গানের আড্ডায়। ছবি: সংগৃহীত।
সুনীল দত্ত পরিচালিত ‘রকি’ ছবিটির কথা মনে আছে? ব্লকবাস্টার এই ছবিতে সুনীল-পুত্র সঞ্জয় দত্ত প্রথমবারের জন্য রূপোলি পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন। খুব সঙ্গত কারণেই এই ছবির মাধ্যমে সুনীল মনে মনে অনেক স্বপ্ন দেখেছিলেন পুত্রের সাফল্যের ব্যাপারে। যথারীতি ছবিটিও বক্সঅফিসে চূড়ান্ত সাফল্য পায়। পঞ্চম অনেকাংশেই এই সাফল্যের কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন। শোনা যায়, চিত্রনাট্য পড়ার পর আনন্দ বক্সীর লেখা গানগুলি নিয়ে যথেষ্ট ভাবনা ব্যয় করেন পঞ্চম। কারণ এই ক্ষেত্রে নায়ক নতুন মুখ। তাও যে সে নয়, স্বয়ং সুনীল দত্তর পুত্র। তাই কোনও ঝুঁকি নেওয়ার অবকাশই নেই। তাঁর তরফ থেকে যতটুকু করা সম্ভব ততটুকু তো তাঁকে করতেই হবে। তাই সুর রচনা করার পর যন্ত্রীদের নিয়ে বসে পড়েন গানগুলিকে চূড়ান্ত রূপ দিতে।
তারপর একে একে প্রতিটি গানের রিহার্সাল শেষ হলে চূড়ান্ত রেকর্ডিংও সম্পন্ন হয়। জন্ম নেয় এক একটি সাড়া ফেলে দেওয়া গান। ‘আ দেখে জারা কিসমে কিতনা হ্যায় দম’ এর মতো একটি ধামাকেদার গানে কিশোর এবং আশাকে সঙ্গে নিয়ে নিজেও নেমে পড়েন মাঠে। সঞ্জয় দত্ত, টিনা মুনিম এবং শক্তি কাপুরের লিপে এই গানটির জনপ্রিয়তাকে গগনচুম্বী করে তোলে।
তারপর একে একে প্রতিটি গানের রিহার্সাল শেষ হলে চূড়ান্ত রেকর্ডিংও সম্পন্ন হয়। জন্ম নেয় এক একটি সাড়া ফেলে দেওয়া গান। ‘আ দেখে জারা কিসমে কিতনা হ্যায় দম’ এর মতো একটি ধামাকেদার গানে কিশোর এবং আশাকে সঙ্গে নিয়ে নিজেও নেমে পড়েন মাঠে। সঞ্জয় দত্ত, টিনা মুনিম এবং শক্তি কাপুরের লিপে এই গানটির জনপ্রিয়তাকে গগনচুম্বী করে তোলে।
‘দোস্ত কো সালাম দুশমন কো সালাম’ গানটির ক্ষেত্রে তরুণ নায়ক সঞ্জয়ের লিপে কিশোরকেই গাওয়ান পঞ্চম। এই সোলো গানটির ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও মনে মনে হয়তো নিজের কাছে নিজেই বাজি ধরেছিলেন তিনি। কিশোর এতদিন রাজেশ খান্না, অমিতাভ বচ্চন, ধর্মেন্দ্র, সঞ্জীব কুমার, দেবানন্দ, শশী কাপুর, ঋষি কাপুর, রণধীর কাপুরদের মতো কিংবদন্তি নায়কদের লিপে গেয়ে এসেছেন। এ বার তাঁকে নবাগত সঞ্জয়ের লিপে কতটা মানানসই মনে হবে, শ্রোতা এবং দর্শকরা কেমন ভাবেই বা এই নায়ক-গায়ক জুটিকে গ্রহণ করবেন এতো কিছু ভাবনাকে আরব সাগরের জলে ভাসিয়ে দিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেন পঞ্চম।
সঞ্জয়ের লিপে তাঁর কিশোর দা-ই গাইবেন। ব্যাস। আর সেই মতো ড্রাম-সহ এমন কিছু বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করেন পঞ্চম যাতে সঞ্জয় দত্তর কণ্ঠ হিসেবে গানটিতে কিশোরকে কোথাও বিন্দুমাত্র বেমানান মনে হয় না। কিশোর কুমারের নায়ক উপযোগী ভয়েস মডিউলেশন করার দুর্লভ ক্ষমতাকেই বা উপেক্ষা করি কী ভাবে? সব মিলিয়ে সবার তরফ থেকে ১০০ শতাংশ প্রচেষ্টার ফল এই গানটি।
একই কারণে এই ছবির আরও একটি গান ‘আও মেরে ইয়ারও আও’ সুপারহিট হয়েছে। গানটি শুনলে মনে হবে, সঞ্জয় দত্তর আগে বহুবার কিশোরকে লিপ দিয়েছেন। এই ক্ষেত্রেও সেই আরডি বর্মণের ইন্দ্রজাল।
সঞ্জয়ের লিপে তাঁর কিশোর দা-ই গাইবেন। ব্যাস। আর সেই মতো ড্রাম-সহ এমন কিছু বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করেন পঞ্চম যাতে সঞ্জয় দত্তর কণ্ঠ হিসেবে গানটিতে কিশোরকে কোথাও বিন্দুমাত্র বেমানান মনে হয় না। কিশোর কুমারের নায়ক উপযোগী ভয়েস মডিউলেশন করার দুর্লভ ক্ষমতাকেই বা উপেক্ষা করি কী ভাবে? সব মিলিয়ে সবার তরফ থেকে ১০০ শতাংশ প্রচেষ্টার ফল এই গানটি।
একই কারণে এই ছবির আরও একটি গান ‘আও মেরে ইয়ারও আও’ সুপারহিট হয়েছে। গানটি শুনলে মনে হবে, সঞ্জয় দত্তর আগে বহুবার কিশোরকে লিপ দিয়েছেন। এই ক্ষেত্রেও সেই আরডি বর্মণের ইন্দ্রজাল।
আরও পড়ুন:
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-২৯: তুনে ও রঙ্গিলে ক্যায়সা জাদু কিয়া… লতার সেই সুরেলা কণ্ঠ ও পঞ্চমের জাদু
অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-৮: আমি শুনি গো শুনি তোমারে…
‘গীত শুনোগে হুজুর’ গানটি শুনেছেন? কেন বলছি? কারণ গানটি কিন্তু কোনও কারণে জনপ্রিয়তা পায়নি। অন্তরালেই থেকে গিয়েছে। কিন্তু আশার গাওয়া এই গানটির মধ্যে লুকিয়ে থাকা অভিমান মাখানো একটি কষ্টকে যে ভাবে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন সেটি শুনলে মুগ্ধ হতে বাধ্য। এই সেমি ক্লাসিক্যাল গানটি আশার কণ্ঠের মাদকতায় ভরা গানের মধ্যে একটি।
আসলে আমরা যদি কিশোর আশা পঞ্চমের যৌথ কর্মকাণ্ডগুলি একটু বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখবো সিংহভাগ ক্ষেত্রেই তাঁরা সন্দেহাতীত ভাবে সফল হয়েছেন। এই ত্রয়ী প্রতিবার তাঁদের ঈশ্বরদত্ত প্রতিভাকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ করে গিয়েছেন নির্ভুলভাবে।
পঞ্চম এর সঙ্গে আশার তো বটেই, কিশোরেরও বোঝাপড়া ছিল এমন একটি মাত্রায় যেখানে ছিল না কোনও প্রতিযোগিতার অবকাশ। তিনজনই তিনজনের কাছ থেকে শিখতে রাজি ছিলেন। শোনা যায়, পঞ্চম যখন আশা এবং কিশোরের সঙ্গে বসে তাঁর সদ্যরচিত কোনও সুর শোনাচ্ছেন, তখন বাকি দু’জনের কাছ থেকে কোনও পরামর্শ পেলে তিনি স্বানন্দে তা গ্রহণ করতেন এবং সেই মতো সুরের পরিবর্তন ঘটিয়ে নতুন করে শোনাতেন। তার পরে শুরু হতো রিহার্সাল। এমনকি বহু গানের ক্ষেত্রে কিশোর যে ভাবে গাইছিলেন সেই ধরনটি একটু পরিবর্তন করে তাঁকে গাইতে বলেন পঞ্চম। সেই প্রস্তাব এক কথায় গ্রহণ করেন কিশোরও। আশা এখন পঞ্চমের ঘরণী। তাই এই ক্ষেত্রেও দুজনের মধ্যে তালমিল ছিল চোখে পড়ার মতো।
আসলে আমরা যদি কিশোর আশা পঞ্চমের যৌথ কর্মকাণ্ডগুলি একটু বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখবো সিংহভাগ ক্ষেত্রেই তাঁরা সন্দেহাতীত ভাবে সফল হয়েছেন। এই ত্রয়ী প্রতিবার তাঁদের ঈশ্বরদত্ত প্রতিভাকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ করে গিয়েছেন নির্ভুলভাবে।
পঞ্চম এর সঙ্গে আশার তো বটেই, কিশোরেরও বোঝাপড়া ছিল এমন একটি মাত্রায় যেখানে ছিল না কোনও প্রতিযোগিতার অবকাশ। তিনজনই তিনজনের কাছ থেকে শিখতে রাজি ছিলেন। শোনা যায়, পঞ্চম যখন আশা এবং কিশোরের সঙ্গে বসে তাঁর সদ্যরচিত কোনও সুর শোনাচ্ছেন, তখন বাকি দু’জনের কাছ থেকে কোনও পরামর্শ পেলে তিনি স্বানন্দে তা গ্রহণ করতেন এবং সেই মতো সুরের পরিবর্তন ঘটিয়ে নতুন করে শোনাতেন। তার পরে শুরু হতো রিহার্সাল। এমনকি বহু গানের ক্ষেত্রে কিশোর যে ভাবে গাইছিলেন সেই ধরনটি একটু পরিবর্তন করে তাঁকে গাইতে বলেন পঞ্চম। সেই প্রস্তাব এক কথায় গ্রহণ করেন কিশোরও। আশা এখন পঞ্চমের ঘরণী। তাই এই ক্ষেত্রেও দুজনের মধ্যে তালমিল ছিল চোখে পড়ার মতো।
আরও পড়ুন:
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১৫: সুন্দরবনের বিসূচিকা রোগের অধিষ্ঠাত্রী দেবী ওলাবিবি
শম্ভু, শম্ভু, শিব মহাদেব শম্ভু, খুদার ইবাদত যাঁর গলায় তাঁর আর কাকে ভয়?
আশা কণ্ঠের ক্ষমতা এবং পরিসীমা যে পঞ্চম সবচেয়ে ভালো বুঝবেন সেটাই তো স্বাভাবিক! আর তাই সব কৌশলকে কাজে লাগিয়ে আশা কণ্ঠের মাধুর্যকে বের করে নিয়ে আসতে কখনও পিছিয়ে যাননি। আশা নিজেও খুব ভালো করে জানতেন বিষয়টি। তাই পঞ্চম এর কাছে অকৃপণভাবে উজাড় করে দিতেন নিজের কণ্ঠকে। ফলস্বরূপ, একের পর এক জন্ম নিয়েছে কালজয়ী সব গান। যে গানগুলি আজও কোনও অষ্টাদশীকে আপন মনে গুনগুন করতে শোনা যায়। যে গানগুলি নিজগুণে আজও নবীন।
পঞ্চম কিশোরের সম্পর্কের কথাই যদি ধরা যায়, দু’ জনের মধ্যে কোনওদিন মনোমালিন্য হয়েছিল এমন তথ্য আজ অবধি প্রকাশ্যে আসেনি। কি অসাধারণ একটি সম্পর্ক একবার ভাবুন তো! দু’জনেই দু’ জনকে নিয়ে গর্বিত। যেন দুই ভাই। আসলে কোনও সৃষ্টিকে যদি কালের ঊর্ধ্বে পৌঁছে দিতে হয়, তাহলে স্রষ্টার নিরলস প্রচেষ্টার পাশাপাশি আরও অনেক কিছুর প্রয়োজন হয়। যেগুলি পঞ্চম এবং কিশোরের মধ্যে পর্যাপ্ত মাত্রায় ছিল। আমরা ভাগ্যবান, কারণ সেগুলির সুফল আমরা আজও ভোগ করে চলেছি।
পঞ্চম কিশোরের সম্পর্কের কথাই যদি ধরা যায়, দু’ জনের মধ্যে কোনওদিন মনোমালিন্য হয়েছিল এমন তথ্য আজ অবধি প্রকাশ্যে আসেনি। কি অসাধারণ একটি সম্পর্ক একবার ভাবুন তো! দু’জনেই দু’ জনকে নিয়ে গর্বিত। যেন দুই ভাই। আসলে কোনও সৃষ্টিকে যদি কালের ঊর্ধ্বে পৌঁছে দিতে হয়, তাহলে স্রষ্টার নিরলস প্রচেষ্টার পাশাপাশি আরও অনেক কিছুর প্রয়োজন হয়। যেগুলি পঞ্চম এবং কিশোরের মধ্যে পর্যাপ্ত মাত্রায় ছিল। আমরা ভাগ্যবান, কারণ সেগুলির সুফল আমরা আজও ভোগ করে চলেছি।
আরও পড়ুন:
ইতিহাস কথা কও, কোচবিহারের রাজকাহিনি, পর্ব-১১: দেব-দেউল কথা ও মদনমোহন মন্দির
ঋতু পরিবর্তনের অসুস্থতায় হাতের কাছে কী কী হোমিওপ্যাথি ওষুধ রাখবেন? রইল ডাক্তারবাবুর পরামর্শ
‘রকি’ ছবির ‘হাম তুম সে মিলে’ গানটির ক্ষেত্রে পঞ্চম বেছে নিয়েছিলেন কিশোর এবং তাঁর লতা দিদিকে। তাঁরা দু’জন মিলে আমাদের এই মিষ্টি গানটি উপহার দেন। গানটিতে আবার আমরা পাই সেই পরিচিত পঞ্চমকে। গানটি একবার শুনলেই বলে দেওয়া যাবে যে এর সঙ্গীত পরিচালক কে? সুরের গঠন, ছন্দের ধরন এবং বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার সবই সেই অতিপরিচিত সূত্রের দ্বারা চালিত।
এই ছবির আরও একটি যুগান্তকারী গান ‘কেয়া ইয়েহি পেয়ার হ্যায়’। গেয়েছিলেন লতা কিশোর জুটি। নিখাদ প্রেমের গান। অথচ সম্পূর্ণভাবে সাসপেন্সে ভরা, প্রেলুডটি কানে এলে প্রাথমিক ভাবে মনে হতে পারে আমরা হয়তো রহস্যাবৃত কোনও একটি গান শুনতে চলেছি। অথচ কিশোর কণ্ঠ কানে আসতেই আমদের সেই ভুল ভেঙে চুরমার হয়ে যায় এক নিমেষে। ধীর গতির এই গানটির মাধুর্য ধরে রাখে ক্রমাগত বেজে চলা ভায়োলিন, অবলিগেটোর ধাঁচে। সঙ্গে বঙ্গ, তবলা, ইলেকট্রিক গিটার, ১২ স্ট্রিং গিটার এবং বেস। গায়ক গায়িকার মন মাতানো উপস্থাপনার আড়ালে থাকা সার্বিক ‘আরেঞ্জমেন্ট’। সব মিলিয়ে একটি স্বর্গীয় অনুভূতি গ্রাস করে আমাদের।
ভেবে দেখুন, ১৯৮১ সালে জন্ম নেওয়া এই গানটি আজও আমরা শুনতে পাই পাড়ার ক্লাবে বা কোনও অনুষ্ঠানে, পিকনিকে অথবা পুজোর প্যান্ডেলে। গানটি যে কোনও প্রেমিক প্রেমিকার মনে আজও একই রকম ভাবে দাগ কাটতে সক্ষম।—চলবে।
এই ছবির আরও একটি যুগান্তকারী গান ‘কেয়া ইয়েহি পেয়ার হ্যায়’। গেয়েছিলেন লতা কিশোর জুটি। নিখাদ প্রেমের গান। অথচ সম্পূর্ণভাবে সাসপেন্সে ভরা, প্রেলুডটি কানে এলে প্রাথমিক ভাবে মনে হতে পারে আমরা হয়তো রহস্যাবৃত কোনও একটি গান শুনতে চলেছি। অথচ কিশোর কণ্ঠ কানে আসতেই আমদের সেই ভুল ভেঙে চুরমার হয়ে যায় এক নিমেষে। ধীর গতির এই গানটির মাধুর্য ধরে রাখে ক্রমাগত বেজে চলা ভায়োলিন, অবলিগেটোর ধাঁচে। সঙ্গে বঙ্গ, তবলা, ইলেকট্রিক গিটার, ১২ স্ট্রিং গিটার এবং বেস। গায়ক গায়িকার মন মাতানো উপস্থাপনার আড়ালে থাকা সার্বিক ‘আরেঞ্জমেন্ট’। সব মিলিয়ে একটি স্বর্গীয় অনুভূতি গ্রাস করে আমাদের।
ভেবে দেখুন, ১৯৮১ সালে জন্ম নেওয়া এই গানটি আজও আমরা শুনতে পাই পাড়ার ক্লাবে বা কোনও অনুষ্ঠানে, পিকনিকে অথবা পুজোর প্যান্ডেলে। গানটি যে কোনও প্রেমিক প্রেমিকার মনে আজও একই রকম ভাবে দাগ কাটতে সক্ষম।—চলবে।