শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


আশা ভোঁসলে- রাহুল দেব বর্মণ। ছবি: সংগৃহীত

সাল ১৯৮০। শুরু হয় পঞ্চমের আরও একটি ঘটনাবহুল বছর। যেমনটি আগেই বলেছি, এ সময় পঞ্চমের সঙ্গে আশা ভোঁসলের একটি বন্ধুত্বের সম্পর্ক আগেই গড়ে উঠেছিল। সুর সঙ্গীতের প্রতি অগাধ ভালোবাসা এবং আগ্রহ দু’ জনকে দু’জনের প্রতি আকৃষ্ট করতে শুরু করেছিল। নিজেদের অনেক কথাই ততদিনে পরস্পরকে খোলামনে বলার মতো একটি জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল সম্পর্কটি। নির্ভেজাল আড্ডা অথবা রিহার্সালের ফাঁকে দু’জনের মধ্যে গান-বাজনার বিষয় ছাড়াও চলত আরও নানা বিষয় নিয়ে বাক্যালাপ। যেগুলির মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই এসে পড়ত নিজেদের ব্যক্তিগত কিছু কোথাও। ফলস্বরূপ, দু’জনেই মানসিকভাবে অতীতের তুলনায় অনেকটাই কাছাকাছি চলে এসেছিলেন।
পঞ্চম এ বার সত্যিই বুঝতে শুরু করেন, আশার প্রতি তাঁর বিশেষ অনুভূতির কথাটি। নিজের কাছে এ বার যেন পরিষ্কার হতে শুরু করে তাঁর মনে জন্ম নেওয়া আশার প্রতি এক অকৃত্রিম ভালোবাসা। এতদিন হয়তো বিষয়টি নিয়ে নিজের সঙ্গেই অনেক যুদ্ধ করে গিয়েছেন পঞ্চম। এ কি সেই চরম একাকিত্ব থেকে জন্ম নেওয়া কোনও ক্ষণস্থায়ী মোহ, না কি আশার প্রতি তাঁর সত্যিকারের ভালোবাসা? এই দুটি প্রশ্নই নিজেকে করে চলেছিলেন দিবারাত্র। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই বিভ্রান্তির কুয়াশা কাটতে শুরু করে। মনে মনে সংকল্প করে বসেন যে, এ বার নিজের এই অনুভুতির কথা আশাকে ব্যক্ত করবেনই। তবু যেন একটি ‘কিন্তু’ বোধ হতে থাকে। এই বয়েসে এসে কীভাবে প্রেম নিবেদন করবেন আশার মতো একজনকে। তাই নিজেকে যথাসাধ্য সংযত রেখে সঠিক সময় এবং সুযোগের অপেক্ষায় তিনি দিন কাটাতে থাকেন। তারই মাঝে আসতে থাকে একের পর এক কাজের সুযোগ।
আরও পড়ুন:

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-২৪: রিমঝিম ঘিরে শাওন…আবার লতা, কিশোর ও পঞ্চমের সেই জাদু

অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-৩: অভিনয় নয়, কিশোর মনে-প্রাণে একজন গায়ক হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করতে চেয়েছিলেন

‘গুনেগার’ ছবির ‘চার দিনো কি হ্যায় ইয়ে জিন্দেগানি’ গানটিতে আমরা শুনতে পাই পঞ্চম-ব্র্যান্ডের সেই রিদম। যে রিদম কানে আসা মাত্র আমরা নিজে থেকেই বুঝে যাই সুরকারের নাম কি হতে পারে। তার সঙ্গে এই গানটির ক্ষেত্রে আরও একটি পাওনা হল চার মহারথীর কণ্ঠ একই গানে শুনতে পাওয়া। সেই চার মহারথী হলেন কিশোর, আশা, ভুপিন্দর এবং পঞ্চম স্বয়ং। আর এই ক্ষেত্রে পঞ্চম নিজের কণ্ঠের টেক্সচার বদলে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে নিজেকে উপস্থাপিত করেছেন। ওই ভাবে একটি গান টানা গেয়ে যাওয়া বেশ কঠিন। যথারীতি কিশোর, আশা এবং ভূপিসাহেব অনবদ্য।

‘না তো আব ম্যায় রাহা নিকাম্মা’ গানটিতে দ্বৈত ভাবে কণ্ঠদান করেন আশা এবং আরডি। এমনিতেই আরডি তখন মনে মনে আশার সঙ্গে অনেকটাই মিশে গিয়েছেন। তাই এহেন পরিস্থিতিতে তিনি আশার সঙ্গে গান গাইবেন না তাই বা কী করে হয়? তাই গেয়েই ফেললেন। ঋষি কাপুর এবং পরভীন ববির লিপে পঞ্চম ও আশার এই মজার গানটি উপভোগ্য। ‘তুম যাহা যাওগে ওহি মুঝে পাওগে’ গানটি আরও একটি অসামান্য সৃষ্টি। এ ক্ষেত্রেও পঞ্চমের পছন্দ সেই আশাই। যেমন অর্কেস্ট্রেশন, তেমন মেলোডি এবং সেই সঙ্গে আশাকণ্ঠের মাদকতা। অনবদ্য।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪৪: কোন সকালে মুক্তির অপেক্ষায় ‘ত্রিযামা’

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩৩: কানে ব্যথা? তেল দেবেন কি?

‘কাতিল কৌন’ ছবির ‘যাউ কাহা গরি তেরি গলি ছোড়কে’ গানটি গাওয়ানো হয় কিশোরকে দিয়ে। এমন মজার উপস্থাপনা বোধহয় তাঁকে দিয়েই সম্ভব। তাই ন্যায্য কারণেই পঞ্চমের মাথায় কিশোরের নামই চলে এসেছিল। ‘তেরি আখিয়া মেরি’ গানটি কিশোর-লতা জুটির একটি অসাধারণ। গানটি সেই ভাবে জনপ্রিয় না পেলেও হলপ করে বলতে পারি, আপনাদের ভালো লাগবেই লাগবে। গানটির আবেদন এমনই।

‘জলমহল’ ছবির ‘জয় জয় শ্যাম রাধে শ্যাম’ গানটির যেমন মিষ্টি সুর, তেমনি আশার কণ্ঠ। এ যেন দুটি নদীর মেল বন্ধন। গানটি একবার শুনে দেখতে পারেন। ‘জিন্দেগি কো জব হামারা গম নেহি’ গানটির জন্য হয়তো সঙ্গত কারণেই আশাকে আবারও বেছে নেন পঞ্চম। ওই দৃশ্যে এবং নায়িকার অভিনয়ের সঙ্গে তাল মেলাতে আশাকণ্ঠের জুড়ি মেলা ভার। সুতরাং, এবারও পঞ্চমের আশাকেই চাই।
আরও পড়ুন:

কলকাতার পথ-হেঁশেল: যাদবপুর—যদুকুল ও চপস্টিকস

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৬৯: ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড কোনও ভাবেই শরীরে ঢুকছে না? অজান্তেই এই সব অসুখ ডেকে আনছেন কিন্তু

কিশোর-পঞ্চম জুটি কেন সেরা? সেটির প্রমাণ আরও একবার পেতে গেলে শুনতে হবে ‘আবদুল্লাহ’ ছবির ‘আয় খুদা হার ফয়সালা’ গানটি। কার্যত কোনও সাপোর্টিং ইনস্ট্রুমেন্ট নেই। আছে শুধু তবলার একটি ঠেকা, তাও খুবই ধীর গতির। আর রয়েছে অবলিগেটো। ইন্টারলুড এবং ফিলারেও বাদ্যযন্ত্রের তেমন কোনও ঘনঘটা কানে ধরা দেয় না। কার্যত একটি প্যাথোস মাখানো খালি গলায় নিপুণভাবে গেয়ে গিয়েছেন কিশোর। দৃশ্যায়ন যেহেতু মধ্যপ্রাচ্যের কোনও একটি জায়গায় করা হয়েছে, সেই প্রেক্ষাপটকে মাথায় রেখে সদাসতর্ক পঞ্চম সেই জায়গাটির নিরিখে এক অভিনব মেলোডির জন্ম দিয়েছেন। আসলে এই ছোট ছোট বিষয়গুলিকে প্রাধান্য দিয়ে সুর রচনা করার যে অভ্যেস, সেটিই হয়তো পঞ্চমের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। এরকম একটি মানুষের দোসর যদি হন কিশোর মতো একজন ক্ষণজন্মা, তখন তো আর কোনও কথাই থাকতে পারে না।

‘জশনে বাহারা’ এবং ‘ভিগা বদন জলনে লাগা’ গান দুটির ক্ষেত্রে কেনও আবার পঞ্চম বেছে নেন আশাকে সেটি আমি বলব না। দুটি গানেরই দৃশ্যায়ন একবার দেখলেই আপনারা ঠিক ধরে ফেলবেন কারণটি।

এমনি ভাবেই একে একে চলতে থাকে পঞ্চমের কর্মকাণ্ড। কিন্তু তাঁর মন, সবার চোখের আড়ালে ব্যাকুল থেকে ব্যাকুলোতর হয়ে উঠতে থাকে। কার জন্য? তাও কি বলে দিতে হবে? এ বার তিনি প্রতিজ্ঞা করে বসেন যে, আশাকে প্রেম নিবেদন করবেনই। শুধু তাই নয়, বিয়ের প্রস্তাবও দেবেন। তা সে যাই হয়ে যাক না কেন!—চলবে।
* পঞ্চমে মেলোডি (R D Burman): সৌম্য ভৌমিক, (Shoummo Bhoumik) সঙ্গীত শিল্পী।

আপনার রায়

ইসরোর চন্দ্রযান-৩ কি তৃতীয় বারের এই অভিযানে সাফল্যের স্বাদ পাবে?

Skip to content