ছবি: প্রতীকী।
মেঘ জমেছে উত্তরের আকাশে। এই সকালেই সামনে দিগন্তবিস্তৃত মাঠটার ওপরের আকাশটা ক্রমশ গ্রাস করে নিচ্ছে একটা ঘন কালো মেঘ। মনে হচ্ছে, যেন সব মাঠ ঘাট পর্বত পার করে তুষারমৌলি ধবলগিরি থেকে সমুদ্রমেখলা মহাভূমির ভাগ্যাকাশ ছেয়ে ফেলবে একখণ্ড মেদুর ঘনকৃষ্ণ মেঘ। ভারতের ভাগ্যাকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা! সামনের ওই মাঠটা, না, না, ওই রণক্ষেত্রে ওই মহামেঘের মতোই নেমে এসেছে আসমুদ্রহিমাচল। এই সকাল আর্যাবর্তের, ভারতভূখণ্ডের ভাগ্যকে কোথায় নিয়ে যাবে কেউ বলতে পারে না। সামনে মহাযুদ্ধ। সামনে কুরুক্ষেত্রের মহাপ্রান্তর, যেন মায়ামরীচিকার আলেয়ার ইন্দ্রজাল রচনা করে অপেক্ষা করছে। বল বীর! চির উন্নত তব শির! বীরভোগ্যা বসুন্ধরার আদর্শে সকল উপায় প্রয়োগ হতে হতে আজ… নিরুপায় এই মহাভারত।
হে বীর! তোমার সামনে ওই যারা, ওরা একটা ইতিহাস গড়তে চলেছে। ভবিষ্যতের মানুষ বলবে, ইতি-হ-আস। এমনটা হয়েছিল। এমনটা হয়েছিল কুরুক্ষেত্রের রণাঙ্গনে। নদীর একপাড় ভাঙলে একপাড় গড়বে।ওপার গড়ার উপাদান আসবে এপারের ওই ভগ্ন, ছিন্ন, বিদীর্ণের বুক চিরে। এভাবে ঘুরতে থাকবে কালচক্র, পরমকরুণাঘন মহাকাল নির্বাচন করে নেবেন যাকে, সে হবে কালজয়ী, সেই তো বীর!
আরও পড়ুন:
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৪৩: ইউ এফ ও
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৭০: পিতার সমালোচক রাম শুধুই মানুষ, তবু তিনি কেন পুরুষোত্তম?
তোমার সামনের ওই অযুত নিযুত নরমস্তকের শৃঙ্খলিত সমাহার, ওই অক্ষৌহিনীগণিত বিপুল সৈন্যভার তোমার প্রতিরোধের জন্য, হে সব্যসাচী! ওঠ জাগো… প্রাপ্য বরান্ নিবোধত। সামনে ন্যায় প্রতিষ্ঠার মহাভার, এক দুস্তর পারাবার!
হে কৃষ্ণ! দীনবন্ধু! আমি কী করব? পথ দেখাও!
পার্থ! সখা! চেয়ে দেখো!
হে কৃষ্ণ! দীনবন্ধু! আমি কী করব? পথ দেখাও!
পার্থ! সখা! চেয়ে দেখো!
আরও পড়ুন:
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৫৩: মহীয়সী গৃহস্থনারী মা সারদা
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৪: জোড়াসাঁকোয় পাগল-যাচাই
অনেক অনেক অ-নে-ক দিন পরে এক ন্যায়ালয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক ধৃত বন্দি আর তার মাতৃষ্বসা জানতো এসব কথা, মনে ছিল তাদের সে সময়? ভুবন চৌর্যে পারদর্শী হতে হতে একসময় সামনে দেখল অপেক্ষমান মহামৃত্যু! সেই দুর্লঙ্ঘ্য মহাকাল। মহাকালের গর্ভে বিলীনোন্মুখ সে তার প্রতিপালিকাকে দিয়েছিল এক কালজয়ী শিক্ষা। সরোষে দন্তবলে উত্পাটিত করেছিল সেই মহীয়সীর শ্রবণযন্ত্রটি, যে পথে এককালে শত অন্যায়ের বার্তা প্রবেশ করে পথ হারিয়েছে অগণ্যবার।
আরও পড়ুন:
বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-২: যতই দেখি তারে, ততই দহি…
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৫৫: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা— আমুর ও গোশিঙা
যখন ধর্মের গ্লানি, অধর্মের অভ্যুত্থান, তখনই আমার সৃজন, বহুরূপে তোমার সামনেই আমি! সামনে রাত্রির মহাতমিস্রা, কেবল শুনি রাতের কড়ানাড়া যে। সদুপদেশের অভাব ভুবনকে সন্মার্গচ্যুত করবে, হে মহাবাহু, মহাবীর, যদি ধর্মের শরণ চাও, তাহলে মামেকং শরণং ব্রজ! মর্ত্যের মৃত্তিকা সেই মহান বিশ্বের গীতে বিমুগ্ধ হবে, যুগে যুগে, কালে কালে, আন্দোলিত হবে সুরে সুরে, তালে তালে।—চলবে।
* গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে (A Special Write Up on Shrimad Bhagwat Gita): লেখক: ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।