ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।
বুবু পেয়ারা ছেড়ে মুসাম্বি লেবুর টুকরো নিতে নিতে আপন মনে বলতে লাগল— আসছি বুবু! এক্ষুণি আসছি।
বাবু মানে ধৃতিমান চৌধুরী থাকে উল্টোডাঙার মুচিপাড়া বাজারের পিছনটায়। করবাগান সার্বজনীনের পুজোটা যেখানে হয় তার কাছেই একটা দোতলা বাড়িতে বাবু আর বুবু আজ বহুবছর ভাড়া থাকে। একটা ছেলে আর একটা পাখি কেন এই বাড়িতে এভাবে, সেসব কাহিনি আমরা পরে জানব। আপাতত বাড়ি থেকে বেরিয়েই আরিফ রোড। সেখানে মৃতা সুষমা কর থাকতেন। কয়েক পা এগোতেই বাড়ির সামনে ভিড় দেখে চিনতে অসুবিধে হল না। বাড়ির সামনে লোকজন মিডিয়ার ক্যামেরা হুলুস্থুল কাণ্ড। এগোতেই দেখা হয়ে গেল বিপুল পালের সঙ্গে। বিপুল পাল পরিচিত। উল্টোডাঙ্গা থানার এসআই। কথায় বলে না গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না। বোধহয় এলাকার বাসিন্দা বলেই পাড়ার থানায় আমাদের বাবুর ওরফে ধৃতিমানের তেমন কদর নেই। আসলে সকাল সন্ধ্যে মাছবাজারে মিষ্টির দোকানে চপের দোকানে দেখা হচ্ছে তো! স্বাভাবিকভাবেই খুব একটা গুরুত্ব নেই। কিন্তু ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্ট-এর বড়কর্তা বিভূতি চক্রবর্তীর সঙ্গে বাবুর সম্পর্কের ব্যাপারটা শুধু বিপুল নয়, গোটা উল্টোডাঙা থানার সকলেই জানেন। তাই সমস্যাও করেন না।
বাবু মানে ধৃতিমান চৌধুরী থাকে উল্টোডাঙার মুচিপাড়া বাজারের পিছনটায়। করবাগান সার্বজনীনের পুজোটা যেখানে হয় তার কাছেই একটা দোতলা বাড়িতে বাবু আর বুবু আজ বহুবছর ভাড়া থাকে। একটা ছেলে আর একটা পাখি কেন এই বাড়িতে এভাবে, সেসব কাহিনি আমরা পরে জানব। আপাতত বাড়ি থেকে বেরিয়েই আরিফ রোড। সেখানে মৃতা সুষমা কর থাকতেন। কয়েক পা এগোতেই বাড়ির সামনে ভিড় দেখে চিনতে অসুবিধে হল না। বাড়ির সামনে লোকজন মিডিয়ার ক্যামেরা হুলুস্থুল কাণ্ড। এগোতেই দেখা হয়ে গেল বিপুল পালের সঙ্গে। বিপুল পাল পরিচিত। উল্টোডাঙ্গা থানার এসআই। কথায় বলে না গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না। বোধহয় এলাকার বাসিন্দা বলেই পাড়ার থানায় আমাদের বাবুর ওরফে ধৃতিমানের তেমন কদর নেই। আসলে সকাল সন্ধ্যে মাছবাজারে মিষ্টির দোকানে চপের দোকানে দেখা হচ্ছে তো! স্বাভাবিকভাবেই খুব একটা গুরুত্ব নেই। কিন্তু ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্ট-এর বড়কর্তা বিভূতি চক্রবর্তীর সঙ্গে বাবুর সম্পর্কের ব্যাপারটা শুধু বিপুল নয়, গোটা উল্টোডাঙা থানার সকলেই জানেন। তাই সমস্যাও করেন না।
ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টের লোকজন আসার আগে মৃতদেহ ময়নাতদন্তে যাবে না। ধৃতিমান চৌধুরী এক ঝলকে দেখে নিল বিভূতি চক্রবর্তী বা ডিপার্টমেন্টের কেউ তখনও পৌঁছননি। সুতরাং ধরে নেওয়া যেতে পারে ক্রাইম স্পট একই রকম আছে। মৃতদেহ যখন স্পটে পড়েছিল, অস্বাভাবিক মৃত্যু। সুতরাং নিয়মকানুন মেনে এগোতে একটু সময় লাগে। আর এমন তো নয় হইহই করে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃতদেহ বেঁচে উঠবে।
আরও পড়ুন:
রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, ঘোমটা, পর্ব-১: বাবুর জীবনসঙ্গী বলতে কেবল একটি কাকাতুয়া
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২০: সুন্দরবনের বসন্ত রোগ নিরাময়কারী দেবী শীতলা
বাবু লক্ষ্য করল বিপুল পাল তাকে দেখেও দেখছে না। জন্মাবার পরেই যে কী করে মা বাবা তার এই বিপুলাকার চেহারার আগাম আন্দাজ করে বিপুল নাম রেখেছিলেন সেটা ভাবতে আশ্চর্য লাগে। বাবু ভিড় ঠেলে দু’পা এগিয়ে গিয়ে প্রায় বিপুলের মুখোমুখি দাঁড়ালো। দাঁতের সামনের ঠোঁটটা মাপা ফাঁক করে বলল —
—কেমন আছেন বিপুল বাবু?
—আমাদের আর থাকা মশাই। আমরা হলুম শ্রমিক মৌমাছি। এ জম্মে তো আর রানি মৌমাছি হতে পারব না।
বাবু জানে রানি মৌমাছি শব্দবন্ধটি বড়কর্তাদের উদ্দেশ্যে বসানো- নির্দেশ দেবার জায়গায় যাঁরা বসে আছেন। তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ক্ষোভপ্রকাশ হল ওই ‘রানি মৌমাছি’।
—স্পটটা একবার…
কথা শেষ হলো না।
—না না, এখন নয়। এখনও আমার চার্জে আছে তো একটু সবুর করুন। বড় কত্তারা ল্যান্ড করুন। তারপর তাঁরাই আপনাকে ডাকবেন। আপনি যাবেন বডির নাকের চুল পায়ের নখ এসব দেখে সাড়ে ৩৭ ঘণ্টার মধ্যে কেস সলভ করে খুনিকে অ্যারেস্ট করিয়ে দেবেন। আপনি মশাই আজকের দিনের ফেলুকেশ। রাগ করলেন নাকি? পাড়ার লোক তাই ফেলু মিত্তির আর ব্যোমকেশ বক্সী মিশিয়ে দিয়ে একটু ঠাট্টা করলুম আর কি!
—ঠাট্টা কোথায়, এটা তো রীতিমতো কমপ্লিমেন্ট।
বিপুলের ওভারদা শোল্ডার ফুলটস বলটা গায়ে না মেখে বলের লাইন থেকে নিজেকে সরিয়ে বাবু পাশের চায়ের দোকানে হাত বাড়াল লেবু দিয়ে লাল চা’য়ের জন্যে।
—কেমন আছেন বিপুল বাবু?
—আমাদের আর থাকা মশাই। আমরা হলুম শ্রমিক মৌমাছি। এ জম্মে তো আর রানি মৌমাছি হতে পারব না।
বাবু জানে রানি মৌমাছি শব্দবন্ধটি বড়কর্তাদের উদ্দেশ্যে বসানো- নির্দেশ দেবার জায়গায় যাঁরা বসে আছেন। তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ক্ষোভপ্রকাশ হল ওই ‘রানি মৌমাছি’।
—স্পটটা একবার…
কথা শেষ হলো না।
—না না, এখন নয়। এখনও আমার চার্জে আছে তো একটু সবুর করুন। বড় কত্তারা ল্যান্ড করুন। তারপর তাঁরাই আপনাকে ডাকবেন। আপনি যাবেন বডির নাকের চুল পায়ের নখ এসব দেখে সাড়ে ৩৭ ঘণ্টার মধ্যে কেস সলভ করে খুনিকে অ্যারেস্ট করিয়ে দেবেন। আপনি মশাই আজকের দিনের ফেলুকেশ। রাগ করলেন নাকি? পাড়ার লোক তাই ফেলু মিত্তির আর ব্যোমকেশ বক্সী মিশিয়ে দিয়ে একটু ঠাট্টা করলুম আর কি!
—ঠাট্টা কোথায়, এটা তো রীতিমতো কমপ্লিমেন্ট।
বিপুলের ওভারদা শোল্ডার ফুলটস বলটা গায়ে না মেখে বলের লাইন থেকে নিজেকে সরিয়ে বাবু পাশের চায়ের দোকানে হাত বাড়াল লেবু দিয়ে লাল চা’য়ের জন্যে।
চা শেষ না হতেই ভৈরব দত্তকে নিয়ে ডিডি’র শ্রেয়া বাসু হাজির হওয়া উচিত ছিল। আর পরক্ষণেই ‘মহারাজা তোমারে সেলাম”। না এটা ওরা বলেননি এটা বাবুর মোবাইলের রিংটোন। চক্রবর্তী সাহেবের ফোন। তাঁর পার্সোনাল নম্বর থেকে। ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টের ভৈরব চক্রবর্তী আদর করে ধৃতিমানকে চ্যাম্প বলে ডাকে। না না এর সঙ্গে দেবের সিনেমার সম্পর্ক নেই। তাঁর অনেক আগে থেকেই চ্যাম্পিয়ন ছেঁটে বাবুকে চ্যাম্প বলেন বড় শিব।
—কী চ্যাম্প ঘুম ভেঙেছে?
—হ্যাঁ, স্যার।
ল্যান্ডফোন বাজছে, ভৈরব চক্রবর্তীর।
—সরি একটা মিনিট!
—সিওর!
বাবু জানে কমপক্ষে পাঁচ মিনিট। এক মিনিটের কথায় লিখ, অংকে আসলে পাঁচ মিনিট।
—কী চ্যাম্প ঘুম ভেঙেছে?
—হ্যাঁ, স্যার।
ল্যান্ডফোন বাজছে, ভৈরব চক্রবর্তীর।
—সরি একটা মিনিট!
—সিওর!
বাবু জানে কমপক্ষে পাঁচ মিনিট। এক মিনিটের কথায় লিখ, অংকে আসলে পাঁচ মিনিট।
আরও পড়ুন:
পরিযায়ী মন, পর্ব-১২: নেতারহাটের নাশপাতি বাগান
পর্দার আড়ালে, পর্ব-৪৩: ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবি দেখে মুগ্ধ সত্যজিৎ রায় পরিচালক নির্মল দে’র খুব প্রশংসা করেছিলেন
সে যাই হোক বড় বড় নামকরা গোয়েন্দারা সাধারণত পুলিশের বড়কর্তাদের বন্ধুস্থানীয়। তাঁরা হলে কেউ মি: চক্রবর্তী বলতেন। কেউ বলতেন ভৈরববাবু। বয়স ও পদমর্যাদার সম্মানের জন্যে ধৃতিমান ভৈরব চক্রবর্তীকে সচেতনভাবেই ‘স্যর’বলে। আর ধৃতিমান চৌধুরী পেশাদার গোয়েন্দা বা সত্যান্বেষী কোনওটাই নয়। আমাদের বাবু সখের গোয়েন্দাগিরি করেন। তাঁরা কেউ হলে তো আর চায়ের গেলাসে ফুঁ দিয়ে গরম লাল চা’য়ে চুমুক দিতে দিতে স্পটের বাইরে ডাকের অপেক্ষা করতেন না।
গড়পারের জটায়ু নিজে গাড়ি পাঠিয়ে দক্ষিণ কোলকাতা থেকে ফেলুদা আর তোপসেকে এতক্ষণে তুলে আনাতেন। যদি না ফেলুবাবু ডানহাতের আঙুল ছুঁয়ে-থাকা ব্রেকফাস্টের আলুর দমের স্বাদ নিতে নিতে বাঁহাতে টেলিফোন তুলে বলতেন—
—লালমোহনবাবু গাড়ি পাঠাতে হবে না। আপনি স্পটে পৌঁছন। আমরা ট্যাক্সি নিয়ে আসছি।
—বেশ। কিন্তু ফেলুবাবু ফিরতিপথে মিত্র কাফে থেকে কবিরাজি কাটলেট কিন্তু আমার তরফ থেকে। না বললে কিন্তু চলবে না মশায়।
ফেলুদা হয়ত উত্তর দিতেন।
—মিত্তির বলেই আমাদের মিত্র কাফেতে ট্রিট দিতে হবে এমন ভাবার কোনও কারণ ঘোষ-বোস-মিত্তির যেকোনও জায়গা হতে পারে।
—বুজে গিয়েছি মশায়। ঘোষ-বোস যেখানেই হোক স্বাদে কুলীন হতে হবে তাই তো?
—লালমোহনবাবু গাড়ি পাঠাতে হবে না। আপনি স্পটে পৌঁছন। আমরা ট্যাক্সি নিয়ে আসছি।
—বেশ। কিন্তু ফেলুবাবু ফিরতিপথে মিত্র কাফে থেকে কবিরাজি কাটলেট কিন্তু আমার তরফ থেকে। না বললে কিন্তু চলবে না মশায়।
ফেলুদা হয়ত উত্তর দিতেন।
—মিত্তির বলেই আমাদের মিত্র কাফেতে ট্রিট দিতে হবে এমন ভাবার কোনও কারণ ঘোষ-বোস-মিত্তির যেকোনও জায়গা হতে পারে।
—বুজে গিয়েছি মশায়। ঘোষ-বোস যেখানেই হোক স্বাদে কুলীন হতে হবে তাই তো?
আরও পড়ুন:
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৪: পানমশলা খেলে ক্যানসার হয়?
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-২১: আমার চোখে তো সকলই শোভন
—হান্ড্রেড আউট অফহান্ড্রেড।
আবার মোবাইলে ভৈরব চক্রবর্তী।
—সরি সরি, একটা ফরেনসিক রিপোর্টের ব্যাপারে… তা আপনি এখন কোথায়? স্পটটা মোস্ট লাইকলি আপনার বাড়ির কাছে, রাস্তাটার নাম হল …আরিফ রোড।
—হ্যাঁ হ্যাঁ আরিফ রোড। আমি স্পটের সামনে আছি, ভিতরে যাইনি।
—কী মুশকিল? ছি ছি, আপনি ঢুকে যান। শ্রেয়া গিয়েছে…। ও তো জানেই না আপনি…। আমি বলে দিচ্ছি।
—গাড়ি নেই তো
—হ্যাঁ, আসলে গাড়ি ওদের ড্রপ করে ফরেনসিকের লোকজনদের আনতে গিয়েছে। তাঁরা যে গাড়ি রিক্যুইজিশন করেছিলেন সেটি ব্রেকডাউন। অন্য গাড়ি তাঁরা কখন পাবেন কখন আসবেন? আমি তাই শ্রেয়াকেই গাড়িটা পাঠাতে বললাম। আপনি ঢুকে যান!—চলবে।
আবার মোবাইলে ভৈরব চক্রবর্তী।
—সরি সরি, একটা ফরেনসিক রিপোর্টের ব্যাপারে… তা আপনি এখন কোথায়? স্পটটা মোস্ট লাইকলি আপনার বাড়ির কাছে, রাস্তাটার নাম হল …আরিফ রোড।
—হ্যাঁ হ্যাঁ আরিফ রোড। আমি স্পটের সামনে আছি, ভিতরে যাইনি।
—কী মুশকিল? ছি ছি, আপনি ঢুকে যান। শ্রেয়া গিয়েছে…। ও তো জানেই না আপনি…। আমি বলে দিচ্ছি।
—গাড়ি নেই তো
—হ্যাঁ, আসলে গাড়ি ওদের ড্রপ করে ফরেনসিকের লোকজনদের আনতে গিয়েছে। তাঁরা যে গাড়ি রিক্যুইজিশন করেছিলেন সেটি ব্রেকডাউন। অন্য গাড়ি তাঁরা কখন পাবেন কখন আসবেন? আমি তাই শ্রেয়াকেই গাড়িটা পাঠাতে বললাম। আপনি ঢুকে যান!—চলবে।
* সুষমা কর হত্যারহস্য: পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৩
* হ্যালো বাবু! (Hello Babu) : জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ২য় খণ্ড।