বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


অলঙ্করণ: লেখক।

জুলাই মাসের সাত তারিখে গ্লোবাল ফরগিভনেস ডে। ক্ষমা করার জন্য ধার্য দিন। কেউ বলেছেন, ওরা কী করছে জানে না, হে প্রভু, ওদের ক্ষমা করো, তো কেউ আবার বলেছেন, অন্যায় করার মতোই অন্যায় সহ্য করাও আরেকটা অন্যায়। প্রভু যেন তাদের ঘৃণা করে (মাঠের ধারেই বসিয়ে রাখেন, খেলতে না দেন)। প্রাচ্যদেশের প্রভু এসব হলে বড় কটাহে তপ্ত তেলে রাঙিয়ে ভাজেন। পাশ্চাত্যের প্রভু কী করেন তা পরশুরাম জানিয়েছেন। ওয়েটিং রুমে বসিয়ে তারপর নানাবিধ “সিলেকসন প্রসেস” চলে, মোটকথা ছাড়াছাড়ি নেই। রাজতন্ত্রের যুগে দণ্ডের বিপুল ক্ষমতার উচ্চকিত বিভীষিকার কথা জানা যায়।
আধুনিক যুগে ক্ষমাশীলতা পরম ধর্ম। ক্ষমা শক্তিমান বীরের ভূষণ, প্রাচীন কাল থেকেই তার মাহাত্ম্য সুবিদিত। রাজারা যুদ্ধ করতেন, কাছের শত্রুকে করায়ত্ত করতেন, আর দূরের শত্রুদের থেকে কর নিতেন, ট্যাক্স। তারা প্রদেয় করটি দিয়ে দিলেই হল, নিজের অধীনেই নিজে থাকো। এরমধ্যে রাজনীতি পুরোদমে থাকতো বটে, তবে রাজার ক্ষমাসুন্দর ভাবমূর্তি বিজয়গাথায় তীব্রতর হয়ে আছড়ে পড়তো। মহাভারত, রামায়ণে যা ঘটেছে ঘটেছে, তা পাস্ট ইজ পাস্ট।
আরও পড়ুন:

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৪৩: ইউ এফ ও

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৫৪: লোকশিক্ষক মা সারদা

ভগবান দুষ্কৃতকারীদের বিনাশ করেন বলে নিজেই ‘সম্ভবামি’ হওয়ার কথা বলছেন, তাছাড়া অবতার’রা নিয়মিত মেদিনীকে নির্মেদ নিষ্কলুষ রেখেছেন, পাপের ঘড়াও বেশ বড়সড় আর, তাতে স্থানাভাব ঘটেনা তেমন, অথর্ববেদের বৈদিক লোকজন মারণ-উচাটন-অভিচার ইত্যাদি প্রিমিটিভ কাজকর্ম করতো, এখনও পৃথিবীর নানা রণভূমিতে ঠাস ঠাস দুম দাম চলছে। ঘাবড়াবেন না, কবি বলেছেন এভাবেই ফুল ফোটে। অন্য কবি, ফুল না ফুটলেও বসন্তে বাধা নেই জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন:

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৩০: নলিনী দাশ— গণ্ডালুর সৃজনশিল্পী

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৫৫: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা— আমুর ও গোশিঙা

চণ্ডালিকাকে মনে পড়ে? “ক্ষমা করো প্রভু, ক্ষমা করো মোরে–আমি চণ্ডালের কন্যা” বলে ইতস্ততঃ করলে আনন্দ বলেছিলেন, “যে মানব আমি সেই মানব তুমি কন্যা”, আনন্দ কিন্তু ক্ষমা করেননি! তৃষিতকে তৃপ্ত করে যে তীর্থবারি, তার আনন্দস্রোতে জগৎকে সিক্ত করেছিলেন।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-২: যতই দেখি তারে, ততই দহি…

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৫: প্রথম ভারতীয় সিভিলিয়ান সত্যেন্দ্রনাথ ভেবেছিলেন পরীক্ষায় পাশই করবেন না

অন্যদিকে রুপোলি পর্দায় হীরের টুকরো নায়ক আর সোনার টুকরো খলনায়করা “ঝাড়পিট” করার পর ক্ষমা-টমা করে একে অন্যকে বুকে জড়িয়ে ধরছেন। কারোর খাবার নুনে পোড়া, তো কারোর অমৃতে গরল। সর্বংসহ কিংবা সর্বংসহা হয়ে ক্ষমা করে দিন। বাসে ট্রেনে পকেটে হাত দিল? হ্যাণ্ডশেক করুন। জগৎ বদলে যাবে, আপনি বদলান। এক পায়ের ওপর পা তুলে মিষ্টি করে “স্যরি” কিংবা “এক্সিউজ মি” বলল? আপনি প্লিজ প্লিজ কিছু মনে করবেন না। আপনি আরেক পা বাড়িয়ে দিন, অথবা দু’পা তুলে দাঁড়ানো অভ্যাস করুন।
আরও পড়ুন:

পর্দার আড়ালে, পর্ব-৫৬: প্রথমে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবির বিজ্ঞাপনে উত্তম কুমারকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-১: ভাঙনের জয়গান গাও

আপনাকে পাশ কাটিয়ে দুরন্ত ড্রিবল করতে করতে পাশে বসতে বসতেও আপনার জায়গাতেই বসে পড়েছে তো? অথবা কোলে? তো কী হয়েছে… আপনি তাকে বসতে সাহায্য করুন, পারলে হেল্প করুন, তার ব্যাগ ট্যাগ ধরে দাঁড়িয়ে থাকুন, কাজের মধ্যে থাকলে মাথায় দুর্ভাবনা আসবে না, শান্তি পাবেন বিস্তর, জীবনে একটা মানুষের উপকার করতে পারলেন বলে। মোট কথা ক্ষমা করতে হবে, যেকোনও পরিস্থিতিতে, যাহারা তোমার বায়ু বিষিয়েছে, আলো নিভিয়েছে তুমি তাদের ভালো না বাসলে আর কে বাসবে!

ভালোবেসে ক্ষমা করবে তো? এড়িয়ে যাও, লোকে ভাববে, এই বুঝি ক্ষমা। অথবা ক্ষমাই করো, সকলে ভাববে, তুমি বুঝি এড়িয়ে গেলে। করে দাও, দুদিন বৈ তো নয়! তাছাড়া সমস্যা হচ্ছে আপনার, গাড়ি হলে নেমে যাবেন। পৃথিবীর গাড়ি হলে, অন্য গ্রহ দেখে নিন, কে বারণ করেছে, অনন্ত মহাকাশ পড়ে আছে, খুঁজে নিন। সমস্যা না থাকলে, ক্ষমা-ও অর্থহীন, অপ্রাসঙ্গিক। নাল এন্ড ভয়েড। মশা হলে অন্য কথা, দুটো হাত কাছে এগিয়ে আনুন। আপনা হাত, জগন্নাথ!
* হুঁকোমুখোর চিত্রকলা : লেখক: ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।

Skip to content