শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো।

 

উইকেন্ড এসকর্ট

তার আগে একটা অত্যন্ত জরুরি কাজ বাকি আছে। শ্রেয়া বাসু কনস্টেবল দত্তকে নিয়ে একবার ঘুরে এসেছেন। তাঁরা তাদের মতো জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। কিন্তু বাবুর মনে হল তার নিজের একবার যাওয়া উচিত। শ্রুতি সেনের সঙ্গে গিয়ে একবার কথা বলাটা জরুরি। শ্রুতি নিখিল সেনের স্ত্রী। একমাত্র সন্তান দিব্যজ্যোতি আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগোতে ডেটা সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করছে। শ্রুতি সেন স্বাবলম্বী। পেশায় শিক্ষিকা। স্বামীর সঙ্গে বহুদিনের দূরত্ব। কিন্তু একই বাড়িতে একছাদের তলায় থাকেন। আলাদা হয়ে যাননি। তার একটাই উদ্দেশ্য ছেলের পড়াশোনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত শ্রুতি ডিভোর্স দেবে না। ছেলের পড়ার বিপুল খরচের ব্যয়ভার নিখিল সেনকেই নিতে হবে। ডিভোর্স হয়ে গেলে সে নানা বাহানা করবে। আর যতই বেপরোয়া ভাব দেখাক নিখিল সেনের মতো শঠ প্রবঞ্চকেরা সমাজে কী না কী প্রকাশ পেয়ে যাবে সেই নিয়ে খুব সেনসিটিভ।

বাবু শ্রুতি সেনের মুখোমুখি হয়ে বুঝতে পারল এরকম কঠিন মহিলা সে এযাবৎ কাল দেখেনি। নিখিল সেন সম্ভবত শ্রুতিকে তার রাগ তার ক্ষমতা দেখানোর জন্যই বেপরোয়া জীবনযাপন করতেন। কারণ বুদ্ধিমত্তা দিলেও আকাশচুম্বী সাফল্য দিলেও এই মহিলার প্রবল ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা, নিখিল সেনকে ঈশ্বর দেননি। সল্টলেকে নিখিল সেনের চোখ ধাঁধানো ডুপ্লেক্স। তারই বসার ঘরে এলেন শ্রুতি সেন। বাড়ির সামনে অনেক মিডিয়ার লোকজনের ভিড়। কিন্তু নিখিল সেনের মৃত্যুর পর থেকে বাড়ির নিরাপত্তার দায়িত্ব তিনি প্রাইভেট কোম্পানিকে দিয়ে দিয়েছেন। তাদের লোকজন বাড়ি পাহারা দিচ্ছে। তাদের কঠিন নজর এড়িয়ে বাড়িতে মাছি গলার উপায় নেই।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, পর্ব-১৬: সঞ্জয় বাড়ি ফিরে দেখল বাথটবে পুনম অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৩১: বীণাপাণির চরণ ছুঁয়ে…

মিডিয়ার লোকজন কথা বলতে চাইলে তাদের একটা প্রিন্টেড স্টেটমেন্ট দেওয়া হচ্ছে। তাতে লেখা আছে—
“স্বনামধন্য আইনজীবী নিখিল সেনের অকাল মৃত্যুতে তার পরিবার শোকস্তব্ধ। কোনওরকম মিডিয়া ইন্টারভিউ দেবার কোন অভিপ্রায় তাঁদের নেই। এই মৃত্যু নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছেন। সেই বিষয়েও পরিবারের তরফে কোনও মতামত নেই। মিডিয়ার কোনও প্রশ্ন বা অন্য কারও কোনও মন্তব্য নিয়ে পরিবারের কোনও উত্তর বা মতামত দেবার অভিপ্রায় নেই। সকলকে এই মর্মে অনুরোধ করা হচ্ছে যে কেউ যেন কোনও ভাবে প্রয়াত আইনজীবীর পরিবারের এই শোকার্ত মুহূর্তকে ব্যহত বা বিঘ্নিত না করেন।”
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩৩: সারদা মায়ের দার্শনিক দৃষ্টি

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৭৯: কবির ভালোবাসার পশুপাখি

খুব স্বাভাবিকভাবেই এই নিয়ে পত্র-পত্রিকা টেলিভিশনে নানান বিশেষজ্ঞ লোকজনের মতামত নেওয়া হলেও নিখিল সেন এর পরিবারকে কোনওভাবে বিরক্ত করা হয়নি।

চক্রবর্তী সাহেব নিজে ব্যক্তিগতভাবে ফোন করে শ্রুতি সেনকে অনুরোধ করায় তিনি ধৃতিমান চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়েছেন। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই মিসেস সেন একতলা সাজানো ড্রয়িং রুমে নেমে এলেন। মাঝবয়সী। চেহারায় কমনীয়তার তুলনায় রুক্ষতা বেশি।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৫০: লক্ষ্মণ—ভ্রাতৃত্বের এক অনন্য দৃষ্টান্ত

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-১১: স্বর্ণকুমারী দেবী— ঠাকুরবাড়ির সরস্বতী

উল্টোদিকে সোফায় বসেই নিজের মোবাইলে রেকর্ডিংটা অন করে দিলেন।
— আমরা যা কথা বলবো তার রেকর্ড আমার কাছে থাকবে। এই কথোপকথনের কোন অংশ যেন না পত্র-পত্রিকা টেলিভিশনে পাবলিশড হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। আমি একেবারেই চাই না আমাদের ব্যক্তিগত জীবন কোন কাগজের বিক্রি বা টেলিভিশনের টিআরপি বাড়াক। শুরু করুন। নতুন করে কী জানতে এসেছেন? ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্ট থেকে শ্রেয়া বসু নামে একজন মহিলা অফিসার তো এসেছিলেন। উনি অবশ্য ‘বাসু’ বলতে পছন্দ করেন।—চলবে।
 

নিখিল সেন হত্যারহস্য: পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

Skip to content