শুক্রবার ৮ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি : প্রতীকী।

এ বারের গল্পটা সিংহের। তবে তার আগে মানুষের কথা খানিক বলতে হবে। তবে সিংহের গল্পটাও যে মানুষের নয়, এমনটাও নয়।
সিংহ পশুরাজ। তার কাজকর্মে রজোগুণের উৎসাহ, উৎসাহের চোটে কখনও নির্বোধের মতো কাজ করলেও খারাপ কাজ তার নীতিবিরুদ্ধ। শেয়াল অবশ্য তেমনটা নয়, প্রাংশুলভ্যে ফলে লোভ দেওয়া থেকে ছলচাতুরি করে অপ্রাপ্যকে হাতানোর প্রতারণাকৌশল তার নখদর্পণে। সিংহমামা আর শেয়ালমামার এই ফারাকটুকু বুঝে নিয়ে গল্পে এগোনো যাক।
আরও পড়ুন:

বিচিত্রের বৈচিত্র, গল্পবৃক্ষ, পর্ব-২: লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৯: হারিয়ে যাওয়ার ‘জীবন তৃষ্ণা’

মানুষের মধ্যেও এমন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থাকে। কেউ ওপরচালাক, অবিমৃষ্যকারী, কেউ স্থিতধী, কেউ অসম্ভবের উচ্চাকাঙ্ক্ষী। জনৈকের অর্ধেক রাজ্য আর রাজকন্যালাভের মনভোলানো গল্প শুনতে শুনতে মনেই থাকে না যে, এর উল্টোটাও হতে পারে। রাজকন্যার দিকে অসমর্থ হাতটা বাড়ালে শুধু হাতটাই নয়, প্রাণটাও না থাকতে পারে। এমন অসম প্রেমের প্রেমিক যেন কোনও এককালে এক হিমালয়ের পার্বত্যগুহার সেই শেয়ালটার মতো।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৮৫: সাফল্য কি বংশগত উত্তরাধিকার? না কি ব্যক্তিগত কৃতিত্বের প্রমাণ?

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৬৮: লক্ষ্মীস্বরূপিনী মা সারদা

এ যেন আরেক সাতভাই চম্পার গল্প। অনাথ কয়েকটি তরুণ সিংহ তরুণী সিংহী বোনটিকে রেখে শিকারে যায়। তারা থাকে সোনার গুহায়। রাজকন্যা একা থাকে, তাকে দূর থেকে দেখে শেয়ালটা। যখন তার ভাইয়ের দল শিকারে চলে গেল, সেই শেয়াল সাহসে ভর করে এসে তার প্রেমাস্পদের পাণিপ্রার্থনা করল। তার যুক্তি সহজ। তুমি আর আমি দুজনেই চতুষ্পদ, সুতরাং দেরি কোরো না, আমার হাত ধরে আমাকে ধন্য করো, নিজে ধন্য হও।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৮: জোসেফ কনরাড ও জেসি কনরাড—আমি রূপে তোমায় ভোলাব না…/৩

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৭০: সুন্দরবনের পাখি: লাল কাঁক

শেয়ালের পণ্ডিতির কথা গল্পের আনাচে কানাচে ছড়ানো, কিন্তু এই শেয়াল মনে হয় যুক্তিবিদ্যায় বিশেষ প্রবেশ ছিল না, নচেত্ তার জানা উচিত ছিল যে, চতুষ্পদমাত্রেই সমধর্মী নয়। টেবিল, চেয়ার সকলেরই চারটি পা থাকলেও টেবিলটা চেয়ার হয়ে যায় না, তাতে চড়ে বসলেও সে টেবিল-ই থাকে। একই কথা চেয়ারের জন্যও। তাই গরুর গোত্ব, মানুষের মনুষ্যত্বের মতোই সিংহ আর শৃগাল জীবধর্মে কিংবা চরিত্রে সমতুল হতে পারবে কি? তবে তো ময়ূরপুচ্ছ কাকের গল্প সমাজে বহুবিদিত হতো না। সিংহীটি হয়তো বা আগন্তুকের প্রেমের ডাকে ‘হাউ সুইট’ বলে ভেসে যেতে পারতো, কিংবা হিমালয়ের সুরম্য উপত্যকা কিংবা অধিত্যকায় এই নবপ্রমের উদযাপন করতো নেচে গেয়ে।
আরও পড়ুন:

ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব ৩৩: বীরচন্দ্রের রাজকার্যে বাংলা

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৭: কী করে গল্প লিখতে হয়, ছোটদের শিখিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ

জাতককথার এই সিংহীটা অতো “স্মার্ট” ছিল না হয়তো, শেয়ালকে দূর করে দিল। তারপর ভাবল, এ তার রাজরক্তের অপমান, এরপর বেঁচে থাকা উচিত নয়। তারপর মনে হল শেয়ালের কাছে এই অপমানে প্রাণ দিলে তা বুঝি প্রাণের অপমান। সে বসে রইল। ক্রমে ক্রমে তার ভাইরা ফিরতে লাগল। বিরসবদন প্রাণপরিত্যাগরাগিনী বোনের থেকে শুনল সব, তাকে সদ্য আনা শিকার খাওয়াতে পারল না।
* ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।

Skip to content