শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


অনুসন্ধান। চিত্রকলা: সংগৃহীত।

 

উইকেন্ড এসকর্ট

কিন্তু সেখানে পৌঁছতে অনেকটা রাস্তা ঘুরতে হয়েছে। সুমন চট্টোপাধ্যায়ের গানে ছিল “কতটা পথ পাড়ি দিতে পথিক বলা যায়…”। যে কোনও কাজেই পরিণতিতে পৌঁছতে গেলে অনেকবার ধাক্কা খেতে হয়। ধৃতিমানকেও সেরকম অনেক গোলকধাঁধায় পথ ভুল করে শেষমেষ রহস্যের চাবিকাঠি খুঁজে পেতে হয়েছে।

সেদিন রিসর্ট-এর ঘরে দ্বিতীয়বার খুঁজতে গিয়ে খাটের পাশে কার্পেটের উপর চকচকে কিছু একটা চোখে পড়ল। আঠা হালকা হয়ে আসা খুদে একটা হলোগ্রাফিক স্টিকার। সেই একটা ছোট্ট স্টিকার অনেক কিছু বলে দিল। রাতে বুবু ঘুমিয়ে পড়তে বাবু মানে আমাদের ধৃতিমান চৌধুরী ড্রয়ার থেকে ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে ভালো করে আবিষ্কার করল চারটে ইংরেজি অক্ষর। এইচএমবিএস। জগতে এত রকমের প্রোডাক্ট রয়েছে।

এইচএমবিএস-টা কী? এটা তো খুঁজে পাওয়া একটা দুঃসাধ্য কাজ। এটা জোর দিয়ে বলাও যায় না যে রিসর্টের ওই ঘরে এর আগে নানান গেস্টের মধ্যে স্টিকারের সঙ্গে শুধুমাত্র নিখিল সেন বা তার মৃত্যুরই কোনও যোগাযোগ আছে। কিন্তু বাবুর পূর্ববর্তী ফেলুদা ব্যোমকেশ পরাশর বর্মা বা কিরীটি রায় কেউই কখনও ছোটখাট সূত্রকেও গুরুত্বহীন মনে করেননি। তাই বাবু এই হলোগ্রাফিক স্টিকারে লেখা এইচএমবিএস নিয়ে ভাবতে বসল। তার অভিজ্ঞতা থেকে সে দেখেছে রহস্য সমাধানে পরবর্তী অনেক সূত্র প্রথমে পাওয়া সূত্রের ধোঁয়াশা কাটিয়ে দেয়। ধৈর্য আর আত্মবিশ্বাস সবসময় একটা বড় ভূমিকা পালন করে।

একটা বিষয় স্পষ্ট যে নিখিল সেন বেছে বেছে নামীদামী ক্রিমিনাল কেস নেন এবং আশ্চর্য দক্ষতায় অপরাধীকে নিশ্চিত শাস্তির হাত থেকে বের করে আনেন। খুব স্বাভাবিকভাবে নিখিলের বাজারদর আকাশছোঁয়া।নিখিল সেন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। সমাজের উঁচুমহলে তাঁর সহজ বিচরণ। এ ধরনের লোকজন বেপরোয়া হবেন সেটা তো স্বাভাবিক।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, পর্ব-১৩: খদ্দের সেজে ধৃতিমান পৌঁছল এসকর্ট সার্ভিসের অফিসে

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৪৯: সখী, আঁধারে একলা ঘরে

পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরাও নিখিল সেনের বিশেষ পরিচিত। তাই নিখিল সেনের অস্বাভাবিক মৃত্যু সকলের কাছেই একটা প্রশ্নচিহ্ন। এটা কি খুন? নাকি স্বাভাবিক মৃত্যুর চেহারায় লুকিয়ে আছে আসল রহস্য। চক্রবর্তী সাহেব তার কোর টিম মানে আমাদের বাবু ওরফে ধৃতিমান চৌধুরী শ্রেয়া বাসু আর দত্তকে কেসটার গুরুত্ব বুঝিয়ে বলছিলেন। তাঁর ওপর যে বেশ চাপ রয়েছে সেটা আন্দাজ করতে পারে বাবু। শ্রেয়া বা চক্রবর্তীর কাছে তখনই কিছু না বললেও বাবুর ইনস্টিঙ্ক তাকে বলছে, ডাল মে কুচ কালা হ্যায় ।

ইনস্টিঙ্কট শব্দটার বাংলা মানে বেশ খটমট। উপজ্ঞা। প্রজ্ঞা মানে আত্মবোধ সাদা কথায় বুদ্ধিমত্তা। উপজ্ঞাটি কি বস্তু? সহজাত প্রতিভা নাকি উপস্থিত বুদ্ধি? বেসিক ইন্সটিঙ্কট আবার অন্য জিনিস। শব্দার্থ ভাবার আগেই মাইকেল ডগ্লাস শ্যারন স্টোন মাথায় আবির্ভূত হন। সেটা সহজ সরল আদিম প্রবৃত্তি। যাই হোক বাবুর সহজাত বুদ্ধিমত্তা তাকে বারবার বলছিল গণ্ডগোল রয়েছে। দাঁতের ফাঁকে ছোট মাছের কচি নরম কাঁটা ফেঁসে থাকার মত অস্বস্তিকর। ব্যথা দেয় না কিন্তু বারবার নিজের উপস্থিতি জানান দেয়।
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৩২: ইতিহাস ও বিজ্ঞানের আলোয় গঙ্গাসাগর মেলা

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬০: নতুন পথে রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত

সন্দেহটা আরও ঘোরতর আকার নিয়েছে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আসার পর। মৃত্যুর কারণ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট। নিখিল সেন সিওপিডির সমস্যা ছিল।সিওপিডি-র রোগী এখন ঘরে ঘরে। ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিসঅর্ডার। ফুসফুসজনিত রোগ। ফুসফুসে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের সময় হাওয়া কম যায়। এত বড়সড়ো নাম এতকাল চেনা ছোট্ট নামে ডেকে আসা হয়েছে। হাঁপানি। এখন স্পেশালাইজেশনের যুগ। তাই সিওপিডি আর অ্যাজমা আলাদা করে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৪৭: পলায়নপর পঞ্চপাণ্ডব-ভীমসেনের গতিময়তায় কোন মহাভারতীয় দিগদর্শন?

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩০: গিরীশচন্দ্রের মা সারদা

এখন সমস্যা হল, সিওপিডি পেশেন্টকে বহু যুগ ধরে ডেরিফাইলিন ডেকাড্রন দেওয়া হয়ে থাকে। এখন ওষুধের নাম ও গ্রুপ বদলেছে। তাই শরীরে এই ধরনের রাসায়নিক পাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু বাবু নিজে ফরেনসিকের বন্ধু মফিজুল হকেরকাছে পরীক্ষার জন্য যে নমুনা দিয়েছিল তার ফলাফলটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিখিল সেনের ডিএনএ মিলে গিয়েছে। যার সঙ্গে মিলেছে সেটা হল রিসর্টের সেই ঘর লাগোয়া ওয়াশরুমে ফেলে রাখা কনডমের মধ্যে পাওয়া সিমেন স্যাম্পল। এটা পাওয়ার মধ্যেও কোনও অস্বাভাবিকতা নেই।

কিন্তু প্রশ্ন হল এটা ওয়াশরুমে রাখা ছিল কেন? আই মাস্ক অমন চোখের সামনে কেন? নিখিল সেন সে রাতে শারীরিক সম্পর্ক করেছিলেন এটা প্রমাণ করার প্রয়োজনীয়তাটা কেন? শারীরিক সম্পর্ক ডেরিফাইলিন ডেকাড্রন হার্ট অ্যাটাক পরপর এগুলো সাজালেই খটকা স্পষ্ট হচ্ছে। এর সঙ্গে রয়েছে সেই খুদে চকচকে হলোগ্রাফিক স্টিকার!—চলবে।
 

নিখিল সেন হত্যারহস্য: পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

* হ্যালো বাবু! (Hello Babu) : জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ২য় খণ্ড।

Skip to content