![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/02/Ramayana.jpg)
ছবি: সংগৃহীত।
দীর্ঘকাল কেকয়দেশে মাতুলালয়ে দিন কেটেছে ভরতের। পিতার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পার হয়েছেন জীবনের সুদীর্ঘ সময়। তবুও মনের মধ্যে পিতার গভীর অস্তিত্ব, পিতৃস্নেহ অনুভবে কোনো বাধা আসেনি মনে। আজ এতদিন পরে বড় আশা পিতার সঙ্গে দেখা হবে। কিন্তু আসার পর জানলেন, পিতা ইহলোক ত্যাগ করেছেন। পিতার স্নেহচ্ছায়াহীন অযোধ্যাপুরী ভরতের অসহনীয় মনে হল। নিজের শোকতপ্ত মনকে সংযত করে এবার রামের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেন তিনি। পিতার অবর্তমানে পিতৃতুল্য অগ্রজের কাছে মানসিক সান্ত্বনা বড় প্রয়োজনীয় মনে হল তাঁর। কিন্তু তিনিই বা কোথায়? এর উত্তরে জানতে পারলেন, পিতার আদেশ পালনের জন্য রাম লক্ষ্মণ ও সীতাকে নিয়ে বনে গিয়েছেন।
বড় আশ্চর্য হলেন ভরত। মনে আশঙ্কা জাগল তাঁর, কোন অন্যায়ের কারণে রামের বনবাস? কৈকেয়ীকে প্রশ্ন করলেন— আচ্ছা, মা, রাম কি কোনও ব্রাহ্মণের ধন অপহরণ করেছেন? না কি কোনও ধনী বা দরিদ্রকে হত্যা করেছেন বা কোনও হিংস্র কাজ করেছেন? না কি কোনও পরস্ত্রীকে ধর্ষণ করেছেন? কোন অপরাধে তাঁর মতো মানুষকে পিতা তাঁকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিলেন? একের পর এক প্রশ্ন আর সংশয় উঠে আসছে ভরতের মনে।
বড় আশ্চর্য হলেন ভরত। মনে আশঙ্কা জাগল তাঁর, কোন অন্যায়ের কারণে রামের বনবাস? কৈকেয়ীকে প্রশ্ন করলেন— আচ্ছা, মা, রাম কি কোনও ব্রাহ্মণের ধন অপহরণ করেছেন? না কি কোনও ধনী বা দরিদ্রকে হত্যা করেছেন বা কোনও হিংস্র কাজ করেছেন? না কি কোনও পরস্ত্রীকে ধর্ষণ করেছেন? কোন অপরাধে তাঁর মতো মানুষকে পিতা তাঁকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিলেন? একের পর এক প্রশ্ন আর সংশয় উঠে আসছে ভরতের মনে।
নিজের কৃতকর্মের অহঙ্কারে আজও আত্মশ্লাঘায় ভুগছেন কৈকেয়ী। এত বিপর্যয়ের পরও তাঁর মূঢ়বুদ্ধি অপরিণতই রয়ে গেল। অতি উৎসাহে এবার তিনি ভরতের কাছে রামের অভিষেকের প্রস্তুতিপর্ব থেকে শুরু করে দশরথের মৃত্যু পর্যন্ত সব ঘটনা খুলে বললেন। বললেন, রাম উদারস্বভাব, ধার্মিক, জিতেন্দ্রিয় মানুষ। তিনি কণামাত্র পাপও করেননি। কিন্তু ভরতের রাজ্যলাভের জন্যই তিনি সর্বগুণসম্পন্ন রামকে বনবাসে পাঠানোর আয়োজন করেছেন। মা হিসেবে তাঁর এই শ্রম, এই অন্যায় কাজ, সবই পুত্রের কল্যাণ চিন্তা করে। এ বার ভরত রাজ্যভার গ্রহণ করে মায়ের পরিশ্রম সফল করুক, তাঁর মিত্রজনদের মুখে হাসি ফোটাক, তাহলেই তাঁর শান্তি— “গৃহাণ তদিদং রাজ্যং সফলং কুরু মে শ্রমম্। মনো নন্দয় মিত্রাণাং মম চামিত্রকর্ষণ।” কতদিন ধরে কৈকেয়ী অপেক্ষা করে আছেন এই দিনটির জন্য। পুত্র ভরত আসবে অযোধ্যায়, তার হাতে তুলে দেবেন নিষ্কণ্টক রাজ্যভার। কত লোকের চোখের জলে, দীর্ঘনিঃশ্বাস আর স্বামীর মৃত্যুর বিনিময়ে পাওয়া এই সিংহাসনের অধিকার! আজ আর অপেক্ষা সইছে না তাঁর—“পুত্র, তুমি শীঘ্র বশিষ্ঠ ও অন্যান্য ব্রাহ্মণদের সঙ্গে নিয়ে পিতার অন্ত্যেষ্টি সৎকার করো। তারপর নিজের রাজ্যের ভার নিয়ে নিজেকে অভিষিক্ত করো।”
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/01/Ramayana-2.jpg)
শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব-৩৩: শোকস্তব্ধ অযোধ্যানগরী কি আপন করে নিল ভরতকে?
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/02/samayupdates_1-1.jpg)
পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১: একটি ক্লান্তিকর বাসযাত্রা এবং…
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/02/Jyotirlinga-1.jpg)
জ্যোতির্লিঙ্গ যাত্রাপথে, পর্ব-৪: কাশীর পথে-ঘাটে
কিন্তু মানুষের মনের চেয়ে দুর্গম, দুর্লঙ্ঘ্য আর কি আছে জগতে? ভরতের মন কি মা কৈকেয়ী বুঝেছিলেন কিছুমাত্র? তিনি কি জানতেন যে, এমন নিষ্কণ্টক রাজ্যপাট লাভের কথা শুনে আহ্লাদে পুলকিত না হয়ে বিস্ময়ে, ক্ষোভে, রাগে ফেটে পড়বে তাঁর পুত্র ভরত! উঠে আসবে দগদগে ক্ষতবিক্ষত বুকের ভিতর থেকে তপ্ত রক্তস্রোতের মতো প্রশ্নের পর প্রশ্ন। “তুমি রাজ্যের লোভে রামের মতো অগ্রজকে রাজ্যছাড়া করলে মা, পিতার প্রাণ কেড়ে নিলে? তাঁরা তোমার কি ক্ষতি করেছিলেন? এবার আমিও প্রাণত্যাগ করব। তুমি সুখে থাকো তোমার রাজ্যপাট নিয়ে। তোমার মতো পাপীয়সীর না হয় রাজ্যের লোভে নরকের ভয় নেই, আমাকেও জুড়লে কেন এর সঙ্গে? তুমি তো রাজ্যলোভের বশবর্তী হয়ে আমাকেই জীবন্ত দগ্ধ করলে। এ পাপের আগুনে আমি যে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছি, মা। যে রাজ্যে আমার পিতা, ভ্রাতা কেউ নেই, সেই রাজ্যে আমার আর কোনও প্রয়োজন নেই। আমার জীবনেরই আসলে আর কোনও প্রয়োজন নেই। পিতা তোমার আসল রূপটি চিনতে পারেননি, কালসর্পের মতো বিষধর তোমাকে এই কুলে নিয়ে এসেছিলেন পরম বিশ্বাসে। তুমি তাঁর মতো নিষ্পাপ মানুষকে ছল করে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিলে? তোমাকে রাম নিজের মায়ের মতো শ্রদ্ধা করতেন, তাঁকে কোন বুদ্ধিতে তুমি নির্বাসনে ঠেলে দিলে? আমার জ্যেষ্ঠা মাতা কৌশল্যা, যিনি তোমাকে ছোট বোনের মতো স্নেহ করেন, তাঁকে পুত্রের থেকে দূরে সরিয়ে কতটা আনন্দ পেলে তুমি? আর, রাম লক্ষ্মণকে পাশে না পেয়ে আমি কোন শক্তিতে রাজ্য রক্ষা করব, সে কথা ভেবেছ তুমি? তুমি নৃশংস, নিষ্ঠুর, নিজের আচরণ দিয়ে নিজেকে শুধু কলঙ্কিত করলে না, আমার মাথাতেও কলঙ্কের কালি লেপে দিলে। আমি ঠিক ফিরিয়ে আনব রামকে। পিতার আদেশ মাথায় নিয়ে নিজে চোদ্দ বছর বনে কাটাব। রাজ্যলোভী, পাপঘাতী, মাতৃরূপী শত্রু তুমি আমার। আমাকে পুত্র বলে ডেকো না আর।” মায়ের উপর ক্ষোভে দুঃখে, পিতাকে হারানোর শোকে, ভাইয়ের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বেদনায় পর্বতগুহায় বিরাজমান সিংহের মতো আর্তরবে কাঁদতে লাগলেন ভরত। তাঁর কান্নার ধ্বনি ছড়িয়ে পড়ল প্রাসাদময়।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/01/bhagyashree-1.jpg)
৫০-এর পরেও ঝকঝকে স্বাস্থ্যজ্জ্বল ত্বক চাই? এর জন্য কী কী করবেন?
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/01/Madhyamik.jpg)
মাধ্যমিক ২০২৩: ইংরেজি বিষয়ে লাস্ট মিনিট সাজেশনের খুঁটিনাটি জানতে দেখে নাও ভিডিয়ো
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/02/mitali-De-2.jpg)
যোগা-প্রাণায়াম: কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন? প্রাণায়ামে হবে শ্বাসকষ্টের উপশম, জেনে নিন কীভাবে করবেন
ভরতের আর্তক্রন্দন পৌঁছল সুমিত্রানন্দন শত্রুঘ্নের কানে। ছুটে এলেন তিনি। এসে শুনলেন সব বৃত্তান্ত। ক্রোধের আগুন জ্বলে উঠল তাঁর মনেও। ঠিক তখনই দরজার সামনে এসে দাঁড়াল কুব্জা মন্থরা। চন্দনে অগুরুতে সেজেছে সে, পরনে তার বহুমূল্য বস্ত্র, অলঙ্কার। ভরত জেনেছে, এই সমস্ত অন্যায়ের পুরোধা এই মন্থরা। মায়ের মনে দুর্বুদ্ধির বিষ ঢুকিয়েছে সেই প্রথমে। তাকে দেখে স্থির থাকতে পারলেন না ভরত। চিৎকার করে শত্রুঘ্নকে নির্দেশ দিলেন, “এই কুব্জাই যত সর্বনাশের মূল। শত্রুঘ্ন, একে উপযুক্ত শাস্তি দাও।”
সে কথায় যেন ক্রোধের আগুন জ্বলে উঠল শত্রুঘ্নের মনে। মন্থরাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে বললেন তিনি— “দেখি রে, মন্থরা, আজ কে বাঁচায় তোকে আমার হাত থেকে। আজ যমালয়ে পাঠাব তোকে।” শত্রুঘ্নের হুঙ্কারে কেঁপে উঠল আশেপাশের অন্তঃপুরচারিণীরা। মন্থরার নিগ্রহের ঘটনায় আতঙ্কিত তার সখীরা উপায় না দেখে ছুটে গেল কৌশল্যার কাছে। তারা জানত, দীন, হীন, আর্তের আশ্রয় শেষ পর্যন্ত এ রাজপ্রাসাদে কৌশল্যাই। কৈকেয়ী বাঁচাতে পারবেন না তাদের এ বিপদ থেকে। মন্থরাকে মারতে মারতে কৈকেয়ীর কাছে নিয়ে এলেন শত্রুঘ্ন। কঠোর ভর্ৎসনা করলেন তাঁকেও। শেষে কৈকেয়ী মন্থরার প্রাণ ভিক্ষা করে ভরতের শরণাপন্ন হলে ভরত শত্রুঘ্নকে নিবৃত্ত করলেন।
সে কথায় যেন ক্রোধের আগুন জ্বলে উঠল শত্রুঘ্নের মনে। মন্থরাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে বললেন তিনি— “দেখি রে, মন্থরা, আজ কে বাঁচায় তোকে আমার হাত থেকে। আজ যমালয়ে পাঠাব তোকে।” শত্রুঘ্নের হুঙ্কারে কেঁপে উঠল আশেপাশের অন্তঃপুরচারিণীরা। মন্থরার নিগ্রহের ঘটনায় আতঙ্কিত তার সখীরা উপায় না দেখে ছুটে গেল কৌশল্যার কাছে। তারা জানত, দীন, হীন, আর্তের আশ্রয় শেষ পর্যন্ত এ রাজপ্রাসাদে কৌশল্যাই। কৈকেয়ী বাঁচাতে পারবেন না তাদের এ বিপদ থেকে। মন্থরাকে মারতে মারতে কৈকেয়ীর কাছে নিয়ে এলেন শত্রুঘ্ন। কঠোর ভর্ৎসনা করলেন তাঁকেও। শেষে কৈকেয়ী মন্থরার প্রাণ ভিক্ষা করে ভরতের শরণাপন্ন হলে ভরত শত্রুঘ্নকে নিবৃত্ত করলেন।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/02/moong-dal-chilla.jpg)
স্বাদে-আহ্লাদে: খুদের টিফিনে কী দেবেন ভেবেই মাথায় হাত? ঝটপট বানিয়ে ফেলুন মুগ ডালের চিল্লা!
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/02/salad-diet.jpg)
ডায়েট ফটাফট: স্যালাডে স্বাস্থ্যরক্ষা, কী ভাবে তৈরি করবেন সেই সব পুষ্টিকর খাবার? দেখে নিন একঝলকে
ভরত কিছুটা মানসিক স্থিতিশীলতা অর্জন করেছেন এতক্ষণে। শত্রুঘ্নকে বললেন, “সর্বশ্রেণির জীবকুলেই স্ত্রীজাতি অবধ্য। তুমি মন্থরাকে হত্যা করো না। আর না হলে আমিই কৈকেয়ীকে বধ করতাম। তবে এ কাজ করলে ধর্মজ্ঞ রাম আমাকে পরিত্যাগ করতেন, এ আমি নিশ্চিত। কাজেই শত্রুঘ্ন ক্রোধ সংবরণ করো।” শত্রুঘ্ন মেনে নিলেন ভরতের কথা। প্রায় হতচৈতন্য মন্থরাকে দূরে নিক্ষেপ করলেন।
ভরত তখন স্থির করলেন শত্রুঘ্নকে সঙ্গে নিয়ে পুত্রশোকবিহ্বল কৌশল্যার সঙ্গে সাক্ষাৎকার করবেন। কিন্তু তিনি তো নিজের মায়ের পাপকর্মের সঙ্গে অজ্ঞাতসারে যুক্ত হয়ে কলঙ্কভাগী হয়ে রয়েছেন। মা কৌশল্যা কি বলবেন তাঁকে? কতটা ভুল বুঝেছেন তিনি তাঁকে? এসব ভাবনায় ভয় গ্রাস করল ভরতকে। শিশুর মতো অসহায়ভাবে কাঁদতে লাগলেন তিনি।—চলবে
ভরত তখন স্থির করলেন শত্রুঘ্নকে সঙ্গে নিয়ে পুত্রশোকবিহ্বল কৌশল্যার সঙ্গে সাক্ষাৎকার করবেন। কিন্তু তিনি তো নিজের মায়ের পাপকর্মের সঙ্গে অজ্ঞাতসারে যুক্ত হয়ে কলঙ্কভাগী হয়ে রয়েছেন। মা কৌশল্যা কি বলবেন তাঁকে? কতটা ভুল বুঝেছেন তিনি তাঁকে? এসব ভাবনায় ভয় গ্রাস করল ভরতকে। শিশুর মতো অসহায়ভাবে কাঁদতে লাগলেন তিনি।—চলবে
* শাশ্বতী রামায়ণী (Saswati Ramayani – Ramayana) : ড. অমৃতা ঘোষ (Amrita Ghosh) সংস্কৃতের অধ্যাপিকা, আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল মহাবিদ্যালয়। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও সম্পাদিত গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর বেশ কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ।