
এখন পরিবেশের ভালো-মন্দ নিয়ে অনেক বড় বড় কর্পোরেট সংস্থা মাথা ঘামায়-বছরে একটা মোটা টাকা ভর্তুকি থাকে এই খাতে। নিজের স্টার্ট আপের চরম ব্যস্ততার মধ্যেও অতনুর সময় করে তার কাজের সূত্রে সম্পর্কিত কর্পোরেট সংস্থায় গিয়ে এই হোমের উন্নতির জন্য তদবির করে, ছবি দেখায়। তাদের বোঝাবার চেষ্টা করে পরিবেশের উন্নতি সাধন তো করা নিশ্চয়ই দরকার। এবং সেটা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুস্বাস্থ্যের জন্য ভয়ংকর জরুরি। কিন্তু এই প্রজন্মেরই যে শিশু-কিশোর নিতান্ত দুর্ভাগ্যের শিকার হয়ে স্বাভাবিক সুস্থভাবে বেঁচে থাকার সুযোগটুকু পাচ্ছে না তাদের সাহায্য করাটা অবশ্য কর্তব্য মানে সেটাই প্রায়োরিটি। পরিবেশের উন্নতিসাধনে পয়সা খরচা করে ‘কিয়োতো প্রটোকল’ মেনে চলার সরকারি আদেশ পালন করা হবে নিশ্চয়ই। ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বর মাসে জাপানের কিয়োতো শহরে বিশ্বের ছোটবড় নানান দেশ যে সম্মিলিত সিদ্ধান্তে স্বাক্ষর করেছিল তাকে মেনে চলতেই হবে। কিন্তু আমাদের দেশের তো নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা! নুন সামান্য কম হলেও পান্তার জোগাড় না থাকলে পেটটা ভরবে কি করে?
দিয়া ফেসবুকে টেলিগ্রামে অতনু সেন নাম দিয়ে সার্চ করে ট্রেস করতে পারেনি। অসংখ্য বিচিত্র পেশার অতনু সেনকে খুঁজে পেয়েছে, যারা নিজেদের সব খবরাখবরের পোস্টার সাঁটিয়ে রেখেছেন। কেউ পদবী যুক্ত কেউ-বা পদবী হীন। এমন অনেক অতনু আছেন যাঁদের শরীরী উপস্থিতি নেই। নামের আক্ষরিক অর্থ মেনে যাঁরা অশরীরী, নিরাকার। যাঁদের ছবি যোগাযোগ সবকিছু অপ্রকাশিত। এঁদের মধ্যে কেউ কি? দিয়ার মন বলছে, না! ফেসবুকে থাকলে নিজেকে লুকিয়ে রাখার মতো মানুষ অতনু সেন নন। তিনি হয়ত ফেসবুক বন্ধুত্বে বিশ্বাসী নন! আচ্ছা অতনু সেন কি আদৌ বন্ধুত্বে বিশ্বাসী?
আরও পড়ুন:

উপন্যাস: আকাশ এখনও মেঘলা/৫

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০৩: গ্রহের ফের
মাঝে মাঝে দিয়ার নিজের উপর খুব রাগ হয়। তার এই খুঁজতে থাকা স্বভাবটার জন্য। লিংকড-ইনের বিজ্ঞাপন দেখে একটা অফিসে গিয়েছিল, সেখান থেকে সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন যে তাঁদের সংস্থায় তাঁরা মহিলাদের চাকরিতে নেন না। ঠিক, ভুল, মিসোজিনিস্ট এসব তাঁদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাঁরা তো সরকারি সংস্থা খুলে বসেননি বা অফিসটা এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ কিংবা বেকার-বন্ধু সভাও নয়। কাকে চাকরিতে রাখবেন কাকে রাখবেন না সেটা তার একেবারে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। সেই লোকটি দিয়ার আপত্তি নেই এটা জেনে কোন সুপারিশ পত্র নয়, একটা সাদা কাগজের ঠিকানা লিখে এক জায়গায় পাঠিয়েছিল।
আরও পড়ুন:

ঈশ্বর কী সাড়া দেন তামিলে, সংস্কৃতে?

বাংলা ভাষা উচ্চারিত হলে
অতনু সেন সম্ভবত দিয়ার জন্য কোনও ফোন সেখানে করেননি। কারণ রবীন চ্যাটার্জির সঙ্গে কথা বলে যা বুঝেছে মানুষটার মধ্যে কোনও ফিল্টার নেই, যা বলার সরাসরি পরিস্কার করে বলে দেন। স্টার্ট আপ গড়ার ইতিহাসের মতো অতনু সেনের ফোনের কথাও নিশ্চয়ই দিয়াকে জানাতেন।
এই যে টেকনোলজি ব্যবহার করে একজন মানুষের আদ্যপ্রান্ত জেনে ফেলা অথবা শেষ অবধি না পৌঁছতে না পেরে আন্দাজ করে ফেলা এটা কি ভালো? আচ্ছা সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষ কি তার সঠিক পরিচয় প্রকাশ করে? টাইপ করে যা লেখা হয় তাতো সত্যি নাও হতে পারে। বহুবছর এক ছাদের তলায় বসবাসের পরেও মানুষ একে ওপরকে ঠকায়! সেখানে সাজানো ডিজিট্যালি ছাপানো কথার কী মূল্য আছে? মানুষ যতো একা হয়ে যাচ্ছে, ভরসা করার মতো বিশ্বাস করার মতো কাঊকে পাচ্ছে না। মন খুলে কারও কাছে সব কিছু বলে হালকা হতে পারছে না, ততই সে নির্বিচারে সমাজমাধ্যমের বন্ধুতালিকা লম্বায় টেনে বাড়াচ্ছে। তারা কি একবারও ভাবছে যে তার ছোটবেলায় কিশোরবেলায় মাত্র হাতেগোণা কয়েকটা বন্ধু নিয়ে কি দারুণ সময় কাটিয়েছে। দিয়া ঠিক করল আর সে অতনু সেনের পিছনে সময় দেবে না। ঈশ্বর চাইলে দেখা হবে তখন কৃতজ্ঞতা জানাবে। ঈশ্বর না চাইলে তো এ চাকরিটা হোত না!
এই যে টেকনোলজি ব্যবহার করে একজন মানুষের আদ্যপ্রান্ত জেনে ফেলা অথবা শেষ অবধি না পৌঁছতে না পেরে আন্দাজ করে ফেলা এটা কি ভালো? আচ্ছা সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষ কি তার সঠিক পরিচয় প্রকাশ করে? টাইপ করে যা লেখা হয় তাতো সত্যি নাও হতে পারে। বহুবছর এক ছাদের তলায় বসবাসের পরেও মানুষ একে ওপরকে ঠকায়! সেখানে সাজানো ডিজিট্যালি ছাপানো কথার কী মূল্য আছে? মানুষ যতো একা হয়ে যাচ্ছে, ভরসা করার মতো বিশ্বাস করার মতো কাঊকে পাচ্ছে না। মন খুলে কারও কাছে সব কিছু বলে হালকা হতে পারছে না, ততই সে নির্বিচারে সমাজমাধ্যমের বন্ধুতালিকা লম্বায় টেনে বাড়াচ্ছে। তারা কি একবারও ভাবছে যে তার ছোটবেলায় কিশোরবেলায় মাত্র হাতেগোণা কয়েকটা বন্ধু নিয়ে কি দারুণ সময় কাটিয়েছে। দিয়া ঠিক করল আর সে অতনু সেনের পিছনে সময় দেবে না। ঈশ্বর চাইলে দেখা হবে তখন কৃতজ্ঞতা জানাবে। ঈশ্বর না চাইলে তো এ চাকরিটা হোত না!
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৮৬: এক সন্ধ্যায় মা সারদার বলা ভূতের গল্প

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৭: উত্তরণ-অবতরণ শেষে স্বপ্নের ‘সূর্যতোরণ’
ফট করে এক জায়গায় চাকরি না পেয়ে আর একটা চাকরি পেয়ে গেল? এমন হয় নাকি? গল্পে-উপন্যাসে অসুখের দ্বন্দ্বে জেরবার হয়ে আশা ছেড়ে দিয়ে হতাশায় ডুবে, তবে সুখ আসে। সহজে কিছু ঘটতে নেই-ঘটাতে নেই! এটাই তো বহু ব্যবহৃত ফরমুলা! কিন্তু সহজ সত্যি হল, জীবন কোনো রাম-শ্যাম-যদু-মধু’র ফরমুলা মানে না! জীবনে যখন যা ঘটে তার একটা কারণ থেকে যায়।
শাড়িটা হাতে নিয়ে চোখ পাকালেও মা যে খুব খুশি হয়েছে সেটা দিয়া বুঝতে পেরেছে। মিষ্টির বাক্স খুলে মায়ের মুখে একটা মিষ্টি দিতে যেতেই মা বলে উঠল—
—উঁহু! আগে ঠাকুরকে দে! আমার নাড়ুগোপাল না চাইলে কিছুই হোত না!
শাড়িটা হাতে নিয়ে চোখ পাকালেও মা যে খুব খুশি হয়েছে সেটা দিয়া বুঝতে পেরেছে। মিষ্টির বাক্স খুলে মায়ের মুখে একটা মিষ্টি দিতে যেতেই মা বলে উঠল—
—উঁহু! আগে ঠাকুরকে দে! আমার নাড়ুগোপাল না চাইলে কিছুই হোত না!
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০২: ভরতের মতো একমুখী লক্ষ্যে এগিয়ে চলা কী সম্ভব?

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১১২: দারুণ এক গগনবিহারী খেলনা বানিয়েছিলেন গগনেন্দ্রনাথ
ফাদার স্যামুয়েল জানেন এখন প্রায় দেড় ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে অতনু অজন্তা সিনেমার কাছে জেমস লং সরণিতে তার ফ্ল্যাটে পৌঁছবে। সারা সপ্তাহ উদয়াস্ত পরিশ্রম করবে, আবার পরে শনিবারে আসবে। ফাদার জানতে না চাইলেও তিনি জানেন, চুঁচুড়ার এই চার্চে আসার আগে অতনু কোথায় গিয়েছিল? আগামী শনিবার অফিস থেকে বেরিয়ে অতনু সেখানে যাবে খানিক সময় কাটিয়ে আবার আসবে চুঁচুড়ার চার্চে। —চলবে।
উপন্যাস: আকাশ এখনও মেঘলা, পরের পর্ব আগামী রবিবার ২ মার্চ, ২০২৫
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।