উইকেন্ড এসকর্ট
শিল্পপতি সঞ্জয় আগরয়াল স্ত্রী পুনম আগরয়াল আচমকা আত্মহত্যা করেছিলেন। সঞ্জয়ের ব্যবসায়িক সাফল্য ক্রমশ বেড়েছে। একেবারে শুরুতে বাগরি মার্কেট ইলেকট্রনিক্সের এর দোকান ছিল। সেটা আজ প্রায় বছর কুড়ি আগেকার কথা। সেখান থেকে আজ শহরের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে ওঠা ফ্রেঞ্চাইজি আগরওয়াল ইলেকট্রনিক্সের মালিক সঞ্জয় আগরওয়াল। বাগরি মার্কেটের ছোট্ট ইলেকট্রনিক্সের দোকান থেকে শহরে এত কোটি টাকার ব্যবসায় পৌঁছতে সঞ্জয়কে অনেক মাথা খাটাতে হয়েছে। অনেক ঝুঁকি নিতে হয়েছে। ঝুঁকি নিতে নিতে সাহস বেড়েছে। লোভ বেড়েছে। ব্যক্তিগত জীবন তার প্রভাব পড়েছে।
ইদানীং সে সব নিয়ে স্ত্রী পুনমের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। সঞ্জয় যে একটার পর একটা বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে সেটা পুনম জানতে পেরে গিয়েছে। জেরার মুখে সঞ্জয় কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি। বাগরি মার্কেটের সেই ইলেকট্রনিক্সের দোকান থেকে আজ অবধি সঞ্জয়ের সমস্ত ব্যবসার অর্ধেক অংশীদার তার স্ত্রী পুনম আগরওয়াল।
সঞ্জয়কে ভয় দেখাতে পুনম বিবাহ বিচ্ছেদের মামলার হুমকি দিল। ব্যবসাকে আলাদা করে নেবারও কথা জানিয়ে দিল। আসলে পুনম এগুলো সবই অভিমান থেকে করেছিল। যাতে সঞ্জয় ভুল বুঝতে পেরে তার কাছে আবার ফিরে আসে। ঠিক আগের মত। তা না হলে সঞ্জয়কে ছেড়ে একা থাকার কথা সে স্বপ্নেও ভাবতে পারে না। ব্যবসা আলাদা করার কোনও প্রশ্নই নেই, কারণ ব্যবসা সে নিজেই ভালো করে বোঝেও না। এতদিন সঞ্জয় যেখানে বলেছে যেভাবে বলেছে চোখ বুজে সেখানে সই করে দিয়েছে পুনম।
সঞ্জয়কে ভয় দেখাতে পুনম বিবাহ বিচ্ছেদের মামলার হুমকি দিল। ব্যবসাকে আলাদা করে নেবারও কথা জানিয়ে দিল। আসলে পুনম এগুলো সবই অভিমান থেকে করেছিল। যাতে সঞ্জয় ভুল বুঝতে পেরে তার কাছে আবার ফিরে আসে। ঠিক আগের মত। তা না হলে সঞ্জয়কে ছেড়ে একা থাকার কথা সে স্বপ্নেও ভাবতে পারে না। ব্যবসা আলাদা করার কোনও প্রশ্নই নেই, কারণ ব্যবসা সে নিজেই ভালো করে বোঝেও না। এতদিন সঞ্জয় যেখানে বলেছে যেভাবে বলেছে চোখ বুজে সেখানে সই করে দিয়েছে পুনম।
আরও পড়ুন:
রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, পর্ব-১৫: নীলাঞ্জনা চায় সামাজিক স্বীকৃতি
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬১: ‘বন্ধু’ তোমার পথের সাথী
এই ঘটনার ঠিক এক সপ্তাহের মধ্যে ঘটে গেল একটা মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। আলিপুরের বাংলো থেকে শিল্পপতি সঞ্জয় আগরয়াল কোনও একটা ব্যবসা সংক্রান্ত পার্টিতে বেরিয়ে গেলেন সন্ধে সাতটা নাগাদ। স্ত্রী পুনম তখন বাড়িতে ছিল না। বাড়ি ফিরেছিল রাত আটটা নাগাদ। শপিং করে। তারপর অনেক রাতে প্রায় দশটা নাগাদ সঞ্জয় পার্টি থেকে ফিরলেন। ফেরার পর আবিষ্কার করলেন স্ত্রী পুনম বাথটবে অচৈতন্য। বাথটবের জল রক্তে লাল, হাতের শিরা কেটে ফেলেছে পুনম। ছুটোছুটি করে পুনমকে নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। জানা গেল, মৃত্যু এক ঘণ্টা আগে ঘটে গিয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে কোনও প্রমাণ নেই। কিন্তু শপিং করে এসে কোনও মহিলা আত্মহত্যা করবেন কেন? এই খটকা ছাড়াও সঞ্জয়ের জবানবন্দির বেশ কিছু অসঙ্গতি থেকে সন্দেহ ঘনীভূত হল যে এটা পরিকল্পিত খুন। প্রাথমিক সন্দেহভাজন হলেন সঞ্জয়। তাকে গ্রেফতার করা হল। কিন্তু কিছুতেই পুলিশ প্রমাণ করতে পারলেন না যে এটা কোনও খুনের ঘটনা। বা এতে সঞ্জয় কোনওভাবে জড়িত। প্রমাণের অভাবে সঞ্জয়ের জামিন হয়ে গেল।
প্রাথমিক তদন্তে কোনও প্রমাণ নেই। কিন্তু শপিং করে এসে কোনও মহিলা আত্মহত্যা করবেন কেন? এই খটকা ছাড়াও সঞ্জয়ের জবানবন্দির বেশ কিছু অসঙ্গতি থেকে সন্দেহ ঘনীভূত হল যে এটা পরিকল্পিত খুন। প্রাথমিক সন্দেহভাজন হলেন সঞ্জয়। তাকে গ্রেফতার করা হল। কিন্তু কিছুতেই পুলিশ প্রমাণ করতে পারলেন না যে এটা কোনও খুনের ঘটনা। বা এতে সঞ্জয় কোনওভাবে জড়িত। প্রমাণের অভাবে সঞ্জয়ের জামিন হয়ে গেল।
আরও পড়ুন:
চলো যাই ঘুরে আসি, অযোধ্যা: প্রাচীন ভারতীয় ধর্ম-সংস্কৃতি সমন্বয়ের প্রাণকেন্দ্র/১
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩২: সরকারবাড়ির ছেলেদের সঙ্গে শ্রীমার বুড়ি-বুড়ি খেলা
কোর্টে কেস চলতে লাগল মাসের পর মাস। তার বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ কোনও সাক্ষী জোগাড় করতে পারলো না পুলিশ। কিন্তু আগ্রাসী আইনজীবী নিখিল সেন প্রমাণের অভাবে গ্রেফতার করে তার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মক্কেল সঞ্জয়কে হেনস্তা করার জন্য কোর্টে পুলিশ ডিপার্টমেন্ট এবং পাবলিক প্রসিকিউটরের তুলোধোনা করে দিলেন। নিখিল সেন প্রমাণ করে দিলেন এটা আত্মহত্যা! স্বামী-স্ত্রীর ভুল বোঝাবুঝি থেকে ঘটে যাওয়া দুর্ভাগ্যজনক মর্মান্তিক এক পরিণতি। শিল্পপতি সঞ্জয় আগরয়াল নিজের চেষ্টায় বাগরি মার্কেটের ছোট্ট ইলেকট্রনিক্স দোকান থেকে সারা শহরে জড়িয়ে পড়া এত বিরাট ব্যবসার সাম্রাজ্য গড়েছেন। খুব স্বাভাবিকভাবেই তিনি আজ আর সেই পুরনো সঞ্জয় নন।
আগের মতো তিনি পরিবারকে সময় দিতে পারেন না। আগরওয়াল দম্পতি নিঃসন্তান। সেই কারণে স্ত্রী পুনমের একটা মানসিক যন্ত্রণা ছিল। এর ওপর সঞ্জয়ের ক্রমাগত ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকা, স্ত্রীকে সময় দিতে না-পারা দাম্পত্য দ্বন্দ্ব অকারণ সন্দেহ বাড়িয়ে তুলেছিল। অবসাদ ও একাকীত্ব থেকে এই মর্মান্তিক আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত। এটা খুন নয়, কোনওভাবেই নয়।
আগের মতো তিনি পরিবারকে সময় দিতে পারেন না। আগরওয়াল দম্পতি নিঃসন্তান। সেই কারণে স্ত্রী পুনমের একটা মানসিক যন্ত্রণা ছিল। এর ওপর সঞ্জয়ের ক্রমাগত ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকা, স্ত্রীকে সময় দিতে না-পারা দাম্পত্য দ্বন্দ্ব অকারণ সন্দেহ বাড়িয়ে তুলেছিল। অবসাদ ও একাকীত্ব থেকে এই মর্মান্তিক আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত। এটা খুন নয়, কোনওভাবেই নয়।
আরও পড়ুন:
অ্যারোমাথেরাপি—মনের ওষুধ, শরীরেরও
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৩৪: সুন্দরবনের মৃত ও মৃতপ্রায় নদী
আর্থিক সাফল্য বা প্রতিপত্তিতে সফল মানুষের বিরুদ্ধে স্বাভাবিক হিংসা বা দ্বেষ কাজ করে। হয়তো পুলিশের কেউ বা কারা তাদের ব্যক্তিগত ক্ষোভ প্রতিহিংসা মেটাতে সম্পূর্ণ অকারণে সঞ্জয়কে গ্রেপ্তার করেছেন। ক্রমাগত ভিত্তিহীন প্রমাণের সাপেক্ষে তার চরিত্র হননের চেষ্টা করছেন। সঞ্জয় আগরওয়াল বেকসুর খালাস পেলেন। আর ঠিক এক বছরের মাথায় আবার বিয়ে করলেন তার এক বান্ধবী রুমি সেনগুপ্তকে। দিল্লির মেয়ে পুনম সিং তার মা-বাবার একমাত্র সন্তান। বাবা মারা গিয়েছেন। প্রথমে বোনের এবং তারপর বাবার মৃত্যুর পর মাকে নিয়ে দিল্লির বাড়ি বিক্রি করে পাকাপাকিভাবে পুনমের দাদা রবি সিং তার মাকে শিকাগোতে নিজের কাছে নিয়ে চলে গিয়েছেন।
শিকাগোতে রবির সঙ্গে দু’ একবার ই-মেলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বাবুর যোগাযোগ করতে পারেনি। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর জোগাড় করে ফোন করেছিল। স্পষ্ট আমেরিকান অ্যাকসেন্টে রবি সিং জানিয়ে দিয়েছেন যোগাযোগের চেষ্টা করে কোনও লাভ হবে না। কারণ, তারা এই বিষয়ে না কিছু বলবেন আর না কোনওরকম আইনি পদক্ষেপ নেবেন। বহু বছর আগে তার বোন পুনমের সঙ্গে যে সঞ্জয়ের বিয়ে হয়েছিল তাকে তিনি চিনতেন জানতেন। আজকের সঞ্জয়ের সঙ্গে তার কোনও পরিচিতি নেই। তিনি তার সঙ্গে কোনও যোগাযোগ বা পরিচিতি রাখতে চান না। এটা একটা ক্লোজড চ্যাপ্টার। অযথা যেন তাকে বা তার পরিবারকে বিরক্ত করা না হয়।
সময় চলে যাচ্ছে ভৈরব চক্রবর্তী তাগাদা করছেন। সরকারি মহলে নিখিল সেনের হত্যা রহস্য সমাধানের চাপ রয়েছে। আর একটি পরিবারের খোঁজ নেওয়া বাকি। —চলবে।
শিকাগোতে রবির সঙ্গে দু’ একবার ই-মেলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বাবুর যোগাযোগ করতে পারেনি। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর জোগাড় করে ফোন করেছিল। স্পষ্ট আমেরিকান অ্যাকসেন্টে রবি সিং জানিয়ে দিয়েছেন যোগাযোগের চেষ্টা করে কোনও লাভ হবে না। কারণ, তারা এই বিষয়ে না কিছু বলবেন আর না কোনওরকম আইনি পদক্ষেপ নেবেন। বহু বছর আগে তার বোন পুনমের সঙ্গে যে সঞ্জয়ের বিয়ে হয়েছিল তাকে তিনি চিনতেন জানতেন। আজকের সঞ্জয়ের সঙ্গে তার কোনও পরিচিতি নেই। তিনি তার সঙ্গে কোনও যোগাযোগ বা পরিচিতি রাখতে চান না। এটা একটা ক্লোজড চ্যাপ্টার। অযথা যেন তাকে বা তার পরিবারকে বিরক্ত করা না হয়।
সময় চলে যাচ্ছে ভৈরব চক্রবর্তী তাগাদা করছেন। সরকারি মহলে নিখিল সেনের হত্যা রহস্য সমাধানের চাপ রয়েছে। আর একটি পরিবারের খোঁজ নেওয়া বাকি। —চলবে।
নিখিল সেন হত্যারহস্য: পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
নিখিল সেন হত্যারহস্য: পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।
‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com