শনিবার ১৯ এপ্রিল, ২০২৫


ডিএইচ লরেন্স ও ফ্রিডা।

ফ্রিডার একাধিক প্রেমিক ছিলেন। যৌন জীবনে স্বাধীনতা থাকাই তিনি নিজের স্বাধীনতা মনে করতেন। লরেন্সকেও তেমনি এক প্রেমিক ভেবেছিলেন। কিন্তু লরেন্স লুকোছাপার পক্ষে নন। একবার দু’জনে দেখা করতে গিয়ে জার্মানির পুলিশের হাতে পরেন লরেন্স। তাকে ইংরেজ এর গুপ্তচর ভেবে ধরে নিয়ে যায়। ফ্রিডা তার বাবার আধিপত্যের জোরে লরেন্সকে মুক্ত করেন। এ বার লরেন্স আর অপেক্ষা করতে চাইলেন না। খোলাখুলি সব কথা হলো একগুচ্ছ আবেগ ঘন চিঠিতে।ফ্রিডার তখনকার সন্তানদের প্রতি প্রবল আকর্ষণ এক বাধা।
আবার পরবর্তীকালেও লরেন্সও সন্তান চান। অদ্ভুত কথা হল, লরেন্সের কিন্তু এক পয়সা উপার্জন নেই। কিন্তু ফ্রিডা আবার মা হোন, ও লরেন্স নিজের সন্তানের দায়িত্ব নেবেন, এ বিষয়ে খুব আগ্রহী তিনি। যত বাধাই থাক না কেন, ফ্রিডা বুঝলেন লরেন্স তার অন্য প্রেমিকদের মতো শুধু ফূর্তি করার প্রেমিক নন। বিয়ে তাকে করতেই হবে।, “I had to be his wife if the skies fell,and they nearly did”.
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১৩: রাগ অনুরাগের বন্ধন, ডিএইচ লরেন্স ও ফ্রিডা

বীণাবাদিনীর শতদলদলে করিছে সে টলোমল

বিয়ের পর প্রথম সমস্যা হল ফ্রিডার সন্তানদের প্রতি টান। লরেন্স কিছুতেই বুঝতে চাইতেন না। সন্তানদের দেখতে না পেয়ে, মাতৃত্বের যন্ত্রণায় ছটফট করতেন ফ্রিডা। এ নিয়ে তুমুল ঝগড়া হতো। ফ্রিডার মতে, “What kind of unnatural woman would I be if I could forget my children?” লরেন্স এর মতে, এসব ফ্রিডার ছল না। মোটেই বাচ্চাদের তিনি খেয়ালেই রাখেন না। বাচ্চারাও তাকে চায় না। ফ্রিডার প্রাক্তন স্বামীও তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য বাচ্চাদেরই টোপ হিসেবে উল্লেখ করতেন। ফ্রিডা ঝগড়া হলে পরাজিত হয়ে কান্নাকাটি করে মেঝেতে শুয়ে কাঁদছেন, আর লরেন্স সান্ত্বনা দেবার তো বালাই নেই। বলতেন, তুমি ঠিক করো কোথায় থাকবে। বাচ্চাদের নিয়ে নিশ্চিত জীবন কাটাবে না আমার সঙ্গে এক অনিশ্চিত, দুঃসাহসী জীবন। কখনও বলতেন না আমিও তোমায় কতো ভালোবাসি। আমার জন্য তুমি থাকো, যা খুশি ঘটুক না কেন।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১১০: মানুষের পাশে, মানুষের কাছে

হ্যালো বাবু!, পর্ব-৬৭: গুগলি/২

যখন তারা ইংল্যান্ড ফিরলেন, ১৯১৩ সালের শুরুর দিকে তখন ফ্রিডা ছেলেমেয়েদের একটু দেখার জন্য তাদের স্কুল গেট এর বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতেন। ক্যাথেরিন ম্যান্সফিল্ড এ সময় ফ্রিডার বন্ধুর মত পাশে থেকেছেন। তার থেকে চিঠি নিয়ে ছেলেমেয়েদের দিয়েছেন।

ফ্রিডা কে নিয়ে দ্বিতীয় সমস্যা হল তার যৌন স্বাধীনতা উপভোগের চাহিদা। আগের স্বামীর সঙ্গে থাকাকালীনও অন্য কারও সঙ্গে রাত কাটিয়ে আসতেন। নিজের পছন্দ মতো। লরেন্সের সঙ্গে থাকার সময়ও। এসব আবার লরেন্সকে বলতেনও, দেখতেন তিনি ঈর্ষান্বিত হন কিনা। হলে আনন্দ পেতেন, নিজের একটা অস্তিত্ব আছে ভেবে। লরেন্স ঈর্ষান্বিত হতেন ঠিকই। কিন্তু প্রকাশের একটু সমস্যা হতো, কারণ তত্ত্ব গত ভাবে তিনি স্বামী স্ত্রী ,দুজনেরই স্বাধীন অস্তিত্ব চেয়েছেন।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৮৬: সুন্দরবনের পাখি — কুবো

যে গান যায়নি ভোলা— প্রাক জন্মদিনে তাঁর প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধার্ঘ্য…/১

দু’জনের একটি বিষয়ে খুব মিল। জীবনের সমস্ত রূপ রস নিংড়ে উপভোগ করা। খুব ছোট্ট, সাধারণ জিনিষ নিয়ে হই হই করে খুশিতে উপচে পরতেন। লরেন্স লিখেছেন, যা খুশি ঘটুক না কেন আমি ভালোবাসি এবং ভালোবাসা পেয়ে ও যাই, আমি দিয়েছি ও পেয়েছি। বেঁচে থাকার আনন্দই তাদের একত্র থাকার মুলসূত্র। ফ্রিডা লিখেছেন, I believe the chief tie between Lawrence and me was always the wonder of living”.
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০১: অর্জুন প্রমাণ করলেন, রাজধর্ম পালনের ক্ষেত্রে মিথ্যাচারের কোনও স্থান নেই

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০১: সরষের মধ্যে ভূত

ফ্রিডা ধনীর দুলালী। বাস্তব জীবনের সাথে কোনওদিন মুখোমুখি হতে হয়নি তাকে। লরেন্সের সঙ্গে ঘর করতে তাকে দারিদ্র্যের সঙ্গে সমঝোতা করতে হয়েছে পদে পদে। কাচা, মাজা, মোছা এসব ঘরকন্নার কাজে নাস্তানাবুদ হয়েছেন বারবার। কাচতে গিয়ে সারা গা ভিজে জবজবে হয়েছে, মেঝে ভর্তি জল। লরেন্স এসে আনন্দের সঙ্গে সাহায্য করেছেন। মারিয়া হাক্সলি বলেছেন, ফ্রিডা একদম ছেলেমানুষ। কোনও পরিণত বুদ্ধি নেই ওর। লরেন্স সস্নেহ প্রশ্রয়ে বলেছেন, সে জন্যই তো ওকে ভালোবাসি। কোনও কাজকেই লরেন্স ছোট মনে করতেন না। সব কাজ পারতেন, মাজা, মোছা, কাঠ কাটা, গরু দোয়ানো এমন কি সেলাই করাও। মা কে এসব কাজে সাহায্য করতে গিয়ে শিখে ফেলেছিলেন। ফ্রিডার বাবা মেয়ের এসব কাজের কথা শুনে ভয়ানক ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন। এক ব্যারন এর মেয়ে হয়ে ফ্রিডা লরেন্স এর ঘরের কাজকম্ম করছে? ছি, ছি। কি অধঃপতন!—চলবে।
* ড. দুর্গা ঘোষাল (Durga Ghoshal), প্রাক্তন অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, গভর্নমেন্ট কলেজ।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content