বৃহস্পতিবার ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫


“অনাসক্ত হয়ে কর্ম করার নাম কর্মযোগ। যাঁর ঈশ্বর দর্শন হয়েছে কেবল সেই অনাসক্ত হয়ে কর্ম করতে পারেন। তা না হলে আসক্তি এসে পড়ে।” বলেছেন শ্রীরামকৃষ্ণ। বিষয় থেকেই হোক আর বাসনা থেকেই হোক, সাধারণত যে কর্ম শুরু হয় এবং তা থেকেই সুখ বা দুঃখ হয়ে থাকে। স্বামীজি বলছেন, “শুভ কর্মে শুভ মন্দে মন্দ ফল এ নিয়ম রোধে নেই কারও বল”। শাস্ত্র একই অবিদ্যা কাম ও কর্ম আখ্যা দিয়েছে। যতক্ষণ কর্মে আসক্তি, ততক্ষণ ফল আসে আর তা নতুন কর্মে জড়িয়ে দেয়।
শ্রীরামকৃষ্ণ বলছেন, “কর্মযোগ বড় কঠিন। প্রথমত সময় কই? শাস্ত্রে যে সব কর্ম করতে বলা হয়েছে তা করবার সময় নাই। কেন না কলিতে আয়ু কম, তারপর অনাসক্ত হয়ে, ফল কামনা না করে কর্ম করা ভারী কঠিন। ঈশ্বরে লাভ না করলে ঠিক অনাসক্ত হওয়া যায় না। তুমি হয়তো জানো না কিন্তু কোথা থেকে আসক্তি এসে পড়ে।” শ্রীশ্রীমা জনৈক ভক্তকে বলছেন, “হ্যাঁ তাইতো গুরুজনের কথা। ওর কাজ করতেই ইচ্ছে নেই। কাজ না করলে কি মন ভালো থাকে? চব্বিশ ঘণ্টা কি ধ্যান চিন্তা করা যায়। তাই কাজ নিয়ে থাকতে হয়। ওতে মন ভালো থাকে।”
আরও পড়ুন:

অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-১১: সমস্ত বাধা সরে গেলে প্রকৃতিও তখন রাস্তা ছেড়ে দেয়

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১১: বন থেকে বনান্তরে

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২৮: পূর্ণ অপূর্ণ-র মাঝে পথ দেখায় ‘দেবত্র’

ঈশ্বরের কাজ এই ভাব জুড়ে দিলে আর বহির্মুখী হতে পারে না । শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন, কীভাবে সমস্ত কর্মকে কর্মযোগে পরিণত করা যায়। ভাবের পরিবর্তনে সাধারণ কর্ম থেকে কর্মযোগে পরিণত হয়। যোগ অর্থ ঈশ্বরের সাথে যা সংযোগ স্থাপন করে দেয়। স্বার্থহীন কর্ম মনকে শুদ্ধ করে। মন থেকে কাম মোহ আদি সংকীর্ণতাকে দূর করে বিরাট ভাবনায় ভাবিত করে। শুদ্ধ মনের দর্পণে বিরাট ঈশ্বরের ছবি প্রতিভাত হয়। অহংকার যখন মনকে ছেয়ে ফেলে তখন সত্য মিথ্যা বোধ দেখা যায় না সত্যকে দেখা অসম্ভব হয়ে যায়।
আরও পড়ুন:

হেলদি ডায়েট: বেশি কলা খাওয়ার অভ্যাস কি স্বাস্থ্যকর? মারাত্মক কোনও রোগের কারণ হয়ে উঠবে না তো?

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫৫: নৌকো উল্টে সত্যেন্দ্রনাথের আইসিএস পড়তে যাওয়া বানচাল হতে বসেছিল

মহাকাব্যের কথকতা: পর্ব-২: রামকথার পটভূমি এবং মহাভারতে কথকের কথাসূত্র

এক ভক্ত শ্রী শ্রীমা কে জিজ্ঞাসা করছেন, “মা কৃপাতেও বিচার আছে?” উত্তরে শ্রীমা বলছেন, “তা আছে বৈকি, যার যেমন কর্ম করা থাকে। কর্ম শেষ হলেই ভগবানের দর্শন হয়। সেটিই শেষ জন্ম।” শ্রীশ্রীমা নিরন্তর কাজের মধ্যে নিজেকে ব্যাস্ত রাখতেন, সকাল থেকে উঠে জপ করা বা গৃহস্থালির কাজ করা বা ভক্তজনের আকাঙ্খা পূর্ণ করা। এত কাজ এর মধ্যে থাকলেও তিনি বলতেন আনন্দের পূর্ণ ঘট তার হৃদয়ের প্রতিষ্ঠিত আছে। তিনি নিরানন্দ কী জানতেন না।

সংসারের অভাব বা সাংসারিকতা তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। নিজের ভগবতী সত্ত্বা সর্বদা অনন্য করে রেখেছিল। স্বামীজি বলছেন, “আমি কয়েকজন যুবককে চাই। বেদ বলিতেছে, ‘আশিষ্ঠো দ্রঢ়িষ্ঠো বলিষ্ঠো মেধাবী’ আশাপূর্ণ বলিষ্ঠ দৃঢ়চেতা মেধাবী যুবকগণই ঈশ্বর লাভ করিবে। তোমাদের ভবিষ্যৎ জীবনের পথ নির্ধারণ করবার এই সময়। যতদিন যৌবনের তেজ রহিয়াছে, যতদিন না তোমরা কর্ম শ্রান্ত হইতেছ, যতদিন তোমাদের ভেতর যৌবনের নবীনতা ও সতেজ ভাব রয়েছে, কাজে লাগ। এই তো সময়, কারণ নব প্রস্ফুটিত অস্পৃষ্ট অনাঘ্রাত পুষ্পই কেবল প্রভুর পাদপদ্মে অর্পণের যোগ্য। তিনি তাহা গ্রহণ করেন। তবে ওঠ, ওকালতীর চেষ্টা বা বিবাদ বিসংবাদ প্রভৃতির অপেক্ষা বড় বড় কাজ রহিয়াছে; আয়ু অল্প, সুতরাং তোমাদের জাতির কল্যাণের জন্য, সমগ্র মানবজাতির কল্যাণের জন্য, আত্ম বলিদানই তোমার জীবনের শ্রেষ্ঠ কর্ম। আবশ্যক চিত্তশুদ্ধি। কিরূপে এই চিত্তশুদ্ধি হইবে! প্রথমে পূজা বিরাটের পূজা। তোমার সম্মুখে তোমার চারিদিকে যাহারা রইয়াছেন তাহাদের পূজা। ইহাদের পূজা করিতে হইবে —সেবা নহে; ‘সেবা’ বলিলে আমার অভিপ্রেত ভাবটি ঠিক বুঝাইবে না। ‘পূজা’ শব্দেই আমার ভাবটি ঠিক প্রকাশ করা যায়।”
আরও পড়ুন:

দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং, ২য় খণ্ড, পর্ব-৯: উড়িয়ে…বম্বের তাজ হোটেলে, তাজমহল টাওয়ার নয়, তাজমহল প্যালেসে

স্বাদে-গন্ধে: মুরগির ঝোল কিংবা ঝাল নয়, এবার বানিয়ে ফেলুন দই মুরগি

ছোটদের যত্নে: শিশুকে নিয়ে বেড়াতে যাচ্ছেন? কোন কোন বিষয়ে সতর্কতা প্রয়োজন? কী কী ওষুধ সঙ্গে রাখবেন? রইল পরামর্শ

নিঃস্বার্থভাবে আত্মসমর্পণের ভাব থেকে হয় পুজো। আর তাই, প্রকৃত অর্থে পুজোর মধ্যমে ভগবান লাভের মৌলিক শর্তেই হল চিত্তশুদ্ধি। তা হয় দ্বেষ-হিংসা পরিত্যাগ ও অহংকার শূন্যতার মাধ্যমে। নিঃস্বার্থ কর্মে উৎসর্গের মধ্য দিয়ে সকলের মধ্যে আপনাকে খোঁজা-ই ধর্মজীবন।
* অনন্ত এক পথ পরিক্রমা (Ananta Ek Patha Parikrama) : স্বামী তত্ত্বাতীতানন্দ (Swami Tattwatitananda), সচিব, রামকৃষ্ণ মিশন, নন্দী (Nadi), সাউথ প্যাসিফিক (South Pacific), ফিজি (Fiji)।

Skip to content