শনিবার ১৭ মে, ২০২৫


মা সারদা।

১৩২৫ সালের চোদ্দোই শ্রাবণ ঠাকুরের অন্তরঙ্গ সহচর বাবুরাম মহারাজ পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। শ্রীমার জীবনে একটি বেদনার দিন। পূবর্বঙ্গে বেশ কয়েকবার ঠাকুরের ভাব প্রচার করতে গিয়ে অতিরিক্ত পরিশ্রমে তাঁর শরীর ভেঙে যায়। তিনি কালাজ্বরে আক্রান্ত হন। এই ঘটনার দুদিন আগে বাবুরাম মহারাজের অন্যতম সেবক মহাদেবানন্দ শ্রীমার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন, যাতে তিনি সেরে ওঠেন। শ্রীমা শুধু বলেছিলেন যে, তিনি কি তা বলতে পারেন? ঠাকুরের যা ইচ্চা, তাই হবে।
শ্রীমা খবর শুনে কেঁদে আকুল হন। এই সময় অন্তঃসত্ত্বা রাধুকে নিয়েও তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এছাড়াও তাঁর ভক্তসমাগমেরও বিরাম ছিল না। ১৩২৬ সালের পাঁচই বৈশাখ মাকুর ছেলে ন্যাড়ার মৃত্যুও তাঁকে সহ্য করতে হয়েছে। শ্রীমা জয়রামবাটি যাবেন কোয়ালপাড়া থেকে। পালকিও এসেছে, তবে মুষলধারে বৃষ্টি নামায় যেতে পারলেন না। বাইরে প্রবেশদ্বারে দাঁড়িয়ে ওপরের দিকে জোড়হাত করে বলতে লাগলেন, ‘ঠাকুর, আমাকে কি যেতে দেবে না?’ তাঁর গলার করুণস্বর যেন অভিমানমিশ্রিত। খানিক পরে বৃষ্টি থেমে গেল। পরদিন চৌঠা শ্রাবণ সকালে তিনি দইচিঁড়ে ফলাহার করে যাত্রা করলেন।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৯৭: শ্রীমার কথায় ‘ঠাকুরের দয়া পেয়েচ বলেই এখানে এসেচ’

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১৭: একাকিত্বের অন্ধকূপ/২: অন্ধকারের উৎস হতে

সাতাশে অঘ্রাণের কৃষ্ণা সপ্তমী মা সারদার জন্মতিথি। ওইদিন শ্রীমা স্নান করে ভক্তদের দেওয়া অনেকগুলো কাপড়ের মধ্যে থেকে শরৎ মহারাজের দেওয়া কাপড়টি বের করে পরলেন। যামিনী দেবীর কথায়, ‘আমি মার কপালে সিঁদূর, চন্দন, গলায় ফুলের মালা ও পায়ে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে প্রণাম করে মুখের দিকে চেয়েই দেখি, তাঁর আগেকার রূপ যেন নেই, চকিতের মধ্যে ভীষণ সুন্দর, অপূর্ব, অমানবীয় রূপ ফুটে উঠেছে। যে রূপের বর্ণনা ভাষায় দিতে পারি না। খানিক পরেই তিনি আগের মতো হয়ে গেলেন, আমাকে বললেন, এস মা, প্রণাম কর’।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১১৩: ভাবনা উইদাউট ভদ্‌কা

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১১৩: একটি হিংসা অনেক প্রতিহিংসা, জিঘাংসা, হত্যা এবং মৃত্যুর কারণ হয়ে ওঠে সর্বত্র

জন্মতিথির দিন থেকে তাঁর অল্প অল্প জ্বর হতে থাকে। মাঝে মাঝে জ্বরের বিরাম হলেও পর পর ভুগে তাঁর শরীর খুব দুর্বল হয়ে পড়ে। শরীরে জ্বর নিয়েও তিনি দূর থেকে আসা ভক্তসন্তানদের নিজের শ্রীচরণে স্থান দিয়ে যেতে লাগলেন। এইসময়ে ‘জীবে দয়া’ তাঁকে আত্মহারা করে তুলেছিল। একদিন তাঁর সঙ্গে উপেন্দ্র রায়ের কথা হচ্ছিল। তিনি বলেন, ‘মা, তোমার শরীর কেমন আছে?’ তিনি বলেন, ‘একটু একটু জ্বর হচ্ছে, শরীর দুর্বল, এ শরীর আর বইচে না’। উপেন্দ্র বলেন, ‘তোমার জীবনটা তো কষ্টে কষ্টেই গেল, দক্ষিণেশ্বরে নহবতে থেকে, অনেকদিন ধরে কত কষ্টই না সহ্য করেচ’।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১১৫: রবীন্দ্রনাথ আশুতোষ চৌধুরির বিয়ের ঘটকালি করেছিলেন

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৫৫: সর্বত্র বরফ, কোত্থাও কেউ নেই, একেবারে গা ছমছম করা পরিবেশ

শ্রীমা বলেন, ‘সে তো বাবা, ভালই গিয়েচে। তখন এমন হয়েচে যে, গায়ে লাগেনি। এখন আর এ শরীর বয় না’। শ্রীমার কথা শুনে উপেনবাবুর মনে হল, নতুন শরীর না হলে তিনি আর কাজ করতে পারছেন না। শ্রীমার অসুখের সংবাদ শুনে শরৎ মহারাজ তাঁকে কলকাতায় আনার জন্য ভূমানন্দ, আত্মপ্রকাশানন্দ ও বংশী সেনকে পাঠালেন। বারোই ফাল্গুন জয়রামবাটি থেকে রওনা হয়ে পথে কোয়ালপাড়ায় একরাত ও বিষ্ণুপুরে দুদিন থেকে পনেরই রাত প্রায় নয়টার সময় শ্রীমা কলকাতা পৌঁছলেন। জয়রামবাটি থেকে যাওয়ার দিন তিনি পুণ্যপুকুরের ঘাটে পড়ে যান। তাঁর ভাজ সুবাসিনী তাঁর পা হলুদজলে ধুয়ে দিতে যাচ্ছিলেন। প্রতিবারই যাবার সময় সে এমন করত।
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৭৮: রক্তে ভেজা মাটিতে গড়ে ওঠে সত্যিকার প্রাপ্তি

পঁচিশে বৈশাখ

শ্রীমা তাঁকে বলেছিলেন, ‘বড় বৌ, তুমি আর হলুদজল নিয়ে এসো নি, হরিপ্রেমের হাতে দাও, সে ধুইয়ে দেবে’। শ্রীমাকে কলকাতায় আনার পর শরৎ মহারাজ তাঁর চিকিৎসার সুবন্দোবস্ত করেন। হোমিওপ্যাথি, কবিরাজী, অ্যালোপ্যাথি—সকল মতেই চিকিৎসা হল। কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না। কেবল কবিরাজ শ্যামাদাস বাচস্পতির চিকিৎসায় সাতই চৈত্র থেকে পনের দিন জ্বর বন্ধ ছিল। অবশেষে ডাক্তার প্রাণধন বসু কালাজ্বর হয়েছে বলে তাঁর অভিমত দিলেন।—চলবে।
* আলোকের ঝর্ণাধারায় (sarada-devi): ড. মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় (Dr. Mousumi Chattopadhyay), অধ্যাপিকা, সংস্কৃত বিভাগ, বেথুন কলেজ।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content