শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী।

সকাল থেকে কলে জল নেই। রাস্তায় গাড়ি-ঘোড়া নেই সময় মতো। রাতে কুকুরটা চেঁচিয়ে গিয়েছে অবিশ্রান্ত। রোদটা বাড়ছে চড়চড় করে। আর কিছু ভালো লাগে না যে!

যাকে খুঁজছো সেই যেন উবে গিয়েছে। যেটা পড়বে ভাবছো পরীক্ষায় সেটা বাদ দিয়ে সবটাই পড়ছে। ভাগ্যাকাশে যেন দুর্যোগের ঘনঘটা। যেদিন বৃষ্টি হবে সেদিন ছাতা নেই। যেদিন বৃষ্টি হল, সেদিন ওই বৃষ্টিই তোমাকে ডোবাল। তোমার মনে হচ্ছে, পুবে চলি। চারপাশ তোমাকে বোঝাবে উল্টো। তোমার পা আর মাথার দখল অন্যের হাতে। তুমি পাশ করেও ফেল করছো বারবার। আর ফেলটাকে, ফেলেও দিতে পারছ না।
চারদিকে একটা ‘গেল গেল’ রব, যেন তুমি ভুল, বাকিরা ভুলের পথ মাড়ায় না। তোমার ভুলটাই জগত্ টাকে থামিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

একে জ্যেঠু বলে যুগের হাওয়া। কাকু বলে কলিকাল। দাদা বলে জেনারেশন গ্যাপ, মামা বলে, ধুত্তেরি!
আরও পড়ুন:

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-১: ভাঙনের জয়গান গাও

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৬: স্রোতস্বিনী পদ্মায় লাফিয়ে কবির কটকি চটি-উদ্ধার

যুগে যুগেই এমন চলছে। আজ যাকে ভাবছো মিষ্টি, কাল সেই তেতো হবে। শাস্ত্র বলবে, যা কিছু ভালোর জন্য তার স্বাদ ভালো নয় মোটেই। তেতো ওষুধেই রোগ সারে। বড়জোর তার ওপর একটা মিষ্টির আবরণ দিয়ে তোমাকে দেওয়া হবে। অনেক সময় ওষুধের ছলেও তিক্ততা তোমাকে ঘিরে ধরবে, তাতেও থাকবে মাধুর্যের ক্লেদ, সে যে সাক্ষাৎ গরল, সকলে নীলকণ্ঠ হয়?

একথা জ্যাঠা, কাকা, মামা, দাদারা জানে, জানতেন রামপ্রসাদ থেকে কালিদাস সাধক স্বভাবকবিরাও।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৫৪: লোকশিক্ষক মা সারদা

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৩০: নলিনী দাশ— গণ্ডালুর সৃজনশিল্পী

শুধু জানো না তুমি নিজেকে। তোমাকেও জানে না কেউ। চারপাশে একটা বিপুল মজার হাট, অপার সংসার, ক্ষুরস্য ধারা নিশিতা দুরত্যয়া। এখন যেটা বেড়াল, কিংবা ইঁদুর, পরক্ষণেই সেটা বাঘ। যাকে যুগন্ধর পর্বত ভাবছো, সে মূষিক প্রসব করে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে। যাকে হিসেবের মধ্যেই রাখোনি, সে এখনই তোমার পাশ কাটিয়ে দিগন্তের দিকে চলে গেল। যে তোমার ছায়া চেয়েছিল কেবল, সে তোমারই পরশপাথরে আজ নিষ্প্রাণ সোনা। যার আলোয় তুমি সকালের রোদ হতে পারতে, সে তোমাকে দিয়েছে মধ্যাহ্নের দহন, তুমি চেয়েছিলে কালবৈশাখী, পেয়েছিলে আষাঢ়ের প্রথম মেঘ।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-২: যতই দেখি তারে, ততই দহি…

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৫৬: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসাসা— নুনিয়া ও সিঙ্গরা

যে তোমাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেছে, তুমি যার পথ ছাড়োনি, যারা তোমার পথে কাঁটা বিছিয়েছে, তুমি যাদের অশ্রুকে ঠাট্টা করেছো, কেউ কি পেরেছে হাত থেকে খসে পড়া ধনুর্বাণ তুলে ধরে বলে উঠতে, আত্মদীপ হও, দগ্ধ হতে হতে আপন আলোয় সামনের নিষ্প্রদীপ দলা পাকানো তমিস্রাকে মুছে দাও, ওই আঁধার আসলে নেই, ওই আলোটাও শেষ পর্যন্ত সত্য নয়, শেষ সত্য তুমি, আত্মদীপ হয়ে ওঠা তুমি।
আরও পড়ুন:

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-১: ভাঙনের জয়গান গাও

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৩: ‘সুরের পরশে’ তুমি-ই যে শুকতারা

একটা যুদ্ধ লেগে গেছে অনেকদিন, গহন মর্মলোক থেকে সন্ধ্যার কূলে দিনের চিতার লেলিহান অগ্নিদাহে। কুরুক্ষেত্রের রণাঙ্গনে তোমার চোখের সামনে খুলে যাচ্ছে বহুদর্শিতার একটার পর একটা স্তর, বিশ্বরূপ। সকল স্বাদ, সকল রূপের ওপারে একটা অরূপের দুনিয়া, শিশুর হাসির মতো নিষ্পাপ, অনির্বচনীয়, অবাঙ্মনসগোচর সেই চরাচর। —চলবে।
* গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে (A Special Write Up on Shrimad Bhagwat Gita): লেখক: ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।

Skip to content