বৃহস্পতিবার ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫


শকুন্তলার প্রথম অঙ্কে হরিণটা ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়চ্ছে। পিছনে দুষ্যন্ত। রাজা এসে পৌঁছলেন কণ্বের আশ্রমে। তারপর শকুন্তলাকে দেখলেন। দেখেই প্রেম জাগল। প্রণয় থেকে পরিণয় হলো। তারপর প্রত্যাখ্যান। তারপর পুনর্মিলন। তারপর জল অনেক গড়িয়েছে, মনে পড়ে রুবি রায়?

সাহিত্য, গান, নাচ সিনেমা, সিরিয়াল মেগাসোপ সর্বত্র প্রেমের উত্থান-পতন। রাস্তাঘাটে কান পাতলে, সমাজমাধ্যমে চোখ রাখলে, সংবাদপত্র কিংবা নানা সংবাদমাধ্যমে প্রথম সারির খবরে প্রেম, সম্পর্ক, অপ্রেম, ভাঙন। পার্থিব চর্চার বিষয় হিসেবে প্রেমের কাটতি সব যুগেই ছিল, আছে। তাকে কেন্দ্র করেই রস, ভাবের সাফল্য, লৌকিকের স্তর পার হয়ে অলৌকিক আহ্লাদ, নানা তত্ত্বের পরিবেশন। একসময় প্রেম গিয়ে ঠেকে পূজার বন্ধনহীন গ্রন্থিতে, কবি বলবেন ভুবন জুড়ে প্রেমের ফাঁদে কোথায় কে ধরা পড়ে কে জানে!
ব্যাপারটা এমন দাঁড়াল যে ধরা পড়ার চিরকালীন একটা ভয় থাকলো, আবার সেটাই নাকি আনন্দ আর সুখ। কেউ কেউ নাকি স্কুল-কলেজ-কোচিং পালিয়ে প্রেম করতে গিয়ে ধরা পড়ে, কেউ পড়ে না। ডিটেকটিভ গল্প থেকে প্রেমের উপন্যাস সর্বত্র এসব ভুরি ভুরি। প্রেমের সঙ্গে জোট বেঁধে শ্লীল-অশ্লীল, সমাজ, একাল-সেকাল, আধুনিকতা এবং আরও না বলতে পারা বিষয় এসে পৌঁছয়, প্রয়োজনে, অপ্রয়োজনেও।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১৪: ‘…জীবন খুঁজে পাবি ছুটে ছুটে আয়’, লরেন্স ও ফ্রিডা/২

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৭১: ধর্মকার্যের জন্য টাকা জোগাড় করা আর সাদা কাপড়ে ময়লা লাগিয়ে ধোয়া, দুই-ই সমান

একটা সময় মুনি ঋষিদের ধ্যান ভাঙাতে অপ্সরাদের দল নিয়ম করে তাঁদের সঙ্গে প্রেম করতে আসতেন। অন্যদিকে, অহল্যা তো ইন্দ্রকে চিনতেই পারলেন না। প্রাচীন সাহিত্যে রাজাগজাদের প্রেমের মাঝেই চারুদত্ত-বসন্তসেনার প্রেম আছে। মহিলা কবি শীলা ভট্টারিকা একটি শ্লোকেই চৈত্ররজনীর বিবাহপূর্ব প্রণয়ের উৎকণ্ঠার পাশে পরিণয়োত্তর প্রেমকে ধরেছেন। রামায়ণ-মহাভারত থেকে ইলিয়ড ওডিসি, তাজমহলের মূলে প্রেমজ আকর্ষণ-প্রণয়, বিরহ। একটা মেঘদূত থেকে তাসের দেশ– হাজার হাজার বছর ধরে প্রেমের সরণীর মধুর বিরহ বেয়ে পথ হাঁটা। প্রাচীন মদনোৎসব, কিউপিড থেকে আধুনিক ভ্যালেন্টাইন’স দিবসে নতুন কিছু কি হচ্ছে?
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০২: অন্ধকারে কে?

হ্যালো বাবু!, পর্ব-৬৮: গুগলি/৩

সভ্যতার তথাকথিত আবরণ কিছু বোধের জন্ম দিয়েছে যেখানে মানুষ কখনও সংযমী, কখনও অসহায়, কখনও লোকাচার, ঐতিহ্য, আধুনিকতার তকমা আঁটা সংসারী সং, আত্মমুগ্ধ মুক্তকচ্ছ। আদর্শবাদী কাব্য প্রেমকে স্বর্গীয়, অমর্ত্য করেছে। যুগে যুগে প্রেমঘটিত বিষয় রহস্যময়, রোমাঞ্চে ভরপুর, বিরহে মধুর, কারুণ্যে আনন্দঘন। আধুনিক গোয়েন্দার জীবনে কখনও প্রেম আসে না। আবার ভরা সংসারী গোয়েন্দা রহস্যের জাল গোটান।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৮৭: সুন্দরবনের পাখি — ফিঙে

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৬: জীবন নিয়ে কৌতুক আর ‘যৌতুক’

বছরভোর বদলে যাওয়া সময়ের নানা ভালমন্দের হিসেব করতে করতে ফেব্রুয়ারির চোদ্দ তারিখ এলেই এই আকস্মিক বিপদপাত্ নিয়ে তরজা শুরু হয়। দুর্গাপুজো এসে যেমন বিজয়ায় ঠেকে তেমনই রোজ ডে, চকোলেট ডে, টেডি ডে, প্রমিস ডে, চুম্বন ডে অমুক তমুক পার হয়ে চোদ্দ তারিখের ষোলকলা পূর্ণ হবে। লোকজন এইদিন রাস্তায় ঘুরবে। পুজো, বড়দিন, মনীষীর জন্ম কিংবা মৃত্যুদিন, নিজের, নতুন বছরের কিংবা দেশের জন্মদিনে যেমন সিটি দিয়ে উদযাপন করে তেমনটাই কিছু করবে। মোটকথা, কিছু একটা করতে হবেই। কিছু বছর আগেও যাতে খানিকটা আবডাল ছিল, এখন আবালবৃদ্ধ নির্বিশেষে তা নিয়ে সচ্ছন্দ। এটা হয়তো প্রগতির একটা অপূর্ব নিদর্শন। শোনা যায়, প্রাইমারি ক্লাসেই এখন ব্রেক আপ হয়। স্কুলস্তরেই সিরিয়াস সম্পর্ক, মন ভাঙা, বিচ্ছেদ, পুনর্মিলন। নভেম্বরের চোদ্দ তারিখের শিশু দিবস নাকি ফেব্রুয়ারির চোদ্দ তারিখের প্রেমদিবস কোনটির জোর বেশি তা এখন আর বলা সহজ নয়।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০১: অর্জুন প্রমাণ করলেন, রাজধর্ম পালনের ক্ষেত্রে মিথ্যাচারের কোনও স্থান নেই

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১১১: মৃণালিনীর মৃত্যুর পর বিবাহ-প্রস্তাবের মুখোমুখি রবীন্দ্রনাথ

মোট কথা ফেব্রুয়ারির চোদ্দতে ওপাড়ার ট্যাঁপা-টেঁপি তমুক উদ্যানে ছাতাসহ ধরা পড়বে, পার্কে পার্কে দাদা-দিদির দল হুল্লোড় করবে নানা দৃশ্য ও দৃষ্টিকটু উপায়ে, অলি-গলি থেকে রাজপথে, বাজারে, মলে একান্ত উদযাপন চলবে। কেন, কি জন্য কেউ জানে না, ভাবে না, ভাবার দরকার-ও নেই। দাদু-জ্যেঠুরা চোখ পাকাবেন। ওরা ভেংচি কাটবে। এককাল ছিল, যখন বৈশাখে দেখা, জ্যৈষ্ঠে পরিচয়, আষাঢ়ে যেন কী হয় কী হয়! এখন আটদিনের প্যাকেজ। রোজ, প্রপোজ, চকোলেট, টেডি, প্রমিস, হাগ, কিস পার হয়ে ভ্যালেন্টাইন’স ছুঁয়ে খেলা ভাঙার খেলা। কি, কোথায়, কেন, কী জন্য জানতে চাইবেন না প্লিজ।
* ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content