শনিবার ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

 

উইকেন্ড এসকর্ট

নামী ক্রিমিনাল ল’ ইয়ার নিখিল সেন প্রচুর টাকা নেন এবং নিশ্চিত ফাঁসি হওয়া বা যাবজ্জীবন সাজা হওয়ার থেকে অপরাধীদের বাঁচিয়ে দেন। নিখিল সেন শারীরিকভাবে যথেষ্ট ফিট। অবশ্য বাইরের ফিটনেস থেকে শরীরের ভেতরে বাসা-বাঁধা রোগের আন্দাজ করা যায় না। আর যদি এই মৃত্যু স্বাভাবিক না হয়ে খুন হয়ে থাকে তাহলে সে খুনটা করল কে বা কারা? নিখিল সেন তো অসৎ লোকেদের বাঁচায়। খুনে বদমাইশদের তো নিজেরা বাঁচতেই নিখিল সেনের মতো অ্যাডভোকেটদের বাঁচিয়ে রাখবেন।

চক্রবর্তী সাহেবের ফোন পেয়েই তড়িঘড়ি তৈরি হয়ে নিয়ে ধৃতিমান ওলা চড়ে রওনা দিল দক্ষিণ শহরতলীর উপকন্ঠের সেই রিসর্টে। এই রিসর্টের আসল মালিক রাজ্যের এক প্রভাবশালী মন্ত্রী। বকলমে রিসর্ট চালান একজন শিখণ্ডী। নিখিল সেন এর সঙ্গে সেই মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। কলকাতার একটি গেস্ট হাউসে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল দুর্গাপুরের একটি মেয়ের। ময়নাতদন্তে বেরিয়ে এসেছিল মৃতা অন্তঃসত্ত্বা। বিশ্রীভাবে জড়িয়ে গিয়েছিলেন সেই প্রভাবশালী মন্ত্রী।

এই নিখিল সেন সযত্নে কলঙ্কের কালিঝুলি মুছে মন্ত্রী ও মন্ত্রীর ইমেজ রক্ষা করেছিলেন। বিনিময়ে নিখিল সেনের ক্ষমতা ও প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছিল। শোনা যায় উইকেন্ডে নিখিল সেন প্রায়শই শহরতলীর এই রিসর্টটিকে বেছে নেন। কারণ এই রিসর্টে নিখিল সেনকে কেউ বিরক্ত করে না প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে না।লম্বা রাস্তায় যেতে যেতে ধৃতিমান তার পরিচিতির সূত্র ধরে মৃত নিখিল সেন সম্পর্কে প্রাথমিক তদন্তটুকু করে রাখছিল। তার পরিচিত একজন একটি বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রের ক্রাইম রিপোর্টার। খুব স্বাভাবিকভাবেই তার কাছে নিখিল সেন সম্বন্ধে বহু বহু তথ্য পাওয়া গেল।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, পর্ব-১১: ধৃতিমান চৌধুরীর মোবাইল সোনার কেল্লার ক্যামেল রাইডের সুরে বেজে উঠল

বরসে গা সাওন: স্মরণে উস্তাদ রাশিদ খান

এক শিল্পপতির স্ত্রী পুনম আচমকা আত্মহত্যা করলেন। আলিপুরের বাংলো থেকে শিল্পপতি সঞ্জয় আগরয়াল কোনও একটা ব্যবসা সংক্রান্ত পার্টিতে বেরিয়ে গেলেন সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ। স্ত্রী পুনম রাত আটটা নাগাদ ফিরলেন শপিং সেরে। রাত দশটায় সঞ্জয় পার্টি থেকে ফিরে দেখলেন স্ত্রী পুনম বাথটবে অচৈতন্য। বাথটবের জল রক্তে লাল হাতের শিরা কেটে ফেলেছে পুনম। প্রমাণ নেই। কিন্তু শপিং করে এসে কোন মহিলা আত্মহত্যা করবেন কেন? এই খটকা থেকেই এটা যে পরিকল্পিত খুন ওয়াকিবহাল মহলের অনেকেই সেটা বুঝলেন।

প্রাথমিক সন্দেহভাজন হিসেবে সঞ্জয় আগরওয়ালকে গ্রেফতার করা হল। কিন্তু কিছুতেই পুলিশ প্রমাণ করতে পারলেন না যে এটা কোন খুনের ঘটনা এবং তাতে সঞ্জয় আগরওয়াল জড়িত। অথচ দুঁদে আইনজীবী নিখিল সেন প্রমাণের অভাবে গ্রেফতার করে রাখার জন্য পুলিশ ডিপার্টমেন্ট এবং পাবলিক প্রসিকিউটরকেকোর্টে তুলোধোনা করে দিলেন। নিখিল সেন প্রমাণ করে দিলেন এটা আত্মহত্যা! শিল্পপতি সঞ্জয় আগরয়াল ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকেন বাড়িতে বা স্ত্রীকে সময় দিতে পারেন না। অবসাদ ও একাকীত্ব থেকে এই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত। এটা কোনওভাবেই খুন নয়। পুলিশের কেউ ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিত্রার্থ করার জন্য নামি ব্যবসায়ী সঞ্জয় আগরওয়ালকে গ্রেপ্তার করেছেন এবং তার চরিত্র হননের চেষ্টা করছেন।
আরও পড়ুন:

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-২৭: কী করে তোকে বলব!

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৯: হারিয়ে যাওয়ার ‘জীবন তৃষ্ণা’

রিসর্টে পৌঁছে দেখা গেল দত্ত এবং শ্রেয়া বাসু সেখানে পৌঁছে গিয়েছেন। ঘরটা বেশ বড়। দামি বড়োসড়ো খাট। তাতে পড়ে রয়েছে নিখিল সেনের মৃতদেহ। পরনে শুধু টাওয়েল। হাতে দামি ঘড়িটা রয়েছে। বেডসাইড টেবিলে রয়েছে মোবাইল ফোন। রয়েছে একটি জলের গ্লাস। তাতে তখনও কিছুটা জল রয়ে গিয়েছে। একটি না শেষ হওয়া মদের গ্লাস।

পুলিশ যখন তার রুটিন কাজকর্ম করছে তখন আমাদের বাবু সারা ঘরটা একটু ঘুরে দেখল। যদি কোন ফেলে যাওয়া সূত্র মিলে যায় তাহলে এই অস্বাভাবিক মৃত্যুকে নতুন ভাবে বিচার করতে সুবিধা হবে। প্রথমবারের চক্করে সেরকম কিছু পাওয়া গেল না। হাতে গ্লাভস পরেছিল বাবু ওরফে ধৃতিমান। সাবধানে বন্ধ টয়লেটের দরজার নব ঘুরিয়ে ভিতরে গেল। এদিক ওদিক তাকাতেই জিনিসটা নজরে এল। টয়লেটের ওয়েস্ট বাস্কেট-এর একেবারে ওপরেরই রাখা ছিল।
—ধৃতিমানএকবারশুনবেন?
—বলুন।
—একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার।
—কী?
—রিসর্টের রেকর্ড অনুযায়ী নিখিল সেন তার স্ত্রী শ্রুতি সেনের সঙ্গে কাল একটু রাত করে চেক ইন করেছিলেন। রেজিস্টারে তাই লেখা আছে সঙ্গে ফটো আইডির জেরক্স কপি।
—রিসেপশনের ফুটেজে কোনও মহিলাকে দেখা গিয়েছে কি?
—নাঃ, নিখিল সেন খাতায় সই করছেন। তার সামনে রাখা দুটো ফটো আইডি কার্ড। এটুকুই দেখা গিয়েছে।
আরও পড়ুন:

অসমের আলো-অন্ধকার, পর্ব-৫: বরাক পাড়ে জঙ্গিয়ার গীত

বাচ্চা খেতেই চায় না? কী করে খিদে বাড়াবেন? কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন? জানুন শিশু বিশেষজ্ঞের মতামত

টয়লেটের মধ্যে নজর দিতেই ধৃতিমানের চোখে যেটা পড়েছে সেটা ফরেন্সিকের লোকেদের হাতে তুলে দিতে হবে। সেখান থেকে নিখিল সেনের ডিএনএ ম্যাচ করাতে হবে। এটা থেকেই প্রমাণ হয় যে রাতের সঙ্গিনী আর যিনিই হন শ্রুতি সেন ছিলেন না। কারণ নিজের স্ত্রীর সঙ্গে সময় কাটাতে নিখিল সেন কেন সল্টলেকে নিজের বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স ছেড়ে কলকাতা থেকে দক্ষিণের এক প্রান্তে এই রিসর্টে আসবেন। এটা নিয়ে শ্রেয়াকে এখানে কিছু বলা ঠিক হবে না। আর বলতেও একটু বিব্রত হবে ধৃতিমান। মন বলছে ঘরটা আরও একবার ভালো করে দেখতে হবে। নিশ্চয়ই এমন আরও কিছু প্রমাণ সে পাবে। আর ঠিক তখনি দেখা মিলল একটা আই মাস্কের। প্লেনে ঘুমোবার সময় অনেকে পরেন। আজকাল কি নিষিদ্ধ ভালোবাসাতেও এ সবের ব্যবহার হয়? —চলবে।
 

নিখিল সেন হত্যারহস্য: পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার ১৮ জানুয়ারি, ২০২৪

* হ্যালো বাবু! (Hello Babu) : জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ২য় খণ্ড।

Skip to content