বুধবার ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫


বিদ্যার দেবী মা সরস্বতী।

দেবতা কখনও মা, কন্যা, পুত্র কিংবা স্বামীর অনুরূপ হয়ে গৃহে গৃহে ধরা দেন। সরস্বতী মাতৃরূপে আসেন বসন্তের পঞ্চমীতে। অকালবোধনের দিনে মায়ের হাত ধরে চলাফেরায় লোককথায় একপ্রকার বাত্সল্যরসের সঞ্চার হয়। কিন্তু মাঘীপঞ্চমীর আরাধনার সকালে সারাবছর তুলোধোনা খাওয়া ছেলে-পিলে, অঙ্ক কষতে পিছলে পড়া চাঁদাশিকারীর দল, জগতের ভালো ভালো ক্ষীর-ননী-ছানা দিয়ে তৈরি বালিকা ও সাবালিকার পাল হামলে পড়ে মায়ের পায়ের কাছে। এদের মধ্যেই লুকিয়ে কুল খেয়ে ফেলা কিংবা পরীক্ষায় ল্যাং খেয়ে এবছরে অঞ্জলি না দিয়ে ও পথ না মাড়ানোর প্রতিজ্ঞা করা জিতেন্দ্রিয়েরা আছেন।
তেমনই আছেন নিপাট ফার্স্টবেঞ্চার, পাটভাঙা শাড়িতে, কিংবা পরিপাটি চুল আঁচড়ে সদ্য ভাঁজভাঙা পাঞ্জাবিতে সজ্জিত হয়ে। ভগবতী ভারতী দেবীর জয় উদ্ঘোষিত করে হাতের ফুল ও মনের বাঞ্ছা যথাস্থানে জমা করে তাঁরা এই বাৎসরিক কৃত্য সম্পূর্ণ করেন। এত ভক্তিরসের প্লাবন বয়ে যায়, কারণ তাঁর হাতেই পাশ-ফেল। সরস্বতী পাশ-ফেলের দেবী। তিনিই পাশ করান। যে পাশ করে তাকে ফার্স্ট সেকেন্ড করা, ভক্তির এদিক ওদিক হলেই সেকেণ্ডকে ফার্স্টে তুলে বহুদিন ফার্স্টে আটকে থাকাকে নামিয়ে দেওয়া, বছর বছর ফেল করাকে উতরে দেওয়া, গার্জেন কল আটকানো এমনকী স্যারকে জব্দ করার আপিসটা উনিই দেখেন। একটু বিচ্যুতি হয়েছে কী, গেছো। তাই শীতের ভোরবেলা চুপচাপ স্নান সেরে…
আরও পড়ুন:

পরানের কোথা সে বিরাজে?

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৪: শিকারী ও ‘শিকার’

মনে পড়ে, সরস্বতী আর লক্ষ্মীদেবী একবার কলহ করে কে সেরা তা বেছে দেওয়ার এক ব্যবস্থা করে নিজেরাই সমাধানের পথ পেয়েছিলেন। একজন বসলেন সোনার সিংহাসনে, অন্যজন রূপোর সিংহাসনে। যুগে যুগে একটা বিতর্ক চলে এসেছে, লক্ষ্মীর আশীর্বাদধন্য হয়তো সরস্বতীর কৃপা পান না। সরস্বতীর কৃপা হলে তার বিপরীতটা ঘটে। শাস্ত্র জানাবে লক্ষ্মী চঞ্চলা, রাজলক্ষ্মী স্থিত হন না।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১১০: মানুষের পাশে, মানুষের কাছে

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০১: সরষের মধ্যে ভূত

প্রসিদ্ধ শ্লোকে শোনা যাবে, বিদ্বানব্যক্তি ও রাজার অবস্থান কখনোই তুল্য নয়, কারণ রাজার জারিজুরি নিজের দেশে সীমাবদ্ধ, বিদ্বানের আদর জগৎজুড়ে। আখ্যানোপাখ্যানে গল্প শুরুই হবে “এক দেশে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ ছিল”… অধ্যয়ন, অধ্যাপন, যজন, যাজন, দান, প্রতিগ্রহের কাজ করা সমাজশ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণের হাতে বিদ্যার গরিমা ছিল, অর্থের ঐশ্বর্য নয়। দিনকাল বদলেছে। বিদ্যা ও সম্পদের আপাতঃ দূরত্বটুকুও কেটে যাচ্ছে। জ্ঞানশক্তি “নলেজ” হয়ে দেখা দিচ্ছে।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৮৫: সুন্দরবনের পাখি — মাছরাঙা

যে গান যায়নি ভোলা— প্রাক জন্মদিনে তাঁর প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধার্ঘ্য…/১

তথ্যও কখনও কখনও জ্ঞান। “উইসডম” বলতে যা বোঝায় তার থেকেও অধিক প্রয়োজন সার্বিক নিয়ন্ত্রণের শিক্ষা, ম্যানেজমেন্ট। এর সঙ্গেই পৃথিবীতে পণ্য-ই একমাত্র সত্যে পরিণত। সকল জ্ঞানবুদ্ধি পণ্যকে কেন্দ্র করে পাক খাচ্ছে, বিশ্বের হাটে দেবী সরস্বতীর দপ্তর, লক্ষ্মীদেবীর দপ্তর অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা পড়েছে বহুদিন। পাশাপাশি এও সত্য হয়ে থেকে গেছে যে, বহুদিনের অর্জিত জ্ঞান অথবা জ্ঞানান্বেষণ পূর্ণতা পায় না, যদি ঘরের পাশেই আরশিনগরের পড়শিকে চোখে না দেখি, যদি ঘরের পাশেই দুলতে থাকা একটি ঘাসের শিসের উপর একটি শিশিরবিন্দুর সৌন্দর্যটুকু উপলব্ধির মন বা সামর্থ্য না থাকে।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০০: সন্দেহের তীরবিদ্ধ ভরতদের আজও খুঁজে পাওয়া যায়

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১৩: রাগ অনুরাগের বন্ধন, ডিএইচ লরেন্স ও ফ্রিডা

মাঝে মাঝে প্রশ্ন জাগে, সমাধান-ও আসে বর্তমানের কম্পিউটার সাক্ষরতার দৈব দপ্তরটিকে নিয়ে। এসব আবেদন বিশ্বকর্মা দেখবেন, নাকি সরস্বতী? সঙ্গত প্রশ্নের সঙ্গত উত্তর চমৎকৃত করে। হার্ডওয়্যার বিশ্বকর্মার, সফটওয়্যার সরস্বতীর। তেমনই মানবমনের অন্তর্লোকে তিনি মূর্ত থাকেন। হাত, পা, কান, দাঁত নয়, বরং মন, বুদ্ধি, চেতনা, চৈতন্য নিষ্কলুষ সাফসুতরো করার অংশটাই তাঁর। তাই বিনয়ের আক্ষরিক অর্থেই বিদ্যা, তাই তো উপনিষদে দানের প্রসঙ্গে বলা হবে “শ্রদ্ধয়া দেয়ম্, শ্রিয়া দেয়ম্, হ্রিয়া দেয়ম্, ভিয়া দেয়ম্, সংবিদা দেয়ম্।” সেই চেতনার বাহক হয়েই বিদ্যা বিনয়ী করে। আজকের পরিবর্তিত মূল্যবোধের যুগে বিদ্যেবোঝাই বাবুমশাইদের তরতরিয়ে লক্ষ্মী ছেলে, লক্ষ্মী মেয়ে হয়ে ওঠার দৌড়ে স্বপ্নাবিষ্ট পিককুহরিত মধুঋতুর সকালগুলোয় বিষণ্ণ উপেক্ষা ভেসে বেড়ায়।
* ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content