শনিবার ২৩ নভেম্বর, ২০২৪


প্রকৃত কৃষক আর যাই হোন কৃষিকাজ ত্যাগ করেন না। তেমনই প্রকৃত ভক্ত ঈশ্বরের নাম গুণ কীর্তন করা কখনও ছাড়েন না। অনেক বাধা আসে, দুঃখ আসে, তবু সে তার অনন্য ভক্তি ইষ্টের প্রতি কখনও ত্যাগ করে না। শ্রীরামকৃষ্ণ বলছেন, “ঘরের বউ সবার সেবা যত্ন করে, কিন্তু স্বামীর প্রতি অনন্য ভক্তি সে ত্যাগ করে না। শ্রী হনুমান মহাবীরের ভক্তি যেমন অনন্য রামচন্দ্রের প্রতি। সমুদ্রে এক রকম ঝিনুক আছে। তারা সর্বদা হাঁ করে জলের উপর ভাসে। কিন্তু স্বাতী নক্ষত্রের এক ফোঁটা জল তাদের মুখে পড়লে তারা মুখ বন্ধ করে একেবারে জলের নিচে চলে যায়, আর উপরে আসে না। তেমন তত্ত্ব পিপাসু বিশ্বাসী সাধক সেই রকম গুরু মন্ত্ররূপ এক ফোটা জল পেয়ে সাধনার অগাধ জলে একেবারে ডুবে যায়। আর অন্যদিকে চেয়ে দেখে না।”
একজন শ্রীমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আচ্ছা মা, মন্ত্র নেবার কী দরকার? মন্ত্র জপ না করে কেউ যদি মা কালী বলে ডাকে তাতে হয় না?” শ্রীমা বললেন, “মন্ত্রের দ্বারা দেহশুদ্ধি হয়, ভগবানের মন্ত্র জপ করে মানুষ পবিত্র হয়।”

এই বলে তিনি একটি গল্প বলেছেন, “নারদ বৈকুণ্ঠ গিয়ে ঠাকুরের সঙ্গে অনেক কথা বললেন। আর তিনি যখন চলে গেলেন, ঠাকুর লক্ষ্মীকে বললেন, ওখানে গোবর দাও। লক্ষ্মী জিজ্ঞাসা করলেন, কেন ঠাকুর নারদ তো পরম ভক্ত, তাহলে কেন এরূপ বলছ? ঠাকুর বললেন, নারদের এখনও মন্ত্র নেওয়া হয়নি। মন্ত্র না নিলে দেহ শুদ্ধ হয় না।” স্বামীজি বলছেন, “এ সবই উপাসনার সার শুদ্ধচিত্ত হওয়া আর অপরের কল্যাণ সাধন করা।”
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫০: লুকোনো বই পড়ার জন্য রবীন্দ্রনাথ বাক্সের চাবি চুরি করেছিলেন

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব-৩৩: শোকস্তব্ধ অযোধ্যানগরী কি আপন করে নিল ভরতকে?

কর্ম ও সাধনার দ্বারা একবারে চিত্তশুদ্ধি হলে তা আর কোনওদিন মলিন হয় না। শ্রীঠাকুর বলছেন, “চকমকি পাথর শত বছর জলের ভিতর পড়ে থাকলেও তার আগুন নষ্ট হয় না। তুলে লোহার ঘা মারা মাত্র আগুন বেরোয়। সে রকমই বিশ্বাসী ভক্ত হাজার হাজার অপবিত্র সংসারীর ভিতর পড়ে থাকলেও তার বিশ্বাস ভক্তি কিছুতেই নষ্ট হয় না। ভগবদ কথা হলেই সে উন্মত্ত হয়। স্রোতের জল বেগে যেতে যেতে এক একবার এক এক জায়গায় ঘুরতে থাকে, কিন্তু তখনই আবার সোজা হয়ে বেগে চলে যায়।
আরও পড়ুন:

মহাভারতের আখ্যানমালা, পর্ব-৫২: উশীনরের ধর্মভাব পরীক্ষা করলেন বাজরূপী ইন্দ্র

জ্যোতির্লিঙ্গ যাত্রাপথে, পর্ব-৩: বাবা বিশ্বনাথের দরবারে

শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন, “পবিত্র আত্মা ধার্মিকদের মনেও কখনও কখনও অবিশ্বাস নিরাশা দুঃখ প্রভৃতির আভা পড়ে। কিন্তু অধিকক্ষণ থাকতে পারে না, শিগগিরই চলে যায়।” প্রকৃত ভক্তের দুঃখ দ্বন্দ্ব-বিপত্তি যেন অধিক আসে। ভগবান পরীক্ষা নেন ভক্ত কীভাবে তা গ্রহণ করে। অনেক ক্ষেত্রে সুখ ও দুঃখকে প্রকৃত ভক্ত সমানভাবে ভগবানের দান হিসেবে গ্রহণ করেন। শ্রীঠাকুরের কথায়, “পাথর হাজার বছর জলের মধ্যে পড়ে থাকলেও তার ভেতর জল ঢুকে না। কিন্তু মাটিতে জল লাগলে তখনই গলে যায়। বিশ্বাসী হৃদয় হাজার হাজার পরীক্ষার মধ্যে পড়লেও হতাশ হয় না কিন্তু অবিশ্বাসী মানুষ সামান্য কারণেই চলে যায়।”
আরও পড়ুন:

ষাট পেরিয়ে, পর্ব-২৩: শীত হোক বয়স্কদের জন্যও উপভোগ্য/২

ডায়েট ফটাফট: সব খাবারের সেরা সুপারফুড কিনোয়া খান, ওজন কমান

শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন, “পবিত্র আত্মা ধার্মিকদের মনেও কখনও কখনও অবিশ্বাস নিরাশা দুঃখ প্রভৃতির আভা পড়ে। কিন্তু অধিকক্ষণ থাকতে পারে না, শিগগিরই চলে যায়।” প্রকৃত ভক্তের দুঃখ দ্বন্দ্ব-বিপত্তি যেন অধিক আসে। ভগবান পরীক্ষা নেন ভক্ত কীভাবে তা গ্রহণ করে। অনেক ক্ষেত্রে সুখ ও দুঃখকে প্রকৃত ভক্ত সমানভাবে ভগবানের দান হিসেবে গ্রহণ করেন। শ্রীঠাকুরের কথায়, “পাথর হাজার বছর জলের মধ্যে পড়ে থাকলেও তার ভেতর জল ঢুকে না। কিন্তু মাটিতে জল লাগলে তখনই গলে যায়। বিশ্বাসী হৃদয় হাজার হাজার পরীক্ষার মধ্যে পড়লেও হতাশ হয় না কিন্তু অবিশ্বাসী মানুষ সামান্য কারণেই চলে যায়।”
* অনন্ত এক পথ পরিক্রমা (Ananta Ek Patha Parikrama) : স্বামী তত্ত্বাতীতানন্দ (Swami Tattwatitananda), সহ-সচিব, রামকৃষ্ণ মিশন, ন্যন্দি (Nadi), সাউথ প্যাসিফিক (South Pacific), ফিজি (Fiji)।

Skip to content