ছবি: প্রতীকী।
পবিত্র ধর্মগ্রন্থের মাহাত্ম্য শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাকে ঘিরে রেখেছে। তবে বাহ্য প্রদর্শনে, ধর্মীয় আচারের পালনেই তার সার্থকতা নয়। তার সাফল্য অন্তর্গত গীতিময় বাণীর ধারণে, যাপনে, উপলব্ধিতে।
গীতা ধারণ করে আছে এক সুবিস্তৃত কালখণ্ডে লালিত, পালিত বোধ, বিশ্বাস ও অভিজ্ঞতাকে। গীতায় প্রতিপাদিত তত্ত্বে এই বিপুল সময়ে ধাবমান জীবনমৃত্যুর সদাচঞ্চল লীলাবিভ্রম, দেহাতীত অতীন্দ্রিয়ের উপলব্ধি, জীবনাতীত ও জীবনব্যাপী মহাযাত্রার সত্যসন্ধান।
গীতা ধারণ করে আছে এক সুবিস্তৃত কালখণ্ডে লালিত, পালিত বোধ, বিশ্বাস ও অভিজ্ঞতাকে। গীতায় প্রতিপাদিত তত্ত্বে এই বিপুল সময়ে ধাবমান জীবনমৃত্যুর সদাচঞ্চল লীলাবিভ্রম, দেহাতীত অতীন্দ্রিয়ের উপলব্ধি, জীবনাতীত ও জীবনব্যাপী মহাযাত্রার সত্যসন্ধান।
গীতা শ্মশানভূমির বৈরাগ্যে তিলে তিলে শ্লোকে শ্লোকে সৃজন করছে জীবনের মহীরূহকে, আত্ম-উন্মোচনের বিপুল সম্ভাবনাকে প্রোথিত করে দিতে চাইছে সম্মুখবর্তী আনত, বিষণ্ন, বিভ্রান্ত জীবনের ঊষর বালুকাতটে। কীভাবে হবে সেই মহাজাগরণ, যেখানে একটি পূর্ণ, শুদ্ধ জীবন অসংশয়ে জেগে উঠবে?
আরও পড়ুন:
গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-১৫: ত্রিগুণধারিণী দ্বিগুণ করেছে সগুণে
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১০৭: ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগে মহর্ষি পেলেন চরম দুঃসংবাদ
পার্থিব যাত্রার শেষে মৃতের বুকে অন্তিমলগ্নে শোভমান যে মহাগ্রন্থ, তা মৃত্যুহীন অজর অমর আত্মার নব নব দেহধারণের তত্ত্বেই থামে না; ঝঞ্ঝাবিক্ষোভের শেষে হিরণ্যদ্যুতি অপরাহ্নের মতোই শোকাতীত জীবনের অনন্ত সৌন্দর্যকেও নির্দেশ করে।
একটি রবীন্দ্রগীতির শরণ নিয়ে গীতার অন্যতম ভাবধারাটিকে স্পর্শ করা যায়। পুজো পর্যায়ের গানটিতে জীবন-মরণের সীমাতীত অন্তরতমের নিত্য উপস্থিতির পদধ্বনি শোনা যায়।
একটি রবীন্দ্রগীতির শরণ নিয়ে গীতার অন্যতম ভাবধারাটিকে স্পর্শ করা যায়। পুজো পর্যায়ের গানটিতে জীবন-মরণের সীমাতীত অন্তরতমের নিত্য উপস্থিতির পদধ্বনি শোনা যায়।
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৯৮: রামানুজ ভরত ও লক্ষ্মণ, আনুগত্যের প্রকাশে দু’জনেই অনন্য
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৯৯: কে? কে ওখানে?
গীতায় ধ্বনিত হয় জীবনের মহাসাগরে নিয়তই জীবনমৃত্যুর স্রোত। আর জগতে নিত্য যাত্রাপথে জীব নিতান্তই একা, অদ্বিতীয়। গীতায় সারথি সখা পরমাত্মার যে জগত্-ব্যাপী অখণ্ড প্রকাশ, যেখানে আর সকলই নিতান্ত অনিয়ত, নশ্বর, পরম ক্ষুদ্র, সেখানে সেই বিচিত্র লীলামধুর মহাপ্রকাশের সামনে ব্যক্তিগত শোক, দ্রোহ, মাত্সর্য কিংবা বিমূঢ় অচেতনা বড়ই ক্ষীণ ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভ্রমমাত্র, যুগে যুগে এই শোকোত্তীর্ণ জ্ঞান, বোধ, উপলব্ধির জন্মেই বুঝি গীতার সার্থকতা।
* গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে (A Special Write Up on Shrimad Bhagwat Gita): লেখক: ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।