শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


 

উইকেন্ড এসকর্ট

বাবু মানে ধৃতিমান চৌধুরীর এভিডেন্স বোর্ড রয়েছে রান্নাঘরে। এভিডেন্স বোর্ড হল সেই নানান গোয়েন্দা গল্পে দেখা একটা নোটিশ বোর্ডের মতো। যাতে সম্ভাব্য সন্দেহভাজনদের ছবি বা সন্দেহজনক কিছু কথা লেখা থাকে। কখনও কোনও পেপারকাটিং। আর ছবি ইত্যাদির লাগানো বোর্ডপিনে সুতো লাগিয়ে একের সঙ্গে অপরের যোগসূত্র দেখানো। হিন্দি বাংলা ইংরেজি বহু ছবিতে বহুবার দেখেছি। এর আবার হরেক নাম আছে। এভিডেন্স বোর্ড, কন্সপিরিসি বোর্ড, মার্ডার ম্যাপ ক্রেজি ওয়াল। ফেলুদা মগজাস্ত্রের উপর নির্ভর করতেন বলে এই এভিডেন্স বোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে ভাবছেন এমন দৃশ্য পড়িওনি দেখিওনি।

চিড়িয়াখানা ছবিতে আমরা দেখেছিলাম ব্যোমকেশ এভিডেন্স বোর্ডে সন্দেহভাজনদের ছবি লাগিয়ে রাখছে। নিখিল সেন হত্যার রহস্যের এভিডেন্স বোর্ডের ঠিক মাঝখানটিতে বড় বড় করে লেখা নিখিল সেন আর তাকে ঘিরে রয়েছে ক্রিমিনাল ল’ইয়ার নিখিল সেনের বিভিন্ন শাঁসালো মক্কেলদের নাম। যাদের বিভিন্ন সময়ে নিশ্চিত হাজতবাস বা মৃত্যুদণ্ড থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন নিখিল সেন। যারা প্রভুত অর্থে ভরিয়ে দিয়েছেন নিখিল সেনের দু’ হাত। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে এরা তো নিখিল সেনের কাছ থেকে মোটামুটি নিজেদের জীবন ফিরে পেয়েছেন। তারা তো আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবেন নিখিলের কাছে। তারা সন্দেহভাজনদের তালিকায় কেন ? বাবু একেবারে অন্য ধরনের গোয়েন্দা। যাদের নাম সে লিখেছে তারা কেউ সন্দেহভাজন নয়, কিন্তু বাবুর স্থির বিশ্বাস এই বিভিন্ন মানুষের সূত্রে সে কাউকে না কাউকে পাবে, যার সঙ্গে লুকিয়ে আছে নিখিল সেনের মৃত্যু।

পুলিশ রেকর্ড আর কোর্টের নথি ঘেঁটে বাবু নিখিল সেনের সাম্প্রতিক অতীতের কয়েকটি কেসের খুঁটিনাটি বের করে ফেলল। তিনটি কেসেই মিল হল, নিশ্চিত খুনের দায় থেকে অপরাধীদের বেকসুর খালাস করতে সক্ষম হয়েছেন ব্যারিস্টার নিখিল সেন। কলকাতার একান্তে গেস্ট হাউসে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল, দুর্গাপুরের মেয়ে নীলাঞ্জনার। নীলাঞ্জনা দত্ত অবিবাহিতা। কলকাতার প্রভাবশালী এক অকৃতদার চিরকুমার মন্ত্রীর বেশ ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন বলে গসিপ ম্যাগাজিনের অভিযোগ ছিল। তাকে বন্ধ ঘরে ফ্যানে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। গলায় ওড়নার ফাঁস। একটি ময়নাতদন্তে দেখা গেল মৃতা অন্তঃসত্ত্বা। বিশ্রীভাবে জড়িয়ে গিয়েছিলেন প্রভাবশালী অকৃতদার মন্ত্রী। নীলাঞ্জনা চায় সামাজিক স্বীকৃতি
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, পর্ব-১৪: মৃত্যুর রাতে নিখিল কি শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছিলেন?

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৩৩: সুন্দরবনের এক অনন্য প্রাণীসম্পদ গাড়োল

আসলে মৃতার দেহে নানান চোট আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। পাওয়া যায় একটি চিঠি যাতে কাউকে নীলাঞ্জনা কাকুতিমিনতি করে তার শরীরে বেড়ে ওঠা সন্তানের দায় স্বীকার করার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু সে চিঠিতে কোন সম্বোধন ছিল না। নীলাঞ্জনা চিঠিতে লিখেছিলেন, সেই ব্যক্তির বিশিষ্ট সামাজিক সম্মানকে আঘাত করার কোনও ইচ্ছা বা উদ্দেশ্য তার নেই। সে চায় তার এবং তার সন্তানের সামাজিক স্বীকৃতি। এই ঘটনার দিন সন্ধ্যেবেলা মন্ত্রীর সঙ্গে নীলাঞ্জনার যোগাযোগের প্রমাণ স্পষ্ট। কিন্তু নিখিল সেন সযত্নে কলঙ্কের কালিঝুলি মুছে মন্ত্রী ও মন্ত্রীর ঝকঝকে ইমেজ রক্ষা করেছিলেন। দূর্গাপূরে বাবু গিয়েছিল। নীলাঞ্জনার প্রৌঢ় মা-বাবার সঙ্গে দেখা করেছে।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩১: শ্রীমার পঞ্চতপা ব্রতানুষ্ঠান

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৪৮: রামায়ণে বনবাসযাপন সিদ্ধান্তে অনমনীয়া সীতার কণ্ঠে কী আধুনিকতার সুর?

নীলাঞ্জনার বাবা দুর্গাপুর স্টিল প্লান্টের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। একমাত্র মেয়ের মৃত্যুর যন্ত্রণায় কুঁকড়ে রয়েছেন । ডিভিসি মোড়ের কাছে ত্রিকোণ পার্কে নিজের করা দোতলা বাড়ি জলের দামে বিক্রি করে সেখান থেকে কুড়ি পঁচিশ কিলোমিটার দূরে লাউদোহায় বাড়িভাড়া করে থাকেন। বাবু সেইসব পুরনো কথা তুলতে প্রৌঢ় স্বামী-স্ত্রী দুজনেই হাতজোড় করে বললেন—
—বাবা তুমি আমার নীলার বয়সী হবে। তোমার কাছে জোড়হাতে মিনতি করছি। যথেষ্ট কলঙ্ক মাথায় নিয়ে মেয়েটা চলে গিয়েছে। আবার তাকে কাটা ছেঁড়া কোরো না। আমরা কোনও বিচার চাই না কারও শাস্তি চাই না। যে কদিন বেঁচে আছি দুজনে আমাদের মনের কষ্ট এই চার দেয়ালের মধ্যে বেঁধে রাখতে চাই। এমন কিছু করো না যাতে আমাদের দুজনকে লজ্জা থেকে বাঁচতে আত্মঘাতী হতে হয়।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬১: ‘বন্ধু’ তোমার পথের সাথী

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৫০: কুষ্টি বিচার, না কি রক্ত বিচার! জরুরি কোনটা?

নীলাঞ্জনা ও তার পরিবারকে মার্ডার ম্যাপ থেকে ধৃতিমান চৌধুরী বাদ দিয়ে দিল। কিন্তু অন্যদের খোঁজখবর নেওয়া শুরু করলো ধৃতিমান। কেসের জন্যে নিখিল সেনের কার্ডিওলজিস্ট এর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েও কথা বলা যায়নি। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এথিক্স ভেঙে তার মৃত পেশেন্টের ক্লিনিকাল প্রাইভেসি জানাতে চাননি। তবে শহরের আরেক নামী কার্ডিওলজিস্ট-এর সঙ্গে বাবু কথা বলেছে।জিজ্ঞেস করেছে শারীরিক সম্পর্ক কোনওভাবে নিখিল সেনের হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে কিনা। বাবুর পরিচিত সেই বিখ্যাত কার্ডিওলজিস্ট বলেছেন—

—দেখুন এসব একটা ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি – সুতরাং ইয়েস। হার্ট অ্যাটাক ট্রিগার করতে পারে । কিন্তু হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের একটা রিসার্চ বলছে এজন্য হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা শতকরা একভাগ। ফিজিক্যালি ফিট। নিয়মিত এক্সারসাইজ করতেন। আর আপনি ওনার যে রুটিন বলছেন সেটা অনুযায়ী হি ওয়াস ফিজিক্যালি কোয়াইট আজাইল অ্যান্ড অ্যাকটিভ বলতে হবে। আর যা শুনছি মিস্টার সেন তো রোমিও মানুষ ছিলেন মশাই। সেক্ষেত্রে এই কারণে হার্ট অ্যাটাক? আমার মনে হয়—না, মোস্টলি না।
—স্যর আরেকটা খটকা। ডেরিফাইলিন ডেকাড্রনের প্রেসেন্স পাওয়া গিয়েছে।
—হ্যাঁ, আমি রিপোর্ট দেখেছি। কন্সেট্রেশনটা ইঞ্জেকশন ইন্ডিকেট করছে। সিওপিডি পেশেন্টের ক্ষেত্রে এটা খুব কমন। ডেরিফাইলিন ইনজেকশনে ইটোফাইলিন আর থিওফাইলিন থাকে ব্রঙ্কোডিলেটার্স গ্রুপ বলে। ডেকাড্রন হলো ডেকসামিথাজোন। আমার প্রশ্নটা অন্য জায়গায়। রিসর্টে সঙ্গিনী নিয়ে সেনবাবু ডেরিফাইলিন ডেকাড্রন ইনজেকশন নেবেন কেন? —চলবে।
* হ্যালো বাবু! (Hello Babu) : জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ২য় খণ্ড।

Skip to content