বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী।

হে বীর, তোমার যা কর্ম, তার যথাযথ সম্পাদন তোমার কর্তব্য। সেই কর্তব্যের হানি জীবনে দুঃখকেই জাগিয়ে তোলে কেবল। কর্মের সম্পাদনের মধ্যে দিয়ে নিজেকে যোগ্য থেকে যোগ্যতর করে তোলাই পার্থিব জীবনের লক্ষ্য। কর্মফলের আকাঙ্ক্ষা অন্তর্লোকে আসক্তিকেই পুষ্ট করে ক্রমাগত। আসক্ত জীবন মুক্তচিত্তে বিরাটের অনুধ্যান ও তাকে উপলব্ধি করতে সমর্থ হয় না।
স্যার বুকুকে বললেন, “কী ব্যাপার বল তো? আজ চারদিন হল, তুই পড়াটা তৈরি করে উঠতে পারছিস না, তুই কি আদৌ বুঝেছিস কি বলতে চেয়েছে ওখানে? অন্ধের মতো মুখস্থ করে আজকাল আর কিছু হয় না, সে তো তোর অজানা নয়।”
আরও পড়ুন:

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-১১: মনের মানুষ এল দ্বারে

শারদীয়ার গল্প: তখন বিকেল/৪

বুকু বলল, “স্যার, আমার মনে থাকছে না। যা পড়ছি নিজের মতো করে তৈরি করতে গেলেই সব ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে।”

“বড় পরীক্ষা এলেই তোর এমন অবস্থা হয়। প্রতি ক্লাসেই তো এমন হয়, তবুও সমস্যাটা তোকে আর তুই সমস্যাটাকে ছাড়ছিস না। এখন উঁচু ক্লাস, এটাকে বাড়তে দিলে কপালে দুঃখ আছে এই বলে দিলাম।”
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৮৪: অরাজকতার ফল ও একটি দুঃস্বপ্ন

পর্দার আড়ালে, পর্ব-৬২: সত্যজিৎ রায় রুপটান শিল্পীকে বলেছিলেন, উত্তমকুমারের কোনও মেকআপ করার

“কিন্তু স্যার, খাতায় যখন লিখছি পরীক্ষায়, তখন এই টেনশনটা কাজ করে না। পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত বমি, পেট গুড়গুড়, নার্ভাস ব্রেকডাউন, খেলা একবার শুরু হয়ে গেলে মনে হয় সামনের অস্কার আমিই পাবো। অজানা উত্তরগুলো তখন সরস্বতীর দয়ায় ভালো লিখি। যেগুলো চেনা জানা, সেগুলোতেই মুশকিল, মনে হয় লাইনের চারটে শব্দ বেবাক উবে গিয়েছে, কোথাও একটা প্যারা উধাও। যেটুকু মনে পড়েছে, তাতে মামলা দাঁড়ায় না, তখন ধার বাকিতে কাজ সারতে হয়। কিন্তু স্যার, ঠাকুরের দিব্যি বলছি, উত্তরগুলো আমার খাতার নোটের মতো নয়, বরং নোটের প্রেতাত্মা বলা যায়। নিজের জামা কেটেকুটে সেলাই করে পরতে গিয়ে যদি দেখি ছোট ভাইয়ের গায়েই ঢুকছে না, এও তেমন। এই ভেবেই আমার চুল খাড়া হয়ে যাচ্ছে। অথচ, পড়ার বাইরে থেকে যা আসুক, ঝাক্কাস করে লিখে দিই, যিনি দেখবেন তাঁর পছন্দ না হলে আমার কিছু নয়, কিন্তু আমি ভারি তৃপ্তি পাই। সে তো এবারে ছোটপিসে যে জামাটা দিয়েছে, আমার পছন্দ হয়নি, তা বলে জামাটা খারাপ বলা তো যাবে না। আমার উত্তরগুলো তেমনধারাই। কিন্তু এই বাড়ি থেকে পড়ে যাওয়া আনসারগুলোই আমাকে মেরে ফেলে। এবার পরীক্ষার আগের দিন জ্বর এসে গেলেই কেল্লাফতে।”
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৮: জোসেফ কনরাড ও জেসি কনরাড—আমি রূপে তোমায় ভোলাব না…/৩

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৭০: সুন্দরবনের পাখি: লাল কাঁক

বৃহতের সঙ্গে অন্তর্লোকের সংযোগেই আত্মার মুক্তি। জীবনের ক্ষুদ্র হতাশা, আসক্তি ও অচেতন ভয় অজ্ঞানকেই ঘোরতর করে। এই যোগ মনের সংকল্প বা বাসনার ত্যাগেই প্রকৃত সিদ্ধ হয়। কিন্তু আশ্চর্য হল এই যে, এর জন্য কর্মের ত্যাগ নয়, বরং নিরন্তর কর্মের অভ্যাস ও প্রয়াস-ই সিদ্ধি দান করবে। কর্মযোগ কর্মীর চিত্তকে সুস্থিত করে, প্রশান্ত করে সেই শান্তচিত্তকে পুনঃ পুনঃ কর্মপ্রয়াসে প্রেরিত করবে। ক্রমে এই পথেই মুক্তি ও আনন্দের উদ্ভাস ঘটবে।
আরও পড়ুন:

ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব ৩২: কল্যাণ মাণিক্যের সনদে বাংলা গদ্য

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৭: কী করে গল্প লিখতে হয়, ছোটদের শিখিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ

তুমি বীর, এই ধর্মক্ষেত্র মানবজীবনের-ই প্রতিরূপ। এখানে সংঘাত ও সুখ অতিক্রম করে বীরধর্মের প্রতিষ্ঠা ও দৃষ্টান্তস্থাপন-ই তোমার একমাত্র কর্তব্য। যে মানুষ অন্তরস্থ মালিন্যকে জয় করে শুদ্ধাত্মা হতে পারেন, তিনি সুখ, দুঃখ, শীত, উষ্ণে, মানে, অপমানে সমাহিত, অবিচল থাকেন।

বুকু শুনতে পাচ্ছো কি বহুযুগের ওপার থেকে ভেসে আসা সেই জগৎজুড়ে নেমে আসা আষাঢ়ের গভীর আনন্দগান?
* গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে (A Special Write Up on Shrimad Bhagwat Gita): লেখক: ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।

Skip to content