁশেল, পর্ব-১৬: মোমো চিত্তে!
—হামি পুরানা লোক এ সব মানি। এখনকার ছেলেপুলে এ সব বিশওয়াস করে না। হতে পারে কি হামি ভুল দেখলাম। কিন্তু ওয়হ মাজি কো হামি আজ খিড়কিতে দেখেছি। কোনওদিন এত সবেরে দেখিনি। তারপর কয়লা ভাঙ্গলাম। উনান জ্বালালাম, ইস্ত্রি বসালাম। ও বাড়ির কাজের মেয়েটা হাঁউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে ছুটে এসে বলল— ও মাজি মরে গিয়েছে। ব্যস মাথায় চক্কর এসে গেল। কাম বন্দ কোরে ফিরে এলাম।
—সময়টা ঠিক মনে আছে?
হাতের অনেক পুরোনো ঘড়িটা দেখিয়ে শ্যামলাল বলেছিলেন সেটা তার বিয়ের ঘড়ি। সবসময় সঙ্গে থাকে। কখনও ভুল সময় দেখায় না। সে ঘড়িতে তখন ভোর সাড়ে ৫টা।
—আর কিছু মনে আছে? আর কিছু দেখে ছিলেন?
প্রৌঢ় চোখ বুজে কিছু ভাবার চেষ্টা করে।
—হ্যাঁ, ঘুঙঘট!
—ঘুঙঘট মানে ঘোমটা?
—জি হ্যাঁ। মা জি ঘুঙঘট দিয়েছিলেন।
একটা বিদ্যুৎ ঝলকের মতো সবটুকু যেন পরিষ্কার হয়ে গেল ধৃতিমানের মাথার —চলবে।