![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/06/Ramakrishna.jpg)
রামকৃষ্ণদেব ।
ভক্তিমতি অন্নপূর্ণার মায়ের প্রতি শ্রীশ্রীমায়ের বাণী, তথা লৌকিক জগতে থাকা অবস্থায় জগতের প্রতি তাঁর শেষ বাণী ছিল।
ভগবতী তাঁর শরীর ত্যাগ করে নিজলোকে পাড়ি দেবেন। ভক্ত আর তাঁকে সশরীরে পাবে না। বিচলিত হৃদয়ে আলাদা হওয়ার আশঙ্কায় প্রশ্ন করছেন, “মা আমাদের কী হবে?” এ প্রশ্ন ব্যক্তি জীবনের নয়, সার্বিক। উওর, একদিনের সমাধান নয়, অনন্তকালের সমাধান চান। অনিত্য সংসার হলেও নিত্য আসা-যাওয়া আছেই। এ সত্ত্বেও মুক্তি কোথায়? অথবা বন্ধনের শীথিলীকরণের কোনও পথ আছে কি? করুণায় বিগলিত হয়ে জগৎ-সংসারের প্রতি লালিত্য দৃষ্টিতে তাঁর জীবকে অভয় প্রদান করেছেন। “ভয় কী? তুমি ঠাকুরকে দেখেছ, তোমার আবার ভয় কী?”
ভগবতী তাঁর শরীর ত্যাগ করে নিজলোকে পাড়ি দেবেন। ভক্ত আর তাঁকে সশরীরে পাবে না। বিচলিত হৃদয়ে আলাদা হওয়ার আশঙ্কায় প্রশ্ন করছেন, “মা আমাদের কী হবে?” এ প্রশ্ন ব্যক্তি জীবনের নয়, সার্বিক। উওর, একদিনের সমাধান নয়, অনন্তকালের সমাধান চান। অনিত্য সংসার হলেও নিত্য আসা-যাওয়া আছেই। এ সত্ত্বেও মুক্তি কোথায়? অথবা বন্ধনের শীথিলীকরণের কোনও পথ আছে কি? করুণায় বিগলিত হয়ে জগৎ-সংসারের প্রতি লালিত্য দৃষ্টিতে তাঁর জীবকে অভয় প্রদান করেছেন। “ভয় কী? তুমি ঠাকুরকে দেখেছ, তোমার আবার ভয় কী?”
একটু পরেই ধীরে ধীরে বলছেন, “তবে একটি কথা বলি, যদি শান্তি চাও মা, কারও দোষ দেখো না। দোষ দেখবে নিজের। জগৎকে আপনার করে নিতে শেখ। কেউ পর নয় মা, জগৎ তোমার।” (শ্রীমা সারদা দেবী পৃঃ ৩৯৪ ) শ্রীশ্রীমা জগতের পালন কর্তী। জগতে ত্রিতাপ হতে শান্তি প্রদানের জন্য এসেছিলেন। আপনভাবে তা লালন পালন করেছেন। অন্যদেরও পরামর্শ দিয়েছেন।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/02/Ramakrishna.jpg)
অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-৭২: শ্রীমা অবিরাম তৃষিত হৃদয়ে স্বর্গীয় আলো সঞ্চার করে চলেছেন
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/06/Sundarban-EP-53Cover.jpg)
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৫৩: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা—খলসি ও করঞ্জা
সুখ দুঃখ জগতের নিত্য সঙ্গী। সংসার জীবন দুঃখময়। কিন্তু সমস্ত পীড়া সহ্য করে শ্রীশ্রী সংসারের প্রতি দৃষ্টি যেমনটি রাখতেন, তেমনটি রাখলে দুঃখ-বেড়া আর বাঁধতে পারবে না। এই জগতে যিনি বেঁধেছেন তিনিই মুক্তির পথ দেখাচ্ছেন। শ্রীঠাকুর যেমন বলতেন, তিনি সাপ হয়ে কাটেন আর রোজা হয়ে ঝাড়েন। সংসার চক্র থেকে বেরোনোর রাস্তা বলে দিচ্ছেন। আপন-পরের উর্ধ্বে যে নিত্য সত্য রয়েছে, তা আবিষ্কার করতে বলছেন।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/06/Pisach-Pahar-EP70.jpg)
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৭০: পাভেল কোথায়?
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/08/shilpi-3.jpg)
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪৮: খেলার ছলে এসেছিনু যেথা ‘হারজিৎ’-র পর্ব রাখিনু সেথা
জগতে আধ্যাত্মিক জীবন যাপনের জন্য ঈশ্বরের মাধ্যমে সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। সব সম্পর্কগুলো বন্ধনের পরিবর্তে ঈশ্বর আবেষ্টনীতে উন্নত লাভ করলে, তাহলে আর বন্ধন হবে না। মানুষের শরীরকে প্রেম নয় তার পরিবর্তে ঈশ্বরের উপস্থিতিরভাবে ভালোবাসার সম্পর্ক সৃষ্টি করা। ঠিক ঠিক ভালোবাসতে ঈশ্বরীয় মহিমা আরোপ ইচ্ছা করা উচিত। জগত তখন আপন ইষ্টের প্রতিরূপ পতিত হয়। জগতের সর্বজীবের প্রতিদৃষ্টি প্রেম পূর্ণ হয়। অন্যের প্রতি আসক্ত না হয়েও প্রীতি পূর্ণ হৃদয়, সোহানুভূতিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা সম্ভব। এ সমস্ত কিছু নির্ভর করে দৃষ্টিভঙ্গি সংসারের প্রতি কেমন হবে তার উপর।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/06/Panchatantra-EP46.jpg)
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৪৬: রাজার নিয়ন্ত্রণহীন অনুচরেদের কুকর্মের দায় রাজাকেই নিতে হয়
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/06/monsoon.jpg)
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-৩৪: পুণ্য আষাঢ়ের প্রথম দিবসে
আধ্যাত্মিক জীবন মানে সমাজ সংসারের প্রতি লৌকিক দৃষ্টির পরিবর্তে ঐশ্বরিক দৃষ্টি স্থাপন করা। প্রতিটি কর্মের প্রতি ও সেই রূপ। ঠাকুর বলেছেন, সংসারে কেমন করে থাকতে হয়, তার অসংখ্য উদাহরণ দিয়েছেন। শ্রীশ্রীঠাকুর দেখছেন, “এক চৈতন্য- অভেদ। প্রথমে দেখালে অনেক মানুষ জীবজন্তু রয়েছে। তার ভিতর বাবুর আছেন, ইংরেজ, মুসলমান, আমি নিজে, মুদ্দোফরাস, কুকুর। আবার একজন দেড়ে মুসলমান একহাতে সানকি। তাতে ভাত রয়েছে, সেই সানকির ভাত সব্বাইয়ের মুখে একটু দিয়ে গেল, আমিও একটু আস্বাদ করলাম।… সব এক অভেদ।” (কথামৃত পৃঃ ২৫৯)
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/06/Lakshminath-Hemendra-Pragya.jpg)
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯২: মহর্ষিদেব নাতজামাইকে দিয়েছিলেন সোনার কলম
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/06/Mahakavya_EP67.jpg)
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৬৭: পাঞ্চালদেশে যাত্রাপথে পাণ্ডবদের বিচিত্র অভিজ্ঞতায় কিসের ইঙ্গিত?
চৈতন্যের না আছে জাত বিচার, না আছে উচ্চ নিচ। পশু-কীট-পতঙ্গ সবাই সমানভাবে তাতে সমাহিত হয়ে রয়েছে। আধ্যাত্মিক জীবন যাপনে মানে ঈশ্বর ও জগৎ সম্বন্ধে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। এমনকি নিজের শরীরের প্রতি যেমন অত্যাধিক যত্নের প্রয়োজন নেই, তেমন আবার অযত্ন করাও উচিত নয়। শারীরিকভাবে শরীরের প্রতি যত মমত্ব বোধ কমবে তত অন্যদের প্রতি আমিত্ব বোধ বাড়বে। ‘আমি’র ব্যাপ্তি বড় বড় করতে করতে সর্ব প্রাণীকে ছেয়ে ফেলবে। জগতের প্রতি আপন বোধ আসবে। জ্ঞানীর জ্ঞান এবং ভক্তের ভক্তির পরিসমাপ্তি এখানে। ঠাকুর যেমন বলতেন, “জ্ঞানের পর বিজ্ঞান।” এ বিজ্ঞানীর অবস্থায় জ্ঞানী বা ভক্ত সকলে এক অভেদ হয়ে চির সত্য শান্তি লাভ করবে।—চলবে।
* অনন্ত এক পথ পরিক্রমা (Ananta Ek Patha Parikrama) : স্বামী তত্ত্বাতীতানন্দ (Swami Tattwatitananda), সম্পাদক, রামকৃষ্ণ মিশন, ফিজি (Fiji)।