
ছবি: প্রতীকী।
কাকোলূকীযম্
উজ্জীবীর কথা শেষ হলে বায়সরাজ মেঘবর্ণ সঞ্জীবীকে ডেকে বললেন, “ভদ্র! তবাভিপ্রাযমপি শ্রোতুমিচ্ছামি”। হে ভদ্র! আপনার অভিমতও আমি শুনতে চাই।
উজ্জীবী তখন বললেন, হে দেব! আমার মনে হয় শত্রুর সঙ্গে সন্ধি করাটা উচিত হবে না। শাস্ত্রে বলে, শত্রুর সঙ্গে সন্ধি করলেও তার সঙ্গে বেশি মেলামেশা করাটা একদম উচিত নয়। আগুনে তপ্ত হয়ে জল অত্যন্ত গরম হলেও সে কিন্তু আগুনের সঙ্গে সখ্যতা করে না, অনায়াসেই সে আগুনকে নিভিয়ে দিতে পারে। জলের সঙ্গে অগ্নির যেমন সহজাত বিরোধ তেমনই অর্থাৎ সন্ধি করলেও জাত শত্রু কখনই শত্রুতা ত্যাগ করে না।
তাছাড়া এই উলূকরাজ অরিমর্দন হল একজন অত্যন্ত ক্রুর-স্বভাব, লোভী এবং অধার্মিক একজন ব্যক্তি। এইরকম লোকের তোমার সঙ্গে সন্ধি করাটা উপযুক্ত হবে না। কারণ রাজনীতিশাস্ত্রের পণ্ডিতেরা বলেন, যে পুরুষ সত্য এবং ধর্ম রহিত তার সঙ্গে কখনই সন্ধি করা উচিত নয়। কারণ এই সমস্ত লোকেরা স্বভাবত দুর্জন হয় বলেই এদের সঙ্গে ভালোভাবে সন্ধি করলেও শীঘ্রই তারা বিকারগ্রস্ত হন, অর্থাৎ সন্ধির নিয়ম তারা উলঙ্ঘন করে। তাই এদেরকে বিশ্বাস করে সন্ধি করাটা কখনই সমীচীন নয়। তাই হে রাজন্! আমার অভিমত এইরকম দুর্বৃত্ত শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করাটাই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে। কারণ কথায় আছে, যে শত্রু নিষ্ঠুর, লোভী, অলস, অসত্যবাদী, ভীতু এবং চঞ্চল মনোবৃত্তিযুক্ত, যে বিবেকহীন এবং কথায় কথায় নিজের সৈন্যদের অপমান করে। এই রকম শত্রুকে সহজেই উচ্ছেদ করা সম্ভব। কারণ এদের অনুগত মানুষেরাও এর ব্যবহারের জন্য তার উপর ক্রুদ্ধ হয়ে থাকে। তাই সহজে ভেদনীতি প্রয়োগ করে এইসব শত্রুদের নিঃশেষ করে দেওয়া সম্ভব।

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৭৭: পৃথিবীতে এমন কেউ নেই, যাঁর জীবনের আকাশে কখনও শত্রুতার মেঘ জমেনি

বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-৪৮: রান্নার জ্বালানি নারী স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ?

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১৫: এ কেমন রঙ্গ জাদু, এ কেমন রঙ্গ…/৩

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১১২: প্রশাসক রামচন্দ্রের সাফল্য কী আধুনিক কর্মব্যস্ত জীবনে সফল প্রশাসকদের আলোর দিশা হতে পারে?
কান্তাঽপি মনসঃ প্রীতিং ন সা ধত্তে মনস্বিনাম্।। (কাকোলূকীযম্ ৩৩)

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৯৭: শ্রীমার কথায় ‘ঠাকুরের দয়া পেয়েচ বলেই এখানে এসেচ’

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৫৫: সর্বত্র বরফ, কোত্থাও কেউ নেই, একেবারে গা ছমছম করা পরিবেশ
উজ্জীবীর বক্তব্য শেষ হলে, বায়সরাজ মেঘবর্ণ তৃতীয় মন্ত্রী অনুজীবীকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে ভদ্র! আপনিও আপনার অভিমত ব্যক্ত করুন। অনুজীবী বললেন, হে দেব! আমিও উজ্জীবীর সঙ্গে কিছুটা সহমত। সেই বলবান, দুষ্ট এবং শিষ্টাচারবিহীন শত্রুর সঙ্গে কখনই সন্ধি করা উচিত নয়, এমনকি বিগ্রহ করাও নীতিবিরুদ্ধ—“ন সন্ধির্ন বিগ্রহো যুক্তঃ”। একমাত্র ‘যান’ ছাড়া আমার মতে দ্বিতীয় কোনো পন্থা নেই। পণ্ডিতরা বলেন—
ন সন্ধিবিগ্রহো নৈব বিনা যানং প্রশস্যতে।। (ঐ, ৩৫)

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৯৭: পাতি সরালি
