আজকাল অনেকেই প্রশ্ন করেন আমাদের জীবনে গুরুর প্রয়োজনীয়তা আছে কি? আবার অনেকে গুরু গ্রহণ না করলেই বা কি ক্ষতি এরকম প্রশ্নও করে থাকেন। অথবা গুরু গ্রহণ না করে কোন একটি মন্ত্র নিজের মতো জপ করলে হয় না? আমাদের সর্বাগ্রে জানা উচিত গুরুর অর্থ কী? যিনি মনের অজ্ঞান অন্ধকার দূর করে জ্ঞানচক্ষু খুলে দেন তিনিই গুরু।
শ্রীরামকৃষ্ণ বলেন, “গুরুকে ঈশ্বকে ভাবলে সহজে ইষ্ট দর্শন হয়। শিষ্য যখন কাতর হয়ে জিজ্ঞাসা করে আমার ধ্যেয়বস্তু কোথায়? গুরু তখন বলেন ওই ওই। শিষ্যকে ইষ্ট মূর্তি দেখিয়ে দিয়ে, গুরু ক্রমশ মিলিয়ে যান ইষ্টে, তখন শিষ্য তা দেখে পরমানন্দ লাভ করেন।” প্রত্যেক ব্যক্তির গুরুকরণ হওয়া উচিত। গুরুকরণ না হলে মানুষের দেহ মন শুদ্ধ হয় না। কাজে ঈশ্বর লাভ করার সম্ভাবনা থাকে না। কুস্থানে যদি রত্ন পড়ে থাকে যত্ন করে সে রত্ন তুলে নেবেন গুরু।
শ্রীরামকৃষ্ণ বলেন, “গুরুকে ঈশ্বকে ভাবলে সহজে ইষ্ট দর্শন হয়। শিষ্য যখন কাতর হয়ে জিজ্ঞাসা করে আমার ধ্যেয়বস্তু কোথায়? গুরু তখন বলেন ওই ওই। শিষ্যকে ইষ্ট মূর্তি দেখিয়ে দিয়ে, গুরু ক্রমশ মিলিয়ে যান ইষ্টে, তখন শিষ্য তা দেখে পরমানন্দ লাভ করেন।” প্রত্যেক ব্যক্তির গুরুকরণ হওয়া উচিত। গুরুকরণ না হলে মানুষের দেহ মন শুদ্ধ হয় না। কাজে ঈশ্বর লাভ করার সম্ভাবনা থাকে না। কুস্থানে যদি রত্ন পড়ে থাকে যত্ন করে সে রত্ন তুলে নেবেন গুরু।
বৈষ্ণবরা বলেন, গুরু কী করেন শিষ্যের তা দেখবার দরকার নাই। তিনি যা বলেন, তাই প্রাণপণে যত্নে পালন করতে হয়। ঝিনুক যেমন স্বাতি নক্ষত্রের জল নিয়ে মুক্তো করার জন্য সমুদ্রের জলের নিচে চলে যায়। তেমন গুরু উপদেশ দিয়ে তাইতে ডুবে যাও। শ্রীরামকৃষ্ণ এক ভক্তকে বলছেন, “গুরু যা বলে দেবেন বিনা যুক্তি তর্কে তা ধ্রুব সত্য বলে ধারণা করবে।
গুরুর এ বিষয়টি শিষ্যের সর্বাগ্রে জানা উচিত। গুরুকে সাক্ষাৎ ঈশ্বর জ্ঞান করা, তার বাক্যে বিশ্বাস করা এবং তার দর্শনে শান্তিলাভ করাই শিষ্যের কর্তব্য।” কাহাকে গুরু করবার পূর্বে শিষ্যের যদি কোনও বিষয়ে সন্দেহ থাকে তবে তা ভঞ্জন করে নিয়ে তার নিকট দীক্ষাগ্রহণ করা কর্তব্য। ভবিষ্যতে গুরুতে অবিশ্বাস করলে কিম্বা গুরু ত্যাগ করে অন্য গুরুগ্রহণ করলে মহাপাপ হয়।
গুরুর এ বিষয়টি শিষ্যের সর্বাগ্রে জানা উচিত। গুরুকে সাক্ষাৎ ঈশ্বর জ্ঞান করা, তার বাক্যে বিশ্বাস করা এবং তার দর্শনে শান্তিলাভ করাই শিষ্যের কর্তব্য।” কাহাকে গুরু করবার পূর্বে শিষ্যের যদি কোনও বিষয়ে সন্দেহ থাকে তবে তা ভঞ্জন করে নিয়ে তার নিকট দীক্ষাগ্রহণ করা কর্তব্য। ভবিষ্যতে গুরুতে অবিশ্বাস করলে কিম্বা গুরু ত্যাগ করে অন্য গুরুগ্রহণ করলে মহাপাপ হয়।
আরও পড়ুন:
অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-২৬: মানুষ যতই নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রাণী মনে করুক না কেন— সে আর পাঁচটা জীবের মতোই
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১৮: মনে পড়ে পঞ্চমের কণ্ঠে শোলে ছবির সেই বিখ্যাত ‘মেহবুবা মেহবুবা…’ গানটি?
ঈশ্বরের সঙ্গে গুরু মেলবন্ধন ঘটিয়ে দেন। ঈশ্বর তবুও শিষ্যের কর্ম ও ফলের হিসাব করেন। বাসনাশূন্য হয়ে যে তাঁকে চায়, তাকে তিনি গ্রহণ করেন। কিন্তু গুরু, শিষ্যের এত বিচার করেন না। তিনি সবাইকে গ্রহণ করেন। তিনি ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে দেন। তিনি শিষ্যের পাপ তাপ গ্রহণ করে তাকে নতুন জীবন দান করেন। শিষ্য নির্মল পবিত্র হন। ঈশ্বর লাভ করার উপযুক্ত করে দেন। গুরু মহান, যিনি সমস্ত কিছু উজাড় করে শিষ্যের মঙ্গল করেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন, “সংসার ত্যাগ না করলে আচার্য হওয়া যায় না, লোকেও মানে না। লোকে বলে ও সংসারী লোক নিজে কামিনী কাঞ্চন ভোগ করে আমাদের শেখায় যে সংসার অনিত্য স্বপ্নবৎ। সর্বত্যাগী না হলে তার কথা সকলে লয় না। মানুষ গুরু হতে পারে না, ঈশ্বরের ইচ্ছাতেই সব হচ্ছে। মহাপাতক, অনেক দিনের পাতক, অনেক দিনের অজ্ঞান, তার কৃপা হলে এক মুহূর্তে চলে যায়।”
আরও পড়ুন:
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৩: সুন্দরবনে মানুষের আদি বসতি
অজানার সন্ধানে: ‘বঙ্গীয় বিশ্বকোষ’ প্রণেতা হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন রবীন্দ্রনাথের প্রিয়পাত্র
পরমংসদেব এও বলেন, ”মানুষ কী করবে? মানুষ অনেক কথা বলে দিতে পারে কিন্তু শেষে সব ঈশ্বরের হাত। উকিল বলে আমি যা বলবার বলেছি এখন হাকিমের হাত। ঈশ্বরের আদেশ না পেলে আচার্য হওয়া যায় না। যে বলে আমি গুরু, তার মতো হীনবুদ্ধি লোক আর নেই। ঈশ্বর জগৎগুরু, এই জ্ঞান প্রত্যেক গুরুর অন্তরে সর্বদা থাকা উচিত। যেমন চাঁদ মামা সকলের মামা সেই রূপ এক ভগবানই সকলকার গুরু। গুরুকে বিশ্বাস করতে পারলে আর বেশি খাটতে হয় না। যার বিশ্বাস নাই তার ঘুরে মরাই সার।”
আরও পড়ুন:
হাত বাড়ালেই বনৌষধি: বাড়িতে চন্দন আছে? কমতে পারে অনেক অসুখ-বিসুখ
চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-৯: মন্দির হয়ে বৌদ্ধবিহার
শ্রীশ্রীমা বলতেন, ”ঠাকুরই জগত গুরু। শ্রীমা নিজে ভক্তদের জন্য কত কত জপ করতেন। সকলের পাপ তাপ গ্রহণ করতেন।” স্বামী শিবানন্দের কথায়, ”যে পাপ তাপ আমরা গ্রহণ করতে পারি না সব মায়ের কাছে চালান দিই। মা নির্দিধায় গ্রহণ করেন! কী মহাশক্তি! গুরু শিষ্যের সাধন পথের সমস্ত বাধা বুঝে তাকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন। সর্বশেষে গুরু সমস্ত কর্ম বন্ধন কেটে মুক্ত করেন ও ইষ্টের সঙ্গে মিলিয়ে দেন। গুরু ছাড়া কে নেবে শিষ্যের ভার!”
* অনন্ত এক পথ পরিক্রমা (Ananta Ek Patha Parikrama) : স্বামী তত্ত্বাতীতানন্দ (Swami Tattwatitananda), সম্পাদক, রামকৃষ্ণ মিশন, ফিজি (Fiji)।