শুক্রবার ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫


সারদা দেবী।

সরযূ সন্ধ্যার সময় শ্রীমাকে দেখতে এসেছে। মা সারদা একটা পাটিতে শুয়ে আছেন আর অন্য পাটিতে শুয়ে রাধু তাঁকে গল্প বলার জন্য পীড়াপীড়ি করছে। সরযূকে দেখে শ্রীমা বললেন, ‘একটা গল্প বলতো মা’। সরযূ এবার ভারি বিপদে পড়ে গেল, শ্রীমার কাছে সে কী গল্প বলবে ভেবে পেল না। সেদিন সে তার আগে পড়া মীরাবাঈয়ের গল্প বলল। মীরার একটি দোঁহা “বিন্ প্রেমসে নহি মিলে নন্দলালা” শুনে শ্রীমা বললেন, “আহা, আহা, তাই তো প্রেমভক্তি না হলে হয় না”।
রাধুর কিন্তু এই গল্প ভালো লাগল না। শেষে সরলাবালা এসে তাকে দুয়ো আর সুয়োরানির গল্প বলতে রাধু খুশি হল। সরলাকে শ্রীমা খুবই স্নেহ করেন। তিনি এখন গোলাপমার সেবায় নিযুক্ত, তাই কিছু পরেই চলে গেলেন। রাধু বলল যে, তার পা কামড়াচ্ছে, তাই সরযূ তার পা টিপে দিতে লাগল। রাধুর পছন্দ না হওয়ায় সে আরও জোরে টিপতে বলল। শ্রীমা তখন বললেন, “ঠাকুর আমার গা টিপে দেখিয়ে দিয়ে বলতেন যে এমনভাবে টিপতে। এই বলে তিনি সরযূকে বললেন, “দাও তো মা, তোমার হাতখানা”।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৮৫: নিবেদিতা ছিলেন মা সারদার অপার স্নেহধন্যা

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৮৮: সুন্দরবনের পাখি — শালিক

সরযূ তার হাত এগিয়ে দিতেই তিনি টিপে দেখিয়ে দিয়ে বললেন যে, রাধুকে এমনি ভাবে টিপে দিতে। সরযূ সেইভাবে টিপে দিতেই রাধু ঘুমিয়ে পড়ল। শ্রীমা বললেন, “এইবার আমার পায়ে একটু হাত বুলিয়ে দাও, মশা কামড়াচ্ছে”। এবার শ্রীমা বলতে লাগলেন, “মঠের এবার বড়ই দুর্বৎসর পড়েছে। আমার বাবুরাম, দেবব্রত, শচীন সবাই চলে গেল”। দেবব্রত মহারাজ তাঁর শরীর ত্যাগের কয়েকদিন আগে শরৎ মহারাজ উদ্বোধনের বাড়িতে ভূত দেখেছিলেন।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০৩: গ্রহের ফের

উপন্যাস: আকাশ এখনও মেঘলা/৫

এই কথা শ্রীমাকে সে জিজ্ঞাসা করতেই তিনি বললেন, “আস্তে, ওরা ভয় পাবে। ঠাকুরও অমন কত দেখতেন গো। একবার বেণীপালের বাগানে গেছেন রাখালকে সঙ্গে নিয়ে। তিনি বাগানের দিকে বেড়াচ্ছেন। ভূত এসে ঠাকুরকে বললে, তুমি কেন এখানে এসেছ, জ্বলে গেলুম আমরা। তোমার হাওয়া আমাদের সহ্য হচ্ছে না, তুমি চলে যাও, চলে যাও। তাঁর পবিত্র শরীরের হাওয়া, তাঁর তেজ ওদের সহ্য হবে কেন? তিনি তো হেসে চলে এসে কাউকে কিছু না বলে খাওয়ার পরই একটা গাড়ি ডেকে দিতে বললেন। তাঁর রাতে থাকার কথা ছিল। তারা বললে যে, এত রাতে গাড়ি কোথায় পাবে? শুনে ঠাকুর বললেন, তা পাবে, যাও। তারা গিয়ে গাড়ি নিয়ে এল। তিনি সেই রাতেই গাড়ি করে ফিরে এলেন। অত রাতে ফটকে গাড়ির শব্দ শুনে কান পেতে শুনি ঠাকুর রাখালের সঙ্গে কথা বলছেন। ভাবলাম, ওমা, কি হবে, যদি না খেয়ে এসে থাকেন, কি খেতে দেব এই রাতে? অন্য দিন কিছু না কিছু ঘরে রাখতুম, এই সুজি হোক বা যাই হোক। কারণ, কখন ঠাকুর খেতে চাইবেন তার ঠিক তো ছিল না। সেদিন তিনি আসবেন না জেনে কিছুই রাখিনি। এদিকে রাত তখন একটা, মন্দিরের ফটক সব বন্ধ হয়ে গেছে। ঠাকুর হাততালি দিয়ে সব ঠাকুরের নাম নিয়ে কেমন করে জানি দরজা খুলিয়ে দিলেন। আমি বলছি, ও যদুর মা, কি হবে? তিনি শুনতে পেয়েই বুঝতে পেরে তাঁর ঘর থেকেই ডেকে বলছেন, তোমরা ভেবো না গো, আমরা খেয়ে এসেছি। পরে রাখালকে সেই ভূতের কথা বলতে সে বলছে, ও বাবা, তখন বলনি, ভালোই করেছ, নাহলে আমার দাঁত কপাটি লেগে যেত। শুনে আমার এখনি ভয় পাচ্ছে’। এই বলে মা সারদার কি হাসি।
আরও পড়ুন:

গল্পবৃক্ষ, পর্ব-১৭: কুক্কুটজাতক-চিনে নাও বন্ধু কে?

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৭: উত্তরণ-অবতরণ শেষে স্বপ্নের ‘সূর্যতোরণ’

সরযূ বললে, ‘মা, ভুতগুলো তো বড় বেকুব। ঠাকুরের কাছে কোথায় মুক্তি চাইবে তা নয়, চলে যেতে কেন বললে মা?’ শ্রীমা বললেন যে, ওদের আর মুক্তির কি বাকি রইল, ঠাকুরের দর্শন পেলে? তিনি বলেন, ‘নরেন একবার মাদ্রাজে ভূতের পিণ্ড দিয়ে মুক্ত করে দিয়েছিল।
* আলোকের ঝর্ণাধারায় (sarada-devi): ড. মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় (Dr. Mousumi Chattopadhyay), অধ্যাপিকা, সংস্কৃত বিভাগ, বেথুন কলেজ।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content