শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


অলঙ্করণ : সৌরভ চক্রবর্তী

রোজ বিকেলে বড় ব্যালকনিতে মাসিমাকে হুইল চেয়ারে করে এনে বারান্দায় বসিয়ে দেয় লীনা। হঠাৎ স্ট্রোক হয়ে কথা অস্পষ্ট হয়ে গেছে মাসিমার । বড়মেয়ে রোজ বিকেলে ফোন করে। সামনের বাগানটা দেখতে দেখতে মাসিমা মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে চেষ্টা করতে থাকেন। এসময় চোখে মুখে কী এক আনন্দ ফুটে ওঠে। লীনা ম্যাসাজ করে দিতে দিতে কত গল্প শোনায়। যোগ সেন্টারে ম্যাডাম বলতেন, পেশেন্টের সঙ্গে বন্ধুর মতো ব্যবহার করতে।
মাসিমার দুই মেয়ে, এক ছেলে। লীনা কিছু একটা কাজ খুঁজে চলছিল স্বামী জীবেশ মারা যাবার পর।
ছেলেকে পাড়ার স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছে বটে, কিন্তু পড়াশোনার অন্য খরচ তো আছেই। বাড়িটা নিজেদের, ভাড়ার খরচ নেই। জীবেশ মারা যাবার পর থেকে লীনা কিছু একটা খুঁজে চলছিল, সে সময় জীবেশের এক বন্ধু মাসিমার বাড়িতে নিয়ে এসেছিল। সারাদিন দেখভাল করতে হবে তার পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি। তখনও রান্নার কাজটা ছিল না। পাঁচ হাজার টাকা মাসে। সকাল দশটায় আসা, বিকেলে সাড়ে সাতটায় বেড়িয়ে পড়া। কাজ দেখে মাইনে বাড়বে।
মাসিমাকে ধরে বাথরুমে নিয়ে যেতে হয়, স্নান করিয়ে দিতে হয়। রাতে খাবার দিয়ে, শোবার ব্যবস্থা করে দিয়ে চলে আসে।
মাসিমার ছেলে অফিস থেকে ফিরে আসেন এর মধ্যে। ছেলের বউকে মাঝে মাঝে দেখতে পায় লীনা। বাড়ির কেউ তেমন এদিকে আসে না। মাসিমাকে সঙ্গ দেওয়াটাই বড় কাজ।
কিন্তু মাসিমা কে এ কদিনে ভালোবেসে ফেলেছে। এ কাজটা পেয়ে লীনা হাতে স্বর্গ পেয়েছে। ছেলে এখন ক্লাস এইট। মাধ্যমিক পাশ অবধি কাজটা ক়রে যেতেই হবে।
আটটা বাজতেই লীনা কাজ শেষে বের হতে যায়। মাসিমার বড়ছেলে এ ঘরে…
‘দিদি আপনাকে কাল থেকে আর কাজে আসতে হবে না। আমাদের একটু অসুবিধা আছে। লোক আর রাখতে পারছি না।’
লীনার মাথায় বাজ পড়ে বুঝি। কী করে চলবে তাহলে। মাসিমা ছেলের দিকে তাকিয়ে আছেন।
‘আমার লীনাকে দরকার আছে৷ ওর সঙ্গে কথা না বলে আমি বাঁচব না।’
‘কিন্তু মা, এ মাস থেকে রিটায়ার করে যাচ্ছি। এতটা খরচ…।’ দুটো মায়াভরা চোখ নিয়ে মাসিমা, কথা কত স্পষ্ট করে বলছেন। নিজের ভিতর কী এক আনন্দ যেন।
‘আমার আর চিকিৎসার দরকার নেই, ওষুধ আর কিনতে হবে না। লীনা পাশে থাকলে, আমি সুস্থ থাকব। আর আমার তো টাকা আছে। কী হবে আর জমিয়ে রেখে। লীনা একজন মানুষ। তাকে মূল্য দিয়ে আমিই রাখব।

* গল্প (Short Story) – মানুষের মূল্য (Manuser Mulya) : মিতা নাগ ভট্টাচার্য
(Monosree De), লেখিকা

Skip to content