শোকে, দুঃখে, ক্ষোভে, আঘাতে অযোধ্যাপতি দশরথ আজ বাকরুদ্ধ। কৈকেয়ীকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি তাঁর জীবনে এসেছে নাগপাশ হয়ে। সত্যের শৃঙ্খলে শ্বাসরুদ্ধ তাঁর জীবন। তাঁর হয়ে কথা বলছেন, আদেশ দিচ্ছেন রাজমহিষী কৈকেয়ী। কৈকেয়ী বুঝেছেন, নিজের অন্যায্য দাবিকে রাজশক্তি, প্রজাশক্তির বিরুদ্ধে গিয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে তাঁকে। পেতে হবে রাজসিংহাসনের অধিকারের চাবিকাঠি। পুত্র ভরতকে বসাতে হবে সিংহাসনে। তার জন্য আকস্মিকতার অভিঘাতে যদি টলে যায় রাজ্যপাট, নড়ে যায় বিশ্বাস, শোকে তাপে মুহ্যমান হয়ে পড়েন রাজা, তবুও অনড় থাকতে হবে তাঁকে। মন্থরার মন্ত্রণাবিষ ছড়িয়ে গেছে তাঁর শিরা ধমনীতে। একই সঙ্গে নির্লজ্জতা ও ক্রুরতা যেন ভর করেছে তাঁর উপর। কঠোর বাক্যবাণ আছড়ে পড়েছে নিজের স্বামীর উপর। নিষ্কৃতি পাননি রাম তাঁর বাক্যাঘাত থেকে।
রামকে অপ্রিয়, নিষ্ঠুর, উত্তেজক বাক্যের কশাঘাতে বারংবার আঘাত করেছেন কৈকেয়ী। সুশিক্ষিত ঘোড়াকে যেমন আঘাত করলে সে গতি বাড়িয়ে ছুটতে থাকে, রামও কৈকেয়ীর বাক্কশাঘাতে স্থির থাকতে পারলেন না। বললেন, “দেবি, আপনি কি আমাকে সন্দেহ করছেন যে আমি বনবাসে যাবো কি না? আমি অর্থলোভীও নই, রাজ্যাভিলাষীও নই আর মিথ্যাবাদীও নই। কাজেই পিতার আজ্ঞা আমি নিজের সাধ্যমতো পালন করার চেষ্টা করবো। আপনি জেনে রাখুন, পিতার কথায় আমি নিজের প্রাণও বিসর্জন দিতে পারি। আর আপনার বাক্য শিরোধার্য করেও আমি চোদ্দ বছরের জন্য বনবাসে যেতে পারি। আপনি নিশ্চয়ই আমার মধ্যে রাজ্য চালনার উপযুক্ত কোনো গুণ খুঁজে পাননি। সে কারণে ভরতকে রাজ্যভার দেওয়ার জন্য মহারাজকে প্রতিজ্ঞা করিয়েছেন। আমি আমার মায়ের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে, সীতাকে ত্যাগ করে আজই বনবাসে যাব— এ বিষয়ে আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। তবে, পুত্রের জন্য রাজ্যলোভে আপনি রাজাকে এত বড় আঘাত দিলেন? এমন কাজ করে কী অভীষ্ট ফল পেলেন আপনি?
রামকে অপ্রিয়, নিষ্ঠুর, উত্তেজক বাক্যের কশাঘাতে বারংবার আঘাত করেছেন কৈকেয়ী। সুশিক্ষিত ঘোড়াকে যেমন আঘাত করলে সে গতি বাড়িয়ে ছুটতে থাকে, রামও কৈকেয়ীর বাক্কশাঘাতে স্থির থাকতে পারলেন না। বললেন, “দেবি, আপনি কি আমাকে সন্দেহ করছেন যে আমি বনবাসে যাবো কি না? আমি অর্থলোভীও নই, রাজ্যাভিলাষীও নই আর মিথ্যাবাদীও নই। কাজেই পিতার আজ্ঞা আমি নিজের সাধ্যমতো পালন করার চেষ্টা করবো। আপনি জেনে রাখুন, পিতার কথায় আমি নিজের প্রাণও বিসর্জন দিতে পারি। আর আপনার বাক্য শিরোধার্য করেও আমি চোদ্দ বছরের জন্য বনবাসে যেতে পারি। আপনি নিশ্চয়ই আমার মধ্যে রাজ্য চালনার উপযুক্ত কোনো গুণ খুঁজে পাননি। সে কারণে ভরতকে রাজ্যভার দেওয়ার জন্য মহারাজকে প্রতিজ্ঞা করিয়েছেন। আমি আমার মায়ের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে, সীতাকে ত্যাগ করে আজই বনবাসে যাব— এ বিষয়ে আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। তবে, পুত্রের জন্য রাজ্যলোভে আপনি রাজাকে এত বড় আঘাত দিলেন? এমন কাজ করে কী অভীষ্ট ফল পেলেন আপনি?
এ বিষয়ে অন্তত খেয়াল রাখবেন ভবিষ্যতে, ভরত যাতে সঠিক ভাবে রাজ্য পালন আর পিতার সেবাযত্ন করে।” মূর্ছিত পিতার পায়ে মাথা রেখে, বিমাতার চরণবন্দনা করে ঘর ছেড়ে দ্রুত বেরিয়ে গেলেন রাম। যাবেন তিনি মায়ের প্রাসাদে। চলার পথের দুপাশে সাজানো অভিষেকের সামগ্রী সব, দুয়ারে দুয়ারে মঙ্গল ঘট, ফুলের মালা। নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে দেখেও চোখ ফিরিয়ে নিলেন তিনি। মুখোমুখি হলেন জনসমুদ্রের। প্রসন্ন মুখে দেখা করলেন তাদের সঙ্গে। প্রজারা জানেনা এই বিপর্যয়ের কথা। রামের মনের গভীর বেদনার তল পেল না তারা। রামের মনের খবর আজ একমাত্র লক্ষ্মণ জানেন। রামের পথ অনুসরণ করলেন লক্ষ্মণ, দুচোখে তাঁর ক্রোধ আর অশ্রুজল মিলে মিশে একাকার।
দেবালয়ে বসে আছেন কৌশল্যা। মন তাঁর শান্ত, সংযত। পুত্রের অভিষেকের কথা যখন তিনি শুনেছেন, তখন থেকেই দেবতার সামনে পুত্রের মঙ্গল কামনায় প্রার্থনায় বসেছেন তিনি। মনে মনে বহু শঙ্কা, ভয় তাঁর। তবুও বিশ্বাস, সব বাধা বিপত্তি কেটে যাবে, নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হবে রামের অভিষেক। পুত্রের দেখা পেয়েই আনন্দে ভরে গেল মায়ের মন। কৌশল্যা বলে উঠলেন, “তুমি তাড়াতাড়ি তোমার পিতার সঙ্গে দেখা করো। তিনি আজই যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করবেন তোমাকে।” মায়ের সমস্ত ব্যাকুলতা, সব আনন্দ যেন উছলে উঠল একটি কথাতেই।
মাকে থামিয়ে দিলেন রাম। এবার অপ্রিয় সত্য বলতেই হবে। “মা, তুমি জানো না, তোমার, লক্ষ্মণের আর সীতার যে দারুণ বিপদ! মহারাজ কৈকেয়ীর প্রার্থনা শুনে ভরতকে যৌবরাজ্যের ভার দিতে চলেছেন। আর আমার জন্য স্থির হয়েছে চোদ্দ বছরের বনবাস। আমাকে যে যেতে হবে মা।” কৌশল্যা পড়ে গেলেন মাটিতে, জ্ঞান হারালেন, যেন তাঁর হঠাৎ করে বুকে বিঁধল তীর। গোপনচারী নিষাদের তীর কোন আনন্দক্ষণে যে তীর বেঁধায় কার হৃদয়ে, এ বুঝি শুধু কবিই জানেন।
ধীরে ধীরে সংজ্ঞা ফিরে পেলেন কৌশল্যা, মুখে তাঁর শুধুই বিলাপ আর হাহাকার-“ রাম, এর চেয়ে বুঝি ভালো ছিল সন্তান না থাকা। তাহলে তোমাকে পেয়ে হারানোর এই দুঃখ আমাকে পেতে হতো না। স্বামী আমার রাজাধিরাজ, কিন্তু তাঁর কাছ থেকে ভালবাসা পাই নি কখনো। আশা করেছিলাম, পুত্র, তুমি রাজা হবে, দুঃখের দিন ঘুচবে আমার। কিন্তু আমার জীবনে দুঃখের এই পরম্পরা আর কাটবে না। এ সংসারে সকলের বড় রাজমহিষী আমি, অথচ আমার থেকে ছোট সপত্নীদের কটুবাক্য শুনে, অসম্মান পেয়ে আমার দিন কেটেছে। আমাকে কেউ সম্মান করে, ভালবেসে কথা বললে, কৈকেয়ী তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে।
দেবালয়ে বসে আছেন কৌশল্যা। মন তাঁর শান্ত, সংযত। পুত্রের অভিষেকের কথা যখন তিনি শুনেছেন, তখন থেকেই দেবতার সামনে পুত্রের মঙ্গল কামনায় প্রার্থনায় বসেছেন তিনি। মনে মনে বহু শঙ্কা, ভয় তাঁর। তবুও বিশ্বাস, সব বাধা বিপত্তি কেটে যাবে, নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হবে রামের অভিষেক। পুত্রের দেখা পেয়েই আনন্দে ভরে গেল মায়ের মন। কৌশল্যা বলে উঠলেন, “তুমি তাড়াতাড়ি তোমার পিতার সঙ্গে দেখা করো। তিনি আজই যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করবেন তোমাকে।” মায়ের সমস্ত ব্যাকুলতা, সব আনন্দ যেন উছলে উঠল একটি কথাতেই।
মাকে থামিয়ে দিলেন রাম। এবার অপ্রিয় সত্য বলতেই হবে। “মা, তুমি জানো না, তোমার, লক্ষ্মণের আর সীতার যে দারুণ বিপদ! মহারাজ কৈকেয়ীর প্রার্থনা শুনে ভরতকে যৌবরাজ্যের ভার দিতে চলেছেন। আর আমার জন্য স্থির হয়েছে চোদ্দ বছরের বনবাস। আমাকে যে যেতে হবে মা।” কৌশল্যা পড়ে গেলেন মাটিতে, জ্ঞান হারালেন, যেন তাঁর হঠাৎ করে বুকে বিঁধল তীর। গোপনচারী নিষাদের তীর কোন আনন্দক্ষণে যে তীর বেঁধায় কার হৃদয়ে, এ বুঝি শুধু কবিই জানেন।
ধীরে ধীরে সংজ্ঞা ফিরে পেলেন কৌশল্যা, মুখে তাঁর শুধুই বিলাপ আর হাহাকার-“ রাম, এর চেয়ে বুঝি ভালো ছিল সন্তান না থাকা। তাহলে তোমাকে পেয়ে হারানোর এই দুঃখ আমাকে পেতে হতো না। স্বামী আমার রাজাধিরাজ, কিন্তু তাঁর কাছ থেকে ভালবাসা পাই নি কখনো। আশা করেছিলাম, পুত্র, তুমি রাজা হবে, দুঃখের দিন ঘুচবে আমার। কিন্তু আমার জীবনে দুঃখের এই পরম্পরা আর কাটবে না। এ সংসারে সকলের বড় রাজমহিষী আমি, অথচ আমার থেকে ছোট সপত্নীদের কটুবাক্য শুনে, অসম্মান পেয়ে আমার দিন কেটেছে। আমাকে কেউ সম্মান করে, ভালবেসে কথা বললে, কৈকেয়ী তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে।
আরও পড়ুন:
শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব ২৩: ‘বেদনায় ভরে গিয়েছে পেয়ালা…’
বাংলার নতুন রাজ্যপাল হলেন প্রাক্তন আইএএস সিভি আনন্দ বোস, ঘোষণা রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে
বাইরে দূরে: অযোধ্যা— প্রাচীন ভারতীয় ধর্ম-সংস্কৃতি সমন্বয়ের প্রাণকেন্দ্র/১
প্রিয়জনকে মিষ্টিমুখ করাতে চান? বানিয়ে ফেলুন ছানার পায়েস
এ ঘটনা এতদিন চলেছে। ভেবেছিলাম এরপর অন্যরকম কিছু হবে। আমিও সসম্মানে বাঁচবো। কিন্তু এখন রাম, তুমি বনে গেলে কৈকেয়ী আমার উপর আরও অত্যাচার করবে। তার মর্মভেদী বাক্য শুনে আমার দিন যাবে। এর চেয়ে মৃত্যু ভালো। আঠারো বছর বয়স হল তোমার, তোমার মুখ চেয়ে সব দুঃখ, আঘাত বুকে নিয়ে বেঁচে আছি রাম। তোমার মঙ্গল কামনা করে কত উপবাসে, ব্রত-নিয়মে দিন কেটেছে। আর দুঃখ বইবার শক্তি যে আমার নেই পুত্র! আমার হয়তো মরণও লেখেননি বিধাতা। নিশ্চয়ই মন আমার শক্তপোক্ত লোহার তৈরি। না হলে এ আঘাত সয়ে বেঁচে থাকতাম না। আমার এত তপস্যা, এত মঙ্গল কামনা – সব যে আজ বৃথা হয়ে গেল।” কৌশল্যার মন আজ অশান্ত, উত্তাল সাগর। কিছুতেই এই আকস্মিক আঘাত মেনে নিতে পারছেন না তিনি। অন্তঃপুরের রাজনীতি ছারখার করে দিয়েছে তাঁর জীবন।
কিছুটা সামলে নিয়ে রামকে এবার অন্য বুদ্ধি দিলেন তিনি— “আচ্ছা, রাম, তুমি যদি অযোধ্যাতেই থেকে যাও, তোমার বৃদ্ধ পিতা কি করবেন? তিনি তো যা কিছু করেছেন, কামনার বশীভূত হয়ে করেছেন।”
এবার লক্ষ্মণ ক্রোধে রাগে ফেটে পড়লেন- “রাজা বয়সের ভারে জীর্ণ হলেও কামলালসায়, স্ত্রীর প্রতি আসক্তিতে বড়ই দুর্বল। কৈকেয়ীর পুরোপুরি বশে এখন তিনি। না হলে, নিরপরাধ রামকে তিনি রাজ্য থেকে বঞ্চিত করেন কি ভাবে? কোন অপরাধে নির্বাসন দণ্ড দেন তিনি? এ হল রাজার ছেলেমানুষি বুদ্ধি। এ বুদ্ধিকে শিরোধার্য করে রাজ্যত্যাগ করার কোনো অর্থই হয় না। এখনও লোকে জানেনা এ সংবাদ। তার আগেই, রাঘব, আপনি রাজ্যভার নিজে গ্রহণ করুন। আমি আপনার সঙ্গে আছি। আপনার রাজ্যলাভের উদ্যোগে ভৃত্যের মতো থাকবো। কারো এত সাহস হবে না এ রাজ্যে যে আপনার যৌবরাজ্যাভিষেকে বিঘ্ন ঘটাবে। অযোধ্যাবাসী যদি ভরতের পক্ষ নিয়ে আপনার বিরোধিতা করে, আপনি জানবেন, অযোধ্যাকে জনশূন্য করে ফেলব আমি।
কিছুটা সামলে নিয়ে রামকে এবার অন্য বুদ্ধি দিলেন তিনি— “আচ্ছা, রাম, তুমি যদি অযোধ্যাতেই থেকে যাও, তোমার বৃদ্ধ পিতা কি করবেন? তিনি তো যা কিছু করেছেন, কামনার বশীভূত হয়ে করেছেন।”
এবার লক্ষ্মণ ক্রোধে রাগে ফেটে পড়লেন- “রাজা বয়সের ভারে জীর্ণ হলেও কামলালসায়, স্ত্রীর প্রতি আসক্তিতে বড়ই দুর্বল। কৈকেয়ীর পুরোপুরি বশে এখন তিনি। না হলে, নিরপরাধ রামকে তিনি রাজ্য থেকে বঞ্চিত করেন কি ভাবে? কোন অপরাধে নির্বাসন দণ্ড দেন তিনি? এ হল রাজার ছেলেমানুষি বুদ্ধি। এ বুদ্ধিকে শিরোধার্য করে রাজ্যত্যাগ করার কোনো অর্থই হয় না। এখনও লোকে জানেনা এ সংবাদ। তার আগেই, রাঘব, আপনি রাজ্যভার নিজে গ্রহণ করুন। আমি আপনার সঙ্গে আছি। আপনার রাজ্যলাভের উদ্যোগে ভৃত্যের মতো থাকবো। কারো এত সাহস হবে না এ রাজ্যে যে আপনার যৌবরাজ্যাভিষেকে বিঘ্ন ঘটাবে। অযোধ্যাবাসী যদি ভরতের পক্ষ নিয়ে আপনার বিরোধিতা করে, আপনি জানবেন, অযোধ্যাকে জনশূন্য করে ফেলব আমি।
আরও পড়ুন:
দশভুজা: যে গান যায়নি ভোলা— প্রাক জন্মদিনে তাঁর প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধার্ঘ্য…/১
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৩৫: শেকল-বাঁধা ঠাকুরবাড়ির খাতা
ইংলিশ টিংলিশ: জানো কি ‘বাজি ফাটানো’ কিংবা ‘মোমবাতি জ্বালানো’র ইংরেজি কী?
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-২৯: জীবন-জীবিকায় পুণ্যসলিলা গঙ্গা, হারিয়ে যাওয়া নদীয়ালি মাছের অস্তিত্ব রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে আমাদেরই
আজ কিন্তু ক্ষমা করার দিন নয় রাঘব, আজ শক্তি প্রদর্শনের দিন। সমস্ত লোকজগৎ আজ আমার বীরত্ব দেখবে। রাঘব, আপনি শুধু অনুমতি দিন…” ক্ষাত্রতেজে জ্বলে উঠেছে লক্ষ্মণের অন্তরাত্মা।
লক্ষ্মণের কথায় কৌশল্যা যেন উজ্জীবিত হয়ে উঠলেন। অশ্রুভার বুকে চেপে বলিষ্ঠ কণ্ঠে জেগে উঠছে ক্ষত্রিয় রমণীর তেজস্বিতা— “লক্ষ্মণ ঠিকই বলছে রাম। সে যা বলছে, তুমি তাই করো। বিমাতার বাক্যে নিজের মাকে ছেড়ে বনবাসে যাওয়ার সময় নয় এখন। ” কৌশল্যাও চাইছেন রাম পিতার বিরোধিতা করে রাজ্যভার গ্রহণ করুক। দুঃখের সীমান্তরেখায় পৌঁছে এখন তাঁর কথাতে সেই বিদ্রোহের আঁচ স্পষ্ট।
অসহায় মা কৌশল্যা আর অনুগত ভাই লক্ষ্মণ – দুজনের উত্তাল ক্ষোভের মাঝখানে দাঁড়িয়েও শান্ত, অবিচলিত রাম। “মা, তুমি তো জানো, পিতার বাক্যকে অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই। তুমি আমাকে প্রসন্ন মনে বনে যাওয়ার অনুমতি দাও, মা।”
“লক্ষ্মণ, তুমি আমার জন্য প্রাণ দিতে পারো- সর্বস্ব দিয়ে আমাকে রক্ষা করতে পারো, এ আমি জানি। কিন্তু, তুমি তোমার উগ্রবুদ্ধি, ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থচিন্তা ত্যাগ করো। তুমি যদি আমার ইচ্ছা পূরণ করতে চাও, তবে শান্ত হও। ধর্মই ধার্মিককে রক্ষা করে- এ সত্য জেনেও পিতার আদেশ পালন করবো বলে প্রতিজ্ঞা করে এখন রাজ্যলোভে, যশোলোভে প্রতিজ্ঞা ভাঙতে পারব না। আমার পিতা সত্যবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন, আমি কখনোই তাঁকে সত্যভঙ্গের অপরাধে অপরাধী হতে দেবো না। আর আমি যতক্ষণ না বনে যাবো, কৈকেয়ীর আশঙ্কা হতেই থাকবে আমাকে নিয়ে। পিতাকেও হয়তো বিপন্ন হতে হবে এর জন্য। লক্ষ্মণ, তুমি এত ভেবো না, কারো প্রতি ক্ষোভ রেখো না মনে। এ সবই দৈবের খেলা। দৈবকে পরাস্ত করব, এমন সামর্থ্য যে নেই ভাই। লক্ষ্মণ, আমার অভিষেকের জন্য তোমার আবেগ, তোমার আকুলতাই আমার বনযাত্রার পাথেয় হয়ে উঠুক।”
রাম শান্ত ধীর পায়ে বেরিয়ে এলেন মায়ের ঘর থেকে। তাঁকে এবার বৈদেহীর মুখোমুখি হতে হবে যে। কি হবে তাঁর প্রতিক্রিয়া— এ ভাবনায় অধীর হল রামের মন।—চলবে
লক্ষ্মণের কথায় কৌশল্যা যেন উজ্জীবিত হয়ে উঠলেন। অশ্রুভার বুকে চেপে বলিষ্ঠ কণ্ঠে জেগে উঠছে ক্ষত্রিয় রমণীর তেজস্বিতা— “লক্ষ্মণ ঠিকই বলছে রাম। সে যা বলছে, তুমি তাই করো। বিমাতার বাক্যে নিজের মাকে ছেড়ে বনবাসে যাওয়ার সময় নয় এখন। ” কৌশল্যাও চাইছেন রাম পিতার বিরোধিতা করে রাজ্যভার গ্রহণ করুক। দুঃখের সীমান্তরেখায় পৌঁছে এখন তাঁর কথাতে সেই বিদ্রোহের আঁচ স্পষ্ট।
অসহায় মা কৌশল্যা আর অনুগত ভাই লক্ষ্মণ – দুজনের উত্তাল ক্ষোভের মাঝখানে দাঁড়িয়েও শান্ত, অবিচলিত রাম। “মা, তুমি তো জানো, পিতার বাক্যকে অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই। তুমি আমাকে প্রসন্ন মনে বনে যাওয়ার অনুমতি দাও, মা।”
“লক্ষ্মণ, তুমি আমার জন্য প্রাণ দিতে পারো- সর্বস্ব দিয়ে আমাকে রক্ষা করতে পারো, এ আমি জানি। কিন্তু, তুমি তোমার উগ্রবুদ্ধি, ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থচিন্তা ত্যাগ করো। তুমি যদি আমার ইচ্ছা পূরণ করতে চাও, তবে শান্ত হও। ধর্মই ধার্মিককে রক্ষা করে- এ সত্য জেনেও পিতার আদেশ পালন করবো বলে প্রতিজ্ঞা করে এখন রাজ্যলোভে, যশোলোভে প্রতিজ্ঞা ভাঙতে পারব না। আমার পিতা সত্যবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন, আমি কখনোই তাঁকে সত্যভঙ্গের অপরাধে অপরাধী হতে দেবো না। আর আমি যতক্ষণ না বনে যাবো, কৈকেয়ীর আশঙ্কা হতেই থাকবে আমাকে নিয়ে। পিতাকেও হয়তো বিপন্ন হতে হবে এর জন্য। লক্ষ্মণ, তুমি এত ভেবো না, কারো প্রতি ক্ষোভ রেখো না মনে। এ সবই দৈবের খেলা। দৈবকে পরাস্ত করব, এমন সামর্থ্য যে নেই ভাই। লক্ষ্মণ, আমার অভিষেকের জন্য তোমার আবেগ, তোমার আকুলতাই আমার বনযাত্রার পাথেয় হয়ে উঠুক।”
রাম শান্ত ধীর পায়ে বেরিয়ে এলেন মায়ের ঘর থেকে। তাঁকে এবার বৈদেহীর মুখোমুখি হতে হবে যে। কি হবে তাঁর প্রতিক্রিয়া— এ ভাবনায় অধীর হল রামের মন।—চলবে
* শাশ্বতী রামায়ণী (Saswati Ramayani – Ramayana) : ড. অমৃতা ঘোষ (Amrita Ghosh) সংস্কৃতের অধ্যাপিকা, আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল মহাবিদ্যালয়। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও সম্পাদিত গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর বেশ কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ।