বৃহস্পতিবার ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫


মা সারদা।

এক ভক্তের বালিগঞ্জের বাসায় শ্রীমা আজ যাবেন। আগে থেকেই সব ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাঁর জন্য আলাদা আসন, শ্বেতপাথরের বাসন কেনা হয়েছে। মা সারদার আগমনের আনন্দে রাতে তাদের ঘুমই হল না। ঠিক ছিল যে তিনি বিকেলে আসবেন। কোনও কারণে যদি তাঁর অন্য ইচ্ছা হয়, তাই সকালেই শ্রীমান শোকহরণ বাগবাজারে শ্রীমার বাড়িতে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল। আর বাকি ভক্তেরা সংসারের কাজ সকালবেলাতেই সেরে নিয়ে প্রস্তুত হয়ে রইল।
শ্রীমায়ের আসন পেতে তার চারদিক ফুল দিয়ে সাজানো হল। সমস্ত ঘরদোরে গঙ্গাজল ছড়িয়ে দেওয়া হল, ফুলের মালা গাঁথা হল। আর দুটি বড় ফুলের তোড়া করে শ্রীমার আসনের দুপাশে দেওয়া হল। বেলা পড়ে আসতেই সকলে পথ চেয়ে রইল কখন তিনি আসবেন। সেই শুভ মুহূর্ত এসে গেল। গাড়ির শব্দ হতেই সকলে নীচে নেমে এলো। গাড়ি থামতেই ভক্ত মহিলা দেখলেন যে শ্রীমা সস্নেহে হাসিমুখে তাদের পানে চেয়ে আছেন। তিনি গাড়ি থেকে নামতেই সকলে তাঁর পায়ের ধুলো নেওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠল। মা সারদার সঙ্গে এসেছেন গোলাপমা, ছোট ভাজ, নলিনীদিদি, রাধু আর চার-পাঁচজন সাধু। শ্রীমাকে উপরে নিয়ে গিয়ে আসনে বসিয়ে ভক্তরা প্রণাম করল।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৮৩: ‘গুরুকেও উচিত কথা বলা যায়, পাপ হয়না তাতে’

বীণাবাদিনীর শতদলদলে করিছে সে টলোমল

শ্রীমা তাঁর ভক্তকে বললেন, ‘খেয়েছ তো? আমি কত তাড়াতাড়ি করেও কিছুতেই আর এর চেয়ে সকালে হয়ে উঠল না। এতক্ষণে তবে আসা হলো’। এই বলে তিনি মহিলা ভক্তের চিবুকে হাত দিয়ে আদর করলেন। ভক্তটি শ্রীমার কাছে আর বেশি বসতে পারল না। খাবারের আয়োজন করতে হবে, নিমকি ভাজতে হবে। আর সব খাবার তার আগে ঠিক করা ছিল। উপরে তখন গ্রামাফোনে গান বাজছে। কাজ করতে করতে একটু ফাঁক পেয়ে ভক্তটি ছুটে এসে দেখে যে, শ্রীমা কলের গান শুনে ভারি খুশি, বলছেন, ‘কি আশ্চর্য কল করেছে’।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১১০: মানুষের পাশে, মানুষের কাছে

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০১: সরষের মধ্যে ভূত

তিনি বালিকার মতো আনন্দ করছেন। খুব গরম, মা সারদা বারাণ্ডায় শীতলপাটিতে শুয়ে আছেন আর তাঁর চারপাশে সবাই বসে আছে। একটি পাথরের বাটিতে বরফজল দেওয়া হয়েছে, শ্রীমা মাঝে মাঝে খাচ্ছেন। ভক্তকে দেখতে পেয়ে তিনি বললেন, ‘ওগো, একটু বরফজল খেয়ে নাও’। শ্রীমার প্রসাদী জল খেয়ে ঠাণ্ডা হয়ে সে নিচে রান্নাঘরে আবার কাজে ছুটে গেল। আজ যেন তার মনে হচ্ছে, এত তাড়াতাড়ি করেও কাজ আর সেরে ওঠা যাচ্ছে না। সন্ধ্যার পর পাশের ঘরে ভোগ সাজানো হল। মা সারদা এসে গোলাপমাকে ঠাকুরের ভোগ নিবেদন করে দিতে বলায় তিনি বললেন, ‘তুমিই দাও, তুমি উপস্থিত থাকতে আমি কেন?’ তখন মা সারদা নিজেই ভোগ নিবেদন করতে বসলেন আর বললেন, ‘আহা, কি সুন্দর সাজিয়েছে!’ এই বলে তারিফ করতে লাগলেন। সবেতেই তিনি ছোট মেয়ের মতো আনন্দ প্রকাশ করে সকল ভক্তদের অপরিসীম আনন্দ দিতে লাগলেন।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৮৫: সুন্দরবনের পাখি — মাছরাঙা

যে গান যায়নি ভোলা— প্রাক জন্মদিনে তাঁর প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধার্ঘ্য…/১

ভোগ দেবার পর শ্রীমা ও অন্য ভক্তরা প্রসাদ গ্রহণ করলেন। সকলের আগে তাঁর খাওয়া হয়ে গেল। বারাণ্ডায় একটি বেতের ইজিচেয়ারে বসে তিনি তাঁর ভক্তকে ডেকে বললেন, ‘ওগো, আমায় পান দিয়ে যাও’। ভক্তটি তখনও গোলাপমায়েদের পরিবেশন করছিলেন। তাড়াতাড়ি গিয়ে শ্রীমাকে পান দিয়ে এলো আর মা সারদাকে পান চেয়ে খেতে হলো বলে মনে মনে লজ্জা পেল। সুমতিকে সে বলল, ‘পান নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারিস নি, দেখছিস আমি এদিকে রয়েছি?’ খানিক বাদে শ্রীমা আবার কলতলায় গেলেন। ভক্তটি আলো নিয়ে তাঁর সঙ্গে গেল। বাগানের এই পাশটি বেশ নির্জন, পথে দুপাশে ক্রোটনগাছের সার। মা সারদা তাকে স্নেহপূর্বক বললেন, ‘আহা, একটুও বসতে পেলে না কাজের জন্যে। যেয়ো ওখানে, তোমার মাকে নিয়ে যেয়ো’।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০১: অর্জুন প্রমাণ করলেন, রাজধর্ম পালনের ক্ষেত্রে মিথ্যাচারের কোনও স্থান নেই

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১৩: রাগ অনুরাগের বন্ধন, ডিএইচ লরেন্স ও ফ্রিডা

ভক্তটির মা তার কাছে বেড়াতে এসে ভাগ্যক্রমে ঘরে বসেই শ্রীমার দর্শন পেয়ে গেলেন। এরপর এসে গেল বিদায়ের ক্ষণ। মোটরগাড়িতে যাবার ইচ্ছা নেই শ্রীমার। কারণ, একবার মাহেশের রথ দেখতে গিয়ে তাঁর মোটরের তলায় নাকি একটি কুকুর চাপা পড়ে। কিন্তু বাগবাজারে মোটরে না গেলে ফিরতে রাত হবে, কষ্টও হবে বলাতে তিনি ভক্তদের মতেই শেষে রাজি হলেন। বারবার ঠাকুরকে প্রণাম করে যাবার জন্যে তৈরি হলেন আর সকল ভক্তদের আশীর্বাদ করে গাড়িতে উঠলেন।—চলবে।
* আলোকের ঝর্ণাধারায় (sarada-devi): ড. মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় (Dr. Mousumi Chattopadhyay), অধ্যাপিকা, সংস্কৃত বিভাগ, বেথুন কলেজ।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content