শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


অলঙ্করণ: লেখক।

দোসরা জুলাই ছিল বিশ্ব ইউএফও দিবস। আন-আইডেন্টিটিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্ট, বাংলায় বিশ্ব উড়ন্ত চাকি দিবস। পৃথিবীতে জানার শেষ কিছুই নেই। কলিকালে অবশ্য এর ব্যত্যয় ঘটেছে, বলাই বাহুল্য। সর্ববিদ্যার ওপারে যাঁরা গিয়েছেন, কলিকালে তাঁদের জন্যেও বিস্ময় জমা থাকে বৈকী, যদি তাঁরা বিস্মিত হতে চান তবেই। ইউএফও পৃথিবীর জন্য এমন এক বিস্ময়। এর ভূত-ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রচুর গবেষণা, যা যা শোনা ও দেখা যেতো এবং সর্বজ্ঞ আন্তর্জালের কল্যাণে এখন সর্বত্রগামী যা যা, তাকে তথ্য বলা হবে, নাকি তত্ত্ব, তা বিজ্ঞান না কল্পবিজ্ঞান, তাতে প্রত্যক্ষ যা আছে তা কতটা সত্য, কতটা সর্পভ্রম, কতটা অনুমান এই নিয়ে বিজ্ঞান ভাবছে।
তবে এখানে রোমাঞ্চ ও বিস্ময়, খানিক গা শিরশির ভয়-ও থাকে কি? বঙ্কুবাবুর কিংবা শঙ্কুবাবুর মহাজাগতিক বন্ধুদের দেখে তা তো হতেই পারে। পৃথিবীতে চোখে দেখা যায়, এমন আঁধার যখন একটু বেশি ছিল, তখন সন্ধ্যা নামলেই তেনারা নামতেন। পুকুরপাড় থেকে খালের ধার, বাঁশবন থেকে সোঁদরবনের কোণে কোণে তাঁদের জমায়েত ছিল একদা। তাঁদের একদা পার্থিব সংযোগ এরকম মর্ত্যমায়ার কারণ। কিন্তু ইউএফও-র এমন আকস্মিক আবির্ভাব ঘটলেও, তাতে যাঁদের আশা করা হয়, তাতে যাঁরা আসেন তাঁরা পার্থিব জীব নন, ভূতপূর্ব জীব নয়, তবে তাঁরা কেমনতর অভূতপূর্ব তা বোঝা ভার, সেই বোঝার ভার বহন করে আজকের দিন।
আরও পড়ুন:

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৪২: আর যাহা খাও বাপু বিষমটি খেয়ো না

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৬৯: মহাভারতে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য আখ্যান-উপাখ্যান, তেমনই একটি সম্বরণ ও তপতীর কাহিনি

কোন বাঁশবাগানের মাথায় রক্ততিলক পরিয়ে একদা কবে কোন্ রজনীর আঁধারে নেমেছিল কোথাকার মহাকাশযান, কোন পাতালঘর ছিল তাদের লক্ষ্যবস্তু, অলক্ষ্যে থেকে থেকে তারা আজও কী করে চলেছে, কোথায় কেমন করছে, কোথায় আছে তাদের সেইসব যন্ত্রভার, পাতাললোকে তারা আত্মগোপন করে আছে কী না, তারা আসে কোথা থেকে, যায় কোথায়, সেখানের সূর্যের আরেক নাম ভারতবর্ষ কী না, সেখানেও চাঁদেরা মামা হয় নাকি, সেখানে জল আছে? বরফ পড়ে? বৃষ্টি হয়? মেঘ করে? এ সব জাগতিক তথা সমান্তরাল জগতের রকমারির পরে মনে হয়, অ-চিহ্নিত শূন্যগামী রহস্যের জন্য পৃথিবীর এই বিপুল বৈজ্ঞানিক রোমাঞ্চ ও জিজ্ঞাসা মনে করায়, পৃথিবীতে বিস্ময় আজও বেঁচে আছে।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৫৩: মহীয়সী গৃহস্থনারী মা সারদা

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৪: জোড়াসাঁকোয় পাগল-যাচাই

যত দিন যাচ্ছে, বিস্ময়ের বোধ, বিস্মিত হওয়ার প্রয়োজন কমছে। সবকিছুই সামনে আছে। সকলেই বিজ্ঞ, প্রাজ্ঞ, অভিজ্ঞ এবং সর্বজ্ঞ। তাই, পৃথিবীতে অজানা বলে বুঝি কিছুই নেই। এমন সময় হরিপদদের জন্য আকাশ থেকে একজোড়া চোখ যদি নেমে আসে? কিন্তু, এটাও বুঝি শেষ কথা নয়, অপরিচয়টাই শেষ কথা বলে না, উড়ে চলা, নানা কোণের আকাশে উঁকি দেওয়া উড়ন্ত আকাশপ্রদীপকে দেখে বা না দেখে, শুনে বা পড়েই কেবল মানুষ বিস্ময়ে জাগে বরাবর, অথচ তাতে করে যারা আসতে পারে, তাদের জগৎ-জীবন নিয়ে কী ভাবনা সেই নিয়ে পৃথিবীর অধিবাসীরা কী ভাবে? কেনই বা কষ্ট করে আসে ওই অজানার দল, হয়তো আপনার পাশেই আছে প্রচ্ছন্ন হয়ে, যাদের অভিসারক্ষেত্রকে যে দেবতারাও ক্লিনচিট দেন না, মাঝেমধ্যেই নেমে আসেন সাফসুতরো করতে, আর ভূমিপুত্ররা সেই দেবভূমিকেই শয়নে স্বপনে পেতে চায়। তবু নাকি আসে তারা যুগে যুগে, কালে কালে, সুরে সুরে তালে তালে ধুলোর পৃথিবীর অনেক ওপর দিয়ে চলে, ফেরে।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১: টলস্টয় ও সোফিয়া—প্রেম ও বিবাহ/১

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৫৫: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা— আমুর ও গোশিঙা

তাদের স্বপ্ন, বাস্তব, মন, বুদ্ধির সন্ধান মানুষের কাছে কতটা আছে তা কে জানে? তাদের গতিময় জীবনের রহস্য মানুষের থেকে ঠিক কতো আলোকবর্ষ দূরে তাও জানে কে? তবুও মানুষ রোমাঞ্চিত হয়, জিজ্ঞাসু হয়, যেমন করে একদা নিজেকে অনন্ত, অমৃত, দুর্জ্ঞেয় বলে বুঝেছিল, জানতে চেয়েছিল নিজের আসা যাওয়ার উদ্দেশ্য বিধেয়, জানতে চেয়েছিল নিজেকে, তার চালিকা শক্তিকে, অনুভব করেছে তার মধ্যেই একটা আন আইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্ট আছে, তার সর্বত্রগামী তীব্রগতির অজ্ঞেয় মন, নিমেষে আলোকবর্ষ পার হয়ে অনন্তগামী হতে পারে সে। বিজ্ঞানবোধ বলে, সবকিছুকে চিহ্নিত করতে, যা কিছু অনিশ্চিত তাকে যুক্তির কষ্টিপাথরে ঘষে ঘষে বুঝে নিতে হবে। আত্মা-মন-বুদ্ধিকে নিয়ে অনেক বুদ্ধি খাটিয়ে মনে ভেবে নিজেকে জানার শেষে পৌঁছতে পেরেছে দুরন্ত সময়ের উড়ন্ত মনের ছুটন্ত মালিকরা?
* হুঁকোমুখোর চিত্রকলা : লেখক: ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।

Skip to content