মঙ্গলবার ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪


মহারাজা বীরচন্দ্র মাণিক্য।

ত্রিপুরায় সুদূর অতীতকাল থেকেই হোলির এক ঐতিহ্য রয়েছে। অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতকে মাণিক্য রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় রাজধানীতে হোলি উৎসবের তথ্য পাওয়া যায় ইতিহাসে। মহারাজা বীরচন্দ্রের রাজত্বকালে ত্রিপুরায় হোলি অন্যতম এক প্রধান উৎসবে পর্যবসিত হয়েছিল। ত্রিপুরার রাজ আমলের কাব্য সাহিত্যে হোলির চমকপ্রদ বিবরণ লিপিবদ্ধ রয়েছে। অপেক্ষাকৃত আধুনিককালের মাণিক্য রাজাগণও হোলি উপলক্ষে সংগীত রচনা করেছেন, প্রকাশিত হয়েছে গ্রন্থ।

হোলি রঙের উৎসব হিসেবেও পরিচিত। বসন্তকালে ভারত-সহ পৃথিবীর নানা দেশে বসবাসকারী হিন্দুদের মধ্যে উদযাপিত হয় এই উৎসব। সুপ্রাচীনকাল থেকেই ভারতে হোলি উদযাপিত হয়ে আসছে। সঠিক কবে ভারতে এই উৎসবের সূচনা তা জানা না গেলেও এমন ধারণা করা হয় যে, খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতক কিংবা তারও আগে থেকেই উদযাপিত হয়ে আসছে এই উৎসব। চতুর্থ শতকে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজত্বকালে হোলির উল্লেখ রয়েছে মহাকবি কালিদাসের লেখায়। হোলি উদযাপনের উল্লেখ রয়েছে সপ্তম শতকে হর্ষবর্দ্ধনের রাজত্বকালের সংস্কৃত নাটক ‘রত্নাবলী’-তে।

বহু প্রাচীন ধর্মগ্রন্থেও হোলির কথা রয়েছে। হোলির সঙ্গে জড়িয়ে আছে পৌরাণিক কাহিনি। সুপ্রাচীনকালের বলদর্পী দৈত্য রাজা হিরণ্যকাশ্যপ তার পুত্র বিষ্ণু উপাসক প্রহ্লাদকে হত্যার জন্য নানা ভাবে চেষ্টা করেও সফল হননি। তারপর দৈত্য রাজা তার ভগ্নি হোলিকার সাহায্য নেন। প্রহ্লাদের অপরাধ ছিল পিতার আদেশ অমান্য করে নিজেকে বিষ্ণুর উপাসনাতেই নিয়োজিত রাখা। প্রহ্লাদকে জ্বালিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র হয়। কিন্তু শেষপর্যন্ত প্রহ্লাদ রক্ষা পান, আর ভস্মীভূত হয়ে যান হোলিকা। পরে বিষ্ণু কর্তৃক নিহত হন রাজা হিরণ্যকাশ্যপ। তাই অশুভের বিরুদ্ধে শুভ শক্তির জয় হিসেবেও উদযাপিত হয়ে আসছে হোলি। অনেক জায়গায় আবার হোলি উৎসবের উৎস হিসেবে প্রচারিত কাহিনির কেন্দ্রে রয়েছে রাধাকৃষ্ণের প্রেম কথা।
এমনও কথিত আছে যে, শ্রীকৃষ্ণই প্রথম হোলির প্রবর্তন করেছিলেন, যার অপর নাম দোল। যাইহোক, হোলির সঠিক সূচনাকাল না জানলেও এটা বলা যায় যে, সুপ্রাচীনকাল থেকেই ভারতীয় সংস্কৃতির ধারায় এক গুরুত্বপূর্ণ উৎসব এটি। তাই অন্যান্য উৎসব-অনুষ্ঠান ও পুজো-পার্বণের মতো হিন্দু ধর্মাবলম্বী রাজাদের শাসনাধীন ত্রিপুরাতেও যে সাড়ম্বরে হোলি উৎসব উদযাপিত হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না!

ত্রিপুরার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে জানা যায় যে, এই রাজ্যের ধর্মপ্রাণ রাজাগণ প্রজা কল্যাণে যেমন জলাশয় খনন করিয়েছেন, তেমনই তৈরি করেছেন মন্দিরও। প্রাচীন রাজধানী উদয়পুর, আগরতলা-সহ রাজ্যের এদিক-সেদিক ছড়িয়ে আছে এ রকম বহু জলাশয় আর মন্দির। এ ছাড়া ত্রিপুরার রাজাগণ ধর্মগ্রন্থ অনুবাদ করিয়েছেন। প্রজাদের মধ্যে সেসব বিলি করার উদ্যোগ নিয়েছেন। মাণিক্য যুগে নানা পুজো-পার্বণ উৎসব অনুষ্ঠানের কথা লিপিবদ্ধ রয়েছে ইতিহাসের পাতায়। বাদ যায়নি হোলিও।

ত্রিপুরাতে সুদূর অতীতকাল থেকেই উদযাপিত হয়ে আসছে হোলি। মধ্যযুগের নৃপতি কল্যাণ মাণিক্য (১৬২৬-৬০ খ্রিস্টাব্দ) রাজধানী উদয়পুরে এক বিষ্ণু মন্দির নির্মাণ করিয়েছিলেন বলে জানা যায়। সেই মন্দিরের পূর্ব দিকে একটি দোলমঞ্চ তৈরি হয়েছিল যাতে রাধাকৃষ্ণের উপর নৃত্যগীত হতো। দ্বিতীয় রত্ন মাণিক্যের রাজত্বকালেও (১৬৮৫-১৭১০খ্রিস্টাব্দ) আড়ম্বরপূর্ণ ভাবে মদন পুজো, পিচকারি খেলা অনুষ্ঠিত হতো। আহোম রাজা স্বর্গদেব রুদ্র সিংহ দ্বিতীয় রত্ন মাণিক্যের সময়ে ত্রিপুরাতে দু’জন দূত পাঠিয়েছিলেন। দুই আহোম রাজদূত রত্ন কন্দলী শর্মা ও অর্জুন দাস বৈরাগী ত্রিপুরা সফর করে রাজ্যের তদানীন্তন ইতিহাস-সহ আর্থ সামাজিক চিত্র লিপিবদ্ধ করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে ‘ত্রিপুরা বুরুঞ্জী’ নামে তা প্রকাশিত হয়। সেদিনের রাজধানী উদয়পুরের বিবরণ, রাজবাড়ি, মন্দির, পুজো-পার্বণ, দোকানপাট, ঘরবাড়ি, পথঘাট সব কিছু উঠে এসেছিল আহোম দূতদ্বয়ের বর্ণনায়। তাঁরা লিখেছেন, রাজধানীতে মদন পুজো, পিচকারি খেলা উপলক্ষে প্রজাদেরও উপহার দেওয়া হতো। অন্যান্য উপহার সামগ্রীর সঙ্গে দূতদ্বয়কে চামড়ার পিচকারিও দেওয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব-৪: উদয়পুর অভিযানে মগ সৈন্যরা ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দিরের চূড়া ভেঙে দিয়েছিল

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪৬: বহু জনমের মায়া, ধরিল যে কায়া, ওগো ‘শিল্পী’ সে তো শুধু তোমারই ছায়া

রাজধানীতে সেদিনের আড়ম্বরপূর্ণ পিচকারি খেলা সম্পর্কে দূতদ্বয় লিখেছেন—”…হাতির উপর নাকাড়া আর ঢাল তলোয়ার বন্দুক-সহ প্রায় ১৫০০ লোক, সওয়ার প্রায় ৪০, হাতি প্রায় ১৪টা। রাজার জন্য সোনালি রূপালি সাজে ৪টি ঘোড়া, ৩টি হাতি, ২টি পালকি।…এ ভাবে রাজা গোমতী নদীর জলে হাতির উপর বসেছিলেন। তারপর যুবরাজ প্রমুখ জলে নেমে দু’ভাগ হয়ে পিচকারি খেলছিলেন…”

কৃষ্ণ মাণিক্যের রাজত্বকাল হচ্ছে ১৭৬০-৮৩ খ্রিস্টাব্দ। তাঁর সময়কালে রাজপরিবারে হোলি উৎসব উদযাপনের কথা জানা যায় ‘কৃষ্ণমালা’ কাব্য সূত্রে। কৃষ্ণ মাণিক্যের সংঘাতপূর্ণ জীবন ও বীরত্বের কাহিনি নিয়ে রচিত হয়েছিল ‘কৃষ্ণমালা’। কৃষ্ণ মাণিক্যের পর সিংহাসনে বসেছিলেন তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র রাজধর মাণিক্য (দ্বিতীয়)। তিনি জয়ন্ত চন্তাই’র মুখে কৃষ্ণ মাণিক্যের বীরত্বের কাহিনি শুনে তা লিপিবদ্ধ করার জন্য উৎসাহী হয়ে রামগঙ্গা শর্মা নামে একজন ব্রাহ্মণকে কাব্য রচনার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সিংহাসনের জন্য যুবরাজ কৃষ্ণমণির বীরত্ব পূর্ণ লড়াই, অশেষ কষ্টভোগ ইত্যাদি কাব্যের মূল উপকরণ হলেও হোলির বর্ণনাও রয়েছে কাব্যটিতে।

কৃষ্ণ মাণিক্যের সময়ে রাজ অন্তঃপুরে হোলি ঘিরে যে আনন্দের আসর বসতো কবি তার বর্ণনা দিয়েছেন। এমনকি ইংরেজ সাহেবরাও যে হোলির অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হিসেবে থাকতেন তাও জানা যাচ্ছে ‘কৃষ্ণমালা’ কাব্য সূত্রে। রাজ অন্তঃপুরের হোলির বর্ণনা কবি এই ভাবে দিয়েছেন—
“আতর গোলাপ গন্ধে সভা আমোদিত।
সুগন্ধি আবিরচূর্ণ আনি ভারে ভারে ।
পুঞ্জ পুঞ্জ করি রাখে সবার মাঝারে।।
পাত্রগণ সহিতে বসিল মহারাজ।
হাড়ি বিলাস সাহেব প্রভৃতি ইংরাজ।।
সবে মিলে বসি তথা খেলাইল হুলি।
ফল্গুচূর্ণ পরস্পরে অঙ্গে মারে মেলি।।
সুললিত নানা বাদ্য চতুর্দিকে বাজে।
নর্ত্তকী সকল নাচে মনোহর সাজে।।”
আরও পড়ুন:

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৩৫: ঘুম ঘুম চাঁদ ঝিকিমিকি তারা

ঠাকুরবাড়িতে দোলে আসত নাচিয়ে, নাচের তালে তালে হত আবিরের আলপনা

এখানে উল্লেখ করা যায় যে, কৃষ্ণ মাণিক্যের রাজত্বকালে ১৯৬১ সালে সমতল ত্রিপুরায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আধিপত্য কায়েম হয়েছিল। সম্ভবত সে সময় থেকেই মাণিক্য রাজপরিবারের সঙ্গে ইংরেজ সাহেবদের যোগাযোগ গড়ে উঠেছিল।

মহারাজা বীরচন্দ্র মাণিক্যের রাজত্বকালে (১৮৬২-৯৬ খ্রিস্টাব্দ) হোলি উৎসব যেন ত্রিপুরার অন্যতম প্রধান উৎসবে পর্যবসিত হয়েছিল। রাজ প্রাসাদে তখন সাতদিন ব্যাপী এই উৎসব উদযাপিত হতো। হোলি সে সময় ত্রিপুরায় নিছক এক রঙের উৎসবই যেন ছিল না, হোলিকে কেন্দ্র করে নানা ধর্ম বর্ণ সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে মেল বন্ধন ঘটতো সেদিন। পরবর্তী সময়ের এক বর্ণনায় জানা যায়, রঙের উৎসব উদযাপনের জন্য সেদিন জলপূর্ণ এক ট্যাঙ্কে মেশানো হতো নানা ধরণের রং। গাওয়া হতো হোলির গানও। বৈষ্ণব ভাবাপন্ন কবি ও সুগায়ক রাজা বীরচন্দ্র নিজেই হোলি উৎসবের সময় মাতোয়ারা হয়ে স্বরচিত গান গাইতেন।

উল্লেখ করা যায় যে, বীরচন্দ্র সাহিত্য-সংস্কৃতির একজন বড় পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। কিশোর কবি রবীন্দ্রনাথকে তাঁর ‘ভগ্ন হৃদয়’ কাব্য গ্ৰন্হের জন্য প্রথম অভিনন্দন জানিয়েছিলেন এই রাজা। আর এ ভাবেই ত্রিপুরার রাজপরিবারের সঙ্গে এক নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল রবীন্দ্রনাথের। বীরচন্দ্র নিজেও ছিলেন সে যুগের একজন বিখ্যাত বৈষ্ণব কবি। তাঁর রচিত ছয়টি কাব্যগ্ৰন্থের কথা জানা যায়। বীরচন্দ্রের কাব্য সমূহ সেদিন পণ্ডিতদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। রাজার ‘হোরি’ কাব্যগ্ৰন্থটি হচ্ছে ৩৪টি গানের সংকলন। বৈষ্ণব ভাবাপন্ন কবি রাজার ভক্তিভাব, রসবোধ, পদাবলী সাহিত্যের প্রভাব ইত্যাদি প্রতিফলিত হয়েছে কাব্যটিতে। রাধার রূপ বর্ণনায় কবি লেখেন—
“সমান ষোড়শী সমান রূপসী
নবীন মালা সঙ্গিনী সঙ্গে
অঙ্গের আভরণ কাঁচলী বন্ধন
সমান সমান বেণী ঝুলিছে অঙ্গে।”
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৩৯: বিপরীত পরিস্থিতিতে পালিয়ে যাওয়াটাও ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে টিকে থাকার উপায়

বিধানে বেদ-আয়ুর্বেদ: কুষ্ঠ-সহ ত্বকের যেকোনও জটিল সমস্যায় আয়ুর্বেদেই রয়েছে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা, জানতেন?

বীরচন্দ্রের পরবর্তী রাজাদের সময়ে,অর্থাৎ রাধাকিশোর, বীরেন্দ্র কিশোর এবং বীরবিক্রমের রাজত্বকালেও উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে হোলি উৎসব উদযাপিত হয়েছে। বীরেন্দ্র কিশোর ‘দোল লীলা’ নামে একটি নৃত্যনাট্য রচনা করেছিলেন বলে জানা যায়। তবে বীরবিক্রমের রাজত্বকালে(১৯২৩-৪৭ খ্রিস্টাব্দ) যেন হোলি আরও ব্যাপকতা লাভ করেছিল। রাজধানীতে রাজপরিবারের সদস্যগণ-সহ বিশিষ্ট মানুষেরা যেমন হোলিতে অংশ নিতেন, তেমনই সাধারণ প্রজাগণও ছিলেন এই উৎসবের অংশীদার। হোলি উদযাপনের অঙ্গ হিসেবে বেশ কয়েকটি সংস্হা হোলির গান পরিবেশন করতো। সামগ্রিক ভাবে উৎসবের ছিল রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা। বীরবিক্রম হোলি বিষয়ক সংগীত গ্ৰন্থ রচনা করেছেন। ১৯৪১ সালে রাজার ‘হোলি’ গ্ৰন্হটি প্রকাশিত হয়। কিন্তু গ্রন্থটি ফাগুয়া সংঘের নামে প্রকাশিত হয়েছিল।

এ সম্পর্কে মহারাজার ব্যক্তিগত সচিব দ্বিজেন্দ্রচন্দ্র দত্ত লিখেছেন—”হোলি গ্ৰন্থটি বাহির হইল ১৯৪১ সালে। লেখক ছদ্মনামে লিখিত হইয়া ফাগুয়া সংঘ কর্তৃক প্রকাশিত হইল। আগের বছর হইতেই মহারাজ বীরবিক্রম এই বইয়ের জন্য ডায়েরিতে গান লিখিয়া রাখিতেছেন।…” বীরবিক্রমের লেখা একটি হোলি গানের ক’টি লাইন এখানে উল্লেখ করা হচ্ছে—
“…এমন সুন্দর হোলির দিনে,
রসিক নাগর শ্যাম বিনে,
খেলিব ফাগ কাহার সনে,
আমার খেলাত হল না খেলা।”

মহারাজ বীরবিক্রম।

বীরবিক্রম ছিলেন প্রচার বিমুখ। তাঁর সাহিত্য তৎপরতা যেন প্রাসাদের আঙিনাতেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু গীতিকার হিসেবে রাজার প্রতিভা দেখে পরবর্তীকালের সঙ্গীত রসিকরা অবাক হয়ে গিয়েছেন। রাজা ব্রজবুলিতে হোলির গান লিখেছেন। এমন দুটি লাইন—
“আজু হেরি এ নব প্রেম চমক আওয়ে।
গোপ নারী সঙ্গ হোরী খেলন যাওয়ে।।”


যাইহোক, মাণিক্য যুগের পরও ত্রিপুরায় হোলি উদযাপনে উৎসাহ-উদ্দীপনায় মোটেই ভাটা পড়েনি। ১৯৪৯ সালে ত্রিপুরার ভারতভুক্তি ঘটে। তারপর থেকেও বসন্তের দোলপূর্ণিমায় হোলি কিন্তু স্বমহিমায়। রাজধানী আগরতলা সহ রাজ্যের সর্বত্র সাধারণ মানুষ উদ্দীপনার সঙ্গে হোলি উদযাপন করে আসছে। বিভিন্ন জায়গায় হোলির গান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি হয়ে থাকে। রঙে রঙে মাতোয়ারা হয়ে উঠে মানুষ। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উৎসব উদযাপনে কিছু কিছু রূপান্তরও ঘটছে। তা সত্ত্বেও ত্রিপুরার হোলি আজও যেন অতীত ঐতিহ্যের আলোয় উদ্ভাসিত।
ত্রিপুরা তথা উত্তর পূর্বাঞ্চলের বাংলা ভাষার পাঠকদের কাছে পান্নালাল রায় এক সুপরিচিত নাম। ১৯৫৪ সালে ত্রিপুরার কৈলাসহরে জন্ম। প্রায় চার দশক যাবত তিনি নিয়মিত লেখালেখি করছেন। আগরতলা ও কলকাতার বিভিন্ন প্রকাশনা থেকে ইতিমধ্যে তার ৪০টিরও বেশি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ত্রিপুরা-সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের ইতিহাস ভিত্তিক তার বিভিন্ন গ্রন্থ মননশীল পাঠকদের সপ্রশংস দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়ও সে-সব উচ্চ প্রশংসিত হয়েছে। রাজন্য ত্রিপুরার ইতিহাস, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ত্রিপুরার রাজ পরিবারের সম্পর্ক, লোকসংস্কৃতি বিষয়ক রচনা, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সঞ্জাত ব্যতিক্রমী রচনা আবার কখনও স্থানীয় রাজনৈতিক ইতিহাস ইত্যাদি তাঁর গ্রন্থ সমূহের বিষয়বস্তু। সহজ সরল গদ্যে জটিল বিষয়ের উপস্থাপনই তাঁর কলমের বৈশিষ্ট্য।

Skip to content