রবিবার ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

সৃষ্টির আদি লগ্ন থেকে বৃক্ষ আমাদের পরম বন্ধু। পিতা-মাতার হাত ধরে যেমন একটি সন্তান পৃথিবীর আলো দেখে ও বড় হয়। ঠিক তেমনই বৃক্ষরাজি আমাদেরকে এই পৃথিবীতে তিলে তিলে বড় করেছে এবং রক্ষা করছে। কিন্তু মানুষ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার অতীত এবং বর্তমানকে ভুলতে বসে। তাই নির্বিচারে তার পরম বন্ধুকে এই বসুন্ধরা থেকে বিনাশ করছে।
বাংলায় একটি প্রচলিত কথা যে ‘কুপুত্র যদি বা হয়, কুমাতা কদাপি নয়’। তাই বৃক্ষ আমাদের কখনও ক্ষতি করে না। সে নীলকণ্ঠের ন্যায় নির্বিকল্প ভাবে পৃথিবীর সব বিষ শোষণ করে চলেছে। দেরিতে হলেও মানুষের আজ টনক নড়ছে। বর্তমান সময়ে তাই পৃথিবী মাতার সুসন্তানগন বিভিন্ন ভাবে উদ্যোগ নিচ্ছে যাতে পৃথিবীকে আবার সবুজ করা যায়, মায়ের ভগ্নস্বাস্থ্য উদ্ধার করা যায়। এই সময়ে পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তের ন্যায় ভারতেও বীজবোমার মতো এক নতুন ও চমকপ্রদ ব্যবস্থার সাহায্যে বিভিন্ন স্থানে গাছ লাগানো বা বনসৃজন করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:

জুনোসিস এড়াতে বন্যপ্রাণীর ‘ওয়েট মার্কেট’ চিরতরে বন্ধ হওয়া উচিত

পরিযায়ী মনপর্ব-১৪: কুর্গের সবুজ দুর্গ

২০টি বোমা ব্যবহারে সর্বাপেক্ষা এগিয়ে রয়েছে পার্শ্ববর্তী রাজ্য অসম। বীজ বোমা ফাটানোর সর্বাপেক্ষা সেরা সময় হিসাবে বেছে নেওয়া হচ্ছে বর্ষা ঋতুর পূর্বকাল বা বর্ষাকাল। যার ফলে বর্ষার বৃষ্টিতে সিক্ত মাটিতে বীজ অঙ্কুরিত হয়ে, শুষ্ক মাটিকে সবুজাকীর্ণ করে। উর্বর মাটির মধ্যে একই ধরনের বা বিভিন্ন ধরনের বীজ রেখে তাকে গোল বলের মত আকৃতি দেওয়া হয়।
সাধারণ বোম ওপর থেকে ফেললে মানবকূল তথা সমাজের প্রভূত ক্ষতি হয়, কিন্তু বীজবোম আমাদের কাছে সৃষ্টির বার্তা বহন করে নিয়ে আসে। মাটির ওপর বোমটি পড়ে তা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে প্রতিটি বীজের গায়ে লেগে থাকে সারযুক্ত উর্বর মৃত্তিকা। তা যে স্থানে পড়ে সেখানে ধীরে ধীরে অঙ্কুরিত হয় এবং জায়গাটিতে একসঙ্গে বহু উদ্ভিদের জন্ম দেয়। এর ফলে কোনও ফাঁকা জায়গায় খুব দ্রুত গাছ লাগিয়ে বনসৃজন করা যায়। এই পদ্ধতির সফলতা হার প্রায় ৫০ শতাংশ।
আরও পড়ুন:

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৮০: পয়লা মাঘে সরস্বতী নদীর পাড়ে ৫০০ বছরের জমজমাট মাছ মেলা কখনও দেখেছেন?

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-২০: পাঁচ ভাইয়ের বড়দিদি

বীজবোম বানানোর পদ্ধতি খুবই সহজ। প্রয়োজন অনুসারে অথবা চাহিদা মতো বীজ সংগ্রহ করে সেই গুলি প্রথমে ভালো করে ধুয়ে শুকনো করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে বীজ কিছুটা আর্দ্র থাকে। মাটি এবং গোবর ৩:১ অনুপাতে মিশিয়ে গোল বলের মতো তৈরি করা হয় বীজ বোম।
এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গাছ, ফল বা ফুলের গাছ বা অন্যান্য গাছের বীজ প্রবেশ করানো হয় এবং সূর্যালোকে শুষ্ক করা হয়। এরপর ঠিক সময় মতো বোম বিস্ফোরণ করা হয় বিভিন্ন ফাঁকা জায়গায়, রাস্তার পাশে, মাঠে-ময়দানে, পরিত্যক্ত জায়গা, বাড়ি এবং তৃণভূমি অথবা সম্পূর্ণরূপে বালুকাপূর্ণ মরুভূমিতে। শীতপ্রধান ও ইউরোপিয়ান অঞ্চলগুলিতে শীতের শেষে বা বসন্তের শুরুতে বিভিন্ন ফুলের বা ঘাসের বীজ থেকে তৈরি বীজবোম মাটিতে ফেলা হয়।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৩৯: ভালোবাসার ভোরে…

সুরেন্দ্র কাপুর, বিশিষ্ট বাস্তুবিদ, পর্ব-১৮: বাস্তু মতে আপনার বাড়ির প্রধান প্রবেশদ্বার কোন দিকে হওয়া উচিত?

পরে বসন্তে বা গ্রীষ্মে বাতাসের উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মাটি যখন বরফ মুক্ত হয়, তখন বীজ অঙ্কুরিত হয় এবং সমগ্র অঞ্চলগুলি ছোট ছোট সবুজ উদ্ভিদ বা তৃণে পরিপূর্ণ হয়। তবে শুষ্ক অঞ্চলগুলিতে মাঝে মধ্যে জল স্প্রে করলে তবেই গাছগুলো বেঁচে থাকে। এইভাবে যত্ন নিলে শুষ্ক, রুক্ষ অঞ্চলকে বৃক্ষরাজি বা অরণ্য পরিপূর্ণ করা যেতে পারে, যা ভবিষ্যতে ভারত-সহ সমগ্র পৃথিবীকে মরুকরণের হাত থেকে রক্ষা করবে।
* ড. উৎপল অধিকারী, সহ-শিক্ষক, আঝাপুর হাই স্কুল, আঝাপুর, জামালপুর, পূর্ব বর্ধমান।

Skip to content