ছবি প্রতীকী
প্রায় নব্বই শতাংশ মানুষই এখনও জানেন না জেরিয়াট্রিক বলে চিকিৎসা বিজ্ঞানে আলাদা কোনও বিষয় আছে। জানার পর অনেকেই প্রশ্ন করেন যে পূর্ণবয়স্কদের মধ্যেই তো বয়স্ক মানুষেরা পড়েন তাহলে আবার আলাদা বিশেষ কী রয়েছে তাদের চিকিৎসায়?
এটা ঠিক যে গত এক দশকে বার্ধক্য চিকিৎসা নিয়ে আমাদের দেশে ও রাজ্যে কিছুটা আলোকপাত হচ্ছে। তবে এখনও প্রয়োজনের তুলনায় কিছুই না। অতি সম্প্রতি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে একটি স্বতন্ত্র জেরিয়াট্রিক ইউনিট খোলা হয়েছে যা খুবই আশার কথা। প্রবীণদের চিকিৎসা বিষয়ে কিছু সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে তার মধ্যে অন্যতম ‘জেরিয়াট্রিক সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া’, ‘বাঁচবো’, ‘প্রোটেক্ট দ্যা ওয়ারিয়ার্স’ ইত্যাদি।
জেরিয়াট্রিক-এর প্রথম আলোকপাত কিন্তু হয়েছিল ভারতবর্ষে
অত্যন্ত গর্বের কথা, বার্ধক্য চিকিৎসা বা জেরিয়াট্রিক বিষয়ে কিন্তু প্রথম আলোকপাত হয়েছিল আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর আগে ভারতে আয়ুর্বেদে ‘জরা’ বিভাগে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এদেশে পরবর্তীকালে বিষয়টা সেভাবে আর প্রসার লাভ করেনি। এই বিষয়ে অনেক বেশি চর্চা হয়েছে আমেরিকা এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে।
বার্ধক্য চিকিৎসা আলাদা কেন?
পূর্ণবয়স্ক হওয়া সত্ত্বেও বার্ধক্য চিকিৎসা একটু আলাদা কেন জেনে নেওয়া যাক—
১. বয়স্কদের একসঙ্গে একাধিক রোগের উপস্থিতি।
২. অসুখের জটিলতা অনেক বেশি। সাধারণ সর্দিকাশি থেকে নিউমোনিয়া পর্যন্ত হতে পারে।
৩. সাবেকি লক্ষণ ছাড়াও অসুখ দেখা দিতে পারে। যেমন আচ্ছন্নতা বা অসংলগ্ন কথা প্রস্রাবের সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে।
৪. ওষুধের মাত্রা, ওষুধে ওষুধে বিক্রিয়া, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এ বিষয়গুলি বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়। পলি ফার্মেসি প্রবীণদের চিকিৎসায় একটা বড় সমস্যা।
৫. অসুখের একটা বড় অংশ সাইকোসোমাটিক। অর্থাৎ মানসিক প্রভাবিত। যেমন দুশ্চিন্তার কারণে ঘুমের সমস্যা, পেটের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি হতে পারে।
৬. পুষ্টির প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। শুধুমাত্র অপুষ্টির কারণে অনেক সমস্যা তৈরি হতে পারে। এমনকী মানসিক সমস্যাও।
৭. রোগ প্রতিরোধের দিকটাও বেশ জরুরি। বিশেষ করে দীর্ঘস্থায়ী রোগগুলোকে যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হার্টের বিভিন্ন রোগ, স্নায়ুর সমস্যা এগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখা।
৮. আর্থ-সামাজিক দিকের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। মানুষটির পারিবারিক অবস্থান, আয় অনেক কিছুর উপরে চিকিৎসা নির্ভর করে।
৯. প্রবীণদের চিকিৎসা হল দলবদ্ধ চিকিৎসা। একজন চিকিৎসক স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। জেরিয়াট্রিসিয়ান-এর তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ফিজিওথেরাপিস্ট, ডায়াটিসিয়ান, সাইকোলজিস্ট, অন্যান্য বিভিন্ন থেরাপিস্ট সকলের মিলিত প্রয়াসেই সুষ্ঠুভাবে প্রবীণদের চিকিৎসা করা সম্ভব। একজন চিকিৎসক বা হাউজ ফিজিসিয়ানের তত্ত্বাবধানে অবশ্যই প্রবীণ মানুষের থাকা দরকার, যিনিই প্রাথমিকভাবে তাঁকে সবক্ষেত্রে পরামর্শ দেবেন।
১০. অনেকাংশই আয়ার ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে শয্যাশায়ী রোগীদের ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে বিশেষ প্রশিক্ষণ জরুরি।
১১. পুনর্বাসনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে নিউরো, পোস্ট ফ্র্যাকচার, ডিমেনশিয়া, পার্কিনসন প্রভৃতি রোগীদের জন্য।
১২. যতটা সম্ভব গৃহভিত্তিক (Home based) চিকিৎসা করা। কারণ বেশিরভাগ মানুষই স্বাস্থ্যের দিক থেকে বাইরে বেরোতে অক্ষম, লোকের অভাব এবং বিশেষ করে বয়স্কদের হাসপাতালজাত সংক্রমণের (Nosocomial) সম্ভাবনাও প্রচুর।
বয়স্কদের চিকিৎসায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল সঠিক মানসিকতা, কোয়ালিটি টাইম প্রদান করা। তাঁদের উপযুক্ত সম্মানের দিকেও খেয়াল রাখা ভীষণভাবে জরুরি।
লেখক: কর্ণধার ‘বাঁচবো’, সহ সম্পাদক জেরিয়াট্রিক সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া, পশ্চিমবঙ্গ শাখা৷ উপদেষ্টা, প্রোটেক্ট দ্যা ওয়ারিয়ার্স। যোগাযোগ : ‘বাঁচবো’ – ৯৯০৩৩৮৮৫৫৬
এটা ঠিক যে গত এক দশকে বার্ধক্য চিকিৎসা নিয়ে আমাদের দেশে ও রাজ্যে কিছুটা আলোকপাত হচ্ছে। তবে এখনও প্রয়োজনের তুলনায় কিছুই না। অতি সম্প্রতি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে একটি স্বতন্ত্র জেরিয়াট্রিক ইউনিট খোলা হয়েছে যা খুবই আশার কথা। প্রবীণদের চিকিৎসা বিষয়ে কিছু সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে তার মধ্যে অন্যতম ‘জেরিয়াট্রিক সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া’, ‘বাঁচবো’, ‘প্রোটেক্ট দ্যা ওয়ারিয়ার্স’ ইত্যাদি।
অত্যন্ত গর্বের কথা, বার্ধক্য চিকিৎসা বা জেরিয়াট্রিক বিষয়ে কিন্তু প্রথম আলোকপাত হয়েছিল আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর আগে ভারতে আয়ুর্বেদে ‘জরা’ বিভাগে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এদেশে পরবর্তীকালে বিষয়টা সেভাবে আর প্রসার লাভ করেনি। এই বিষয়ে অনেক বেশি চর্চা হয়েছে আমেরিকা এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে।
পূর্ণবয়স্ক হওয়া সত্ত্বেও বার্ধক্য চিকিৎসা একটু আলাদা কেন জেনে নেওয়া যাক—
১. বয়স্কদের একসঙ্গে একাধিক রোগের উপস্থিতি।
২. অসুখের জটিলতা অনেক বেশি। সাধারণ সর্দিকাশি থেকে নিউমোনিয়া পর্যন্ত হতে পারে।
৩. সাবেকি লক্ষণ ছাড়াও অসুখ দেখা দিতে পারে। যেমন আচ্ছন্নতা বা অসংলগ্ন কথা প্রস্রাবের সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে।
৪. ওষুধের মাত্রা, ওষুধে ওষুধে বিক্রিয়া, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এ বিষয়গুলি বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়। পলি ফার্মেসি প্রবীণদের চিকিৎসায় একটা বড় সমস্যা।
৫. অসুখের একটা বড় অংশ সাইকোসোমাটিক। অর্থাৎ মানসিক প্রভাবিত। যেমন দুশ্চিন্তার কারণে ঘুমের সমস্যা, পেটের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি হতে পারে।
৬. পুষ্টির প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। শুধুমাত্র অপুষ্টির কারণে অনেক সমস্যা তৈরি হতে পারে। এমনকী মানসিক সমস্যাও।
৭. রোগ প্রতিরোধের দিকটাও বেশ জরুরি। বিশেষ করে দীর্ঘস্থায়ী রোগগুলোকে যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হার্টের বিভিন্ন রোগ, স্নায়ুর সমস্যা এগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখা।
৮. আর্থ-সামাজিক দিকের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। মানুষটির পারিবারিক অবস্থান, আয় অনেক কিছুর উপরে চিকিৎসা নির্ভর করে।
৯. প্রবীণদের চিকিৎসা হল দলবদ্ধ চিকিৎসা। একজন চিকিৎসক স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। জেরিয়াট্রিসিয়ান-এর তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ফিজিওথেরাপিস্ট, ডায়াটিসিয়ান, সাইকোলজিস্ট, অন্যান্য বিভিন্ন থেরাপিস্ট সকলের মিলিত প্রয়াসেই সুষ্ঠুভাবে প্রবীণদের চিকিৎসা করা সম্ভব। একজন চিকিৎসক বা হাউজ ফিজিসিয়ানের তত্ত্বাবধানে অবশ্যই প্রবীণ মানুষের থাকা দরকার, যিনিই প্রাথমিকভাবে তাঁকে সবক্ষেত্রে পরামর্শ দেবেন।
১০. অনেকাংশই আয়ার ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে শয্যাশায়ী রোগীদের ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে বিশেষ প্রশিক্ষণ জরুরি।
১১. পুনর্বাসনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে নিউরো, পোস্ট ফ্র্যাকচার, ডিমেনশিয়া, পার্কিনসন প্রভৃতি রোগীদের জন্য।
১২. যতটা সম্ভব গৃহভিত্তিক (Home based) চিকিৎসা করা। কারণ বেশিরভাগ মানুষই স্বাস্থ্যের দিক থেকে বাইরে বেরোতে অক্ষম, লোকের অভাব এবং বিশেষ করে বয়স্কদের হাসপাতালজাত সংক্রমণের (Nosocomial) সম্ভাবনাও প্রচুর।
বয়স্কদের চিকিৎসায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল সঠিক মানসিকতা, কোয়ালিটি টাইম প্রদান করা। তাঁদের উপযুক্ত সম্মানের দিকেও খেয়াল রাখা ভীষণভাবে জরুরি।
লেখক: কর্ণধার ‘বাঁচবো’, সহ সম্পাদক জেরিয়াট্রিক সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া, পশ্চিমবঙ্গ শাখা৷ উপদেষ্টা, প্রোটেক্ট দ্যা ওয়ারিয়ার্স। যোগাযোগ : ‘বাঁচবো’ – ৯৯০৩৩৮৮৫৫৬