শনিবার ২৩ নভেম্বর, ২০২৪


গোবিন্দকিশোর মান্না।

পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতে জীবন বিজ্ঞানকে মহীরূহ করতে যে কয়েকজন হাতেগোনা বিজ্ঞানীর নাম জানা যায়, তাঁদের মধ্যে অধ্যাপক গোবিন্দকিশোর মান্না বা সংক্ষেপে জিকে মান্না ছিলেন অন্যতম। অধ্যাপক মান্না যখন জীবন বিজ্ঞানে বিজ্ঞান পাঠরত এবং গবেষণারত, সেই সময়ে এই বিষয়টি ছিল একেবারেই নতুন। তিনি ১৯২৬ সালে এক সম্ভ্রান্ত, শিক্ষিত ও প্রগতিশীল হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পড়াশুনার প্রতি গভীর ভালোবাসা ও পিতা-মাতার উৎসাহে, তিনি জীবন বিজ্ঞানের মতো নতুন বিষয়ে ও গবেষণায় উৎসাহী হয়ে ওঠেন। ১৯৬২ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অফ সায়েন্স বা ডিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন।
জীবন বিজ্ঞানের একেবারে নতুন শাখা সাইটোজেনেটিক্স বা কোশ সুপ্রজনন বিদ্যার উপর তিনি আজীবন গবেষণা করে গিয়েছেন। মিউটেশন বা পরিব্যক্তির উপর তাঁর গবেষণা দেশে-বিদেশে যথেষ্টই সুনাম বিস্তার করেছিল। তিনি সারা জীবন সেই সব প্রাকৃতিক ও অনুজীবের সন্ধান করেছেন, যেগুলি মিউটেশন ঘটায়। এছাড়াও তিনি রেডিয়েশন বায়োলজির উপর নিরন্তন গবেষণা করে গিয়েছেন। ড. মান্না প্রথম সাইটো-ট্যাক্সোনমি উপর কাজ শুরু করেন। পরে, এরিডিডি, গ্রাইলিডি, হেটেরোপটেরা, হোমোপটেরা, কোলিওপটেরা, মাছ, উভচর এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্রোমোজোমের বিবর্তন নিয়ে বিশদে কাজ করেন। হেটেরোপটেরা প্রাণীদের নিয়ে তাঁর গবেষণা বিভিন্ন বই এবং গবেষণাপত্রে ছাপা হয়। তিনি মাছ এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীর সাইটোজেনেটিক্স নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করেন এবং ভারতবর্ষে তিনি এই গবেষণার পথিকৃৎ ছিলেন।
আরও পড়ুন:

সব লেখাই বিজ্ঞানের : ঘুম জাগানিয়া চাঁদ

এই দেশ এই মাটি, ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব-১: রাজমালা ও ইতিহাসের আলোকে ত্রিপুরা

ড. মান্নাই প্রথম ভারতে মানব ক্রোমোজোম হ্যান্ডেলিং করার পদ্ধতি আবিষ্কার, সময়কাল হল ১৯৫৪ সাল। তিনি মহিলাদের জরায়ু মুখ ক্যানসারের ওপর গভীর গবেষণা করেন। নিরেট বা সলিড টিউমারের ক্রোমোজোমকে বের করে এনে তা নিয়ে গবেষণা করার নতুন পথ দেখান তিনি। এই পদ্ধতিটি কিউমারিন পদ্ধতি নামে পরিচিত। আমরা জানি, মিউটেশন বা পরিব্যােক্তি হল ক্রোমোজোমের আকস্মিক পরিবর্তন। এটি সৃষ্টি করে থাকে যে এজেন্টগুলি তারা হল বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ও ভৌতপদার্থ। তিনি প্রমাণ করেন, অনুজীব বা মাইক্রোবসও মিউটাজেন হিসাবে কাজ করে। এটি মিউটাজেনেসিস গবেষণায় নতুন কাজ। এছাড়াও তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ভাইরাস, নিম্ন শ্রেণির ছত্রাক ও পরজীবী প্রোটোজোয়াও মিউটেশন ঘটায়।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩৬: সারদা মায়ের ছোটকাকা ও পুত্রপ্রতিম স্বামীজির জীবনাবসান

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮২: রবীন্দ্রনাথ সাহেব-শিক্ষকদের কাছেও পড়েছেন

অসম্ভব পরিশ্রমী, স্পষ্ট বক্তা এবং সৎ মানুষ হিসাবে সকলের কাছে তিনি সমীহ আদায় করেছেন। ছাত্র মহলে তাঁর সুনাম ছিল ঈর্ষণীয়। ড. মান্নার অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী স্ব-স্ব ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত। তাঁর বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং কাজের স্বীকৃতি দিয়েছে বড় বড় প্রতিষ্ঠান। তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ বায়োলজিক্যাল সাইন্স সংক্ষেপে আইইউবিএস-এর সম্মানীয় সদস্য ছিলেন। দেশের দুই প্রতিষ্ঠান ইউজিসি এবং সিএসআইআর-এর সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তিনি কেবলমাত্র একজন বড় বৈজ্ঞানিক ছিলেন তা নয়, একজন বড় কর্মকর্তাও ছিলেন। তিনি কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা, প্রধান ছিলেন। এই বিভাগটির সর্বতো উন্নতিকল্পে তিনি সারা জীবন নিয়োজিত ছিলেন। তিনি ভারতের চারটি নামী জার্নালের এডিটোরিয়াল বোর্ডে ছিলেন। এছাড়াও প্রফেসার মান্নার লেখা সাইটোলজি ও জেনেটিক্সের পাঁচটি খন্ডের বই আছে। এগুলি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য ও নামী বই।
আরও পড়ুন:

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৩৩: লিপ ইয়ার

পর্দার আড়ালে, পর্ব-৪৯: শ্রদ্ধাঞ্জলি— প্রযোজক-গায়িকা অসীমা মুখোপাধ্যায়, অভিনেত্রী অঞ্জনা ভৌমিক ও গীতিকার মিল্টু ঘোষ

ড. মান্না ১৯৮০ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত, ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশনের জাতীয় ফেলো ছিলেন। এছাড়াও ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত তিনি ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যাকাডেমি বা ইনসার কাউন্সিল মেম্বার ছিলেন, যা ছিল অত্যন্ত সম্মানের। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি তাঁর সুনাম বাজায় রেখেছেন।

অধ্যাপক মান্না জীবনে অনেক সম্মান, পদক ও পদবী লাভ করেছেন। তিনি ইউজিসির স্যার জেসি বোস সম্মাননা লাভ করেন। ১৯৬৯ সালে আয়োজিত ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্স ও এলাহাবাদে আয়োজিত ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অফ জুলজির সম্মানীয় ফেলো নির্বাচিত হয়েছিলেন। এছাড়াও বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অফ সাইন্স ও ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির ফেলো নির্বাচিত হন।
প্রতি মুহূর্তে ঘটে যাওয়া খবরাখবর ও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ফ্যাশন, লাইফস্টাইল, সাজগোজ, গল্প, উপন্যাস, বিনোদন, বেড়ানো, খাওয়া-দাওয়া, দেশ-বিদেশের হালহকিকত প্রভৃতি বিষয়ে বিশেষজ্ঞের বিশেষ কলম পড়তে চোখ রাখুন সময় আপডেটস-এর পাতার বিভিন্ন বিভাগে। প্রতি ক্লিকেই মন ভালো করা প্রতিবেদন সাজানো রয়েছে। চলতে থাকুন সময়ের সঙ্গে — সময়, অসময়ে, সবসময়ে

Skip to content