বাংলা বাণিজ্যিক ছবিতে পঞ্চমের অবদানের প্রসঙ্গ যখন উঠলই তখন না হয় আমরা একটু পিছনে ফিরে যাই। আশির দশকে মুক্তি পাওয়া ‘অনুসন্ধান’ ছবির গানগুলি আপনারা নিশ্চয়ই শুনেছেন। গানগুলি সম্পর্কে নতুন করে সত্যিই কি কিছু বলার প্রয়োজন পড়ে? প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই ছবিটি হিন্দি ছবি ‘বারসাত কি এক রাত’-এর বাংলা সংস্করণ। শক্তি সামন্ত প্রযোজিত এবং নির্দেশিত এই ছবির গানগুলির গীতিকার ছিলেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার।
‘আমার স্বপ্ন যে সত্যি হল আজ’ গানটির সুর হুবহু হিন্দি ছবিটির ‘আপনে পেয়ারকে সপনে সাচ হুয়ে’ থেকে নেওয়া। সেটিও পঞ্চমেরই সৃষ্টি। গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের লেখার সঙ্গে এই সুরটি আশ্চর্যজনকভাবে খাপ খেয়ে গিয়েছে। গায়ক-গায়িকা জুটিও সেই একই। অর্থাৎ কিশোর কুমার এবং লতা মঙ্গেশকর। এক কথায় অসাধারণ একটি সৃষ্টি। কথা এবং সুর দুটি যেন একে অপরের পরিপূরক।
‘আমার স্বপ্ন যে সত্যি হল আজ’ গানটির সুর হুবহু হিন্দি ছবিটির ‘আপনে পেয়ারকে সপনে সাচ হুয়ে’ থেকে নেওয়া। সেটিও পঞ্চমেরই সৃষ্টি। গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের লেখার সঙ্গে এই সুরটি আশ্চর্যজনকভাবে খাপ খেয়ে গিয়েছে। গায়ক-গায়িকা জুটিও সেই একই। অর্থাৎ কিশোর কুমার এবং লতা মঙ্গেশকর। এক কথায় অসাধারণ একটি সৃষ্টি। কথা এবং সুর দুটি যেন একে অপরের পরিপূরক।
‘হায়রে পোড়া বাঁশি’। এই গানটির অভিনবত্ব লুকিয়ে রয়েছে গানটির ছন্দে। যে ছন্দে তবলার পাশাপাশি মাদল একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গেছে পুরো গানটি জুড়ে। কেন? এই গানটির ক্ষেত্রে মাদল, ফিলার এবং ছন্দ, দুটি ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়েছে। মাদলটি বাজিয়েছেন রঞ্জিত গজমের, অর্থাৎ পঞ্চমের আদরের কাঞ্ছা। মাদলের এমন প্রয়োগ সত্যিই নজিরবিহীন। গায়িকা যখন লতা মঙ্গেশকর, তখন ফল যা হবার তাই হয়েছে।
ছবির ওই দৃশ্যে ভিলেন আমজাদ খানকে নাস্তানাবুদ করতে নায়ক অমিতাভ বচ্চন কিশোর কুমারকে লিপ দিচ্ছেন ‘বল হরিবোল হরিবোল’ গানটিতে। ভিলেনের বিরুদ্ধে নায়কের এ যেন এক মোক্ষম জবাব। এই বিষয়টিকেই গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের লেখায় অসাধারণভাবে সুরের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন পঞ্চম। সার্বিকভাবে দেখতে গেলে এটি একটি অসাধারণ উপস্থাপনা। এবং তার সঙ্গে কিশোর কুমারের অভিনয় মাখানো কণ্ঠ। কোনও প্রশংসাই হয়তো পর্যাপ্ত নয়।
ছবির ওই দৃশ্যে ভিলেন আমজাদ খানকে নাস্তানাবুদ করতে নায়ক অমিতাভ বচ্চন কিশোর কুমারকে লিপ দিচ্ছেন ‘বল হরিবোল হরিবোল’ গানটিতে। ভিলেনের বিরুদ্ধে নায়কের এ যেন এক মোক্ষম জবাব। এই বিষয়টিকেই গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের লেখায় অসাধারণভাবে সুরের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন পঞ্চম। সার্বিকভাবে দেখতে গেলে এটি একটি অসাধারণ উপস্থাপনা। এবং তার সঙ্গে কিশোর কুমারের অভিনয় মাখানো কণ্ঠ। কোনও প্রশংসাই হয়তো পর্যাপ্ত নয়।
আরও পড়ুন:
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৫৮: অন্যরা যখন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিলেন তখন পঞ্চমের হাত ধরলেন শক্তি সামন্ত
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৪৪: সুন্দরবনের সুন্দরী গাছ
‘ফুলকলি রে ফুলকলি’ গানটিই বা কম কিসে? কিশোর কুমার এবং আশা ভোঁসলের গাওয়া বহু স্বনামধন্য গানের মধ্যে এই গানটিকে গণ্য করা হয়। মেলোডি তো বটেই। তার সঙ্গে গায়ক গায়িকার গায়কী গানটিকে অসাধারণ করে তুলেছে। কোনও পুজোর মণ্ডপে আজকের দিনেও যখন গানটি বেজে ওঠে তখন আমরা নিজেদের অজান্তেই গানটি গুনগুন করে নিজের মনে গেয়ে উঠি।
ছন্দের নিরিখে এই ছবির ‘ওঠো ওঠো সূর্যাই রে’ গানটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই ছন্দ যেন এক এবং অদ্বিতীয়।
একটি পাহাড়ি প্রেক্ষাপটে নায়িকা রাখির লিপে লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া এই গান একটি অনবদ্য সৃষ্টি। মেলোডি, রিদম, এরেঞ্জমেন্ট এবং কোরাস—সবকিছুর মধ্যেই পাওয়া যায় এক অভিনবত্বের ছোঁয়া। এখানেও সেই মন কেড়ে নেওয়া মাদল-এফেক্ট। তার সঙ্গে ভায়োলিনে ক্রমাগত বেজে চলা অব্লিগেটো আমাদের মনে এক অদ্ভুত অনুভূতির সঞ্চার করে। কেউ যদি গানের দৃশ্যটি নাও দেখে থাকেন, তবুও এই গানটি শোনার সময় কোনও একটি পাহাড়ের দৃশ্য তার মানসচক্ষুতে ভেসে উঠতে বাধ্য। এই সুর এবং ছন্দের ক্ষমতা এতটাই। শোনা যায়, সেই সময় অনেকেই এমন ছিলেন যারা শুধুমাত্র গানগুলি শুনতে পাবেন বলেই এই ছবিটি একাধিকবার দেখেছেন। ভাবুন একবার।
ছন্দের নিরিখে এই ছবির ‘ওঠো ওঠো সূর্যাই রে’ গানটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই ছন্দ যেন এক এবং অদ্বিতীয়।
একটি পাহাড়ি প্রেক্ষাপটে নায়িকা রাখির লিপে লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া এই গান একটি অনবদ্য সৃষ্টি। মেলোডি, রিদম, এরেঞ্জমেন্ট এবং কোরাস—সবকিছুর মধ্যেই পাওয়া যায় এক অভিনবত্বের ছোঁয়া। এখানেও সেই মন কেড়ে নেওয়া মাদল-এফেক্ট। তার সঙ্গে ভায়োলিনে ক্রমাগত বেজে চলা অব্লিগেটো আমাদের মনে এক অদ্ভুত অনুভূতির সঞ্চার করে। কেউ যদি গানের দৃশ্যটি নাও দেখে থাকেন, তবুও এই গানটি শোনার সময় কোনও একটি পাহাড়ের দৃশ্য তার মানসচক্ষুতে ভেসে উঠতে বাধ্য। এই সুর এবং ছন্দের ক্ষমতা এতটাই। শোনা যায়, সেই সময় অনেকেই এমন ছিলেন যারা শুধুমাত্র গানগুলি শুনতে পাবেন বলেই এই ছবিটি একাধিকবার দেখেছেন। ভাবুন একবার।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫২: সব ঘরই ‘তাসের ঘর’
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-১৯: কামিনী রায়, জনৈক বঙ্গমহিলা
আরও কয়েক বছর পিছিয়ে গিয়ে যদি রাজকুমারী ছবিটির কোথায় আসা যায়, সেখানেও দেখা যাবে যে ‘পঞ্চম’ এবং ‘মেলোডি’ এই দুটি শব্দই সমার্থক। এই ছবির ‘বন্ধদারের অন্ধকারে’ গানটির ক্ষেত্রে একটু খেয়াল করে দেখুন। দেখবেন, এটি একটি মেলোডি সর্বস্ব গান। নায়িকা তনুজার লিপে আশা ভোঁসলে এবং ‘মহানায়ক’ উত্তম কুমারের লিপে ‘মহাগায়ক’ কিশোর কুমার। সঙ্গে পঞ্চমের সুরের সেই সম্মোহনী শক্তি। প্রশংসার জন্য কোনও সঠিক বিশেষণ খুঁজে পাওয়া সত্যিই কষ্টসাধ্য।
শুধু কি তাই? কিশোরের গাওয়া এই ছবির ‘এ কি হল’ গানটির কথা ভাবুন তো একটিবার? এরপর যদি আমরা পঞ্চমকে ‘মেলোডি কিং’ আখ্যা দিই, সেটি কি খুব অতিরঞ্জিত হয়ে যাবে?
‘আজ গুন গুন গুন কুঞ্জে আমার’ গানটির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ‘কটি পতঙ্গ’ ছবির ‘পেয়ার দিওয়ানা হোতা হ্যায়’ গানটির সুরে বাংলা কথাগুলি বসিয়ে গানটির জন্ম দেন পঞ্চম। সুরটি কিন্তু অত্যন্ত সাধারণ। কোথাও কোনও বিশেষ কারিকুরি নেই। তবুও এই সুরটি মন কেড়ে নেয় আমাদের। এইখানেই খুঁজে পাওয়া যায় পঞ্চমের সার্থকতা।
শুধু কি তাই? কিশোরের গাওয়া এই ছবির ‘এ কি হল’ গানটির কথা ভাবুন তো একটিবার? এরপর যদি আমরা পঞ্চমকে ‘মেলোডি কিং’ আখ্যা দিই, সেটি কি খুব অতিরঞ্জিত হয়ে যাবে?
‘আজ গুন গুন গুন কুঞ্জে আমার’ গানটির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ‘কটি পতঙ্গ’ ছবির ‘পেয়ার দিওয়ানা হোতা হ্যায়’ গানটির সুরে বাংলা কথাগুলি বসিয়ে গানটির জন্ম দেন পঞ্চম। সুরটি কিন্তু অত্যন্ত সাধারণ। কোথাও কোনও বিশেষ কারিকুরি নেই। তবুও এই সুরটি মন কেড়ে নেয় আমাদের। এইখানেই খুঁজে পাওয়া যায় পঞ্চমের সার্থকতা।
আরও পড়ুন:
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৪১: মা সারদার অন্তরঙ্গ সেবক শরৎ মহারাজ
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮৪: নোবেল পাওয়ায় বন্ধু দিয়েছিলেন লজ্জাবতীর চারা
‘তবু বলে কেন’ গানটির কথা উল্লেখ করতেই হবে। ১৯৭০ সালের মতো একটি সময়ে দাঁড়িয়ে এমন একটি সুর রচনা করা। তাও আবার একটি বাণিজ্যিক বাংলা ছবির জন্য। সাহস লাগে বৈকি! কেন? সুরের ‘ভ্যারিয়েশন’গুলি লক্ষ্য করুন। বিশেষ করে মুখরার। একবার শুনলেই বুঝতে পারবেন।
আসলে চারুকলা অথবা ললিতকলা যেভাবেই দেখুন না কেন, সুর এমন একটি মাধ্যম যার সাহায্যে খুব সহজেই মানুষের মনের খুব কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া যায়। যুগ নির্বিশেষে। পঞ্চমের সৃষ্টিগুলি এই চিরসত্যের প্রমাণ দিয়ে গিয়েছে বারবার। প্রেক্ষাপট যাই হোক, মেলোডি যেন প্রাধান্য পায়। সেই মেলোডির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ছন্দের বিস্তার। এই দুইই ছিল পঞ্চমের মূল লক্ষ্য। যে লক্ষ্যে তিনি ছিলেন অনড়। ছিলেন সদা অবিচল।—চলবে।
আসলে চারুকলা অথবা ললিতকলা যেভাবেই দেখুন না কেন, সুর এমন একটি মাধ্যম যার সাহায্যে খুব সহজেই মানুষের মনের খুব কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া যায়। যুগ নির্বিশেষে। পঞ্চমের সৃষ্টিগুলি এই চিরসত্যের প্রমাণ দিয়ে গিয়েছে বারবার। প্রেক্ষাপট যাই হোক, মেলোডি যেন প্রাধান্য পায়। সেই মেলোডির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ছন্দের বিস্তার। এই দুইই ছিল পঞ্চমের মূল লক্ষ্য। যে লক্ষ্যে তিনি ছিলেন অনড়। ছিলেন সদা অবিচল।—চলবে।
* পঞ্চমে মেলোডি (R D Burman): সৌম্য ভৌমিক, (Shoummo Bhoumik) সঙ্গীত শিল্পী।