বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


এই পর্বে আমরা আলোচনা করব প্রবীণদের পুষ্টির আরও কয়েকটি বিশেষ দিক নিয়ে৷ যেমন খাবার নিয়ম, কী কী বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে, ওষুধের সঙ্গে পুষ্টির সম্পর্ক।

● কী নিয়মে খাবেন
খাদ্য গ্রহণ করার সময় ও পরিমাণ প্রবীণদের ক্ষেত্রে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে শুধুমাত্র সময়ের অনিয়ম ও পরিমাণের অনিয়ন্ত্রণের কারণে প্রবীণদের হজমের সমস্যা থেকে শুরু করে হার্ট আ্যটাকের মতন গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
সাধারণভাবে বলা হয় একটি সহজ উপায় অবলম্বন করতে, সকালের জলখাবার করতে হবে রাজার মতন, দুপুরের আহার হবে প্রজার মতন আর রাতের আহার হবে ভিক্ষুকের মতন। রাতে যতটা কম বা হালকা খাওয়া যায় ততই ভালো। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে রাতে গুরুপাক খাওয়ার পর ভোররাতে হার্ট অ্যাটাকের এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়, বিশেষত বয়স্কদের ক্ষেত্রে। প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে জলখাবার, দুপুর ও রাতের আহার গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। ২/৩ ঘণ্টার বেশি খালি পেটে থাকা উচিত নয়। আবার একেবারে বেশি পরিমাণে না খেয়ে অল্প পরিমাণে বারে বারে খাওয়া উচিত। নিমন্ত্রণ বাড়িতে খেতে বাধা নেই কিন্তু কখনওই যেন সেটা অত্যধিক পরিমাণে বা সংখ্যায় আধিক্য না হয়।

● কী কী বিশেষ দিক খেয়াল রাখতে হবে
ফ্রিজে রাখা রান্না করা খাবার বা বাসি খাবার বর্জন করতে হবে। অভিজ্ঞতায় দেখেছি বয়স্কদের বেশিরভাগ পেটের সমস্যা ও অ্যাসিডের সমস্যার কারণ এই দুই প্রকারের খাবার।
বারবার ফুটিয়ে খাবার খাওয়া যাবে না। এতে খাদ্যের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায় এবং কিছু ক্ষেত্রে রাসায়নিক বা টক্সিন নির্গত হয় যা শরীরের জন্য ভীষণ ক্ষতিকারক।
প্রিজারভেটিভগুলি ব্যবহার করা হয় এমন সমস্ত ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলি এড়িয়ে চলতে হবে।
খাদ্যের সঙ্গে সঙ্গে উপযুক্ত পরিমাণে জল গ্রহণ ভীষণভাবে আবশ্যিক। ডিহাইড্রেশন রোধ করে কিডনির কার্যকারিতাকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে, দেহের কোষগুলোকে সজীব রাখতে জলের ভূমিকা অপরিহার্য।
বয়স্কদের ডায়াবেটিস থাকলে সহজেই হাইপোগ্লাইসেমিয়া অর্থাৎ রক্তে সুগার লেভেল কম হয়ে যায়। তাই সারা দিনে ছয় বা সাতবার খাবার দিতে হবে। অল্প করে হলেও বারবার দিতে হবে। খাবার সময়সূচি ঠিক রাখতে হবে। রাতের খাবার একটু আগেই সেরে নিতে হবে।
অ্যাডেড সুগার সমৃদ্ধ খাবার পরিহার করার চেষ্টা করুন যেমন কনফেকশনারি সুগার, কোল্ড ড্রিঙ্কস, প্রক্রিয়াজাত এনার্জি বা স্পোর্টস ড্রিঙ্কস ইত্যাদি।
অ্যাডেড সল্ট সমৃদ্ধ খাবার যেমন চিপস, স্লটেড বিস্কুট, চানাচুর, পানীয় ইত্যাদি থেকে বিরত থাকুন।

● আপনার ওষুধ আপনার অপুষ্টির কারণ নয় তো?
প্রবীণদের ক্ষেত্রে বহুবিধ রোগের কারণে বহুবিধ ওষুধ সেবন যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় পলি ফার্মাসি, বিভিন্ন ওষুধের কারণে খাদ্যের শোষণ জনিত ব্যাঘাত, হাইপার বা হাইপো অ্যাসিডিটি, বমি ভাব ইত্যাদির জন্য অপুষ্টি জনিত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। যেমন নন স্টেরয়ডাল অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি ড্রাগ (সাধারণ পেইন কিলার হিসেবে ব্যবহৃত হয়), করটিকো স্টেরয়েড, পটাশিয়াম সমৃদ্ধ ওষুধ, বিসফসফোনেটস, ওপিয়ডস, অ্যান্টি ক্যানসার ওষুধ, উচ্চ রক্তচাপের কিছু ওষুধ যেমন কিছু ডাই ইউরেটিক্স, এসিই ইনহিবিটর, ডিগক্সিন জাতীয় বিভিন্ন ওষুধের কারণে পুষ্টিজনিত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই ক্ষেত্রে চিকিৎসককে পুষ্টির সমস্যা নিয়ে দেখালে কী কী ওষুধ সেবন করেন সেটা জানানো ভীষণ প্রয়োজন। চিকিৎসকই যা সিদ্ধান্ত নেবেন, কিন্তু সচেতন হওয়ার জন্যই এই বিশেষ দিকটি উপস্থাপন করা।

● আপনার খাদ্য ওষুধের কার্যকারিতাকে ব্যঘাত করছে না তো?
অনেক ক্ষেত্রে খাদ্য বা খাদ্যাভ্যাসের কারণে ওষুধের কার্যকারিতা নষ্ট হয়, ওষুধ রক্তে শোষণ হতে পারে না বা ওষুধের যথাযথ ফল পাওয়া যায় না। বিভিন্ন কারণে বা পদ্ধতিতে এটা হতে পারে। এখানে এই বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনার অবকাশ নেই। এটিও পুরোপুরি চিকিৎসকদের পর্যালোচনার বিষয়। তবুও সচেতনতার জন্য তুলে ধরা হল। একটি উদাহরণ হিসেবে বলা যায় আঙুরের রসের সঙ্গে নিফিডিপিন জাতীয় হার্টের ওষুধ, কারবামাজেপিন জাতীয় খিঁচুনি প্রতিরোধক ওষুধ, প্লেনড্রিল জাতীয় উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ, সিসপ্রাইড জাতীয় আলসার প্রতিরোধক ওষুধ কখনওই একসঙ্গে বা আগেপরে খাওয়া উচিত নয়। কারণ ওষুধগুলোর শোষণে ব্যাহত হবে। কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাবে। এরকম আরও বহু উদাহরণ রয়েছে।

ছবি : লেখক

লেখক: কর্ণধার ‘বাঁচবো’, সহ সম্পাদক জেরিয়াট্রিক সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া, পশ্চিমবঙ্গ শাখা৷ উপদেষ্টা, প্রোটেক্ট দ্যা ওয়ারিয়ার্স। যোগাযোগ : ‘বাঁচবো’, ফোন : ৯৯০৩৩৮৮৫৫৬

Skip to content