রবিবার ১৭ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী।

চতুর্বিধ মানুষের আত্মজিজ্ঞাসা জাগে। যারা সকাম, অর্থ বা বিষয়ের আসক্তি যাদের আবদ্ধ রেখেছে, তাদের আত্মজাগরণ ঘটতে পারে। যারা আর্ত, দুঃখী, সম্পন্নতায় কিংবা ধনাভাবে যাদের বিপন্নতা, যারা লব্ধকাম নয়, তারাও আত্মজিজ্ঞাসু হতে পারে।
যারা প্রকৃত-ই জিজ্ঞাসু, অনুসন্ধিত্সা যাদের শোণিত-মজ্জায় ধাবমান, তারা দুর্জ্ঞেয় অথচ, পরম কাঙ্ক্ষিত অনন্তের জিজ্ঞাসায় উন্মুখ তো হবেই! আর, যারা জ্ঞানী, তত্ত্ববিদ্, যারা অবিদ্যা ও বিদ্যা, প্রেয়ঃ ও শ্রেয়ঃকে জেনেছেন, অজ্ঞান, নির্জ্ঞান, অধ্যাস কিংবা মায়ার কলকল্লোল থেকে অন্তরতমের উত্সে বিজন বনবীথিপথে যাদের আত্মযাত্রা, সেই জ্ঞানীরাও অবাঙ্মনস্-গোচরের নিরন্তর অনুধ্যান করেন।

কেন?

মধুর তোমার শেষ যে না পাই।
আরও পড়ুন:

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-১০: মর্ত্যে আনিল ধ্রুবতারকারে ধ’রে

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৬৪: শ্রীমার সঙ্গে বেলুড়মঠে দুর্গোৎসব পালন

যিনি কামী, অর্থতত্পর আসক্ত মানুষ কি আর্ত হতে পারে না? সম্পন্ন ধনাঢ্যের যে অতৃপ্তি, তাই তাকে আর্ত করে বৈকী! আবার, অর্থী কিংবা আর্ত মানুষ জিজ্ঞাসু হতে পারে না কি? তেমনই, আর্ত হলেও জ্ঞানী কিংবা জ্ঞানী হলেও ধনবান, ধনবান হলেও ইন্দ্রিয়পরায়ণ, অজ্ঞান হতে পারেন।
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫৯: শাসক বেকায়দায় পড়লেই প্রতিপক্ষকে সন্ধির প্রতিশ্রুতি দেয়, যদিও রাজনীতিতে সে সব মানা হয় না

পর্দার আড়ালে, পর্ব-৬২: সত্যজিৎ রায় রুপটান শিল্পীকে বলেছিলেন, উত্তমকুমারের কোনও মেকআপ করার

তবে অর্থার্থীর মূল অভিমুখ থাকে অর্থ বা বিষয়ের প্রতি, আর্তের জীবনে শূন্য আর্তিই প্রধান, জিজ্ঞাসুর তাত্ত্বিক প্রবৃত্তির পারমার্থিক যোগ ঘটে না, সাত্ত্বিক জ্ঞানী অহংমুক্ত হন না। অর্থী, আর্ত, জিজ্ঞাসু কিংবা জ্ঞানী মানুষ সুকৃতি হয়েও মোহপাশে বদ্ধ হয়ে অজ্ঞানাচ্ছন্ন হয়, আবার সেই সীমাকে অতিক্রম করে তারাই অন্তরতম অথচ বিপুলের কিংবা অণু অথচ বিভুর অনুধ্যান করে। ওই বদ্ধতা নয়, এই সন্ধানেই তাদের মুক্তি প্রশস্ত হয়।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৮: জোসেফ কনরাড ও জেসি কনরাড—আমি রূপে তোমায় ভোলাব না…/৩

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৩৯: ভারতের বিপ্লবী মেয়েরা এবং অন্তরে রবীন্দ্রনাথ

হে বীর, তুমি বিজীগিষু হয়ে এই সংগ্রামের রঙ্গমঞ্চে অবতীর্ণ হয়েছে। তুমি যখন নিদারুণ শোকে বিহ্বল তখন তুমিই আর্ত। যখন তুমি কিংকর্তব্যবিমূঢ়, মোহগ্রস্ত হয়ে পরিত্রাণের জন্য উন্মুখ হয়ে অহংকে গৌণ করেছো তখন তুমিই জিজ্ঞাসু, এই হতচেতন তোমার নবজাগরণ ঘটবে, যা সত্য, যা অভ্রান্ত, যা ভবিতব্য, যা কর্তব্য তাকে জেনে তাতেই উপনীত হতে প্রয়াস করবে তখন তুমিই অর্থী। আর এই উত্তরণ তোমার অন্তরে জ্ঞানাঞ্জনশলাকা হয়ে নির্বেদের পথ প্রশস্ত করবে।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৮২: খটকা

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৭: কী করে গল্প লিখতে হয়, ছোটদের শিখিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ

সেই জ্ঞানী তুমিই পরম রহস্যঘন অথচ চির কাঙ্ক্ষিতের পদপাত হৃদয়ে অনুভব করবে। হে বীর, এই চতুষ্কের প্রতি পর্যায়েই জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে তুমি বিপরীতের সেই প্রাণসখা পাখির সাহচর্য পাও, কিন্তু তোমার দৌর্বল্য, অহংবোধ কিংবা অজ্ঞান তাকে স্বীকার করে না, পরাঙ্মুখ প্রাণ আত্মগৌরবের উদ্ঘোষণ করতে করতে আত্মাবমাননাকেই ধ্রুব করে তোলে। হে বীর! তুমি যদি জ্ঞানী হও তবে জেগে ওঠো। হে জ্ঞানী! যদি তুমি বীর হও তবে প্রস্তুত হও।
* গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে (A Special Write Up on Shrimad Bhagwat Gita): লেখক: ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।

Skip to content